সিন্ধুতীরে
—সৈয়দ আলাওল
সিন্ধুতীরে কবিতার বিষয়বস্তু দশম শ্রেণি বাংলা | Sindhutire Kobitar Bishoibostu Class 10 Bengali West Bengal Board
সাহিত্য সঞ্চয়ন
দশম শ্রেণি বাংলা (প্রথম ভাষা)
সিন্ধুতীরে কবিতার কবিতা, কবি পরিচিতি, বিষয়বস্তু, সারাংশ, সারমর্ম, সারসংক্ষেপ, নামকরণ দশম শ্রেণি বাংলা | Sindhutire Kobitar Bishoibostu Class 10 Bengali wbbse
📌দশম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র Click Here
📌 দশম শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর Click Here
সিন্ধুতীরে
—সৈয়দ আলাওল
কবি পরিচিতি : আনুমানিক সপ্তদশ শতকে, সৈয়দ আলাওল জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার জালালপুরে। তাঁর পিতা ছিলেন জালালপুরের অধিপতি মজলিস কুতুবের প্রধান কর্মচারী। তিনি বাংলা সাহিত্যের এক প্রখ্যাত মুসলিম কবি ছিলেন। জলদস্যুদের হাতে আলাওলের বাবা মারা গেলে, আলাওল আরাকান (বর্তমান ব্রহ্মদেশ) রাজ্যে অশ্বারোহী সৈন্য পদে যোগদান করেন। তারপর আরাকান রাজার প্রধানমন্ত্রী মাগন ঠাকুর আলাওল এর অসাধারণ সাহিত্য প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে, তিনি তাকে রাজসভায় বসার অনুমতি দেন। আলাওল রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় কয়েকটি কাব্য রচনা করেছিলেন। তাঁর প্রথম এবং শ্রেষ্ঠ রচনা ‘পদ্মাবতী’। আরাকান রাজার প্রধানমন্ত্রী মাগন ঠাকুরের অনুরোধে ‘সাইফুলমূলক-বদিউজ্জামাল’ রচনা করেন। এছাড়াও তিনি ‘সপ্তপয়কর’, ‘তোহফা’, ‘লোরচন্দ্রানী’ গ্রন্থ অনুবাদ রচনা করেন। মালিক মোহাম্মদ জায়সীর হিন্দি ভাষায় রচিত কাব্য ‘প্রদুমাবৎ’ অনুসরণে আলাওল ‘পদ্মাবতী’ কাব্যটি রচনা করেন। তিনি এই কাব্যে চিতোরের রানা রত্নসেন ও সিংহলের রাজকন্যা পদ্মাবতীর প্রেম কাহিনী নিয়ে রচনা করেছেন।
কবিতার উৎস : আরাকান রাজসভার বিখ্যাত কবি সৈয়দ আলাওলের অনুবাদমূলক কাব্য ‘পদ্মাবতী’ (১৬৪৬ খ্রি.)-এর ‘পদ্মাসমুদ্র খণ্ড’-এর অন্তর্গত একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশই হল ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতা। মুহম্মদ জায়সীর ‘পদুমাবৎ’ কাব্যের ভিত্তিতে আলাওল এই কাহিনি রচনা করেন। মূল কাহিনি অবলম্বনে তিনি পরিবর্জন, সংযোজন, সংক্ষেপ, বিস্তৃতি এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের মাধ্যমে মোট সাতান্নটি খণ্ডে সমৃদ্ধ কাব্যগঠন করেন। এটি ত্রিপদী ছন্দে রচিত, যার মোট চরণ সংখ্যা বাইশটি। অন্ত্যমধ্য বাংলা ভাষার একটি সার্থক ও মূল্যবান উদাহরণ হিসেবেই ‘পদ্মাসমুদ্র খণ্ড’-এর প্রথম কবিতা ‘সিন্ধুতীরে’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
পদ্মাবতী কাব্যের পূর্বকথা : ‘পদ্মাবতী’ কাব্যটি শুরু হয় সিংহলের রাজকন্যা পদ্মাবতীর প্রিয় সুখপাখি হীরামনিকে কেন্দ্র করে। পাখিটি একদিন হঠাৎ করে বনে পালিয়ে গেলে, এক ব্যাধ (শিকারী) পাখিটিকে ধরে এক ব্রাহ্মণের কাছে হাটে বিক্রি করে। সেই ব্রাহ্মণ আবার পাখিটিকে চিতোররাজ রানা রত্নসেনের কাছে বিক্রি করে। শুকপাখির মুখে সিংহল রাজকন্যা পদ্মাবতীর অতুলনীয় রূপসৌন্দর্যের খবর জানতে পারেন। তিনি পদ্মাবতীর প্রতি আকৃষ্ট হন এবং সিংহলে যাত্রা করেন পদ্মাবতীকে বিবাহ করবেন বলে। যোগীবেশে সিংহলে উপস্থিত হন রাজা রত্নসেন। বহু বিপদবিঘ্ন অতিক্রম করে রত্নসেন ও পদ্মাবতীর সাক্ষাৎ ঘটে। পদ্মাবতী রত্নসেনকে বিবাহ করতে রাজি হলে সিংহলরাজার অনুমতিতে তাদের ধুমধাম করে বিবাহ সম্পন্ন হয় এবং তারা সুখে দিন কাটাতে থাকেন।
একদিন আবার এক পাখির মুখে রত্নসেন জানতে পারেন তাঁর রাজ্য চিতোরের দুরবস্থা এবং প্রথমা রানি নাগমতীর কষ্টের কথা। এই খবর শুনে তিনি চিতোর ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যাত্রার প্রস্তুতির সময় এক বৃদ্ধ এসে রাজার কাছে সম্পদের এক-চতুর্থাংশ চান এবং বলেন, এতে সমুদ্রযাত্রার বাধা দূর হবে। কিন্তু রত্নসেন তাঁর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন ও তিরস্কার করেন। বৃদ্ধ আসলে সমুদ্র দেবতা ছিলেন, যিনি রাজার আচরণে রাগ করে চলে যান।
যাত্রা শুরু হলে সমুদ্রের মাঝখানে প্রবল ঝড়ে প্রায় সব নৌকা ডুবে যায়, শুধু রত্নসেনের নৌকাটি ভেসে থাকে। হঠাৎ এক ভয়ংকর রাক্ষস নৌকায় আক্রমণ করে, কিন্তু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলে এক বিশাল সমুদ্রপাখি এসে রাজাকে রক্ষা করে। তবুও নৌকাটি ভেঙে যায়। প্রাণ বাঁচাতে রাজা পদ্মাবতী ও তাঁর চার সখীকে একটি ভেলায় তোলেন। ঝড়ের সময় ভেলাটি দু’ভাগ হয়ে যায়— একভাগে থাকেন রাজা, আর অন্যভাগে পদ্মাবতী ও তাঁর চার সখী। পদ্মাবতী ও তার সখীরা সমুদ্রে ভেলায় ভাসতে ভাসতে তটভুমিতে আছড়ে পড়ে এবং ভয়ে তাদের জ্ঞান হারিয়ে যায়। এখান থেকে আমাদের ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতাটি শুরু হয়েছে।
সিন্ধুতীরে কবিতাটি আলোচনা : ‘পদ্মাবতী’ কাব্যের পূর্ব কথা থেকে আমরা জানতে পারি রাজকন্যা পদ্মাবতী ও তার সখীরা সমুদ্রে ভেলায় ভাসতে ভাসতে তটভূমিতে আছড়ে পড়ে এবং ভেলার মধ্যে তাদের জ্ঞান হারিয়ে যায়, যে সমুদ্রের তীরে ছিল এক দিব্যপুরী বা সুন্দর প্রাসাদ। সেই সুন্দর প্রাসাদে থাকত এক সমুদ্রকন্যা পদ্মা ও তার সখীরা। প্রাসাদের কোলে সমুদ্র কন্যা পদ্মা, নিজের হাতে একটি সুন্দর বাগান তৈরি করেছেন। সেই বাগান ফুলের গন্ধে ভরপুর, নানান ফল-মূল এবং বিভিন্ন রংবেরঙের গাছপালা, চিত্র ও রত্নখচিত সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ। সেই স্থানে সমুদ্রকন্যা পদ্মা এবং তার সখীরা বাস করেন।
সমুদ্র মধ্যস্থ প্রাসাদে রাত্রি শেষের পর প্রাত:কালে সমুদ্রকন্যা পদ্মা ও তার সখীরা বাগানে ঘুরতে যাওয়ার পথে, চারজন সখীর সঙ্গে অজ্ঞান অবস্থায় রাজকন্যা পদ্মাবতীকে ভেলায় (মাঞ্জাস) শুয়ে থাকতে দেখেন। তিনি অজ্ঞান রাজকন্যা পদ্মাবতীর রূপ দেখে নানা অনুমান করতে থাকে, মনে করেন- কোন গান্ধারী ইন্দ্রের শাপগ্রস্থ হয়ে ভুমিতে পড়েছেন বা সমুদ্র ঝড়ের আঘাতে নৌকাডুবি হয়ে ভাসতে ভাসতে এখানে এসেছে।
যাইহোক, সমুদ্রকন্যা পদ্মা তার সখীদের নির্দেশ দেন, পাঁচ কন্যাকে বাগানের মাঝে নিয়ে গিয়ে তাদের কাপড় দিয়ে ঢেকে, আগুন জ্বেলে, তন্ত্র-মন্ত্র ইত্যাদি মহৌষধ দিয়ে তাদের গা সেঁকে দিতে বলে। তারপর তাদের ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে চার দন্ড চলার পর রাজকন্যা পদ্মাবতী ও তার সখীদের জ্ঞান ফিরিয়ে আনে।
নামকরণ : সাহিত্যে যেকোনো রচনার নাম শুধু পরিচয়ের মাধ্যম নয়, বরং তার ভাব, অর্থ ও মূল ঘটনাকে গভীরভাবে প্রকাশ করে। বিশেষ করে কাব্য বা কবিতার নাম সাধারণত ব্যঞ্জনামূলক হয়, কারণ এটি কবির ভাবনা ও কল্পনার শিল্পিত প্রকাশ।
‘সিন্ধুতীরে’ কবিতাটি সৈয়দ আলাওলের অনুবাদমূলক কাব্য ‘পদ্মাবতী’র ‘পদ্মাসমুদ্র খণ্ড’-এর প্রথম কবিতা। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ কর্তৃক নির্ধারিত এই নামটি এসেছে সিন্ধুতীরবর্তী এক বিশেষ ঘটনার উপর ভিত্তি করে। কাহিনিতে চিতোরের রাজা রত্নসেন সিংহল রাজ্য থেকে স্ত্রী পদ্মাবতী ও বিপুল ধনরত্ন নিয়ে নৌকায় করে নিজ রাজ্যে ফিরছিলেন। কিন্তু পথিমধ্যে সমুদ্রের ছলনায় ভয়ংকর বিপদ নেমে আসে—প্রবল ঝড় ও ঢেউয়ের আঘাতে নৌকাগুলো ডুবে যায়, আর রাজা ও রানির জীবন সংকটে পড়ে।
এই বিপদের মাঝেই পদ্মাবতী ও তাঁর চার সখী সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে ভেসে এসে সিন্ধুর তীরে পৌঁছান। সেখানে সমুদ্রকন্যা পদ্মা ও তাঁর সখীরা তাঁদের প্রায় মৃত অবস্থায় দেখতে পান। প্রাণপণ চেষ্টায় তাঁরা পদ্মাবতী ও সখীদের জীবন ফিরিয়ে দেন এবং তাঁদের প্রকৃত পরিচয় জানতে পারেন। এখান থেকেই কাহিনির মোড় ঘুরে যায়—পদ্মাবতী শেষ পর্যন্ত ধনরত্নসহ স্বামী রত্নসেনকে ফিরে পান, আর তাঁদের জীবনে সুখ ফিরে আসে।
অতএব, সিন্ধুতীরই এই কবিতার মূল কেন্দ্র— যেখানে ঘটে বিপদ, ঘটে উদ্ধার, আর ঘটে পুনর্মিলন। এই তীর পদ্মাবতীর জীবনে একদিকে যেমন শোক, দুঃখ ও বিচ্ছেদের প্রতীক, অন্যদিকে তেমনই সুখ, মিলন ও আশার প্রতীক হয়ে ওঠে। তাই বাইশটি চরণে গঠিত এই কবিতার জন্য ‘সিন্ধুতীরে’ নামকরণ নিঃসন্দেহে একেবারেই যথাযথ ও সার্থক।
∆ সিন্ধুতীরে MCQ প্রশ্নোত্তর Click Here
∆ সিন্ধুতীরে SAQ প্রশ্নোত্তর Click Here
∆ সিন্ধুতীরে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর Click Here
∆ সিন্ধুতীরে বড়ো প্রশ্নোত্তর Click Here
∆ সিন্ধুতীরে MCQ মক্ টেস্ট Click Here
📌 আরো দেখুনঃ
📌দশম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র Click Here
📌 দশম শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর Click Here
📌 মাধ্যমিক সমস্ত বিষয় প্রশ্নপত্র Click Here
📌 মাধ্যমিক সমস্ত বিষয় মক্ টেস্ট Click Here