‘সিন্ধুতীরে’ কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর দশম শ্রেণি বাংলা | Sindhutire Kobitar Essay Type Question Answer Class 10 Bengali wbbse
সাহিত্য সঞ্চয়ন
দশম শ্রেণি বাংলা (প্রথম ভাষা)
‘সিন্ধুতীরে’ কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নবম শ্রেণি বাংলা | Sindhutire Kobitar Essay Type Question Answer Class 10 Bengali wbbse
📌দশম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র Click Here
📌 দশম শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর Click Here
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতা সৈয়দ আলাওল দশম শ্রেণি বাংলা | Essay Type Question Answer Sindhutire Kobita Class 10 Bengali wbbse
∆ কমবেশি ১৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও : প্রতিটি প্রশ্নের মান-৫
১. ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতাটির বিষয়বস্তু সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তরঃ মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের অন্যতম মুসলমান কবি সৈয়দ আলাওল রচিত ‘পদ্মাবতী’ কাব্যের অংশবিশেষ হল ‘সিন্ধুতীরে’। কবিতাটি শুরু হয়েছে সিংহল-রাজকন্যা পদ্মাবতী ও তার চার সখীর সমুদ্রে পতিত হওয়া এবং ভাসতে ভাসতে এক সমুদ্রতীরবর্তী নগরে এসে পৌঁছানোর ঘটনায়। সেই নগরীর বর্ণনায় কবি তুলে ধরেছেন এক রূপকথার মতো স্বর্গোপম দেশ, যেখানে মনোরম সৌন্দর্যের মাঝে দুঃখ-ক্লেশের কোনো স্থান নেই, আর সত্যধর্ম ও সদাচারই প্রধান বৈশিষ্ট্য। সেই নগরীতে সমুদ্রনৃপতির কন্যা পদ্মার বাস, যিনি পর্বতের পাদদেশে এক অপূর্ব উদ্যান নির্মাণ করেছেন, যেখানে নানারঙের ও গন্ধের ফুল-ফল রয়েছে। উদ্যানে যাওয়ার পথে পদ্মা সখীদের সঙ্গে দেখতে পান এক অপরূপা কন্যাকে, যিনি অচেতন অবস্থায় শায়িত ছিলেন। তার অবস্থা দেখে পদ্মার মনে হয়, হয়তো তিনি ইন্দ্রের অভিশাপে স্বর্গচ্যুত অপ্সরা কিংবা ভয়ঙ্কর ঝড়ের শিকার। তখন মৃতপ্রায় পদ্মাবতী ও তার সখীদের বাঁচাতে সমুদ্রকন্যা পদ্মা তার সমস্ত বিদ্যা প্রয়োগ করেন। বহু তন্ত্রমন্ত্র ও মহৌষধ প্রয়োগের ফলে অবশেষে তারা চেতনা ফিরে পান। এভাবেই ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতার মূল বিষয়বস্তু গঠিত হয়েছে।
২. ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো।
উত্তরঃ কবি সৈয়দ আলাওল রচিত ‘পদ্মাবতী’ কাব্যের নামকরণ হয়েছিল মূল চরিত্র পদ্মাবতীর নামে। কিন্তু পাঠ্য কাব্যাংশে কোথাও সরাসরি পদ্মাবতীর নাম উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি এই অংশে নায়িকা পদ্মাবতীর সক্রিয় উপস্থিতিও নেই। বরং তিনি এখানে সমুদ্রতীরে অচৈতন্য অবস্থায় অবস্থান করছেন। ফলে ঘটনাপ্রবাহ তাঁর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না এবং সমুদ্রকন্যার কাছেও পদ্মাবতীর পরিচয় অজ্ঞাত থেকে যায়। তাই এই কাব্যাংশের নাম মূল কাব্যের নামে দেওয়া সম্ভব ছিল না।
এখন প্রশ্ন আসে—‘সিন্ধুতীরে’ নামটি কেন সার্থক ? সাহিত্যকর্মের নামকরণে সাধারণত বিষয়বস্তু, কাহিনি, চরিত্র বা অন্তর্নিহিত ব্যঞ্জনাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই কাব্যাংশে সমস্ত ঘটনা সংঘটিত হয়েছে সমুদ্রতীরবর্তী এক নগরীতে। তাই সমুদ্রতীরই হয়ে উঠেছে সমস্ত ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু। এমনকি সমুদ্র এখানে এক বিশেষ চরিত্রের ভূমিকা নিয়েছে—সমুদ্রে পতিত হয়েই পদ্মাবতী ও তাঁর সখীরা মৃত্যুপথযাত্রী হন, আবার সেই সমুদ্রতীরবর্তী রাজপ্রাসাদেই সমুদ্র রাজকন্যার সাহায্যে তাঁদের প্রাণরক্ষা সম্ভব হয়। ফলে কাব্যাংশটির নামকরণে সমুদ্রকে অস্বীকার করার অবকাশ নেই।
সুতরাং বলা যায়, পাঠ্যাংশের জন্য ‘সিন্ধুতীরে’ নামকরণ যথাযথ, সার্থক এবং তাৎপর্যপূর্ণ।
৩. সৈয়দ আলাওলের ‘পদ্মাবতী’ কাব্যের ‘সিন্ধুতীরে’ পদ্যাংশ অনুসারে সমুদ্রকন্যার চরিত্র আলোচনা করো।
উত্তরঃ মুসলমান কবিদের মধ্যে সৈয়দ আলাওল ছিলেন একজন প্রধান কবি। তাঁর ‘পদ্মাবতী’ কাব্য থেকে নেওয়া ‘সিন্ধুতীরে’ পদ্যাংশে সমুদ্রনৃপতিসুতা পদ্মার চরিত্র বিশেষভাবে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। কবি এখানে পদ্মাবতীর চেয়ে সমুদ্ররাজকন্যা পদ্মাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। পদ্মা ছিলেন সৌন্দর্যপ্রিয়, কৌতূহলী, উদার, পরদুঃখকাতর, সেবাপরায়ণা—এককথায় সর্বগুণসম্পন্না নারী।
সৌন্দর্যপ্রিয় ও প্রকৃতিপ্রেমী : সমুদ্রের মাঝে মনোরম দ্বীপে তিনি উদ্যান ও রত্নখচিত প্রাসাদ নির্মাণ করেন এবং সেখানে বসবাস করতেন। এর থেকেই তাঁর সৌন্দর্যবোধ ও প্রকৃতিপ্রেমের পরিচয় মেলে।
কৌতূহলী : উদ্যানে ঘোরার সময় সমুদ্রতীরে ভেলা দেখে তিনি কৌতূহলী হয়ে ওঠেন। সেই কৌতূহল থেকেই পদ্মাবতীসহ পাঁচ কন্যাকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করেন।
মানবিকতা : মানুষের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসার প্রকাশ পদ্মা চরিত্রটিকে অনন্য করে তুলেছে। সমুদ্রতীরে মান্দাসে পঞ্চকন্যাকে জ্ঞানহীন অবস্থায় দেখে তার মনে অপার করুণার উদ্রেক হয়। তিনি তার সখীগণকে নির্দেশ দেন অতি যত্নে সেবা শুশ্রুষা করতে। নানারকম ঔষধ ও মন্ত্রতন্ত্র প্রয়োগ করে তিনি তাদের চেতন ফেরানোর চেষ্টা করেন। সেই সঙ্গে ঈশ্বরের কাছে অচেনা মানুষের সংজ্ঞা ফেরানোর আর্তি যে-কোনো মানুষকে প্রভাবিত করে। শুধু তাই নয়, ঈশ্বরের কাছে তার প্রার্থনা-পিতার পুণ্যফল ও নিজের ভাগ্যফলের বিনিময়ে যেন পদ্মাবতীসহ পঞ্চকন্যার জীবন ফিরে আসে। পরের জন্য নিজেকে এভাবে উজাড় করে দেওয়ার ইচ্ছা সত্যিই মধ্যযুগের অন্য কোনো চরিত্রে পাওয়া যায় না।
৪. ‘কন্যারে ফেলিল যথা’— কন্যার পরিচয় দাও। তাকে যেখানে ফেলা হয়েছিল, সেই স্থানটি কীরূপ ছিল ?
উত্তরঃ সপ্তদশ শতকের আরাকান রাজসভার প্রধান কবি সৈয়দ আলাওল রচিত ‘পদ্মাবতী’ কাব্যের অংশ ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতা থেকে আলোচ্য অংশটি গৃহীত হয়েছে। এখানে ‘কন্যা’ বলতে পদ্মাবতীকেই বোঝানো হয়েছে। পদ্মাবতী ছিলেন সিংহল রাজ্যের রাজকন্যা, যিনি সৌন্দর্য, কোমলতা ও গুণে অতুলনীয়া ছিলেন। ইতিহাস ও লোকশ্রুতি অনুসারে, এই পদ্মাবতীই পরবর্তীকালে চিতোরের রাজা রত্নসেনের দ্বিতীয় পত্নী হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছিলেন।
পাঠ্য কবিতা অনুসারে, পদ্মাবতী সমুদ্রের তীরে যে স্থানে এসে পড়েছিলেন, তা ছিল এক অনিন্দ্যসুন্দর নগরী। সেখানে কোনো দুঃখ, দারিদ্র্য বা অনাচারের চিহ্নমাত্র ছিল না। ন্যায়নীতি, সত্যধর্ম ও সদাচার সেখানে সর্বদা প্রতিষ্ঠিত ছিল। এই স্থানের চারপাশে পর্বত ও সমুদ্র এক অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহ সৃষ্টি করেছিল। সমুদ্রনৃপতি ও তাঁর কন্যার আবাসও এই স্থানেই ছিল।
সেই সমুদ্রতীরবর্তী স্থানে রাজা এক মনোরম উদ্যান নির্মাণ করেছিলেন। উদ্যানে নানা রঙের ও গন্ধের ফুল ফোটে, যা বিরল সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুরভি ছড়াত। বাগানে ছিল নানারকম সুলক্ষণযুক্ত বৃক্ষ, যা স্থানটির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। তাছাড়া, সেখানে মণি ও রত্নখচিত প্রাসাদও ছিল, যেখানে সমুদ্রকন্যা পদ্মা বাস করতেন।
অতএব বলা যায়, পদ্মাবতী যেখানে এসে পড়েছিলেন, তা ছিল এক রূপকথার মতো স্বর্গীয় সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান, যেখানে প্রকৃতির শোভা, মানবিক গুণাবলি ও ঐশ্বর্য সব মিলিয়ে এক অনন্য আবহ সৃষ্টি করেছিল।
৫. “তথা কন্যা থাকে সর্বক্ষণ।” – কোন কন্যার কথা বলা হয়েছে ? কন্যা কোথায় এবং কেন সর্বক্ষণ থাকে ?
উত্তরঃ আরাকান রাজসভার কবি সৈয়দ আলাওল মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে দেবনির্ভরতার বদলে মানবিকতার পরিচয় ঘটিয়েছিলেন। তাঁর রচিত ‘পদ্মাবতী’ কাব্যের অংশবিশেষ ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতায় উল্লিখিত কন্যা হলেন সমুদ্ররাজকন্যা পদ্মা। প্রশ্ন হলো, তিনি কোথায় এবং কেন সর্বক্ষণ থাকতেন?
আলাওল যে সিন্ধুতীরের বর্ণনা দিয়েছেন, সেখানে পদ্মাবতী অচৈতন্য হয়ে পড়েছিলেন। সেই স্থানেই সমুদ্ররাজকন্যা পদ্মা নিজের বাসস্থান গড়ে তুলেছিলেন। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য সেই স্থানকে দিব্যভূমির সঙ্গে তুলনা করা যায়। সেখানে কোনো দুঃখকষ্ট ছিল না, ছিল শুধু সত্যধর্ম ও সদ্আচারের চর্চা। সমুদ্রতীরের উপরিভাগে ছিল এক পর্বত, আর সেই পর্বতেই পদ্মা এক মনোহর উদ্যান তৈরি করেছিলেন। উদ্যানে ছিল নানারকম ফুল ও ফল, চারদিকে ভেসে বেড়াত সুগন্ধ। এই বাগানের মাঝেই তিনি রত্নশোভিত প্রাসাদ নির্মাণ করেন। এত সৌন্দর্যপূর্ণ পরিবেশ ত্যাগ করা কারো পক্ষেই সহজ নয়। তাই সমুদ্রকন্যা পদ্মাও সর্বক্ষণ সেই মনোরম স্থানে অবস্থান করতেন।
৬. “সিন্ধুতীরে রহিছে মাঞ্জস।” সিন্ধুতীরে কারা, কাকে দেখল ? তারপরে কী ঘটল আলোচনা করো।
উত্তরঃ সৈয়দ আলাওলের ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতা অনুসারে একদিন সমুদ্ররাজকন্যা পদ্মা সখীদের সঙ্গে উদ্যানে ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। তখন সমুদ্রতীরে ভেলায় ভেসে আসা পদ্মাবতী ও তাঁর চার সখীকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান।
মান্দাসে ভাসমান অসহায় পঞ্চকন্যাকে দেখে পদ্মার মনে প্রবল কৌতূহল জাগে এবং তিনি দ্রুত সেখানে পৌঁছান। তাঁদের মধ্যে এক অনিন্দ্যসুন্দরী কন্যাকে দেখে পদ্মার মনে হয়— তিনি হয়তো ইন্দ্রের শাপে স্বর্গ থেকে পতিত কোনো অপ্সরা, অথবা সামুদ্রিক ঝড়ে বিপর্যস্ত কোনো রাজকন্যা। তখনও তাঁদের শরীরে সামান্য প্রাণবায়ু অবশিষ্ট দেখে পদ্মার হৃদয় করুণায় ভরে ওঠে। তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন—নিজের ভাগ্যফল ও পিতার পুণ্যের বিনিময়ে যেন তাঁদের জীবন ফিরে আসে। সেইসঙ্গে তিনি চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তাঁর নির্দেশে সখীরা কন্যাদের কাপড়ে ঢেকে উদ্যানে নিয়ে আসে। তাঁদের মাথা ও পায়ে গরম সেঁক দেওয়া হয়, প্রয়োগ করা হয় ঔষধ ও তন্ত্রমন্ত্র। পদ্মার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় কিছু সময় পর পঞ্চকন্যাই চেতনা ফিরে পায়। এইভাবে সমুদ্ররাজকন্যার মমতা ও ভালোবাসায় পদ্মাবতী ও তাঁর সখীরা জীবন ফিরে পেলেন।
৭. “দেখিয়া রূপের কলা বিস্মিত হইল বালা / অনুমান করে নিজ চিতে”— ‘বালা’ শব্দের অর্থ কী ? তার বিস্মিত হওয়ার কারণ কী ? তাকে দেখে বক্তার কী মনে হয়েছিল ?
উত্তরঃ সপ্তদশ শতকের বিশিষ্ট কবি সৈয়দ আলাওলের ‘পদ্মাবতী’ কাব্যের অংশবিশেষ ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতায় ‘বালা’ শব্দের অর্থ হল ‘কন্যা’। এখানে ‘বালা’ বলতে সমুদ্ররাজকন্যা পদ্মাকে বোঝানো হয়েছে।
সমুদ্রকন্যা পদ্মা যখন তীরে পৌঁছান, তখন তিনি ভেলায় ভেসে আসা চার সখীর সঙ্গে এক অনিন্দ্যসুন্দরী কন্যাকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। এই অদ্ভুত সৌন্দর্যপূর্ণ রূপ দেখে তিনি বিস্মিত হন। তাঁর মনে হয়, হয়তো কোনো স্বর্গের অপ্সরা বা বিদ্যাধরী ইন্দ্রের অভিশাপে স্বর্গ থেকে পতিত হয়েছেন। অচৈতন্য অবস্থায় সেই কন্যার অপলক চাহনি, এলোমেলো চুল ও অগোছালো পোশাক দেখে পদ্মার অনুমান হয়, হয়তো সামুদ্রিক ঝড়ে তাঁদের নৌকা ভেঙে গিয়েছে, কিংবা সমুদ্রপীড়ায় কাতর হয়ে তাঁদের এই দুরবস্থা হয়েছে। শেষপর্যন্ত অচেতন অবস্থায়ও সেই কন্যার রূপ দেখে পদ্মার মনে হয়েছে, যেন তিনি জীবন্ত কোনো মানবী নন, বরং আঁকা ছবির মতো নিখুঁত ও অপূর্ব সুন্দর এক প্রতিমা।
৮. ‘দেখিয়া রূপের কলা বিস্মিত হইল বালা’— উদ্ধৃত অংশের ‘বালা’ কে ? পাঠ্য কবিতা অবলম্বনে বালার সৌন্দর্যপ্রীতির পরিচয় দাও।
উত্তরঃ আলোচ্য অংশ সৈয়দ আলাওলের ‘পদ্মাবতী’ কাব্যের অন্তর্গত ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে ‘বালা’ বলতে সমুদ্ররাজার কন্যা গুণবতী পদ্মাকে বোঝানো হয়েছে। এখন দেখা যাক, তাঁর সৌন্দর্যপ্রীতির পরিচয় কীভাবে ফুটে উঠেছে।
আলাওল ‘সিন্ধুতীরে’ পদ্যাংশে যে স্থানে পদ্মাবতী অচেতন হয়ে পড়েছিলেন, তার সৌন্দর্যময় বর্ণনা দিয়েছেন। সমুদ্রনৃপতিসুতা পদ্মা সেখানেই নিজের আবাস গড়ে তুলেছিলেন। মনোহর প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য সেই স্থানকে দিব্যভূমির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। সেখানে কোনো দুঃখকষ্ট ছিল না, ছিল কেবল সত্যধর্ম আর সদাচারের অনুশীলন। দিব্যভূমির উপরের দিকে একটি পর্বতে পদ্মা এক উদ্যান নির্মাণ করেছিলেন, যেখানে ছিল নানা ফল ও ফুল। ফুলের সৌরভে বাগান ভরে থাকত। সেই উদ্যানের মাঝেই তিনি রত্নখচিত প্রাসাদ গড়ে তোলেন। এমন অপরূপ রূপময় পরিবেশ কে-ই বা ত্যাগ করতে চাইবে? তাই পদ্মাও সর্বক্ষণ সেই স্থানেই অবস্থান করতেন। এই বর্ণনা থেকে কবি যেমন পদ্মার প্রকৃতিপ্রেম ও সৌন্দর্যবোধের পরিচয় তুলে ধরেছেন, তেমনি মানবিক সৌন্দর্যপ্রীতির এক চিরন্তন আবেদন প্রকাশ করেছেন। মধ্যযুগীয় সাহিত্যে এটি আধুনিক সৌন্দর্যভাবনার অগ্রদূত। এমনকি পিতৃপুরীতে রাত্রিযাপন করে সকালবেলায় পুনরায় সখীদের নিয়ে উদ্যানে ফিরে আসার মধ্যেও পদ্মার সেই সৌন্দর্যপ্রীতি স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে।
৯. “অচৈতন্য পড়িছে ভূমিতে।”— কার কথা বলা হয়েছে? তাকে দেখে, কার কি মনে হয়েছিল? তিনি এই অবস্থায় কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।
উত্তরঃ মুসলমান কবি সৈয়দ আলাওলের রচিত ‘পদ্মাবতী’ কাব্য থেকে ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতা গৃহীত হয়েছে। এখানে ‘অচৈতন্য পড়িছে ভূমিতে’ বলতে সিংহল রাজকন্যা পদ্মাবতীর কথা বলা হয়েছে।
চিতোরের রানা রত্নসেন পদ্মাবতীকে বিবাহ করে সমুদ্রপথে ফিরছিলেন। তখন ভিক্ষুক ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে সমুদ্র তাঁকে ভিক্ষা চাইলে, রত্নসেন তা প্রত্যাখ্যান করেন। ক্রোধান্বিত সমুদ্র তাঁদের নৌকা টুকরো করে দেয়। পদ্মাবতী ও তাঁর চার সখীকে এক ভেলায় তুলে দিয়ে, রত্নসেনকে অন্য ভেলায় তুলে দেন। ফলে নববিবাহিত দম্পতি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পদ্মাবতী সখীদের নিয়ে ভেসে তীরে এসে আছড়ে পড়েন এবং ভয়ে জ্ঞান হারান।
সকালে সমুদ্রকন্যা পদ্মা সখীদের সঙ্গে উদ্যানে ঘুরতে গিয়ে ভেলায় অচেতন পদ্মাবতীকে দেখতে পান। তাঁকে দেখে পদ্মার মনে হয়, হয়তো কোনো গান্ধারী ইন্দ্রের অভিশাপে পতিত হয়েছেন, কিংবা সমুদ্রঝড়ে নৌকাডুবির শিকার হয়ে এখানে এসে পড়েছেন।
তাঁদের প্রাণ ফিরিয়ে আনার আশায় পদ্মা শুধু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেননি, বরং চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেন। তাঁর নির্দেশে সখীরা পদ্মাবতী ও সখীদের কাপড় দিয়ে ঢেকে উদ্যানে নিয়ে আসে। আগুন জ্বালিয়ে মাথা ও পায়ে সেঁক দেওয়া হয়, তন্ত্রমন্ত্র ও ঔষধ প্রয়োগ করা হয়। দীর্ঘ পরিচর্যার পর পদ্মাবতীসহ চার সখী চেতনা ফিরে পান।
১০. ‘চিকিৎসিমু প্রাণপণ’— কে, কার চিকিৎসা করেছিলেন ? এই চিকিৎসার মধ্যে দিয়ে তাঁর চরিত্রের কোন্ গুণের প্রকাশ ঘটেছে ?
উত্তরঃ সৈয়দ আলাওলের ‘পদ্মাবতী’ কাব্যের ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতায় ‘চিকিৎসিমু প্রাণপণ’ কথাটি সমুদ্রকন্যা পদ্মার। তিনি সিংহল রাজকন্যা পদ্মাবতী ও তাঁর চার সখীর চিকিৎসা করেছিলেন।
আলোচ্য অংশে দেখা যায়, সমুদ্রকন্যা পদ্মা উদ্যানে অবস্থানকালে পাঁচ কন্যাকে অচেতন অবস্থায় ভেলায় পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁদের মধ্যে পদ্মাবতীর সৌন্দর্য দেখে তিনি বিস্মিত হন। সখীদের সহায়তায় তাঁদের উদ্ধার করে উদ্যানে নিয়ে যান এবং প্রাণপণে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। পদ্মা এখানে মানবিকতার প্রতীক হিসেবে ফুটে উঠেছেন। অচেনা মানুষের জন্যও তাঁর হৃদয় করুণায় ভরে ওঠে। তিনি ঈশ্বরের কাছে আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করেন—“কৃপা কর নিরঞ্জন”। শুকনো কাপড়ে ঢেকে দেওয়া, আগুন জ্বালিয়ে শরীর সেঁকে দেওয়া, তন্ত্রমন্ত্র ও নানা ঔষধ প্রয়োগ করে তিনি তাঁদের প্রাণ ফিরিয়ে আনেন। শেষপর্যন্ত পদ্মাবতীসহ পঞ্চকন্যার জ্ঞান ফেরে। এই চিকিৎসার মধ্য দিয়ে পদ্মার সহৃদয়তা, মানবিকতা ও পরদুঃখকাতরতার উজ্জ্বল পরিচয় পাওয়া যায়।
১১. “পঞ্চকন্যা পাইলা চেতন।” – পঞ্চকন্যা বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে? কীভাবে তাঁরা চৈতন্যলাভ করলেন কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো।
১১. “পঞ্চকন্যা পাইলা চেতন।” — পঞ্চকন্যা বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে? কীভাবে তাঁরা চৈতন্যলাভ করলেন কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো।
উত্তরঃ কবি সৈয়দ আলাওলের রচিত ‘পদ্মাবতী’ কাব্যের অংশবিশেষ ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতায় আলোচ্য পংক্তিটি ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে “পঞ্চকন্যা” বলতে বোঝানো হয়েছে সিংহলের রাজকন্যা পদ্মাবতী এবং তাঁর সঙ্গে থাকা চারজন সখীকে। অর্থাৎ মোট পাঁচজন কন্যাকেই ‘পঞ্চকন্যা’ বলা হয়েছে।
কবিতার পূর্বকথা থেকে আমরা জানতে পারি, একদিন প্রবল সমুদ্রঝড়ের কারণে রাজকন্যা পদ্মাবতী ও তাঁর সখীদের নৌকো ভেঙে যায়। প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে তাঁরা একটি মান্দাস বা ভেলায় আশ্রয় নেন এবং সমুদ্রের ঢেউয়ে ভেসে ভেসে এসে পৌঁছান দিব্যপুরীর কাছে সিন্ধুতটে। সেখানে ভেলায় তাঁরা অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকেন।
সমুদ্রকন্যা পদ্মা তাঁদের দেখে চমৎকৃত হন। বিশেষ করে সিংহলের রাজকন্যা পদ্মাবতীর অপূর্ব রূপে তিনি বিমোহিত হয়ে যান। তাঁর মনে মানবিকতা জেগে ওঠে এবং তিনি উদ্ধারকাজে হাত বাড়ান। সমুদ্রকন্যা প্রথমেই ঈশ্বরকে স্মরণ করেন এবং সখীদের নির্দেশ দেন। সখীরা পাঁচ কন্যাকে উদ্যানের মাঝখানে নিয়ে গিয়ে তাঁদের চারপাশে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখে। এরপর আগুন জ্বালানো হয় এবং তন্ত্রমন্ত্র অনুসারে মহৌষধি প্রয়োগ করা হয়।
এই কষ্টসাধ্য চিকিৎসা প্রক্রিয়া প্রায় চার দণ্ডকাল, অর্থাৎ দেড় ঘণ্টার মতো, অবিরাম চলতে থাকে। অবশেষে সমুদ্রকন্যা পদ্মা ও তাঁর সখীদের আন্তরিক প্রয়াসে ফল আসে। দীর্ঘ প্রয়াস ও চিকিৎসার ফলে পঞ্চকন্যার অচেতনতা কেটে যায়। তাঁরা ধীরে ধীরে চৈতন্য ফিরে পান এবং জীবনের নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হন।
১২. মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের বিচারে সৈয়দ আলাওল রচিত ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতাটির বৈশিষ্ট্য ও ব্যতিক্রমী স্বাতন্ত্র্যের দিকটি আলোচনা করো।
উত্তরঃ বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে আরাকান রাজসভায় মুসলমান কবিরা রচনা করলেও তাঁদের অধিকাংশ লেখাই ছিল ইসলামি শাস্ত্র, ধর্মীয় উপদেশ ও আধ্যাত্মিকতার প্রচারকে কেন্দ্র করে। কিন্তু সেই প্রথা ভেঙে সৈয়দ আলাওল তাঁর বিখ্যাত ‘পদ্মাবতী’ কাব্যে দেবদেবীর মাহাত্ম্য নয়, বরং মানব-মানবীর প্রেমকাহিনিকে প্রধান উপজীব্য করেছিলেন। এই কারণেই তাঁর রচনা মধ্যযুগীয় সাহিত্যে এক নতুন দিশা এনে দেয়।
‘পদ্মাবতী’ কাব্যের অন্তর্গত ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতায় আমরা দেখি, সমুদ্রকন্যা পদ্মা পঞ্চকন্যাকে চেতনা ফিরিয়ে দিতে গিয়ে প্রথমে ঈশ্বরকে স্মরণ করেছিলেন, পিতার পুণ্যবল ও নিজের ভাগ্যের উপর ভরসা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁদের আরোগ্য সাধন হয়েছে পদ্মার মানবিকতা, জ্ঞান ও মহৌষধ প্রয়োগের মাধ্যমে। এখানে দেবতার অলৌকিক মাহাত্ম্যের চেয়ে মানবপ্রয়াসই মুখ্য হয়ে উঠেছে।
এই কবিতায় সমুদ্রকন্যা পদ্মার হৃদয়ের গভীর মানবিকতাই প্রকট হয়েছে। তিনি অচেনা ও অপরিচিত পাঁচ কন্যাকে বাঁচাতে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন, তাঁদের প্রতি অশেষ সহমর্মিতা ও দয়া দেখান। মধ্যযুগীয় সাহিত্যে সাধারণত নায়ক-নায়িকা সংকটকালে আরাধ্য দেবতার শরণ নিতেন এবং দেবতার আশীর্বাদেই মুক্তি লাভ করতেন। কিন্তু ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতায় সেই প্রচলিত ধারা বদলে গেছে। এখানে দেবতার মাহাত্ম্যের পরিবর্তে মানুষের হৃদয়ের মমতা, সহানুভূতি ও বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসাই কাজ করেছে।
অতএব, ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতার মূল বৈশিষ্ট্য হল মানবিকতার জয়। কবিতাটি ধর্মীয় বা পৌরাণিক গৌরবচর্চার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানবপ্রেম ও মানবিকতার মহিমাকে প্রকাশ করেছে। তাই মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে লেখা হলেও এই কবিতা আধুনিক সাহিত্যের মানবতাবাদের পূর্বসূরি হিসাবে অনন্য মর্যাদা লাভ করেছে। এখানেই এর ব্যতিক্রমী স্বাতন্ত্র্য।
১৩. ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতার কবি সৈয়দ আলাওলের কবিপ্রতিভা সম্পর্কে তোমার ধারণা ব্যক্ত করো।
উত্তরঃ সৈয়দ আলাওল ছিলেন মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের একজন অসাধারণ কবি। তাঁর রচিত ‘পদ্মাবতী’ কাব্যের অংশ হিসেবে ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতাটি আমাদের হাতে এসেছে। আলাওলের কবিপ্রতিভা বিচার করতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় তাঁর অনুবাদক হিসেবে সাফল্যের কথা। তিনি মুহম্মদ জায়সীর ‘পদুমাবৎ’ কাব্যকে সরল পয়ার ও ত্রিপদী ছন্দে বাংলায় রূপান্তরিত করেছিলেন। এই অনুবাদে তাঁর ভাষা হয়েছে সহজ, সাবলীল ও মাধুর্যমণ্ডিত।
‘সিন্ধুতীরে’ কবিতাটি কাব্যের একটি ক্ষুদ্র অংশ হলেও এখানে কবির অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়। চরিত্রগুলিকে তিনি জীবন্ত করে তুলেছেন। সমুদ্রকন্যা পদ্মার মানসিক দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ ও মমতার প্রকাশে কবি অসাধারণ সার্থকতা দেখিয়েছেন। পদ্মাবতী ও তাঁর সখীদের উদ্ধারের দৃশ্যে মানবিকতার যে আবহ সৃষ্টি হয়েছে, তা কবির কাব্যশক্তিরই নিদর্শন।
আলাওল কেবল অনুবাদক নন, তিনি একজন কাব্যশিল্পীও। নগরীর বর্ণনা, উদ্যানের সৌন্দর্য বা চরিত্রদের মনোজগতের সূক্ষ্ম চিত্রণ – সবেতেই তিনি নিখুঁত রূপকারের পরিচয় দিয়েছেন। যদিও তিনি মধ্যযুগীয় ভনিতা, দেবনির্ভরতা ও রীতিনীতি মেনে চলেছেন, তবুও তাঁর কাব্যের কেন্দ্রে স্থান পেয়েছে মানবিকতা ও বাস্তব জীবনের টান।
অতএব বলা যায়, সৈয়দ আলাওলের কবিপ্রতিভা অনুবাদক হিসেবেই সীমাবদ্ধ নয়। তাঁর রচনার ভঙ্গি, ভাষার মাধুর্য, বাস্তবধর্মী চরিত্রচিত্রণ এবং মানবিকতার উজ্জ্বল প্রকাশ তাঁকে মধ্যযুগীয় কবিদের মধ্যে অনন্য আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
১৪. মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের নিদর্শন হিসেবে সৈয়দ আলাওলের ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতার ভাষা, ছন্দ ও উপমা সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তরঃ মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের নিদর্শন হিসেবে সৈয়দ আলাওলের ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতার ভাষা, ছন্দ ও উপমা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মধ্যযুগীয় অন্য কবিরা যে-সময়ে দেবদেবীর মাহাত্ম্য বর্ণনায় রত ছিলেন, তখন আরাকানে বসে আলাওল সম্পূর্ণ মানবীয় প্রেমকাহিনি-নির্ভর কাব্য রচনা করেছেন। তাঁর এই মৌলিকতা মধ্যযুগের সাহিত্যে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
আলাওলের কাব্য জায়সীর প্রায় কবিতার ভাষার আক্ষরিক অনুবাদ হলেও ‘জায়সীর অধ্যাত্মরস’ তাঁর কাব্যে অনুপস্থিত। তবে আলাওলের অনুবাদের ভাষা এই কথার প্রমাণ দেয় যে, ‘হিন্দি ভাষায়’ তিনি যথেষ্ট দক্ষ ছিলেন। তাঁর রচিত ‘পদ্মাবতী’ কেবল একটি অনুবাদ নয়, বরং এক ধরনের রূপকথার মতো সাবলীল ও মনোগ্রাহী কাব্য, যা পাঠকের কাছে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
আলাওল মুহম্মদ জায়সীর কাব্যের হিন্দি ‘চৌপাই ছন্দ’ ভেঙে বাংলা ‘পয়ার– ত্রিপদী’-তে ‘পদ্মাবতী’ রচনা করেছিলেন। এই ছন্দ ব্যবহারে তাঁর স্বকীয়তা ও কুশলতা স্পষ্ট হয়। কবিতার ছন্দ তাই প্রশংসার দাবিদার এবং মধ্যযুগীয় কাব্যধারায় নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে।
কবিতায় ব্যবহৃত উপমা পাঠকের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আলোচ্য ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতায় পাঠক সমগ্র ‘পদ্মাবতী’ কাব্যের উপমা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারেন। কবি উদ্যানে প্রস্ফুটিত পুষ্পের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন— ‘সুগন্ধি সৌরভতর’, অর্থাৎ সুগন্ধি অপেক্ষাও যার সৌরভ অতুলনীয়। আবার পদ্মাবতীকে প্রথম দর্শনেই সমুদ্রকন্যা পদ্মা স্বর্গের অপ্সরা ‘রম্ভা’-র সঙ্গে তুলনা করেছেন। পরবর্তীতে একে একে ‘ইন্দ্রশাপে স্বর্গভ্রষ্ট বিদ্যাধরি’, ‘চিত্রের পোতলি’ প্রভৃতি উপমায় অলঙ্কৃত করেছেন।
এই সমস্ত উপমা থেকেই স্পষ্ট যে, কবি আলাওলের উপমা সৃষ্টিতে দক্ষতা প্রশ্নাতীত। তাঁর ভাষার সাবলীলতা, ছন্দের সুষমা এবং উপমার স্বচ্ছন্দ ব্যবহার তাঁকে মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের একজন প্রথম শ্রেণির কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
১৫. ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতায় পদ্মা সমুদ্রতীরে কাকে দেখতে পান ? তাঁদের অবস্থা দেখে তিনি কী ব্যবস্থা নেন ? আলোচনা করো।
উত্তরঃ সৈয়দ আলাওলের ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশে দেখা যায়, সমুদ্রকন্যা পদ্মা একদিন সখীদের নিয়ে উদ্যানে যাওয়ার পথে সমুদ্রতীরে ভেলায় ভাসমান পাঁচ কন্যাকে অচৈতন্য অবস্থায় দেখতে পান। তাঁদের মধ্যে ছিলেন অপরূপা পদ্মাবতী এবং তাঁর চার সখী। কৌতূহলবশে পদ্মা দ্রুত সেখানে পৌঁছে ভাবেন, হয়তো ইন্দ্রের অভিশাপে কোনো স্বর্গের অপ্সরা স্বর্গভ্রষ্ট হয়েছেন, অথবা সামুদ্রিক ঝড়ের শিকার হয়ে এই অবস্থায় পড়েছেন।
কন্যাদের দুঃসহ অবস্থা দেখে পদ্মার মনে প্রবল দয়া জাগে। তিনি ঈশ্বরের কাছে তাঁদের মঙ্গল কামনা করেন, পিতার পুণ্য ও নিজের সৌভাগ্যের দোহাই দিয়ে জীবনপ্রাপ্তির প্রার্থনা করেন। এরপর তাঁর নির্দেশে সখীরা পঞ্চকন্যাকে কাপড়ে ঢেকে উদ্যানে নিয়ে যায়, মাথা ও পায়ে আগুনের গরম সেঁক দেয় এবং তন্ত্র-মন্ত্র ও মহৌষধ প্রয়োগ করে চিকিৎসা শুরু করে। পদ্মার স্নেহ, মমতা ও অক্লান্ত প্রচেষ্টায় কিছুক্ষণ পরে পঞ্চকন্যা চেতনা ফিরে পায়। এভাবেই সমুদ্রকন্যার সহানুভূতিশীল হৃদয় পদ্মাবতী ও তাঁর সখীদের নতুন জীবন দান করে।
∆ সিন্ধুতীরে বিষয়বস্তু আলোচনা Click Here
∆ সিন্ধুতীরে MCQ প্রশ্নোত্তর Click Here
∆ সিন্ধুতীরে SAQ প্রশ্নোত্তর Click Here
∆ সিন্ধুতীরে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর Click Here
∆ সিন্ধুতীরে MCQ মক্ টেস্ট Click Here
📌 আরো দেখুনঃ
📌দশম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র Click Here
📌 দশম শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর Click Here
📌 মাধ্যমিক সমস্ত বিষয় প্রশ্নপত্র Click Here
📌 মাধ্যমিক সমস্ত বিষয় মক্ টেস্ট Click Here