Class 9 History 2nd Unit Test Question Paper with Answer Set-4 wbbse | নবম শ্রেণি ইতিহাস দ্বিতীয় ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র সেট-৪

2ND SUMMATIVE EVALUATION
CLASS 9 (IX) WBBSE
HISTORY QUESTION PAPER

Set-4

Class 9 History 2nd Unit Test Question Paper with Answer Set-4 wbbse | নবম শ্রেণি ইতিহাস দ্বিতীয় ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র সেট-৪

📌নবম শ্রেণি ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র Click Here

দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন
বিষয় : ইতিহাস,  নবম শ্রেণি   পূর্ণমান ৪০
মূল্যায়নের মাস : আগস্ট
অন্তবর্তী প্রস্তুতিকালীন মূল্যায়ন : পূর্ণমান : ১০

অধ্যায় – ৩ : উনবিংশ শতকের ইউরোপ : রাজতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী ভাবধারার সংঘাত।
অধ্যায় – ৪ : শিল্পবিপ্লব, উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ।
অধ্যায় – ৫ : বিশ শতকে ইউরোপ।

দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন
নবম শ্রেণি    বিষয় : ইতিহাস
পূর্ণমান : ৪০                    সময় : ১ ঘ. ২০ মিনিট

বিভাগ – ‘ক’

১। সঠিক উত্তর নির্বাচন করে লেখো (যে কোন ৮ টি) ১×৮=৮

১.১ ফ্রান্সে জুলাই বিপ্লব হয়েছিল— (১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে / ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে / ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে /১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে)।

উত্তরঃ ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে

১.২ ইটালির জাতীয়তাবাদের প্রাণপুরুষ ছিলেন— (ক্যাভুর/ ম্যাৎসিনি / গ্যারিবল্ডি/ ভিক্টর ইমান্যুয়েল)।

উত্তরঃ ম্যাৎসিনি।

১.৩ রিসর্জিমেন্টো কথাটির অর্থ হল— (নবজাগরণ / জাতীয়তাবাদী / ঐক্য / মুক্তচিন্তা বিরোধী)।

উত্তরঃ নবজাগরণ।

১.৪ সর্বপ্রথম শিল্প বিপ্লব দেখা যায়— (ফ্রান্সে / ইতালিতে / জার্মানিতে / ইংল্যান্ডে)।

উত্তরঃ ইংল্যান্ডে

১.৫ শিল্প বিপ্লব কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন— (অগাস্তে ব্ল‍্যাঙ্কি / আর্নল্ড টয়েনবি / কার্ল মার্কস / কার্টরাইট)।

উত্তরঃ অগাস্তে ব্ল‍্যাঙ্কি।

১.৬ সুয়েজ খাল প্রবাহিত হয়েছে— (তুরস্কের মধ্য দিয়ে / ফ্রান্সের মধ্য দিয়ে / মিশরের মধ্য দিয়ে / আরবের মধ্য দিয়ে)।

উত্তরঃ আরবের মধ্য দিয়ে।

১.৭ সমাজতন্ত্রবাদ কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন— (কাল মার্কস / রবার্ট আওয়েন / চার্লস ফ্যুরিয়ের / সেন্ট সাইমন)।

উত্তরঃ রবার্ট আওয়েন।

১.৮ মালয়ে প্রথম উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন— (ব্রিটিশরা / ডাচরা / ফরাসিরা / পোর্তুগিজরা)।

উত্তরঃ পোর্তুগিজরা।

১.৯ মুক্তিদাতা জার বলা হয়— (প্রথম আলেকজান্ডারকে / দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে / দশম চার্লসকে / হিটলারকে)।

উত্তরঃ দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে।

১.১০ রক্তাক্ত রবিবার এর ঘটনাটি ঘটে— (১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে / ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে / ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে / ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে)।

উত্তরঃ ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে।

২। নিন্মলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও : ১×৮= ৮

(ক) একটি বাক্যে উত্তর দাও : ( যে-কোন চারটি)

২.১ চীনকে উন্মুক্ত দ্বার নীতি ঘোষণা করেন ?

উত্তরঃ জন হে

২.২ ওয়াটার ফ্রেম কে আবিষ্কার করেন ?

উত্তরঃ রিচার্ড আর্করাইট।

২.৩ দাস ক্যাপিটাল কে রচনা করেন ?

উত্তরঃ কাল মার্কস

২.৪ কূটনীতির রাজপুত্র কাকে বলে ?

উত্তরঃ মেটারনিখ কে।

২.৫ কালসবাড বিক্রি কে চালু করেন করেন ?

উত্তরঃ মেটারনিখ।

(খ) সত্য মিথ্যা নির্ণয় করো ( যে কোন দুটি)

২.৬ লেনিন এপ্রিল থিসিস ঘোষণা করেন।

উত্তরঃ সত্য

২.৭ বিসমার্কের উদ্যোগে ড্রেইকাইজারবুন্ড গড়ে ওঠে।

উত্তরঃ সত্য

২.৮ মেটারনিখ ছিলেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী|

উত্তরঃ মিথ্যা

(গ) নিম্নলিখিত বিবৃতি গুলির সঠিক ব্যাখ্যা নির্বাচন করো : (যে-কোনো দুটি)

২.৯ বিবৃতি : উনিশ শতকের মাঝামাঝি দ্বিতীয় পর্যায়ের শিল্পায়ন শুরুহয়—

ব্যাখ্যা : (ক) ইংল্যান্ডের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ইউরোপের কয়েকটি দেশে শিল্পায়নের সূচনা হয়।

(খ) প্রতিটি দেশেই শুধুমাত্র সরকারি উদ্যোগে শিল্পায়ন সংঘটিত হয়|

(গ) এই শিল্পায়ন ছিল দীর্ঘ প্রস্তুতির ফল।

উত্তরঃ (ক) ইংল্যান্ডের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ইউরোপের কয়েকটি দেশে শিল্পায়নের সূচনা হয়।

২.১০ বিবৃতি : ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসে শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত।

ব্যাখ্যা : (ক) প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত জার্মানির আত্মসমর্পণের জন্য।

(খ) প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত অক্ষশক্তির আত্মসমর্পণের জন্য।

(গ) ইউরোপে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও পুনর্গঠনের জন্য।

উত্তরঃ (গ) ইউরোপে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও পুনর্গঠনের জন্য।

২.১১ বিবৃতি : মেটারনিখ অস্ট্রিয়া সাম্রাজ্যের সংহতি ও প্রচলিত শাসনব্যবস্থাকে ধরে রাখতে সচেষ্ট হন—

ব্যাখ্যা : (ক) অস্ট্রিয়া ছিল ইউরোপের একমাত্র রাজতান্ত্রিক রাজ্য।

(খ) ফ্রান্স নয়, অস্ট্রিয়াই ছিল জাতীয়তাবাদী আদর্শের স্নায়ুকেন্দ্র।

(গ) অস্ট্রিয়া সাম্রাজ্য ছিল বহুজাতি অধ্যুষিত।

উত্তরঃ (ক) অস্ট্রিয়া ছিল ইউরোপের একমাত্র রাজতান্ত্রিক রাজ্য।

বিভাগ – ‘গ’

৩। নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির দু- তিনটি বাক্যে বাক্যে উত্তর দাও : (যে-কোন চারটি) ২×৪=৮

৩.১ ভিয়েনা সম্মেলনের Big Four বা চার প্রধান কারা ছিলেন ?

উত্তরঃ ভিয়েনা সম্মেলনে (১৮১৫ খ্রি.) উপস্থিত নেতৃবৃন্দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী মেটারনিখ, রাশিয়ার জার প্রথম আলেকজান্ডার, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাসালরি ও প্রাশিয়ার প্রিন্স হার্ডেনবার্গ। এই চারটি দেশকে ‘বিগ ফোর’ বা চার প্রধান বলা হয়।

৩.২ জোলভেরাইন কী ?

উত্তরঃ জার্মান রাজ্যগুলির অভ্যন্তরীণ শুল্ক-বৈষম্য ও বাণিজ্যের বাধাগুলি দূর করার উদ্দেশ্যে জার্মান অর্থনীতিবিদ ম্যাজেন-এর উদ্যোগে এবং প্রাশিয়ার নেতৃত্বে বিভিন্ন জার্মান রাজ্যকে নিয়ে ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে একটি শুল্কসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয় যা ‘জোলভেরাইন’ নামে পরিচিত।

৩.৩ ‘ফ্যাক্টরি প্রথা’ কী ?

উত্তরঃ শিল্পবিপ্লবের ফলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বৃহৎ শিল্পকারখানা গড়ে ওঠে। এসব কলকারখানায় যান্ত্রিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিল্পোৎপাদনের গুণগত ও পরিমাণগত ব্যাপক উন্নতি ঘটানো সম্ভব হয়। বৃহৎ কারখানাভিত্তিক এই ব্যবস্থা ‘ফ্যাক্টরি প্রথা’ নামে পরিচিত।

৩.৪ অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ কাকে, কেন বলা হয় ?
উত্তরঃ আফ্রিকা মহাদেশকে অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ বলা হয়। উনিশ শতকের তৃতীয় দশক পর্যন্ত অরণ্যসংকুল ও সমুদ্রবেষ্টিত, আফ্রিকা ছিল ইউরোপীয়দের কাছে অজ্ঞাত। তখনও পর্যন্ত এই মহাদেশে সভ্য জগতের কোনো মানুষের পা পড়েনি। তাই আফ্রিকাকে ‘অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ’ বলা হয়।

৩.৫ সাম্রাজ্যবাদ বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ যখন কোনো শক্তিশালী জাতি বা রাষ্ট্র অপেক্ষাকৃত দুর্বল কোনো জাতি বা রাষ্ট্রের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে এবং সেখানকার রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি প্রভৃতি সবকিছুর ওপর নিজেদের প্রভাব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালায় তখন তাকে সাম্রাজ্যবাদ বলে।

৩.৬ ‘রক্তাক্ত রবিবার’ কী ?

উত্তরঃ ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ৯ জানুয়ারি রবিবার রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে প্রায় ৬ হাজার শ্রমিক শান্তিপূর্ণ মিছিল করেন। শ্রমিকদের দাবি ছিল- [1] রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তিদান, [2] সংবিধান সভা আহ্বান, [3] শ্রমিকদের কাজের সময় ৮ ঘণ্টা নির্ধারণ। এই মিছিলে জারের পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে ১ হাজারের বেশি শ্রমিক নিহত এবং ২ হাজারের বেশি আহত হয়। এই ঘটনা ‘রক্তাক্ত রবিবার’ নামে পরিচিত। শ্রমিকদের এই মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ফাদার গ্যাপন নামে এক ধর্মযাজক। পরে জানা যায় যে, তিনি পুলিশের চর ছিলেন।

৩.৭ এপ্রিল থিসিস কী ?

উত্তরঃ রাশিয়ায় ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের মার্চ বিপ্লবের দ্বারা বুর্জোয়া শ্রেণি শাসনক্ষমতা দখল করে। এর পর বলশেভিক নেতা লেনিন নির্বাসন থেকে রাশিয়ায় ফিরে বলশেভিক কর্মীদের সামনে ১৬ এপ্রিল (১৯১৭ খ্রি.) তাঁর নিজস্ব চিন্তাধারা তুলে ধরেন এবং বুর্জোয়াদের হাত থেকে বলশেভিক কর্মীদের ক্ষমতা কেড়ে নিতে বলেন। এটি ‘এপ্রিল থিসিস’ বা ‘এপ্রিল মতবাদ’ নামে পরিচিত।

৩.৮ ‘চোদ্দো দফা নীতি’ কী ?

উত্তরঃ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র রক্ষার উদ্দেশ্যে মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ জানুয়ারি মার্কিন কংগ্রেসে যে সুনির্দিষ্ট চোদ্দোটি শর্ত ঘোষণা করেন তা ‘চোদ্দো দফা নীতি’ নামে পরিচিত।

৩.৯ উগ্র জাতীয়তাবাদ বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ ঊনবিংশ শতকের শেষ ও বিংশ শতকের প্রথম দিকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এক ধরনের সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী ভাবধারা এক প্রচারিত হয়। এই জাতীয়তাবাদীগণ নিজ জাতিকে শ্রেষ্ঠ ও অন্যান্য জাতিগুলিকে নিকৃষ্ট বলে প্রচার করে এবং অন্য জাতির ওপর বলপ্রয়োগ করে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার কথা বলে। এই ভাবধারা ‘উগ্র জাতীয়তাবাদ’ নামে পরিচিত।

বিভাগ – ‘ঘ’

৪। নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির সাত আটটি বাক্যে উত্তর দাও : ( যে-কোনো দুটি) ৪×২=৮

৪.১জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বিসমার্ক কী নীতি গ্রহণ করেন ?

উত্তরঃ চতুর্থ ফ্রেডরিখ উইলিয়ামের পরবর্তী রাজা প্রথম উইলিয়াম (১৮৬১- ১৮৮৮ খ্রি.) প্রাশিয়ার নেতৃত্বে জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী ছিলেন।

জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বিসমার্কের নীতি ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে অটো ফন বিসমার্ক (১৮৬২-১৮৯০ খ্রি.) প্রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হলে প্রথম উইলিয়ামের লক্ষ্য বাস্তবায়িত হওয়ার সুযোগ পায়। জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে তিনি নিম্নলিখিত নীতি গ্রহণ করেন—

(ক) রাজতন্ত্রে বিশ্বাসঃ রাজতন্ত্রে বিশ্বাসী বিসমার্কের উদ্দেশ্য ছিল প্রাশিয়ার রাজতন্ত্রের অধীনে সমগ্র জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং প্রাশিয়ার রাজতান্ত্রিক শাসনের ভাবধারায় জার্মানিকে প্রভাবিত করা।

(খ) রক্ত ও লৌহ নীতিঃ বিসমার্ক গণতান্ত্রিক রীতিনীতির ওপর নয়, ‘রক্ত ও লৌহ নীতি’র ওপর আস্থাশীল ছিলেন। তিনি প্রাশিয়ার আইনসভায় ঘোষণা করেন যে, “বিতর্ক বা ভোটের দ্বারা নয়, রক্ত ও লৌহ নীতির মাধ্যমেই জার্মানির সমস্যার সমাধান হবে।”

(গ) সমারিক শক্তিতে আস্থাঃ বিসমার্ক উপলব্ধি করেন যে, একমাত্র সামরিক শক্তির জোরেই জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এজন্য তিনি প্রতিনিধি সভার মত অগ্রাহ্য করে প্রাশিয়ার সামরিক শক্তি বাড়ানোর উদ্যোগ নেন এবং ৩টি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধের মাধ্যমে সমগ্র জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। যথা— (i) ডেনমার্কের সঙ্গে যুদ্ধ (১৮৬৪ Family খ্রি.), (ii) অস্ট্রিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ (১৮৬৬ খ্রি.), (iii) ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধ (১৮৭১ খ্রি.)।

উপসংহারঃ কূটনীতির জাদুকর বিসমার্ক কূটকৌশল এবং ‘রক্ত ও লৌহ নীতি’র দ্বারা জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। ঐতিহাসিক হ্যাজেন মনে করেন, তাঁর কাছে বাস্তব কূটনীতিই ছিল মুখ্য, ন্যায়নীতি ছিল গৌণ।

৪.২ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ কী ছিল আলোচনা করো।

উত্তরঃ ১৮৭১ থেকে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে ইউরোপে বড়ো ধরনের কোনো যুদ্ধ না হলেও আপাত শান্তির আড়ালে বাতাসে বারুদের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। শান্তির আড়ালে যুদ্ধের এই পরিস্থিতি ‘সশস্ত্র শান্তির যুগ’ নামে পরিচিত। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপে শান্তি ভঙ্গ হয় এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে৷

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বা মহাযুদ্ধের (১৯১৪-১৮ খ্রি.) বিভিন্ন কারণ ছিল : যেমন—

১. বলকান জাতীয়তাবাদঃ এশিয়ার অটোমান তুর্কি শাসকদের অধীনস্থ পূর্ব ইউরোপের বলকান অঞ্চলের বিভিন্ন জাতি স্বাধীনতার দাবিতে ক্রমেই সোচ্চার হয়ে ওঠে। সার্ব জাতি অধ্যুষিত বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা নামে দুটি প্রদেশ সার্বিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে চাইলেও বার্লিন চুক্তির (১৮৭৮ খ্রি.) দ্বারা তাদের জোর করে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। তাই প্রদেশ দুটিতে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়।

২. ঔপনিবেশিক সংঘাতঃ ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে আগে শিল্পায়ন ঘটায় তারা এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন স্থানে উপনিবেশ বিস্তারে এগিয়েছিল। জার্মানি-সহ বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে পরে শিল্পায়ন ঘটায় তারা সেই শিল্পজাত দ্রব্যের বাজার অন্বেষনের জন্য উপনিবেশ দখল করতে গেলে অন্যদের সঙ্গে তাদের সংঘাত বেধে যায়।

৩. মরক্কো সংকটঃ ফ্রান্স আফ্রিকার মরক্কোয় উপনিবেশ স্থাপনের চেষ্টা করলে জার্মান কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম ফ্রান্সের বিরুদ্ধে মরক্কোর সুলতানের পাশে দাঁড়ান এবং ‘প্যান্থার’ নামে একটি যুদ্ধজাহাজকে মরক্কোর আগাদির বন্দরে ঢুকিয়ে দেন। ফলে ফ্রান্স ও জার্মানির সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

৪. সেরাজেভোর হত্যাকাণ্ডঃ অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্কডিউক ফার্দিনান্দ ও তাঁর স্ত্রী সোফিয়া সার্ব জাতি অধ্যুষিত বসনিয়া সফরে এলে (১৯১৪ খ্রি.) তারা সেরাজেভো শহরে এক বসনীয় ছাত্রের হাতে নিহত হন (২৮ জুন)। অস্ট্রিয়া এই হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রতিবেশী সার্বিয়াকে দায়ী করে বিভিন্ন কঠোর শর্তাদি সহ একটি চরমপত্র পাঠায়৷

উপসংহারঃ অস্ট্রিয়ার চরমপত্রের কিছু শর্ত মানলেও অবশিষ্ট শর্তগুলির বিষয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে একটি আন্তর্জাতিক বৈঠক ডাকার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু অস্ট্রিয়া এই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেড আক্রমণ করে। কিছুদিনের মধ্যে ইউরোপ ও ইউরোপের বাইরের বিভিন্ন রাষ্ট্র ভিন্ন ভিন্ন বিবদমান পক্ষে যোগ দিলে তা বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হয়।

৪.৩ ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে অর্থনৈতিক মহামন্দার প্রধান কারণগুলি লেখো।

উত্তরঃ ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকায় তীব্র অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয় যা শীঘ্রই ইউরোপ তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। এই অর্থনৈতিক সংকট ‘মহামন্দা’ নামে পরিচিত।

মহামন্দার কারণ : ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে অর্থনৈতিক মহামন্দা শুরু হওয়ার বিভিন্ন কারণ ছিল। যেমন—

১. উৎপাদন বৃদ্ধিঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আমেরিকায় খনিজ সম্পদ এবং শিল্প উৎপাদন প্রচুর বৃদ্ধি পায়। এবং উৎপাদিত এই বিপুল পরিমাণ পণ্য শুধু নিজের দেশে বিক্রি করা সম্ভব ছিল না। ফলে প্রচুর শিল্পসমাগ্রী উদ্বৃত্ত হয়ে পড়ে এবং শিল্পপতিরা উৎপাদনের হার যথেষ্ট কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়।

২.রপ্তানি হ্রাসঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও তার আগে ইউরোপে আমেরিকায় উৎপাদিত শিল্পদ্রব্য ও ভোগ্যপণ্য বিক্রির ভালো বাজার ছিল। কিন্তু যুদ্ধের পরবর্তীকালে ইউরোপীয় দেশগুলি নিজেরাই শিল্পসামগ্রী ও ভোগ্যপণ্য উৎপাদন করতে থাকে। ফলে ইউরোপে মার্কিন পণ্য রপ্তানি যথেষ্ট হ্রাস পেয়ে মার্কিন অর্থনীতি বড়ো ধাক্কা খায়।

৩. কৃষকদের দুর্দশাঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বাজারে কৃষিপণ্যের চাহিদা ও মূল্য উভয়ই দ্রুত কমতে থাকে। ফলে কৃষকরা সীমাহীন অর্থনৈতিক দুর্দশার শিকার হয়। উৎপাদিত পণ্য বিক্রি না হওয়ায় বা পণ্য বিক্রি করে যথার্থ দাম না পাওয়ায় কৃষকরা তাদের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়।

৪. শেয়ার বাজারে ধসঃ ১৯২০র দশকে বহু মার্কিন নাগরিক শেয়ার বাজারে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই বাজারে শেয়ারের দাম ক্রমশ কমতে থাকে। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর আমেরিকার শেয়ার বাজারে ভয়ানক ধস নামে। ফলে মার্কিন অর্থনীতি সংকটের সম্মুখীন হয়।

৫. স্বর্ণ-সংকটঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ইউরোপের বহু দেশ নিজের দেশের সোনা আমেরিকায় রপ্তানির বিনিময়ে আমেরিকা থেকে নিজেদের প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী ক্রয় করে। এভাবে ইউরোপের সোনা আমেরিকায় চলে যায়। কিন্তু যুদ্ধের পর বহু দেশ আমরিকা থেকে আমদানি বন্ধ করে দিয়ে নিজে দেশের সোনা ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু প্রেরণ বন্ধ করে। ফলে মার্কিন অর্থনীতির ক্ষতি হয়।

উপসংহারঃ ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের মহামন্দা আমেরিকায় চরম সংকটের সৃষ্টি করে। আমেরিকায় ব্যাংক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ব্যাংক থেকে নিজেদের গচ্ছিত টাকা ফেরত না পেয়ে বহু আমানতকারী নিঃস্ব হয়। শিল্প- বাণিজ্যের প্রভূত ক্ষতি হলে দেশে তীব্র বেকার সমস্যা দেখা দেয়। এই মন্দা আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ওপর বহুমুখী প্রভাব ফেলে। ঐতিহাসিক ই এইচ কার বলেছেন যে, এর ফলে ‘অর্ধেক ইউরোপ দেউলিয়া হয়ে যায় এবং বাকি অর্ধেক দেউলিয়া হওয়ার অবস্থার সম্মুখীন হয়।’

৪.৪ ফ্রান্সে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের (১৮৪৮ খ্রি.) কারণগুলি কী ছিল ?

উত্তরঃ দশম চার্লসের রাজত্বকালে ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে মাত্র তিন দিনের রক্তপাতহীন জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্রান্সের অলিয়েন্স বংশের সূচনা হয় এবং এই বংশের রাজা লুই ফিলিপ ফ্রান্সের সিংহাসন লাভ করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজতন্ত্র ‘জুলাই রাজতন্ত্র’ নামে পরিচিত। ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলে লুই ফিলিপ তথা জুলাই রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং ফ্রান্সে ‘দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের কারণ : বিভিন্ন ঐতিহাসিক এই বিপ্লবের জন্য বিভিন্ন কারণকে দায়ী করেন। যেমন—

১. শ্রমিকদের ক্ষোভঃ ফ্রান্সে শ্রমিকদের অধিক সময় খাটানো, কম মজুরি প্রদান, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস প্রভৃতির ফলে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। সরকার শ্রমিক কল্যাণে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় তারা ক্ষুব্ধ ছিল। লুই রাঁ, সাঁ সিমোঁ প্রমুখ সমাজতান্ত্রিক নেতা শ্রমিকদের সংঘবদ্ধ করতে এগিয়ে আসেন।

২. ১৮৪০-এর দশকে খরা, শস্যহানি প্রভৃতির ফলে ফ্রান্স তীব্র খাদ্য ও অর্থনৈতিক সংকটের শিকার হয়। শিল্প ও বাণিজ্যে মন্দা, মূল্যবৃদ্ধি এবং বেকার সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করে। সরকার এই সংকটের সমাধানে ব্যর্থ হলে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ শুরু হয়ে যায়।

৩. ভোটাধিকারের দাবিঃ লুই ফিলিপের রাজত্বে ফরাসি জাতি যখন হতাশাগ্রস্ত, তখন থিয়ার্স, লা-মাটিন প্রমুখ নেতা ভোটাধিকার সম্প্রসারণ এবং আইনসভার নির্বাচনে দুর্নীতি বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনকারীদের দাবিগুলি লুই ফিলিপের প্রধানমন্ত্রী গিজো অগ্রাহ্য করলে প্যারিসে এক জনসভা (২২
ফেব্রুয়ারি, ১৮৪৮ খ্রি.) অনষ্ঠিত হয়। কিন্তু পুলিশ এই জনসভা ভেঙে দেয়।

উপসংহারঃ প্যারিসের জনসভা পুলিশ ভেঙে দিলে শ্রমিকরা রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড গড়ে তোলে। গিজোর বাসভবনের সামনে বিক্ষোভরত জনতার ওপর রক্ষীরা গুলি চালালে ২৩ জন নিহত হয়। এই ঘটনায় প্যারিস-সহ সারা দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। আন্দোলনের চাপে লুই ফিলিপ সিংহাসন ত্যাগ করে ইংল্যান্ডে আশ্রয় নেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি ফ্রান্সে দ্বিতীয়বারের জন্য প্রজাতন্ত্র ঘোষিত হয়। এভাবে ফেব্রুয়ারি বিপ্লব সম্পন্ন হয়।

বিভাগ – ‘ঙ’

৫। নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির পনেরো-ষোলোটি বাক্যে উত্তর দাও : ( যে-কোনো একটি) ৮×১=৮

৫.১ ইটালির ঐক্য আন্দোলনে জোসেফ ম্যাৎসিনি ও তাঁর ইয়ং ইটালি আন্দোলনের ভূমিকা উল্লেখ করো।

উত্তরঃ প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি ইটালি ফরাসি বিপ্লবের (১৭৮৯ খ্রি.) আগে বিভিন্ন ছোটোবড়ো পরস্পর-বিরোধী রাজ্যে বিভক্ত ছিল। ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন এই রাজ্যগুলি জয় করে ঐক্যবদ্ধ করলেও তাঁর পতনের পর ভিয়েনা বন্দোবস্তের দ্বারা ইটালিকে আবার বিভিন্ন রাজ্যে বিভক্ত করে সেখানে অস্ট্রিয়া-সহ বিভিন্ন বিদেশি শক্তির আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা হয়।

জোসেফ ম্যাৎসিনি ও ইয়ং ইটালি আন্দোলনঃ ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ইটালির জাতীয়তাবাদীরা রাজনৈতিক ঐক্যের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন জোসেফ ম্যাৎসিনি (১৮০৫-২৭২ খ্রি.)। ঐতিহাসিক গ্রেনভিলের মতে, ম্যাৎসিনি ছিলেন “ইটালির প্রজাতান্ত্রিক ঐক্যের মস্তিষ্ক এবং বিধিপ্রেরিত নায়ক।”

(১) প্রথম জীবনঃ ম্যাৎসিনি ছিলেন দেশপ্রেমিক, সুলেখক, চিন্তাবিদ, বাগ্মী ও বিপ্লবী। তিনি ইটালির জেনোয়া প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন (১৮০৫ খ্রি.)। অল্প বয়সেই তিনি স্বাধীন ও ঐক্যবদ্ধ ইটালির স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। প্রথম জীবনে তিনি কার্বোনারি নামে এক গুপ্ত সমিতিতে যোগ দিয়ে ইটালিকে বিদেশি শাসনমুক্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু শীঘ্রই এই আন্দোলনের দুর্বলতা উপলব্ধি করে তিনি এই দল ত্যগ করেন। বিদ্রোহে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে কারাদণ্ড ও নির্বাসন দেওয়া হয়।

(২) আদর্শঃ ম্যাৎসিনি উপলব্ধি করেন যে, ইটালির ঐক্যের সবচেয়ে বড়ো বাধা হল অস্ট্রিয়া। অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি ইটালির যুবশক্তিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুরোধ করেন। তাঁর আদর্শ ছিল বিদেশি শক্তির সহায়তা ছাড়া ইটালিবাসী রক্ত ঝরিয়ে দেশে স্বাধীন প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে।

(৩) ইয়ং ইটালি দল গঠনঃ দেশবাসীকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে ম্যাৎসিনি নির্বাসিত অবস্থায় ফ্রান্সের মার্সাই শহরে ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে ‘ইয়ং ইটালি’ বা ‘নব্য ইটালি’ নামে যুবদল প্রতিষ্ঠা করেন। এই দল শিক্ষা, আত্মত্যাগ ও চরিত্র নিষ্ঠার দ্বারা দেশবাসীর মধ্যে জাতীয়তাবোধের প্রসার ঘটানোর উদ্যোগ নেয়। এই দল শীঘ্রই অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই দলের সদস্যসংখ্যা ৩০ হাজারে পৌঁছায়। ম্যাৎসিনি ইয়ং ইটালি’ নামে একটি পত্রিকাও প্রকাশ করেন।

(৪) ফেব্রুয়ারি বিপ্লবঃ ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে ফেব্রুয়ারি বিপ্লব শুরু হলে ইটালিতেও ব্যাপক জাগরণ দেখা দেয়। ভেনিসে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। নেপল্স, মিলান, লম্বার্ডি প্রভৃতি রাজ্যেও তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। পিডমন্ট-সার্ডিনিয়ার রাজা চার্লস অ্যালবার্ট অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। এসময় ম্যাৎসিনি নির্বাসন ছেড়ে ইটালিতে ফিরে এসে ইয়ং ইটালির সদস্যদের নিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাঁর নেতৃত্বে রোম ও টাস্কানিতে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

(৫) ব্যর্থতাঃ সংগঠনের অভাব, অস্ট্রিয়া ও ফরাসি শক্তির তীব্র দমননীতির ফলে ইয়ং ইটালির আন্দোলন স্তব্ধ হয়। শেষপর্যন্ত তাঁর আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যায়। রোম ও টাস্কানির প্রজাতন্ত্র ধ্বংস হয়। ম্যাৎসিনি ভগ্নহৃদয়ে বাকি জীবন লন্ডনে কাটান।

উপসংহারঃ ম্যাৎসিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু তিনি ইটালিবাসীর মনে দেশপ্রেমের যে আগুন জ্বালিয়েছিলেন তা পরবর্তীকালে ইটালির ঐক্য আন্দোলনকে শক্তিশালী করে। ম্যাৎসিনির বিফলতা ছিল এক মহান বিফলতা মাত্র। ঐতিহাসিক লিপসন বলেছেন যে, “নতুন ইটালির স্রষ্টাদের মধ্যে ম্যাৎসিনি এক অবিস্মরণীয় স্থান অধিকার করে আছেন।”

৫.২ ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হওয়ার কারণগুলি কী ছিল ?

উত্তরঃ ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হয়। মহাদেশীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম, হল্যান্ড, রাশিয়া প্রভৃতি দেশে শিল্পায়ন শুরু হয় আরও ৫০ থেকে ১০০ বছর পর।

ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম / মহাদেশীয় ভূখণ্ডে দেরিতে শিল্পায়ন ঘটার কারণ—

সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হওয়ার বা মহাদেশীয় ভূখণ্ডে শিল্পায়ন দেরিতে শুরু হওয়ার কারণগুলি ছিল—

১. অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশঃ ইংল্যান্ডে—[i] কয়লা ও লোহার প্রাচুর্য, [ii] বস্ত্রশিল্পের অনুকূল স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া, [iii] তীব্র বায়ু ও জলশক্তি শিল্পের বিকাশে যথেষ্ট সহায়তা করেছিল। এতকিছু প্রাকৃতিক সুবিধা একত্রে মহাদেশীয় ভূখণ্ডের দেশগুলিতে ছিল না।

২. বাজারঃ ইংল্যান্ড নিজের দেশে বিক্রির পর তার উদ্‌বৃত্ত শিল্পপণ্য তার বিভিন্ন উপনিবেশের বাজারগুলিতে বিক্রির সুযোগ পেয়েছিল। উপনিবেশের অভাবে অন্যান্য দেশগুলি সে সুযোগ পায়নি।

৩. সুলভ শ্রমিকঃ অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডে জনসংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ইংল্যান্ডের কারখানাগুলিতে প্রচুর সংখ্যায় সুলভ শ্রমিকের যথেষ্ট অভাব ছিল।

৪. কৃষির অগ্রগতিঃ অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডে কৃষি উৎপাদনও যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। ফলে—(i) শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, (ii) শ্রমিকদের জন্য সস্তায় খাদ্যের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়, (iii) কৃষকদের শিল্পদ্রব্য কেনার চাহিদা বাড়ে। কৃষিক্ষেত্রে এতটা অগ্রগতি মহাদেশীয় ভূখণ্ডের দেশগুলিতে ঘটেনি।

৫. বাণিজ্যের গুরুত্ব বৃদ্ধিঃ ইংল্যান্ড সপ্তদশ শতকের মধ্যেই কৃষিনির্ভর রাষ্ট্র থেকে বাণিজ্যনির্ভর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। বিদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ফলে ইংল্যান্ডের অর্থনীতি খুবই শক্তিশালী হয়ে ওঠায় তারা শিল্প প্রতিষ্ঠায় বিপুল অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ পায়। অন্যান্য দেশগুলির বাণিজ্যে এরূপ সমৃদ্ধি আসেনি।

৬. যোগাযোগ ও পরিবহনঃ (i) সমুদ্রবেষ্টিত ইংল্যান্ডের নৌশক্তি ছিল। বিশ্বে সর্বশ্রেষ্ঠ পণ্যবোঝাই ব্রিটিশ জাহাজগুলি সমুদ্রপথে পৃথিবীর সব দেশে অনায়াসে যাতায়াত করতে পারত। (ii) দেশের উপকূলে অবস্থিত অসংখ্য বন্দর থেকে খাল ও নদীপথে দেশের অভ্যন্তরে পণ্য পরিবহনের সুবিধা ছিল যথেষ্ট উন্নত। অন্যান্য দেশগুলির যোগাযোগ ব্যবস্থা ইংল্যান্ডের তুলনায় খুবই পিছিয়ে ছিল।

৭. বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারঃ অষ্টাদশ শতকে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ইংল্যান্ডের শিল্পায়নে যথেষ্ট সহায়তা করেছিল। যেমন—(i) উড়ন্ত মাকু, স্পিনিং জেনি, ওয়াটার ফ্রেম, মিউল, পাওয়ার লুম প্রভৃতি যন্ত্রগুলির বস্ত্রশিল্পের যথেষ্ট উন্নতি ঘটায়, (ii) বাষ্পীয় ইঞ্জিন, ব্লাস্ট ফার্নেস, নিরাপত্তা বাতি প্রভৃতির আবিষ্কার কলকারখানাগুলি চালানোর পক্ষে সহায়ক হয়। অন্যান্য দেশ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলি ইংল্যান্ডের মতো ব্যবহারের সুযোগ পায়নি৷

উপসংহারঃ ইংল্যান্ডে শিল্পায়নের সব উপাদানই ছিল বলে সেদেশে শিল্পায়নের বিকাশ সর্বপ্রথম শুরু হয়েছিল। অন্যান্য দেশে দেখা যায় যে, একটি উপাদানের অস্তিত্ব থাকলেও অন্য একটি উপাদানের অস্তিত্ব না থাকায় তারা ইংল্যান্ডের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছিল।

৫.৩ রুশ / নভেম্বর / বলশেভিক বিপ্লবের (১৯১৭ খ্রি.) বিভিন্ন কারণগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ রুশ জার দ্বিতীয় নিকোলাসের রাজত্বকালে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের রুশ / নভেম্বর / বলশেভিক বিপ্লব রাশিয়া তথা বিশ্বের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। এই বিপ্লব শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষদের প্রাপ্য অধিকার দান করে রাশিয়ায় এক শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করে।

রুশ / নভেম্বর / বলশেভিক বিপ্লবের কারণঃ

১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের রুশ/নভেম্বর/বলশেভিক বিপ্লবের বিভিন্ন কারণ ছিল। যেমন—

১. কৃষকদের দুরবস্থাঃ রাশিয়ায় ভূমিদাস প্রথার অবসান (১৮৬১ খ্রি.) ঘটলেও কৃষকরা জমির মালিকানা না পাওয়ায় তাদের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। কৃষকরা এখন গ্রামীণ ‘মির’গুলির শোষণের শিকার হয়৷

২. শ্রমিকদের দুরবস্থাঃ রাশিয়ায় সামান্য বেতনে সীমাহীন পরিশ্রম, অনাহার-অর্ধাহার, বস্তি-জীবনের দুরবস্থা, শোষণ- অত্যাচার শ্রমিকদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। তারা উপলব্ধি করে যে, জারতন্ত্রের পতন না ঘটলে শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতির কোনো আশা নেই।

৩. অধিকারহীনতাঃ জারতন্ত্রের শাসনে ভোটাধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বিভিন্ন নাগরিক অধিকার থেকে রাশিয়ার মানুষ বঞ্চিত ছিল। জারগণ বেত্রাঘাত, আটক, সাইবেরিয়ায় নির্বাসন প্রভৃতি শাস্তির মাধ্যমে দেশবাসীর যাবতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষা দমন করে রাখতেন।

৪. রাসপুটিনের ভূমিকাঃ অপদার্থ রুশ জার দ্বিতীয় নিকোলাসের শাসনব্যবস্থায় রাসপুটিন নামে এক ভণ্ড সন্ন্যাসীর ব্যাপক প্রভাব ছিল। শাসন পরিচালনা, আমলা-সেনাপতি-মন্ত্রী নিয়োগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে রাসপুটিনের ব্যাপক প্রভাব জনমানসে ক্ষোভের সঞ্চার করে।

৫. ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবঃ ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব ব্যর্থ হলেও তা রুশ জনগণের মধ্যে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে। এই বিপ্লব ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের পটভূমি প্রস্তুত করে। বিপ্লবী নেতা ট্রটস্কি বলেছেন, “১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব ছিল ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের ‘মহড়া।”

৬. রুশীকরণ নীতিঃ জারতন্ত্রের শাসনাধীনে রাশিয়া ছিল বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর কারাগার’। জার রাশিয়ায় বসবাসকারী পোল, ফিন, তুর্কি, আর্মেনীয়, জর্জীয়, ইউক্রেনীয় প্রভৃতি জাতিগোষ্ঠীগুলির নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি মুছে দিয়ে তাদের ওপর রুশ ভাষা ও সংস্কৃতি চাপানোর চেষ্টা করেন।

৭. বুদ্ধিজীবীদের অবদানঃ রুশ সাহিত্যিক টলস্টয়, তুর্গেনিভ, পুশকিন, গোর্কি প্রমুখের উপন্যাসগুলি রুশ যুবকদের চিন্তার জগতে পরিবর্তন আনে। বুকানিন এবং কার্ল মার্কসের চিন্তাধারাও জনগণের মনে বৈপ্লবিক চেতনা জাগ্রত করে।

৮. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবঃ রাশিয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগ দিলে দেশে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। প্রায় ১ কোটি সৈন্যের খাবার, বেতন ও রসদ জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়ায় প্রায় ৬০ লক্ষ রুশ সেনার মৃত্যু, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব প্রভৃতি রাশিয়ায় ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।

৯. এপ্রিল থিসিসঃ এক ভয়ংকর পরিস্থিতিতে রাশিয়ায় প্রজাতান্ত্রিক সরকারের প্রধানমন্ত্রী কেরেনস্কি বলশেভিকদের ওপর তীব্র অত্যাচার চালান। এই সময় বলশেভিক নেতা লেনিন বলশেভিক কর্মীদের সামনে তাঁর বিখ্যাত ‘এপ্রিল থিসিস’ (১৯১৭ খ্রি.) ঘোষণা করেন এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পরামর্শ দেন।

উপসংহারঃ লেনিনের পরামর্শে ট্রটস্কি-র নেতৃত্বে ‘লালফৌজ’ রাজধানী পেট্রোগ্রাড দখল করে। কেরেনস্কি ভয়ে পালিয়ে গেলে বলশেভিকরা ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে রাশিয়ার শাসনক্ষমতা দখল করে রাশিয়া বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। এই সমাজতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন ভি আই লেনিন।

📌আরও পড়ুনঃ

📌নবম শ্রেণি ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র Click Here

📌 নবম শ্রেণির বাংলা প্রশ্নোত্তর Click Here

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

Leave a Reply

  • Post comments:0 Comments
  • Reading time:17 mins read