পাতাবাহার
বাংলা | পঞ্চম শ্রেণি
তালনবমী গল্পের প্রশ্ন উত্তর পঞ্চম শ্রেণি বাংলা | Talnobomi Golper Question Answer Class 5 Bengali wbbse
📌 পঞ্চম শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর Click Here
📌পঞ্চম শ্রেণি ইংরেজি প্রশ্নোত্তর Click Here
📌 পঞ্চম শ্রেণি ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র Click Here
তালনবমী
—বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
বিষয় সংক্ষেপ : ভাদ্রমাসে টানা পনেরো দিনের বর্ষায় সামান্য আয়ের গৃহস্থ ক্ষুদিরাম ভাজের বাড়িতে শুরু হয়েছে অনাহার। ক্ষুদিরামের দুই ছেলে নেপাল ও গোপাল খিদের জ্বালায় অস্থির হয়ে ওঠে। সবাই আশা করে থাকে কবে ভাদ্রমাস শেষ হয়ে আউশ ধান ঘরে আসবে এবং ছেলেপুলেরা দু-বেলা পেটভরে খেতে পাবে।
এমন সময় পাড়ার শিবু বাঁড়ুজ্যের ছেলে চুনির থেকে নেপাল জানতে পারে আসছে মঙ্গলবার জটি পিসিমাদের বাড়িতে তালনবমীর ব্রত আছে, সেখানে গ্রামের সবাই নিমন্ত্রণ পাবে। শুনে তারা দুই ভাই খুব খুশি হয়। আশা করে থাকে যে তারাও ওইদিন নিমন্ত্রণ পাবে। ব্রত উপলক্ষে জটি পিসিমাদের বাড়িতে অনেক তাল লাগবে, এ কথা বুঝতে পেরে নেপাল সেখানে তাল বিক্রি করে পয়সা উপার্জনের চেষ্টা করে। কিন্তু ছোট্ট গোপালের মনে ভয় হয় যে, তাল বিক্রি করে পয়সা নিলে হয়তো জটি পিসিমা তাদের নিমন্ত্রণ করবে না। তাই সে ভোরবেলা উঠে তালদিঘি থেকে তাল সংগ্রহ করে জটি পিসিমাদের বাড়িতে দিয়ে আসে। আর স্বপ্ন দেখতে থাকে তালনবমী উপলক্ষ্যে জটি পিসিমাদের বাড়িতে নানা রকমের সুখাদ্য খাবার খাওয়ার। মায়ের ডাকে ঘুম থেকে জেগে উঠে সে জানতে পারে যে, সেদিনই মঙ্গলবার অর্থাৎ তালনবমী ব্রত। কিন্তু তাদের বাড়িতে কোনো নিমন্ত্রণ আসেনি। পাড়ার প্রায় সকলেই তার চোখের সামনে দিয়ে এক এক করে জটি পিসিমাদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ খেতে যায়। কুড়োরামের কাছে সে জানতে পারে যে, জটি পিসিমা নাকি বেছে বেছে নিমন্ত্রণ করেছে। সংসারের এরকম অবিচার দেখে ছোট্ট গোপালের দু-চোখ জলে ভরে ওঠে।
নামকরণ : সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো নামকরণ। নামের মধ্য দিয়েই পাঠক রচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা লাভ করে। তাই সাহিত্যকর্মকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য নামকরণ অপরিহার্য।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘তালনবমী’ গল্পে গ্রামীণ জীবনের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র পাওয়া যায়। ভাদ্রমাসের টানা বর্ষায় ক্ষুধার্ত গরিব পরিবারগুলির অসহায় অবস্থার কথা এখানে ফুটে উঠেছে। ক্ষুদিরাম ভাজের দুই ছেলে নেপাল ও গোপাল শুনেছিল জটি পিসিমাদের বাড়িতে তালনবমী ব্রত উপলক্ষ্যে নিমন্ত্রণ হবে। তারা ভেবেছিল, তাদেরও সেখানে ডাকা হবে। নেপাল তাল বিক্রি করে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করলেও, গোপাল মনে করেছিল তাতে হয়তো নিমন্ত্রণ পাওয়া যাবে না। তাই সে ভোরে উঠে তাল কুড়িয়ে জটি পিসিমাদের বাড়িতে দিয়ে আসে। কিন্তু মঙ্গলবার এলেও, গোপালদের বাড়িতে কোনো নিমন্ত্রণ যায়নি। অন্যরা সবাই আনন্দে খেতে গেলেও গোপাল শুধু আশা আর স্বপ্ন নিয়েই রয়ে গেল।
গল্পে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তালনবমী ব্রত এবং তাকে কেন্দ্র করেই ঘটনাগুলি গড়ে উঠেছে। তাই এই গল্পের নাম ‘তালনবমী’ যথার্থ এবং সার্থক হয়েছে।
হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর : তালনবমী পঞ্চম শ্রেণির বাংলা | Hate Kolome Question Answer Talnobomi Class 5 Bengali wbbse
১. জেনে নিয়ে নিজের ভাষায় লেখো :
১.১ কোন মাসে তাল পাকে ?
উত্তরঃ শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে তাল পাকে।
১.২ আউশ ধান কোন ঋতুতে ঘরে ওঠে ?
উত্তরঃ আউশ ধান ভাদ্র মাসের শেষে শরৎ ঋতুতে ঘরে ওঠে।
১.৩ গ্রাম জীবনে পালিত হয়, এমন দুটি ব্রত, পরব বা অনুষ্ঠানের নাম লেখো।
উত্তরঃ গ্রাম জীবনে পালিত হয় এমন দুটি ব্রতের নাম ইতু পূজা, নবান্ন, চরক ইত্যাদি।
১.৪ বর্ষাকালে অন্ধকারে চলাফেরা করা ভালো নয় কেন ?
উত্তরঃ বর্ষাকালে সাপেদের গর্ত সব জলে ভরে থাকে। চলাফেরার পথে সাপের উপদ্রব বেড়ে যায়। সেইজন্য বর্ষাকালে অন্ধকারে চলাফেরা করা ভালো নয়।
১.৫ তাল থেকে তৈরি কোন্ কোন্ খাবার তোমার প্রিয় ?
উত্তরঃ তাল থেকে তৈরি তালের বড়া, তালক্ষীর, তালের পরোটা আমার প্রিয়।
২। নীচের এলোমেলো বর্ণগুলো সাজিয়ে শব্দ তৈরি করো :
হু দু র ব তীর > বহুদূরবর্তী
অ ম স্ক ন না > অন্যমনস্ক,
লা বা র ম ঙ্গ > মঙ্গলবার।
র পা ত্ত উ ড়া > উত্তরপাড়া,
ল পি তি লি টু > তিলপিটুলি,
কু ঠা খো র কা > খোকাঠাকুর।
৩। অর্থ না বদলে নীচের বাক্যগুলো শব্দঝুড়ির সাহায্য নিয়ে অন্যভাবে লেখো (একটা তোমার জন্য করে দেওয়া হল) :
৩.১ ক্ষুদিরাম ভট্টচাযের বাড়ি দুদিন হাঁড়ি চড়েনি।
যেমন— ক্ষুদিরাম ভটচাযের বাড়ি দুদিন রান্না হয়নি।
[বৃষ্টির / বর্ষার, খিদে পেয়েছে, সাহস হয় না, রাত কাটবে, হেলে পড়ছে।]
৩.২ কতক্ষণে যে রাত পোহাবে।
উত্তরঃ কতক্ষণে যে রাত কাটবে।
৩.৩ কিন্তু সাহসে কুলোয় না তার।
উত্তরঃ কিন্তু সাহস হয় না তার।
৩.৪ আমারও পেট চুঁই চুঁই করছে।
উত্তরঃ আমারও খুব খিদে পেয়েছে।
৩.৫ বাঁশঝাড় নুয়ে পড়ছে বাদলার হাওয়ায়।
উত্তরঃ বাঁশঝাড় হেলে পড়ছে বাদলার হাওয়ায়।
৪. ঘটনাক্রম অনুযায়ী সাজিয়ে লেখো :
৪.১ ঘুমের মধ্যে ওসব কী হিজিবিজি স্বপ্ন সে দেখছিল।
৪.২ ক্ষুদিরাম ভটচাজের বাড়ি দুদিন হাঁড়ি চড়েনি।
৪.৩ গোপাল একছুটে চলে গেল গ্রামের পাশে সেই তালদিঘির ধারে।
৪.৪ গোপাল বললে, ‘কোথায় যাচ্ছিস তোরা ?’
৪.৫ ‘ওরা নেমন্তন্ন করবে, দেখিস দাদা, কাল তো তালনবমী।’
উত্তরঃ
৪.২ ক্ষুদিরাম ভট্চাজের বাড়ি দুদিন হাঁড়ি চড়েনি।
৪.৩ গোপাল একছুটে চলে গেল গ্রামের পাশে সেই তালদিঘির ধারে।
৪.৫ ‘ওরা নেমন্তন্ন করবে, দেখিস দাদা, কাল তো তালনবমী।’
৪.১ ঘুমের মধ্যে ওসব কী হিজিবিজি স্বপ্ন সে দেখছিল।
৪.৪ গোপাল বললে, ‘কোথায় যাচ্ছিস তোরা।
৫. নির্দেশ অনুসারে উত্তর দাও।
৫.১ গল্পের নানান জায়গায় খুঁজে দেখো ‘তাল’ নামে ফলটার অনেক ধরনের বিশেষণ খুঁজে পাবে। সবগুলো লেখো।
উত্তরঃ কালো হেড়ে তাল, ভালো তাল, মিশকালো তাল, বড়ো আর কালো কুচকুচে তাল, গোটা-তিনেক ছোটো তাল।
৫.২ ‘মেঘাচ্ছন্ন আকাশ’ কথাটার অর্থ মেঘে ভরা আকাশ। ঠিক এই অর্থটাই বোঝায় এমন আর একটা বিশেষণ গল্পেই আছে। খুঁজে নিয়ে লেখো।
উত্তরঃ মেঘ জমকালো আকাশ।
৬। শব্দঝুড়ি থেকে কোনটি কী ধরনের শব্দ, খুঁজে নিয়ে৷ লেখো :
উত্তরঃ
বিশেষ্য— নেমন্তন্ন, মঙ্গলবার, আকাশ
বিশেষণ— বোকা, রামরাম, মিশকালো, প্রকান্ড, চুঁই চুঁই
সর্বনাম— তার, তিনি
অব্যয়— চলাফেরা
ক্রিয়া— দিয়েছিল
[ শব্দ ঝুড়ি : তার, নেমন্তন্ন, বোকা, নিয়েছিল, মঙ্গলবার, আকাশ, ঝুমকাম, চলাফেরা, প্রকান্ড, তিনি, মিশকালো, চুঁই চুঁই। ]
৭। নীচের বাক্যগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখো কোন্ কোন্ শব্দে তোমার মনে হচ্ছে কাজ শেষ হয়ে গেছে, আর কোন্ কোন্ শব্দ মনে হচ্ছে কাজ এখনও শেষ হয়নি, সেগুলো আলাদা করে লেখো :
৭.১ কদিন ধরে পেট ভরে না খেতে পেরে ওরা দুই ভাবেই সংসারের ওপর বিরক্ত হয়ে উঠেছে।
উত্তরঃ ভরে, খেতে, পেয়ে, হয়ে— কাজ শেষ হয়নি।
উঠেচে— কাজ শেষ হয়ে গেছে।
৭.২ জুটি পিসিমা আর কিছু না বলে তাল দুটো হাতে করে নিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলেন।
উত্তরঃ বলে, করে, নিয়ে, চলে— কাজ শেষ হয়নি।
গেলেন— কাজ শেষ হয়ে গেছে।
৭.৩ রেগে দাঁড়িয়ে উঠে বললে, ‘কেন করবে না আমাদের নেমন্তন্ন?’
উত্তরঃ রেগে, দাঁড়িয়ে, উঠে, বললে— কাজ শেষ হয়নি।
করবে না— কাজ শেষ হয়ে গেছে।
৭.৪ খুব ভোরবেলা উঠে গোপাল দেখলে বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে।
উত্তরঃ উঠে, ঘুমিয়ে— কাজ শেষ হয়নি।
উঠে, দেখলে— কাজ শেষ হয়ে গেছে।
৮. নির্দেশ অনুসারে উত্তর দাও :
৮.১ ‘সদর দোর’ কথাটার মানে জেনে নাও, শব্দটা নিজে কোনো বাক্যে ব্যবহার করো।
উত্তরঃ ‘সদর দোর’ কথাটির অর্থ ‘প্রধান ফটক।’
বাক্য— রাতেরবেলা সদর দোর প্রতিদিন আমি বন্ধ করি।
৮.২ ‘কপাট’ শব্দটির অর্থ লেখো। এই শব্দটা ব্যবহার করে নিজে একটি বাক্য লেখো।
উত্তরঃ কপাট শব্দটির অর্থ ‘দরজার পাল্লা’।
বাক্য— কপাট বন্ধ করে গ্রাম্যবধূ নদীতে জল আনতে যাচ্ছে।
৯. বিপরীতার্থক শব্দ লেখো : সলজ্জ, সুখাদ্য, অন্ধকার, সাধ্য, আগ্রহ।
উত্তরঃ সলজ্জ— নির্লজ্জ। সুখাদ্য— কুখাদ্য। অন্ধকার— আলো। সাধ্য— অসাধ্য। আগ্রহ— অনাগ্রহ।
১০. বাক্যরচনা করো : গৃহস্থ, পিঠে, আশ্চর্য, জোনাকি, তালনবমী।
উত্তরঃ
গৃহস্থ— গৃহস্থ বাড়িতে পূজা-পার্বণ লেগেই থাকে।
পিঠে— পৌষ মাসের সংক্রান্তিতে গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে পিঠে পায়েস হয়।
আশ্চর্য— বর্ষাকালে বিকেলবেলা আকাশে রামধনু দেখে ছোটোরা আশ্চর্য হয়।
জোনাকি — গভীর বনে জোনাকিরা সারারাত আলো দিয়ে যায়।
তালনবমী— তালনবমী ব্রত ভাদ্রমাসের শুক্লা নবমী তিথিতে হয়।
১১. নির্দেশ অনুসারে উত্তর দাও :
১১.১ এ গল্পে বৃষ্টির দুরকম ছবি আছে। ঝমঝম্ আর টিপটিপ। এই শব্দ দুটো ছাড়া কেবল ধ্বনি থেকেই বুঝে নেওয়া যায়, এমন কতকগুলো শব্দ লেখো।
উত্তরঃ ঝিরঝির, টাপুর-টুপুর, টপটপ, ঢিবঢিব, গুড়গুড়, গরগর, ঝরঝর ইত্যাদি।
১১.২ হাওয়ার শব্দ বোঝাচ্ছে এমন গল্প থেকে খুঁজে নিয়ে লেখো।
উত্তরঃ শোঁ শোঁ, হু হু।
১১.৩ গল্পে ‘বাঁড়ুজ্যে, ভটচাজ’— এগুলি কোন কোন পদবি থেকে এসেছে ? এরকম আরও তিনটি পদবী লেখো।
উত্তরঃ গল্পে ‘বাঁড়ুজ্যে’ পদবিটি এসেছে বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে এবং ‘ভাজ’ পদবিটি এসেছে ভট্টাচার্য থেকে।
এরকম আরও তিনটি পদবি হল— মুখোপাধ্যায় > মুখুজ্জে, গঙ্গোপাধ্যায় > গাঙ্গুলি, চট্টোপাধ্যায় > চাটুজ্জে।
১১.৪ পড়েচে, খেয়েচে এই শব্দগুলি কোন কোন শব্দ থেকে এসে এরকম চেহারা পেয়েছে ?
উত্তরঃ পড়েছে, খেয়েছে এই শব্দগুলি যথাক্রমে পড়েছে, খেয়েচে থেকে এসেছে।
১২. নির্দেশ অনুসারে উত্তর দাও :
১২.১ এই গল্পটা কোন ঋতুর, তা বোঝবার অনেকগুলো সূত্র গল্পটার মধ্যে ছড়ানো আছে। আছে মাসের নাম, ব্রতের নাম ইত্যাদি। এ ছাড়াও কোন কোন সূত্র তুমি নিজে খুঁজে পাও লেখো।
উত্তরঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তালনবমী’ গল্পটি বর্ষাঋতুর গল্প। গল্পের শুরুতেই বলা আছে ভাদ্রমাসে টানা পনেরো দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে এবং গল্পে তালনবমী ব্রতের কথাও আছে। এ ছাড়াও কয়েকটি সূত্র গল্পে আছে যা থেকে বোঝা যায় গল্পটিতে বর্ষাঋতুর কথা বলা হয়েছে। সেগুলি হল—
(১) ভাদ্রমাসের শেষে আউশ ধান চাষিদের ঘরে তোলার কথা হয়েছে।
(২) জটি পিসিমা নেপাল ও গোপালকে সাবধান করেছেন-‘অন্ধকারে চলাফেরা করা ভালো নয় বর্ষাকালে’।
(৩) একদিন রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখক বলেছেন- “রাত্রে বৃষ্টি নামে। হু হু বাদলার হাওয়া সেই সঙ্গে।”
(৪) এ ছাড়াও ‘ঝমঝম বর্ষা’, ‘তালনবমী’ ব্রত, ‘তালকুড়োনো’, ‘তালের বড়া’ প্রভৃতির উল্লেখ আছে গল্পে, যা বর্ষাঋতুর কথাই স্মরণ করায়।
১২.২ এ গল্পে দাদা একসময়ে ছোটো ভাইকে বলেছে, ‘একটা বোকা।’ তোমার কি সত্যি মনে হচ্ছে ভাইটা বোকামিই করেছে ? ছোটো ভাই, যার নাম গোপাল, সে যদি তোমার বন্ধু হত, তবে তুমি তাকে কী করতে বলতে ?
উত্তরঃ আমার মনে হয় তালনবমী গল্পে ছোটো ভাই গোপাল মোটেই বোকা নয় বরং সে সাহসী। চরম দারিদ্র্যের মধ্যে তারা দিন কাটায়। ভালো খাবারের কথা তারা ভাবতেই পারে না। এক্ষেত্রে একমাত্র নিমন্ত্রণের আশায় জটি পিসির কাছে তালের বিনিময়ে গোপাল মূল্য নিতে চায়নি।
ছোটো ভাই গোপাল যদি আমার বন্ধু হত তবে আমি তাকে বলতাম মানুষ কেবলমাত্র অর্থকেই মূল্য দেয়। দুঃখী মানুষের দুঃখকে অনুভব করার শক্তি কতজনের আছে। এক্ষেত্রে গোপালের জটি পিসিমার বাড়ি নিমন্ত্রণের আশা করা ঠিক হয়নি।
১২.৩ কী ধরনের বৃষ্টি তোমার পছন্দ এবং কেন তা বুঝিয়ে লেখো।
উত্তরঃ ব্যক্তিগতভাবে আমার মুষলধারে বৃষ্টিই বেশি পছন্দ। সারাদিন ধরে অঝোরে বৃষ্টিতে যে শুধুমাত্র আবহাওয়ার পরিবর্তন হয় তাই নয়, রাস্তাঘাট অনেকটা সময় ব্যাপী অপরিষ্কার থাকে, যার দরুন সাধারণ মানুষের নিত্য জীবনযাপন সামান্য হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। প্রকৃতিতে সতেজতা থাকেই না, বরং নানা রোগের প্রাদুর্ভাবও ঘটে। ক্ষণিকের জন্য ঝোড়ো হাওয়াতে আবহাওয়া অনুকূল হলেও অস্বস্তিকর ভাব কাটে না। মুশলধারে বৃষ্টিতে গ্রীষ্ম প্রকৃতির রিক্ততা শুষ্কতার অবসান ঘটে। গাছের পাতার ধূলিকণা বৃষ্টির ধারায় ধুয়ে যায় এবং প্রকৃতি এক অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়। তা ছাড়া রাস্তায় জল ভর্তি হলে ওই জলে শিশুরা নৌকা ভাসাতে ভীষণ পছন্দ করে।
১৩.১ ‘পথের পাঁচালী’ বইটির লেখক কে?
উত্তরঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
১৩.২ তাঁর লেখা ছোটোদের দুটি বইয়ের নাম লেখো।
উত্তরঃ তাঁর লেখা ছোটোদের দুটি বইয়ের নাম ‘চাঁদের পাহাড়’, ‘তালনবমী’।
১৩.৩ কত সালে তাকে ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ প্রদান করা হয় ?
উত্তরঃ ১৯৫১ সালে।
১৪. পাঠ্য অংশটি পড়ে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
১৪.১ গল্পে মোট কটি শিশুচরিত্রের কথা আছে ? তাদের নাম পরিচয় লিখে তাদের স্বভাব বিষয়ে দুটি করে বাক্য লেখো।
উত্তরঃ তালনবমী গল্পে চারটি শিশুচরিত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
(১) গোপাল— ক্ষুদিরাম ভট্চাজের দশ বছরের ছেলে গোপাল। সে খুব সাহসী। দরিদ্র পরিবারের ছেলে গোপাল সংসারের প্রতি কর্তব্যপরায়ণ ছিল।
(২) নেপাল— গোপালের থেকে দু-বছরের বড়ো ভাই নেপাল বাস্তব বুদ্ধিসম্পন্ন ছিল। সে জটি পিসিকে বিনা পয়সায় তাল বিক্রি করতে রাজি ছিল না।
(৩) কুড়োরাম— গ্রামের দীনু ভটচার্জের ছেলে কুড়োরাম। জটি পিসির বাড়ি তালনবমী ব্রতে আমন্ত্রিতদের মধ্যে কুড়োরাম ছিল।
(৪) চুনি— গ্রামের শিবু বাড়জ্যের ছেলে চুনি।জটি পিসির বাড়ি তালনবমী ব্রতের কথা চুনি গোপাল ও নেপালকে জানিয়েছে।
এ ছাড়াও গল্পে হরেন, হারু, হিতেন, দেবেন, গুটকে প্রভৃতি কয়েকটি শিশু চরিত্রের নাম উল্লিখিত আছে। কিন্তু তাদের স্বভাব পরিচয় বিষয়ে গল্পে কোনো কথা উল্লেখ নেই।
১৪.২ ভরা বর্ষায় ক্ষুদিরাম ভট্টচাজের দিন কীভাবে কাটে ?
উত্তরঃ ক্ষুদিরাম ভাজ সামান্য আয়ের গৃহস্থ। জমিজমা থেকে সামান্য কিছু আয় এবং দু-চার ঘর শিষ্য যজমানের বাড়ি ঘুরে ঘুরে কায়ক্লেশে তার সংসার চলে। বর্ষাকালে গ্রামের অন্যান্য গৃহস্থের মতো তার বাড়িতেও দু-দিন হাঁড়ি চড়ে না। বর্ষায় যজমানের বাড়ি থেকে যে-কটি ধান এসেছিল তা ফুরিয়ে গেছে। ভাদ্রের শেষে আউশ ধান চাষিদের ঘরে উঠলে তখন কিছু ধান ঘরে আসবে এবং ছেলেমেয়েরা পেটপুরে খেতে পাবে।
১৪.৩ চুনির মা জটি পিসিমার বাড়ি গিয়েছিল কেন ?
উত্তরঃ জটি পিসিমার বাড়িতে তালনবমীর ব্রত পালিত হবে। সেজন্য চুনির মা ডাল ভেঙে দিতে জটি পিসিমার বাড়ি গিয়েছিল।
১৪.৪ জটি পিসিমার বাড়িতে কী বারে, কেন তালের প্রয়োজন হয়েছিল ?
উত্তরঃ জটি পিসিমার বাড়িতে মঙ্গালবারে, তালনবমী ব্রত উপলক্ষ্যে তালের প্রয়োজন হয়েছিল।
১৪.৫ কে, কীভাবে জটি পিসিমাকে তাল জোগাড় করে এনে দিয়েছিল ?
উত্তরঃ গোপাল খুব ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে তালদিঘির ধারে তাল কুড়োতে যায়। তালদিঘির মাঠে ছিল এক হাঁটু জল আর কাদা। সেইসব পেরিয়ে গোপাল তার সাধ্যমতো দুটো তাল সংগ্রহ করে জটি পিসিমাকে এনে দিয়েছিল।
১৪.৬ জুটি পিসিমার ভালো নামটি কী ?
উত্তরঃ জটি পিসিমার ভালো নাম হরিমতী।
১৪.৭ বর্ষারাতে গোপালের দেখা স্বপ্ন কীভাবে মিথ্যা হয়ে গেল, তা গল্প অনুসরণে লেখো।
উত্তরঃ সামান্য আয়ের গৃহস্থ ক্ষুদিরাম ভট্টচাজের দশ বছরের ছেলে গোপাল বিনা পয়সায় দুটি পাকা তাল জটি পিসির বাড়ি তালনবমী উপলক্ষ্যে দিয়ে এসেছিল। সে নিশ্চিতভাবে জানত যে তাদের দুই ভাইয়ের ব্রত উপলক্ষ্যে নিমন্ত্রণ করা হবে। পরের দিন নিমন্ত্রণ বাড়ি যাওয়ার কথা। ভোররাতে উত্তেজনায় গোপালের ঘুম হচ্ছিল না। সে শুয়ে শুয়ে নিমন্ত্রণের স্বপ্ন দেখছিল। সে দেখছিল ভালো ভালো খাবার, নিমন্ত্রণ বাড়িতে মানুষের আতিথেয়তা। হঠাৎ সকালবেলা মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙে গেল এবং গোপাল বুঝতে পারল যে, মানুষ কেবল অর্থকেই মূল্য দেয়— দুঃখী মানুষের দুঃখকে হৃদয়ে অনুভব করার শক্তি তাদের নেই।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর :
সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখ : প্রতিটি প্রশ্নের মান- ১
১. তালনবমীর ব্রত ছিল – (সোমবার / মঙ্গলবার / বুধবার / রবিবার)।
উত্তরঃ তালনবমীর ব্রত ছিল মঙ্গলবার।
২. ‘তালনবমী’ গল্পে- (আষাঢ় / শ্রাবণ / ভাদ্র / আশ্বিন) মাসের উল্লেখ আছে।
উত্তরঃ ‘তালনবমী’ গল্পে ভাদ্র মাসের উল্লেখ আছে।
৩. গোপাল জটি পিসিমাকে পয়সায়- (একটি / দুটি / তিনটি / চারটি) তাল দিয়েছিল।
উত্তরঃ গোপাল জটি পিসিমাকে পয়সায় তিনটি তাল দিয়েছিল।
৪. জটি পিসিমার ভালো নাম – (হীরামতী / হরিমতী / ময়নামতী / শিলাবতী)।
উত্তরঃ জটি পিসিমার ভালো নাম হরিমতী।
৫. জটি পিসিমার বড়ো মেয়ের নাম – (লাবণ্য / যোগমায়া / হরিমতী / লাবনী)।
উত্তরঃ জটি পিসিমার বড়ো মেয়ের নাম লাবণ্য।
৬. ভাদ্রমাসে ক্ষুদিরাম ভটচাজের বাড়িতে কেন অনাহার শুরু হয়েছিল?
( কাজ না থাকার জন্য / টানা বৃষ্টির জন্য / শস্য না হওয়ার জন্য / মাটির অভাবে )
উত্তরঃ টানা বৃষ্টির জন্য
৭. ক্ষুদিরাম ভাজের কতজন ছেলে ছিল? ( একজন / দুইজন / তিনজন / চারজন )
উত্তরঃ দুইজন
৮. ক্ষুদিরামের দুই ছেলের নাম কী?
( নেপাল ও বাপি / গোপাল ও রতন / নেপাল ও গোপাল / শিবু ও চুনি )
উত্তরঃ নেপাল ও গোপাল।
৯. তালনবমীর ব্রতের কথা নেপাল কার কাছে শুনেছিল?
(শিবু বাঁড়ুজ্যের ছেলে চুনি / কুড়োরাম / জটি পিসিমা / গোপাল )
উত্তরঃ শিবু বাঁড়ুজ্যের ছেলে চুনি
১০. নেপাল তালনবমীর দিনে কী করতে চেয়েছিল?
(নিমন্ত্রণ খেতে যাবে / তাল বিক্রি করে টাকা রোজগার করবে / ব্রত পালন করবে / জটি পিসিমাকে সাহায্য করবে )
উত্তরঃ তাল বিক্রি করে টাকা রোজগার করবে
১১. গোপালের মনে ভয়টা কী ছিল?
( বৃষ্টি নামবে / তাল নষ্ট হবে / বিক্রি করলে নিমন্ত্রণ মিলবে না / নেপাল রাগ করবে )
উত্তরঃ বিক্রি করলে নিমন্ত্রণ মিলবে না।
১২. গোপাল ভোরবেলা কোথা থেকে তাল কুড়িয়েছিল?
( তালতলা / তালদিঘি / তালবাগান / তালবন )
উত্তরঃ তালদিঘি
১৩. গোপাল স্বপ্ন দেখছিল কী নিয়ে?
( পয়সা পাওয়া যাবে / ভাত খাবে / সুখাদ্য খাওয়ার / পিসিমার বাড়ি যাওয়া )
উত্তরঃ সুখাদ্য খাওয়ার
১৪. জটি পিসিমা কেমন করে নিমন্ত্রণ করেছিলেন?
( সবাইকে / দরিদ্রদের / বেছে বেছে / ছেলেদের )
উত্তরঃ বেছে বেছে
১৫. জটি পিসিমার অবিচার দেখে গোপালের মন কেমন হয়ে গেল?
( আনন্দে ভরে গেল / দুঃখে চোখে জল এলো / রাগে ফেটে পড়ল / হাসতে লাগল )
উত্তরঃ দুঃখে চোখে জল এলো।
◆ দু তিনটি বাক্যে উত্তর লেখ : প্রতিটি প্রশ্নের মান- ২
১. ক্ষুদিরামের দুই ছেলের নাম কী?
উত্তরঃ ক্ষুদিরামের দুই ছেলের নাম নেপাল ও গোপাল।
২. জটি পিসিমার অবিচার দেখে গোপালের মন কেমন হয়ে যায়?
উত্তরঃ জটি পিসিমার অবিচার দেখে ছোট্ট গোপালের দু-চোখে জল ভরে ওঠে।
৩. ভাদ্রমাসে ক্ষুদিরাম ভটচাজের সংসারে অনাহারের কারণ কী ছিল?
উত্তরঃ ভাদ্রমাসে টানা পনেরো দিনের বৃষ্টির জন্য ক্ষুদিরামের সামান্য আয়ের সংসারে অনাহার দেখা দেয়। চাষের কাজ ব্যাহত হওয়ায় ঘরে ধান ছিল না। ফলে নেপাল ও গোপাল খিদের কষ্টে অস্থির হয়ে ওঠে।
৪. তালনবমীর ব্রতের খবর নেপাল কীভাবে জানতে পারল?
উত্তরঃ নেপাল শিবু বাঁড়ুজ্যের ছেলে চুনির কাছ থেকে জানতে পারে যে জটি পিসিমাদের বাড়িতে তালনবমীর ব্রত হবে। সেখানে গ্রামের সবাইকে নিমন্ত্রণ করা হবে বলে সে শুনেছিল। খবর শুনে নেপাল-গোপাল খুব আনন্দিত হয়।
৫. তালনবমীর জন্য নেপাল ও গোপালের ইচ্ছে কী ছিল?
উত্তরঃ নেপাল তাল বিক্রি করে কিছু টাকা রোজগার করতে চেয়েছিল। আর গোপাল চেয়েছিল নিমন্ত্রণে গিয়ে সুখাদ্য খেতে। সে ভেবেছিল, তাল বিনা মূল্যে দিয়ে এলে নিশ্চয় নিমন্ত্রণ পাবে।
৬. গোপাল কীভাবে জটি পিসিমাদের বাড়িতে তাল দিল?
উত্তরঃ ভোরবেলা গোপাল তালদিঘি থেকে তাল সংগ্রহ করে। তারপর কোনো কিছু না ভেবেই সে সেগুলো জটি পিসিমাদের বাড়িতে দিয়ে আসে। তার বিশ্বাস ছিল, এতে তারা নিশ্চয় তাকে নিমন্ত্রণ করবে।
৭. “তাহলে আমাদের নেমন্তন্ন করবে, দেখিস এখন।”-কে, কাকে কথাটি বলেছিল? কীসের নেমন্তন্ন করবে ? (১+১)
উত্তর বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘তালনবমী’ গল্পে গোপাল নেপালকে এই কথা বলেছিল।
গোপাল তালনবমীর ব্রত উপলক্ষ্যে জটি পিসিমা নেমন্তন্ন করবে সেই কথাই বলেছিল।
৮. ভাদ্রমাসে ক্ষুদিরাম ভাজেদের বাড়িতে অনাহার কেন শুরু হয়েছিল?
উত্তরঃ ভাদ্রমাসে টানা পনেরো দিন বৃষ্টি হওয়ায় ফসলের ঘাটতি দেখা দেয় এবং সামান্য আয় হওয়ায় ক্ষুদিরাম ভাজেদের বাড়িতে অনাহার শুরু হয়।
৯. তালনবমীর ব্রতের কথা নেপাল কার কাছ থেকে জানতে পারে?
উত্তরঃ নেপাল পাড়ার শিবু বাঁড়ুজ্যের ছেলে চুনির কাছ থেকে তালনবমীর ব্রতের কথা জানতে পারে।
১০. তালনবমী উপলক্ষে নেপাল কী করার চেষ্টা করেছিল?
উত্তরঃ তালনবমীতে অনেক তাল লাগবে ভেবে নেপাল তাল বিক্রি করে কিছু টাকা উপার্জনের চেষ্টা করেছিল।
১১. গোপালের মনে ভয়টা কী ছিল?
উত্তরঃ গোপালের মনে ভয় ছিল, তাল বিক্রি করলে হয়তো জটি পিসিমা তাদের নিমন্ত্রণ করবেন না।
১২. গোপাল তালদিঘি থেকে কী করেছিল?
উত্তরঃ গোপাল ভোরবেলা তালদিঘি থেকে তাল কুড়িয়ে জটি পিসিমাদের বাড়িতে দিয়ে আসে।
১৩. গোপাল কী স্বপ্ন দেখতে থাকে?
উত্তরঃ গোপাল স্বপ্ন দেখতে থাকে যে তালনবমীর দিন জটি পিসিমাদের বাড়িতে নানা রকম সুখাদ্য খাওয়ার সুযোগ পাবে।
১৪. গোপাল কার কাছ থেকে জানতে পারে যে, জটি পিসিমা বেছে বেছে নিমন্ত্রণ করেছে?
উত্তরঃ গোপাল কুড়োরামের কাছ থেকে জানতে পারে যে, জটি পিসিমা বেছে বেছে নিমন্ত্রণ করেছে।
◆ কমবেশি ৬টি বাক্যে উত্তর লেখ : প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান- ৩
প্রশ্ন ১. ভাদ্রমাসে ক্ষুদিরাম ভটচাজের সংসারের অবস্থা কেমন হয়েছিল?
উত্তরঃ ভাদ্রমাসে টানা পনেরো দিন ধরে প্রবল বর্ষণ চলেছিল। ফলে গ্রামে চাষের কাজ ব্যাহত হয়, ক্ষুদিরাম ভাজেদের মতো দরিদ্র পরিবারের অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে ওঠে। সংসারে কোনো আয়ের পথ ছিল না। ঘরে খাবার না থাকায় অনাহার দেখা দেয়। ক্ষুদিরামের দুই ছেলে নেপাল ও গোপাল ক্ষুধার যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে ওঠে। মা–বাবাও কিছু করতে পারছিলেন না। তাই সবার চোখেই ভাদ্রমাস শেষ হয়ে আউশ ধান ঘরে আসার অপেক্ষা। ধান এলে অন্তত ছেলেমেয়েরা দু’বেলা ভরে খেতে পাবে, এই আশাই তাদের ভরসা ছিল।
প্রশ্ন ২. তালনবমীর ব্রতের কথা শোনার পর নেপাল ও গোপাল কীভাবে আনন্দিত হয়েছিল ?
উত্তরঃ একদিন নেপাল তার বন্ধু চুনির কাছ থেকে জানতে পারে, আসছে মঙ্গলবার জটি পিসিমাদের বাড়িতে তালনবমীর ব্রত হবে। সেখানে গ্রামের সবাই নিমন্ত্রিত হবে। খবর শুনে নেপাল ও গোপাল দুজনেই খুব খুশি হয়। কারণ এতদিনের অনাহারের পর সেই দিনে তারা অন্তত ভরপেট খেতে পারবে ভেবে আনন্দিত হয়েছিল। নেপাল ভেবেছিল সেখানে অনেক তাল লাগবে, তাই তাল বিক্রি করে কিছু টাকা রোজগার করবে। গোপালের মনে হয়েছিল, সেই ব্রতের দিনে নানা রকম সুখাদ্য খেয়ে আনন্দ করবে। তাই তালনবমীর দিনটির জন্য তারা উভয়েই অস্থির হয়ে অপেক্ষা করতে লাগল।
প্রশ্ন ৩. তালনবমীর জন্য নেপাল ও গোপালের ইচ্ছে ও কাজের মধ্যে কী পার্থক্য ছিল ?
উত্তরঃ নেপাল ও গোপালের ইচ্ছে একেবারেই এক রকম ছিল না। নেপাল ভেবেছিল তাল বিক্রি করে কিছু টাকা উপার্জন করবে। তার চিন্তা ছিল অর্থ রোজগার করা। কিন্তু ছোট ভাই গোপালের চিন্তা ছিল আলাদা। তার মনে ভয় ছিল, তাল বিক্রি করলে হয়তো জটি পিসিমা তাদের নিমন্ত্রণ করবেন না। তাই সে এক ভোরে তালদিঘি থেকে তাল সংগ্রহ করে সরাসরি জটি পিসিমাদের বাড়িতে দিয়ে আসে। অর্থ নয়, গোপালের আশা ছিল নিমন্ত্রণে গিয়ে ভরপেট খাওয়া। দুজন ভাইয়ের এই ইচ্ছে ও কাজে দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন ৪. তালনবমীর দিন গোপালের কী হয়েছিল এবং তার মনে কী অনুভূতি জেগেছিল?
উত্তরঃ তালনবমীর দিন সকালে গোপাল মায়ের ডাকে ঘুম থেকে উঠে জানতে পারে যে সেদিনই মঙ্গলবার। তার মন আনন্দে ভরে ওঠে, কারণ সে মনে করে নিমন্ত্রণে গিয়ে অনেক রকম খাবার খাবে। কিন্তু ধীরে ধীরে সে দেখে তাদের বাড়িতে কোনো নিমন্ত্রণ আসেনি। গ্রামের প্রায় সকলেই তার চোখের সামনে দিয়ে একে একে জটি পিসিমাদের বাড়ি নিমন্ত্রণ খেতে যাচ্ছে। গোপালের মনে তখন তীব্র দুঃখ জাগে। সে জানতে পারে যে, জটি পিসিমা বেছে বেছে নিমন্ত্রণ করেছেন। এই অবিচার দেখে ছোট্ট গোপালের চোখে জল এসে যায়।
প্রশ্ন ৫. তালনবমী গল্প থেকে কী শিক্ষা পাওয়া যায় ?
উত্তরঃ তালনবমী গল্পে লেখক গ্রামীণ জীবনের দুঃখ-দুর্দশা ও অভাবের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। ক্ষুদিরামের মতো দরিদ্র পরিবারের ছেলে গোপাল নিমন্ত্রণের আশায় কীভাবে তাল উপহার দিয়েছিল, তা থেকে তার সরলতা ও ভরসার প্রকাশ পাওয়া যায়। কিন্তু সমাজের অন্যায় ও অবিচার তাকে দুঃখ দেয়। গল্পটি আমাদের শেখায়, দুঃস্থদের অবহেলা করা উচিত নয়। তাদের দুঃখ বোঝার চেষ্টা করা উচিত। ছোটদের মনেও স্বপ্ন, আশা ও কষ্ট থাকে। তাই গল্পটি মানবিকতা ও সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়।
প্রশ্ন ৬. তালনবমীর দিনে গোপালের আশা পূর্ণ হয়েছিল কি? কেন?
উত্তরঃ তালনবমীর দিনে গোপালের আশা কোনোভাবেই পূর্ণ হয়নি। সে ভেবেছিল, তাল কুড়িয়ে জটি পিসিমাদের বাড়িতে দিয়ে এলে নিশ্চয় নিমন্ত্রণ পাবে। কিন্তু সেদিন তাদের বাড়িতে কোনো নিমন্ত্রণ এলো না। গ্রামের প্রায় সবাই তার চোখের সামনে দিয়ে একে একে জটি পিসিমাদের বাড়িতে গেল নিমন্ত্রণ খেতে। কুড়োরামের কাছে গোপাল জানতে পারে, জটি পিসিমা নাকি বেছে বেছে নিমন্ত্রণ করেছেন। দরিদ্র হওয়ায় ক্ষুদিরাম ভাজেদের পরিবারকে তিনি ডাকেননি। এতে ছোট্ট গোপালের মন ভেঙে যায় এবং তার চোখে জল চলে আসে। তাই তালনবমীর দিনে গোপালের আশা অপূর্ণই থেকে যায়।
৭. “কী খোকাঠাকুর, যাচ্ছ কনে এত ভোরে ?”- খোকা ঠাকুরটি কে? সে এত ভোরে কোথায়, কেন যাচ্ছিল ? (১+২)
উত্তরঃ তালনবমী গল্পে খোকা ঠাকুরটি হল ক্ষুদিরাম ভটচাজের দশ বছরের ছোট ছেলে গোপাল।
গোপালের মনে ভয় ছিল, যদি তাল বিক্রি করে তবে জটি পিসিমা হয়তো তাদের নিমন্ত্রণ করবেন না। তাই সে নিজেই তালদিঘি থেকে তাল সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কষ্ট করে ভোরে উঠে সে তাল কুড়িয়ে জটি পিসিমাদের বাড়িতে দিয়ে আসে। তার আশা ছিল, এতে জটি পিসিমা খুশি হয়ে তাদের নিমন্ত্রণ করবেন। গোপালের এই সরলতা ও নিষ্পাপ মনোভাব তার চরিত্রের বিশেষ দিককে প্রকাশ করে।
৮. ‘ঘুমের মধ্যে ও সব কী হিজিবিজি স্বপ্ন সে দেখছিল।’—কার স্বপ্ন দেখার কথা বলা হয়েছে ? তার দেখা স্বপ্নকে সে নিজেই ‘হিজিবিজি’ বলেছে কেন বলে তুমি মনে করো ?
উত্তরঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তালনবমী’ গল্পে গোপালের স্বপ্ন দেখার কথা বলা হয়েছে।
তালনবমী ব্রতের আগেরদিন রাতে গোপাল স্বপ্ন দেখে জটি পিসিমার বাড়িতে সে নিমন্ত্রিত এবং জটি পিসিমা তাকে খুব যত্ন করে খাওয়াচ্ছেন। কিন্তু স্বপ্ন ভেঙে সে বুঝতে পারে সে স্বপ্ন সত্যি হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। তাই সে স্বপ্নটিকে ‘হিজিবিজি’ বলেছে বলে আমি মনে করি।
◆ রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর : প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান- ৫
প্রশ্ন ১. ভাদ্রমাসে ক্ষুদিরাম ভাজেদের সংসারের অবস্থা বর্ণনা করো।
উত্তরঃ ভাদ্রমাসে টানা পনেরো দিন ধরে প্রবল বর্ষণ চলছিল। গ্রামের কৃষিজীবী মানুষদের জীবনে নেমে আসে চরম দুর্দশা। ক্ষুদিরাম ভাজে ছিলেন সামান্য আয়ের গৃহস্থ। তার সংসারে তখন খাওয়ার মতো কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। বর্ষার কারণে চাষের কাজ ব্যাহত হয়েছিল, ফলে ঘরে চাল-ডাল কিছুই ছিল না। পরিবারের সবাই তখন অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছিলেন। ক্ষুদিরামের দুই ছেলে নেপাল ও গোপাল ক্ষুধার যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে পড়েছিল। মায়ের কোলের কাছে বসে তারা খাবারের জন্য কান্নাকাটি করত। তাদের মা–বাবারও কিছু করার উপায় ছিল না। সবার চোখে কেবল একটাই আশা ছিল— কখন ভাদ্রমাস শেষ হবে। আউশ ধান উঠলেই হয়তো সংসারের কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে। তখন ছেলেমেয়েরা অন্তত দু’বেলা ভরপেট খেতে পাবে। লেখক এইভাবে দরিদ্র সংসারের চরম দারিদ্র্যকে গল্পে ফুটিয়ে তুলেছেন।
প্রশ্ন ২. তালনবমীর ব্রতের কথা শুনে নেপাল ও গোপালের মনে কী আশা জাগল?
উত্তরঃ একদিন নেপাল শিবু বাঁড়ুজ্যের ছেলে চুনির কাছ থেকে জানতে পারে যে, আসছে মঙ্গলবার জটি পিসিমাদের বাড়িতে তালনবমীর ব্রত হবে। সেখানে গ্রামের প্রায় সবাই নিমন্ত্রিত হবে। এই খবর শুনে নেপাল ও গোপাল খুব আনন্দিত হয়। এতদিনের অনাহারের পর তারা ভেবেছিল, ওইদিন অন্তত পেট ভরে খেতে পারবে। নেপাল ভেবেছিল, ব্রতের জন্য অনেক তাল লাগবে। সে সুযোগে তাল বিক্রি করে কিছু টাকা রোজগার করবে। কিন্তু গোপাল ভেবেছিল, যদি তাল বিক্রি করা হয়, তবে হয়তো জটি পিসিমা তাদের নিমন্ত্রণ করবেন না। তার মনে ভয় ও সংশয় ছিল। তাই সে কেবল আশা করেছিল নিমন্ত্রণে গিয়ে সুখাদ্য খাওয়ার। ছোট্ট গোপালের মন ভরে গিয়েছিল আনন্দে। সে কল্পনায় নিমন্ত্রণ খাওয়ার স্বাদ অনুভব করছিল। এইভাবে ক্ষুধার্ত শিশুদের মনে সামান্য খবরও এক বড়ো আশার জন্ম দেয়।
প্রশ্ন ৪. তালনবমীর দিন গোপালের কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল?
উত্তরঃ তালনবমীর দিনটি গোপালের জীবনে এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে রইল। সেদিন ভোরে সে মায়ের ডাকে ঘুম থেকে জেগে ওঠে। মায়ের মুখে শুনতে পায়—আজ মঙ্গলবার। তার মনে আনন্দের ঢেউ বয়ে যায়, কারণ আজই জটি পিসিমাদের বাড়িতে তালনবমীর ব্রত। সে ভেবেছিল, আজ তাদের বাড়িতেও নিমন্ত্রণ আসবে। সকাল থেকেই সে অধীর আগ্রহে সেই খবরের অপেক্ষা করতে থাকে।
কিন্তু অনেকক্ষণ কেটে গেলেও তাদের বাড়িতে কোনো নিমন্ত্রণ এলো না। তখনও সে ভেবেছিল হয়তো দেরি হচ্ছে। হঠাৎই সে দেখে গ্রামের মানুষজন একে একে জটি পিসিমাদের বাড়ির দিকে যাচ্ছে। তারা সবাই নতুন পোশাক পরে, আনন্দের মুখ নিয়ে পিসিমার বাড়িতে যাচ্ছে নিমন্ত্রণ খেতে। এই দৃশ্য দেখে গোপালের মন ভেঙে যায়।
সে তখন কুড়োরামের কাছ থেকে জানতে পারে, জটি পিসিমা নাকি বেছে বেছে নিমন্ত্রণ করেছেন। দরিদ্রদের ডাকেননি। এই অবিচারের খবর শুনে গোপালের চোখে জল চলে আসে। তার মনে কষ্ট হয়, কারণ সে ভেবেছিল তাল দিয়ে আসার জন্য অন্তত তাকে ডাকা হবে। কিন্তু তার আশা পূর্ণ হয়নি।
এই অভিজ্ঞতা গোপালের শৈশব মনকে আঘাত করে। সে অনুভব করল সমাজে ধনী-দরিদ্র ভেদাভেদ আছে। গোপালের দুঃখমাখা চোখ যেন লেখকের কলমে এক প্রতীক হয়ে ওঠে। তালনবমীর দিন তাই তার কাছে আনন্দের নয়, বরং এক দুঃখের অভিজ্ঞতা হয়ে রইল।
প্রশ্ন ৫. তালনবমী গল্প থেকে কী শিক্ষা পাওয়া যায়?
উত্তরঃ তালনবমী গল্পটি সমাজের বাস্তব জীবনের এক মর্মস্পর্শী প্রতিচ্ছবি। গল্পে লেখক দেখিয়েছেন, গ্রামে দরিদ্র পরিবারের কী ভয়াবহ অবস্থা হতে পারে। ক্ষুদিরাম ভাজের সংসারে ভাদ্রমাসে টানা বৃষ্টির জন্য অনাহার নেমে এসেছিল। দুই ছেলে নেপাল ও গোপাল ক্ষুধায় কষ্ট পাচ্ছিল। তখন তারা আশা করেছিল তালনবমীর ব্রতে অন্তত ভরপেট খেতে পারবে। নেপাল ভেবেছিল তাল বিক্রি করে কিছু টাকা রোজগার করবে, আর গোপাল ভেবেছিল তাল দিয়ে এলে নিমন্ত্রণে ডাক পাবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। জটি পিসিমা দরিদ্রদের অবহেলা করে বেছে বেছে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। ফলে গোপালের আশা অপূর্ণ থেকে যায়। তার চোখ ভরে ওঠে অশ্রুতে।
এই গল্প আমাদের শেখায়, দরিদ্রদের ছোট করে দেখা উচিত নয়। তারা আমাদের মতোই মানুষ। তাদের মনেও স্বপ্ন, আশা আর কষ্ট থাকে। বিশেষ করে শিশুদের মন খুব কোমল। তাদের কষ্ট দিলে তা গভীরভাবে আঘাত করে। তালনবমী গল্প মানবিকতা, সমবেদনা ও সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়। সমাজে ধনী-দরিদ্র ভেদাভেদ দূর করে সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করা দরকার। ছোট্ট গোপালের অশ্রু আমাদের মনে করিয়ে দেয়— অন্যায়ের সমাজে প্রকৃত আনন্দ নেই। তাই গল্পটির শিক্ষা আজও সমান গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক।
📌 আরো দেখুনঃ
📌পঞ্চম শ্রেণি ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র Click Here
📌পঞ্চম শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর Click Here
📌পঞ্চম শ্রেণি ইংরেজি প্রশ্নোত্তর Click Here