নদীর বিদ্রোহ গল্পের সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী (SAE) প্রশ্নোত্তর দশম শ্রেণি বাংলা | Nodir Bidroho Golper Short and Explanatory Question Answer Class 10 wbbse

নদীর বিদ্রোহ
—মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

নদীর বিদ্রোহ গল্পের সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী (SAE) প্রশ্নোত্তর দশম শ্রেণি বাংলা | Nodir Bidroho Golper Short and Explanatory Question Answer Class 10 Bengali wbbse

সাহিত্য সঞ্চয়ন
দশম শ্রেণি বাংলা (প্রথম ভাষা)

নদীর বিদ্রোহ গল্পের সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর নবম শ্রেণি বাংলা | Nodir Bidroho Golper SAE Question Answer Class 10 Bengali wbbse

📌দশম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র Click Here

📌 দশম শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর Click Here

ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর নদীর বিদ্রোহ গল্প দশম শ্রেণি বাংলা | Class 10 Bengali Nodir Bidroho Golper SAE Question Answer wbbse

∆ কমবেশি ৬০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও : প্রতিটি প্রশ্নের মান-৩

১. “…সে প্রায় কাঁদিয়া ফেলিয়াছিল;” – কে, কী কারণে প্রায় কেঁদে ফেলেছিল ?

উত্তরঃ প্রশ্নে উল্লিখিত অংশে নদেরচাঁদের কথা বলা হয়েছে।

নদেরচাঁদের কাছে নদী ছিল জীবন্ত মানুষের প্রতিমূর্তি। জলপূর্ণ নদী তার কাছে প্রাণময় মানুষ হিসেবেই ধরা দিত। এক অনাবৃষ্টির বছরে সে তার দেশের নদীটিকে শুকিয়ে যেতে দেখেছিল। জল না পেয়ে নদেরচাঁদের দেশের নদীটির ক্ষীণ স্রোতধারা প্রায় শুকিয়ে গিয়েছিল। নদীর শুকিয়ে যাওয়া নদেরচাঁদের কাছে মানুষের মৃত্যুর সমান ছিল। তাই সে ছোটবেলার পরিচিত সেই নদীটির এই অবস্থা দেখে প্রায় কেঁদে ফেলেছিল।

২. “এই নদীর মতো এত বড় ছিল না।”– কোন্ নদীর কথা বলা হয়েছে ? সেই নদী কেমন ছিল ?

উত্তরঃ প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে নদেরচাঁদের দেশের নদীর কথা বলা হয়েছে।

স্টেশনমাস্টারের চাকরি করতে এসে নদেরচাঁদ যে নদীটিকে দেখেছিল, তার দেশের নদীটি ওই নদীর মতো এত বড় ছিল না। কিন্তু নদেরচাঁদের দেশের সেই ক্ষীণস্রোতা, নির্জীব নদীটি অসুস্থ দুর্বল আত্মীয়ার মতোই তার মমতা পেয়েছিল। অনাবৃষ্টিতে সেই নদীটি শুকিয়ে মৃতপ্রায় হয়ে যেত। তখন সেই নদীর জন্য নদেরচাঁদের চোখে জল আসত। দুরারোগ্য অসুখে পরম আত্মীয় কেউ মারা যাওয়ার সময় মানুষ যেমন কাঁদে নদেরচাঁদের কান্নাও সেরকম ছিল।

৩. “নদীর জন্য এমনভাবে পাগলা হওয়া কি তার সাজে ?” – কে, কেন এরকম প্রশ্ন করেছে ?

উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পে এই প্রশ্নটি করেছেন নদেরচাঁদ।

নদেরচাঁদ নদীর জন্য পাগল হত। প্রবল বৃষ্টির কারণে পাঁচ দিন নদীকে না দেখে নদেরচাঁদ আকুল হয়ে উঠেছিল। কিন্তু পেশায় সে ছিল স্টেশন মাস্টার। স্টেশন মাস্টারের কাজ যথেষ্ট দায়িত্বপূর্ণ। দিনরাত মেল, প্যাসেঞ্জার আর মালগাড়িগুলির ছোটাছুটি নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব যাদের, নদেরচাঁদও তাদের মধ্যে একজন। ঝুঁকিপূর্ণ সেই কাজ ভুলে সবসময় নদীর জন্য পাগল হওয়া তার সাজে না। তাই নদেরচাঁদ নিজেকেই এই প্রশ্ন করেছে।

৪. “নদেরচাঁদ সব বোঝে, নিজেকে কেবল বুঝাইতে পারে না।” – নদেরচাঁদ কী বোঝে ? সে নিজেকে বোঝাতে পারে না কেন ?

উত্তরঃ নদীর প্রতি নদেরচাঁদের এত বেশি মায়া যে একটু অস্বাভাবিক-এই কথাটি সে নিজেই বোঝে।

নদেরচাঁদ জানে নদীর প্রতি তার এরূপ ভালোবাসা সবার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। তা ছাড়া সে যে কাজে নিযুক্ত তাতে নদী সম্পর্কে এত চিন্তা করাও নিতান্ত অস্বাভাবিক। কেন-না, সে একজন স্টেশনমাস্টার। তবুও নদেরচাঁদ তার মনকে বোঝাতে পারে না এই দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতাকে। তাই এক দুর্বোধ্য আকর্ষণে তার চঞ্চল মন বারে বারে নদীর কাছে ছুটে যায়।

৫. “… নদীকে এভাবে ভালোবাসিবার একটা কৈফিয়ত নদেরচাঁদ দিতে পারে।”— কোন্ প্রসঙ্গে এই কথা বলা হয়েছে ? কী কৈফিয়ত নদেরচাঁদ দিতে পারে ?

উত্তরঃ নদেরচাঁদ পেশায় ছিল একজন স্টেশনমাস্টার। কিন্তু স্টেশনমাস্টারের গুরুদায়িত্ব সামলে নদীর প্রতি এরকম টান, নদীর জন্য এমনভাবে পাগল হওয়া ছিল অস্বাভাবিক। তবুও নদেরচাঁদের নদীকে এভাবে ভালোবাসার একটা কৈফিয়ত দেওয়ার কথা লেখক বলেন।

নদেরচাঁদের নদীকে ভালোবাসার কৈফিয়তটি ছিল এই যে, তার শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে নদী। যেহেতু নদীর ধারেই তার জীবনের বেশিরভাগটা কেটেছে তাই চিরদিন সে নদীকে ভালোবেসেছে।’

৬. “… নদেরচাঁদের এত বেশি মায়া একটু অস্বাভাবিক।”– কার প্রতি এত বেশি মায়া এবং কেন তা অস্বাভাবিক ?

উত্তরঃ প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে নদেরচাঁদের নদীর প্রতি মায়ার কথা বলা হয়েছে।

অনেকদিন নদীকে দেখতে না পেলে, নদীকে দেখার জন্য নদেরচাঁদ শিশুর মতো ছটফট করত। নদেরচাঁদ ছিলেন একজন স্টেশনমাস্টার। এই পেশার মানুষদের বাস্তববাদী এবং কাজের প্রতি মনোযোগী হতে হয়। তাই পেশার বাইরে গিয়ে নদীর প্রতি এতটা ভালোবাসা নদেরচাঁদের পক্ষে বেমানান ছিল। নদেরচাঁদের নিজের কাছেও তার নদীর প্রতি এত মায়া অস্বাভাবিক বলে মনে হয়েছে।

৭. “দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগিতে ভুগিতে পরমাত্মীয়া মরিয়া যাওয়ার উপক্রম করিলে মানুষ যেমন কাঁদে।” – মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পের মুখ্য চরিত্র স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদের নদীর ধারেই জন্ম, নদীর ধারেই সে মানুষ হয়েছে। তাই নদীর প্রতি তার এক অদ্ভুত টান ছিল। দেশের ক্ষীণস্রোতা ও নির্জীব নদীটি অসুস্থ, দুর্বল আত্মীয়ার মতোই তার মমতা পেয়েছিল। একবার অনাবৃষ্টিতে ওই ক্ষীণস্রোতা নদীর জল শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে নদেরচাঁদের ভীষণ কষ্ট হয়েছিল। সে এমনভাবে কেঁদেছিল যেন কোনো কঠিন রোগে তার কাছের আত্মীয় মারা যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কারণ এই নদীকে সে পরমাত্মীয়ের মতোই ভালোবাসত।

৮. ‘ব্রিজের দিকে হাঁটিতে লাগিল।’- কোন্ ব্রিজের কথা বলা হয়েছে ? সেই ব্যক্তি ব্রিজের দিকে হাঁটতে লাগল কেন ? ১+২=৩

উত্তরঃ ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্প থেকে উদ্ধৃত অংশে নদেরচাঁদ যে স্টেশনের স্টেশনমাস্টার, সেখান থেকে এক মাইল দূরে নদীর ওপরে নতুন তৈরি রিজটির কথা বলা হয়েছে।

নদেরচাঁদ ছিল প্রকৃতিপ্রেমিক। বিশেষত নদীর প্রতি তার ছিল অপরিসীম ভাস্কর্ষণ। সে প্রায় রোজই নদীর পাশে বসে সময় কাটায়। বিগত পাঁচদিন ধরে মুশলধারায় বৃষ্টির জন্য সে নদীকে দেখতে যেতে পারেনি। তাই কিছুক্ষণের জন্য বৃষ্টি থামতেই সে নদীকে দেখার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

৯. ‘নদেরচাঁদ ছেলেমানুষের মতো ঔৎসুক্য বোধ করিতে লাগিল।’- ‘ছেলেমানুষের মতো’ বলার কারণ কী ? নদেরচাঁদের ঔৎসুক্য হয়েছিল কেন ? ১+২=৩

উত্তরঃ চঞ্চলমতি শিশুদের ধৈর্য খুবই কম। খুব অল্পেই তাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে। নদেরচাঁদও একটানা পাঁচদিন অবিশ্রান্ত বর্ষণের ফলে নদীকে দেখতে না পেয়ে অধৈর্য হয়ে পড়ে। বয়সের তুলনায় তার এই অধৈর্যকে লেখক ছেলেমানুষির সাঙ্গে তুলনা করেছেন।

শৈশব থেকেই নদীর সঙ্গে নদেরচাঁদের সখ্য। তাঁর কর্মস্থলের কাছাকাছি নদীটিকে প্রতিদিন দেখতে যেত। পাঁচদিন অবিশ্রান্ত বর্ষণে যেতে না পারায় নদীটির চেহারা কেমন হয়েছে তা দেখার জন্য সে উৎসুক হয়েছিল।

১০. “নিজের এই পাগলামিতে যেন আনন্দই উপভোগ করে।” – কার কথা বলা হয়েছে? তার পাগলামিটি কী?

উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পে নদেরচাঁদের কথা বলা হয়েছে।

নদীর সঙ্গে নদেরচাঁদের শৈশব থেকেই সখ্য ছিল। কর্মজীবনেও তার নদীর প্রতি আকর্ষণ একটুও কমেনি। প্রবল বৃষ্টির কারণে পাঁচ দিন নদীকে দেখতে না পেয়ে সে ‘ছেলেমানুষের মতো’ আকুল হয়ে ওঠে। বৃষ্টি একটু থামলেই সে নদীর দিকে যেতে শুরু করে। নদীর প্রতি এই আকুলতাই ছিল তার ‘পাগলামি,’ যার অর্থ সে নিজেকে পুরোপুরি বুঝতে পারে না।

১১. নদেরচাঁদের দেশের নদী আর স্টেশনমাস্টারি করতে এসে পরিচিত নদী, এই দুই নদীকে ভালোবাসার প্রকৃতি বা স্বরূপ কীরকম ছিল ?

উত্তরঃ নদেরচাঁদের দেশের ক্ষীণস্রোতা নদী যেন অসুস্থ, দুর্বল আত্মীয়ের মতোই তার মমতা পেয়েছিল। তাই নদীর জল শুকিয়ে এলে নদেরচাঁদ পরমাত্মীয় মারা গেলে মানুষ যেভাবে কাঁদে ঠিক সেভাবেই কেঁদেছিল।

অন্যদিকে স্টেশনমাস্টারি করতে এসে পরিচয় হওয়া গভীর, প্রশস্ত নদীটি ছিল নদেরচাঁদের পরমবন্ধু। একদিনও সে ওই নদীকে না দেখে থাকতে পারত না। নদীর স্রোতে নিজের স্ত্রীকে লেখা চিঠি ফেলে এক অদ্ভুত খেলায় নদেরচাঁদ মেতে উঠত।

১২. “আজ যেন সেই নদী খেপিয়া গিয়াছে।”— কোন্ নদীর কথা বলা হয়েছে ? নদীর এই খেপে যাওয়ার মধ্যে নদেরচাঁদ কোন্ সত্য উপলব্ধি করেছে ?

উত্তরঃ এখানে নদেরচাঁদের কর্মক্ষেত্রের কাছের নদীর কথা বলা হয়েছে।

বর্ষায় নদীটি টইটুম্বুর হয়ে উঠেছিল। প্রবল তার জলস্রোত। পরিপূর্ণতার আনন্দে সে যেন মাতোয়ারা। কোনো বাধা সে মানতে চায় না। উত্তাল জলের ঘূর্ণিতে পঙ্কিল আবর্ত সৃষ্টি হয়েছে। চার বছরের চেনা নদীকে সেদিন নদেরচাঁদের আরও বেশি ভয়ংকর এবং অপরিচিত মনে হয়েছিল।

১৩. “চার বছরের চেনা এই নদীর মূর্তিকে তাই যেন আরও বেশি ভয়ংকর, আরও বেশি অপরিচিত মনে হইল।” – কেন নদেরচাঁদের কাছে নদীর মূর্তি অপরিচিত বলে মনে হল আলোচনা করো।

উত্তরঃ প্রশ্নে উদ্ধৃতাংশে নদেরচাঁদের স্টেশনমাস্টারি করতে এসে পরিচয় হওয়া বাঁধে বন্দি নদীটির কথা বলা হয়েছে। এই নদী ছিল গভীর, প্রশস্ত ও জলপূর্ণ। কিন্তু প্রবল বর্ষায় পাঁচ দিন সে নদীকে দেখতে যেতে পারেনি। পাঁচ দিন পরে গিয়ে নদেরচাঁদ দেখল, নদী যেন তার বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিদ্রোহ করছে। নদীর গাঢ় পঙ্কিল জল ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। নদীর এই ভয়ঙ্কর রূপ নদেরচাঁদ আগে কখনও দেখেনি। তাই নদীকে তার অপরিচিত বলে মনে হয়েছিল।

১৪. ‘কিছুক্ষণ নদীকে না দেখিলে সে বাঁচিবে না।’- কার না বাঁচার কথা বলা হয়েছে ? নদীকে না দেখলে সে বাঁচবে না কেন ? ১+২=৩

উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পের মুখ্য চরিত্র নদেরচাঁদ নদীকে না দেখলে বাঁচবে না বলা হয়েছে।

নদেরচাঁদ জন্ম থেকেই নদীর পাশে বড়ো হয়েছে। নদী তার জীবনে শ্বাসপ্রশ্বাসের মতোই মূল্যবান। নদীকে ছেড়ে সে কখনও থাকেনি। এমনকি, বরাতজোরে তার কর্মক্ষেত্রে সে নদীকে পাশে পেয়েছে। তাই নদীর প্রতি তার আকর্ষণ যেন পাগলামিতে পরিণত হয়েছে। এই কারণে নদীকে না দেখলে সে বাঁচবে না।

১৫. “নদেরচাঁদের ভারী আমোদ বোধ হইতে লাগিল।” — কী কারণে নদেরচাঁদের এমন অবস্থা হয়েছিল লেখো।

উত্তরঃ নদেরচাঁদ নদীকে খুব ভালোবাসত। বর্ষাকালে নদী জলে পূর্ণ হয়ে উঠেছিল। সে মুগ্ধ চোখে নদীর সেই রূপ দেখছিল। নদীর উন্মত্ত জলস্রোত পাগলের মতো ছুটে চলেছিল। জলস্তর এত উঁচুতে উঠে এসেছিল যে, নদেরচাঁদ হাত বাড়িয়ে তা ছুঁতে পারত। নদী যেন তখন পূর্ণযৌবনা। কোনো কিছু দিয়েই তার সেই গতি রোধ করা অসম্ভব। নদীর এই পরিপূর্ণ রূপ দেখে নদেরচাঁদের ভারি আমোদ বোধ হয়েছিল।

১৬. ‘আজও সে সেইখানে গিয়া বসিল।’-সে কোথায় গিয়ে বসল ? তার সেখানে বসার কারণ কী ছিল ? ২+১ = ৩

উত্তরঃ ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্প অনুসারে নদেরচাঁদ যে স্টেশনের স্টেশনমাস্টার ছিল, তার এক মাইল দূরে নদীর ওপরে একটি নতুন রং করা ব্রিজ ছিল। সেই ব্রিজের মাঝামাঝি ইট, সুরকি আর সিমেন্ট গাঁথা ধারকস্তম্ভের কিনারায় বসে সে রোজ নদীকে দেখত। সেদিনও নদেরচাঁদ সেইখানেই গিয়ে বসল।

ব্রিজের ধারকস্তম্ভের কিনারায় বসে নদীকে দেখলে নদীবক্ষের ওপর থেকে নদীর বিস্তারসহ সামগ্রিক রূপটাই দর্শকের চোখে ধরা পড়ে। তাই নদেরচাঁদ সেখানে বসত।

১৭. নদেরচাঁদ নদীর সঙ্গে যে খেলায় মেতে উঠেছিল, সেই খেলাটি কীরকম ছিল?

উত্তরঃ এক বর্ষার দিনে নদীর কাছে গিয়ে নদেরচাঁদ দেখল নদীর জল ব্রিজের ধারকস্তম্ভে বাধা পেয়ে এক ফেনিল আবর্ত তৈরি করেছে। সে পকেট থেকে অনেকদিন আগের একটা চিঠি বার করে নদীর স্রোতে ছুঁড়ে ফেলল। চোখের পলকে তা অদৃশ্য হয়ে গেল। এরপরে স্ত্রীকে লেখা চিঠির এক-একটি পাতা ছিঁড়ে দুমড়ে-মুচড়ে সে নদীর মধ্যে ফেলতে লাগল আর নদীও যেন সেগুলি নিজের মধ্যে লুকিয়ে ফেলতে লাগল। এইভাবে নদেরচাঁদ নদীর সঙ্গে এক অদ্ভুত খেলায় মেতে উঠেছিল।

১৮. “বড়ো ভয় করিতে লাগিল নদেরচাঁদের” – কী কারণে নদেরচাঁদের ভয় করতে লাগল ?

উত্তরঃ নদেরচাঁদ মুষলধারে বৃষ্টিতে ভিজে নদীর পূর্ণ রূপ দেখছিল। এরই মধ্যে চারদিকে নেমে এলো ঘন অন্ধকার। বৃষ্টি একটু থামিয়েই আবার প্রবল বেগে শুরু হইল। নদীর কলতান আর বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ মিলে সংগীতের ঐকতান সৃষ্টি করিল। নদেরচাঁদের মন হইতে ছেলেমানুষি আমোদ মিলাইয়া গেল। এরূপ পরিবেশে তাহার সর্বাঙ্গ যেন অবশ, অবসন্ন হইয়া গেল। নদীর রহস্যময়তা দেখিয়া নদেরচাঁদের ভয় করিতে লাগিল।

১৯. “নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে।” – কার কথা বলা হয়েছে? নদীর বিদ্রোহের কারণ কী ?

উত্তরঃ প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশে নদেরচাঁদের কথা বলা হয়েছে।

পাঁচ দিন টানা বৃষ্টির পর নদীর কাছে গিয়ে নদেরচাঁদ দেখল নদীর পঙ্কিল জলস্রোত যেন রোষ ও ক্ষোভে উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। নদীর জলস্রোত প্রায় ব্রিজের কাছাকাছি উঠে এসে ব্রিজ ও বাঁধ ভেঙে বেরিয়ে যেতে চাইছে। তা দেখে নদেরচাঁদ নদীর বিদ্রোহের কারণ বুঝতে পারল। তার মনে হল, নদী যেন তার এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেতে চাইছে, ফিরে পেতে চাইছে তার স্বাভাবিক গতি। আর তাই সে এভাবে বিদ্রোহ করছে।

২০. “নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে।”– কে বুঝতে পেরেছে ? নদীর বিদ্রোহ বলতে সে কী বোঝাতে চেয়েছে ?

উত্তরঃ উদ্ধৃত অংশে নদেরচাঁদের বুঝতে পারার কথা বলা হয়েছে।

প্রবল বৃষ্টির কারণে পাঁচ দিন অদর্শনের পরে নদীর উন্মত্ত রূপ দেখে নদেরচাঁদ চমকে ওঠে। তার মনে হয় নদী যেন খেপে গেছে। নদেরচাঁদ উপলব্ধি করে, নদীর ওপর তৈরি রং করা নতুন ব্রিজ, নদীর বাঁধ যেন নদীর প্রবাহের পথে প্রবল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদী সেসব ভেঙে চুরমার করে দিতে চায়। নদী যেন উদ্দামতার মধ্য দিয়ে তার বিদ্রোহের প্রকাশ ঘটাচ্ছে।

২১. ‘চিঠি পকেটেই ছিল।’- কোন্ চিঠির কথা বলা হয়েছে ? সে চিঠির পরিণতি কী হয়েছিল ? ২+১ = ৩

উত্তরঃ গ্রামের ছেলে নদেরচাঁদ রোজগারের তাগিদে গ্রাম থেকে দূরে – থাকত। নিজের স্ত্রীর সাথে তার সাক্ষাতের একমাত্র মাধ্যম চিঠি। বর্ষার আবহাওয়া নদেরচাঁদকে বিরহাতুর করে তুলেছিল। তাই সে অবিশ্রান্ত বর্ষণের সঙ্গে সুর মিলিয়ে প্রাণপণে পাঁচপৃষ্ঠাব্যাপী বিরহবেদনাপূর্ণ একটি ভয় চিঠি লেখে। এখানে সেই চিঠিটির কথা বলা হয়েছে।

উন্মত্ত ভয়ংকরী নদীর সঙ্গে খেলবার তাগিদে আনমনা নদেরচাঁদ চিঠিটি ছিঁড়ে ছিঁড়ে নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছিল।

২২. “পারিলেও মানুষ কি তাকে রেহাই দিবে ?” – কার, কী পারার কথা বলা হয়েছে ? মানুষ কীভাবে তাকে রেহাই দেবে না ?

উত্তরঃ নদেরচাঁদ মনে করেছে, নদী ইচ্ছা করলে তার তীব্র জলস্রোতে মানুষের তৈরি বাঁধ ভেঙে চুরমার করে দিতে পারে।

একইসঙ্গে নদেরচাঁদের মনে হয়েছে, মানুষ নদীকেও রেহাই দেবে না। তারা আবার নতুন করে বাঁধ তৈরি করবে, প্রবহমান জীবন্ত নদীকে বন্দি করবে নিজেদের স্বার্থে। আবারও নদীকে মেনে নিতে হবে এই বন্দিদশা। গভীর প্রশস্ত জলপূর্ণ নদী পরিণত হবে ক্ষীণস্রোতা নদীতে।

২৩. “… নদেরচাঁদ গর্ব অনুভব করিয়াছে।”– কীসের জন্য নদেরচাঁদের গর্ব অনুভব হয়েছে এবং কেন ?

উত্তরঃ স্টেশনের কাছে নতুন রং করা ব্রিজটির জন্য নদেরচাঁদ দীর্ঘকাল গর্ব অনুভব করেছে।

কর্মক্ষেত্রের নদীটির সঙ্গে নদেরচাঁদের যে মনের যোগাযোগ সেখানে ব্রিজটিরও একটা ভূমিকা ছিল। ব্রিজের মাঝামাঝি ইট, সুরকি আর সিমেন্টে গাঁথা ধারকস্তম্ভের একেবারে শেষপ্রান্তে বসেই সে প্রতিদিন নদীকে দেখত। নদীর ওপরে নির্মিত উন্নত যন্ত্রসভ্যতার চিহ্ন ব্রিজটিকে নিয়ে নদেরচাঁদের গর্ব হয়েছিল।

২৪. “কী প্রয়োজন ছিল ব্রিজের ?” – কোন্ ব্রিজের কথা বলা হয়েছে ? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির তা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়েছে কেন ?

উত্তরঃ নদেরচাঁদের কর্মক্ষেত্রের কাছে অবস্থিত নদীর উপর যে কংক্রিটের ব্রিজ ছিল, এখানে সেই ব্রিজটির কথাই বলা হয়েছে।

আগে নদেরচাঁদ নদীর উপর তৈরি নতুন রং করা ব্রিজটিকে নিয়ে গর্ব অনুভব করত। কিন্তু পরে বর্ষায় নদী জলে পরিপূর্ণ হলে নদেরচাঁদের মনে হলো ব্রিজটি যেন নদীর পায়ের শেকল। ব্রিজের থামগুলো যেন নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা দিচ্ছে। যন্ত্রসভ্যতার ফসল কংক্রিটের ব্রিজটি নদীর স্বাধীন গতিকে রুদ্ধ করছে। তাই নদেরচাঁদের নতুন করে উপলব্ধি হলো যে, ওই ব্রিজটির কোনো প্রয়োজন ছিল না।

২৫. “বন্দি নদীকে ভালোবাসিয়াছে,”– এখানে কার ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে ? কেন নদীকে বন্দি বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ উদ্ধৃত অংশে নদেরচাঁদের নদীর প্রতি ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে।

নদেরচাঁদের স্টেশনমাস্টারি করতে এসে পরিচিত হওয়া নদীটি ছিল গভীর, প্রশস্ত ও জলপূর্ণ। তার প্রবল গতিবেগ রুদ্ধ করা হয়েছিল বাঁধ দিয়ে, আর নদীর ওপরে ছিল একটি ব্রিজ। এই বাঁধ আর ব্রিজ যেন নদীর প্রবল জলস্রোতকে আটকে নদীকে বন্দি করে রেখেছিল।

২৬. “বোধহয়, এই প্রশ্নের জবাব দিবার জন্যই …”– কোন্ প্রশ্ন ? এই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য কী হয়েছিল ?

উত্তরঃ নদীর কাছ থেকে ফেরার সময় নদের চাঁদের মনে হয়েছিল – “কী প্রয়োজন ছিল ব্রিজের ?” এখানে এই প্রশ্নের কথাই বলা হয়েছে।

মানবজাতির প্রতিনিধি হিসেবে যে ব্রিজ নিয়ে নদের চাঁদ গর্ব করত সেই ব্রিজের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই তার মনে প্রশ্ন ওঠে। সেই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্যই যেন যন্ত্র সভ্যতার প্রতীক ৭নং ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি নদের চাঁদকে পিষে দিয়ে চলে যায় স্টেশনের দিকে। বন্দি নদী তথা প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার খেসারত এভাবেই দিতে হয় নদের চাঁদকে।

২৭. নদের চাঁদ বসিয়া ভিজিতে লাগিল”- নদেরচাঁদ কে ? এরকম ভেজার কারণ কী ? ১+২=৩

উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র নদেরচাঁদ। সে ছিল রেলের একটি ছোট্ট স্টেশনের স্টেশনমাস্টার।

নদেরচাঁদ জন্ম থেকেই নদীর সান্নিধ্যে বড়ো হয়েছে। নদীর প্রতি তার ছিল এক অদ্ভুত টান ও মায়া। টানা পাঁচদিন বৃষ্টি নামার ফলে নদীকে না দেখে সে অস্থির হয়ে পড়ে। অবশেষে বৃষ্টি থামতেই প্রিয় নদীর ধারে গিয়ে বসে। কিছু সময় পর আবার প্রবল বর্ষণ শুরু হলে নদীর টানে সে আর সরে আসতে পারে না। তাই মুষলধারের বৃষ্টির মধ্যেই বসে বসে বসে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে।

২৮. নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে”- কে বুঝতে পেরেছে ? নদীর বিদ্রোহ বলতে সে কী বোঝাতে চেয়েছে ? (মাধ্যমিক, ২০১৭) ১+২

উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পে প্রধান চরিত্র নদেরচাঁদ নদীর বিদ্রোহের কারণ বুঝতে পেরেছিল।

সে অনুমান করে বন্দি নদী হয়তো স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রবাহিত হওয়ার জন্য মানুষের তৈরি বাঁধ ও ব্রিজকে ভেঙে দিতে চাইছে। বন্দি নদীর জল কীভাবে ব্রিজের ধারকস্তম্ভে এসে ধাক্কা খেয়ে আবর্ত সৃষ্টি করছে, তা নদেরচাঁদ লক্ষ করেছিল। নদীর স্বাভাবিক গতিকে মানুষের রোধ করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে নদী প্রতিশোধ নেবে বলেই যেন নদী বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে।

📌 আরো দেখুনঃ

📌দশম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র Click Here

📌 দশম শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর Click Here

📌 মাধ্যমিক সমস্ত বিষয় প্রশ্নপত্র Click Here

📌 মাধ্যমিক সমস্ত বিষয় মক্ টেস্ট Click Here

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

Leave a Reply

  • Post comments:0 Comments
  • Reading time:13 mins read