অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর দশম শ্রেণি বাংলা | Astrer Biruddhe Gaan Kobitar Essay Type Question Answer Class 10 Bengali wbbse

অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান
—জয় গোস্বামী

অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর দশম শ্রেণি বাংলা | Astrer Biruddhe Gaan Kobitar Essay Type Question Answer Class 10 Bengali wbbse

সাহিত্য সঞ্চয়ন
দশম শ্রেণি বাংলা (প্রথম ভাষা)

অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নবম শ্রেণি বাংলা | Astrer Biruddhe Gaan Kobitar Essay Type Question Answer Class 10 Bengali wbbse

📌দশম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র Click Here

📌 দশম শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর Click Here

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতা সৈয়দ আলাওল দশম শ্রেণি বাংলা | Essay Type Question Answer Astrer Biruddhe Gaan Kobita Class 10 Bengali wbbse

∆ কমবেশি ১৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও : প্রতিটি প্রশ্নের মান-৫

১. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় কবি অস্ত্র ফেলতে বলেছেন কেন ? অস্ত্র পায়ে রাখার মর্মার্থ কী ?

উত্তরঃ বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে জয় গোস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটি সময়ের এক আশ্চর্য দলিল। হিংস্রতায় পরিপূর্ণ এই পৃথিবীতে অস্ত্রের পিছনে দেদার অর্থ খরচ হচ্ছে, কিন্তু অন্যদিকে নিরন্ন ও কর্মহীন মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই অঙ্গ ফেলতে বলার কারণ চলেছে। সামাজিক বৈষম্য বাড়ছে ক্রমাগত। সমরাস্ত্রে সজ্জিত দেশগুলি নিজেদের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য একতা, সৌভ্রাতৃত্ব ও মানবিকতার মতো চিরন্তন মূল্যবোধগুলিকে ধ্বংস করতে উদ্যত। অস্ত্রের ব্যবহারে মানুষের মনুষ্যত্ব– বিরোধী মঙ্গল কামনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার নেতিবাচক দিকের চরমতম প্রকাশ ঘটে। তাই তাকে বিসর্জন দেওয়াই উচিত। এজন্যেই বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ কবি অস্ত্র ত্যাগ করে মানবজাতির মঙ্গল কামনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ।

অস্ত্র কোনোদিন সভ্যতার নিয়ামক হতে পারে না। সে মানুষের হিংস্রতা, প্রভুত্ব ও ভীতি প্রদর্শনের হাতিয়ার রূপে প্রতিপন্ন হয়। তাই কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলা যায় যে, অস্ত্র নয়, শস্ত্র নয়, রক্ত নয়, জয়ী হোক গান, জয়ী হোক সম্মিলিত মানব, জয়ী হোক মানবতা আর এই মানবতার উন্মেষ ঘটাতে, শুভ বুদ্ধির উদয় ঘটাতে, কবি মনে করেন, সর্বপ্রথম অস্ত্রকে ত্যাগ করতে হবে। নিজের বিবেকবোধের চরণে উদ্ধৃত অস্ত্রকে সমর্পণ করতে হবে। এই অস্ত্র পায়ে রাখার অর্থ অস্ত্র ত্যাগ ও বিসর্জন। কবির মতে, এই ত্যাগের মধ্য দিয়েই মানুষ তার নেতিবাচক প্রবৃত্তিকে অবদমন করতে পারবে।

২. ‘তােমায় নিয়ে বেড়াবে গান / নদীতে, দেশগাঁয়ে’- কার কোন্ কবিতার অংশ ? প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বক্তব্যটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।

অথবা, তােমায় নিয়ে বেড়াবে গান / নদীতে, দেশ-গাঁয়ে’– এই মন্তব্যে গানের যে স্বভাবধর্মের প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় লেখাে।

উত্তরঃ বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় কবি জয় গােস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি সংকলিত হয়েছে। ব্যক্তিজীবনে, জনজীবনে তথা সভ্যতায় গানের সীমাহীন অবদানের কথা বলতে গিয়ে কবির এই কাব্যিক উপস্থাপনা।

মানব-মনের ওপর গানের প্রভাব সুগভীর। গানের ঝরনাধারায় ধৌত হতে পারলে হৃদয়ের ক্ষত দূর হয়ে যায়। গানই পারে মানব-মনের গতিপ্রকৃতির ধারাকে বদলে দিতে। তাই তাে অস্ত্রশক্তি বৃদ্ধির অশুভ প্রতিযােগিতায় বিশ্ব যখন উন্মাদ, অস্ত্রের আস্ফালন যখন মানুষের শুভ বােধবুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে দিচ্ছে তখন কবি গানকেই অস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রধান অবলম্বন হিসেবে গণ্য করেছেন।

গানের শক্তি সীমাহীন। গানে আছে মানুষের শুভ চেতনা, সৃজনশীলতাকে জাগ্রত করার ক্ষমতা। সত্য-শিব-সুন্দরের রক্ষায় মানুষের হৃদয়ের প্রতিবাদী সত্তাকে জাগ্রত করার ক্ষমতা। গানকে হাতিয়ার করেই একদিন শিখিপুচ্ছ ঋষিবালক বাঁশির সুরে ধরনীকে মাতিয়েছিলেন। গানই পারে স্বার্থান্ধ জীবনের স্বার্থের দ্বন্দ্বের জটিল জীবন থেকে মানুষকে মুক্ত করতে। মানুষের হৃদয়ের ভরা পাপের উৎসকে ধুয়ে মুছে নির্মল করতে।

নদী-সৈকতে অপার অবারিত সুন্দর প্রকৃতির আঁচল তলে ভ্রমণের অনাবিল স্থানে নিয়ে যেতে। সুতরাং জীবনকে পরিপূর্ণ সৌন্দর্যে ভোগ করার প্রয়োজনে গানের দরিয়ায় ভাসতে হবে। তাই কবির পরামর্শ— ‘অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো গানের দুটি পায়ে।’

৩. ‘গান দাঁড়াল ঋষিবালক / মাথায় গোজা ময়ূরপালক’- গানকে ঋষিবালকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে কেন ? ঋষিবালক রূপে গান কোন্ ভূমিকা পালন করবে ?

উত্তরঃ কবি জয় গােস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছে। অস্ত্রবিরােধী এই কবিতায় কবি অস্ত্রের আস্ফালনের বিরুদ্ধে গানের বলিষ্ঠ ভূমিকাকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। গানকে শিখি পুচ্ছ ঋষিবালকের সঙ্গে তুলনা করে চমৎকার কাব্যোকর্ষতার পরিচয় দিয়েছেন কবি।

ঋষিবালকটিকে যদি শ্রীকৃষরূপে কল্পনা করা যায় তাহলে তার কংসবধের অধ্যায়টিকে অস্ত্রের অশুভ আস্ফালনের বিরুদ্ধে গানের সাফল্য হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায়। বংশীধারী শ্ৰীকৃষ্ণ অসির বদলে বাঁশিকেই হাতে তুলে নিয়ে কংসের অত্যাচারে হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবীতে এসেছিলেন। অস্ত্রের বিরুদ্ধে গানের ভূমিকাও দৃঢ় কিন্তু মাধুর্যপূর্ণ।

হিংসায় উন্মত্ত অস্ত্রনির্ভর পৃথিবীতে গান ঋষিবালক রূপে বিরাট ভূমিকা পালন করবে। অস্ত্রের অশুভ বিস্তার মানব প্রবৃত্তির নীচতাকে বৃদ্ধি করে চলেছে। হিংসা, হানাহানি, রক্তপাতে জীবন নারকীয়, বীভৎস হয়ে উঠেছে। সমাজটা যেন ভাগাড় হয়ে উঠেছে। মাথার ওপর চক্কর কাটছে চিল-শকুনের দল। এই অবস্থায় শক্তি ও মাধুর্যের প্রতীক ঋষিবালকের আবির্ভাব এক বিরাট ভরসা।

ঋষিবালকের অমৃতময় বংশীধ্বনির মতাে গান নির্মল ঝরনাধারায় স্নাত করবে মানুষকে। হিংসাকুটিল স্বার্থান্ধ মনােবৃত্তি ঘুচিয়ে জাগাবে শুভ চেতনা। সৃষ্টিশীল করবে হৃদয়কে। এভাবে অস্ত্রনির্ভর যুদ্ধক্লান্ত মানুষ প্রেম-মানবতায় পূর্ণ সহজ সরল, পবিত্র, অনাবিল এক জীবন স্রোতে শামিল হবে। কবির কথায়— ‘তােমায় নিয়ে বেড়াবে গান। নদীতে, দেশগাঁয়ে।’

৪. পাঠ্য কবিতা অবলম্বনে অস্ত্র ও গানের ভূমিকা আলোচনা করো।

অথবা, অস্ত্র ও গানের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কে, কেন জয়ী হয় কবিতা অবলম্বনে বুঝিয়ে বলো।

উত্তরঃ আশাবাদী কবি জয় গোস্বামী তাঁর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতার মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন যে অস্ত্র কখনোই মানবসভ্যতার নিয়ন্ত্রক ও নিয়ামক শক্তি হয়ে উঠতে পারে না। কিন্তু গান পারে এই অস্ত্রের শক্তিতে বলীয়ান সভ্যতার অবসান ঘটিয়ে মানবতাকে প্রতিষ্ঠা করতে। কারণ গান মানুষের হৃদয়াবেগের স্বাভাবিক প্রকাশ। ক্ষমা, মায়া, প্রেম ও স্বাধীনতার মতো চিরকালীন মানবিক আবেদনগুলি গানের মধ্য দিয়েই প্রকাশিত হয়। এখানে কবিতায় কবির বক্তব্যের সঙ্গে বিষয়ভাবনা একত্রিত হয়ে যায়। ‘অস্ত্র’ মানে হাতিয়ার যা আত্মরক্ষার্থে বা অপরের ওপর প্রভুত্ব কায়েম করতে ব্যবহৃত হয়। তাই কবিতায় অস্ত্রকে নেতিবাচক শক্তির প্রকাশ ঘটাতে সক্ষম এক শক্তিশালী যন্ত্র হিসেবে দেখানো হয়েছে। আর অন্যদিকে গান, তার সুরময়তার সাহায্যে মানুষের অন্তঃসত্তার বিকাশ ঘটায়; যার সাহায্যে মানুষ তার হৃদয়বৃত্তির সুক্ষ্ম-সুন্দর প্রবাহে নিজে যেমন অবগাহন করে, তেমনি অন্যকেও উদ্বুদ্ধ ও আকৃষ্ট করে। এককথায় অস্ত্রের দানবিক শক্তিকে গানের মানবীয় শক্তির সাহায্যে পরাভূত করা সম্ভব। অস্ত্র প্রগতির লক্ষণ নয়, অস্ত্র মানবসভ্যতাকে দিশাহীন পথে চালিত করে, তার পতন ত্বরান্বিত করে। আর গান, সে তো অন্তরের ভালোবাসা, শান্তি আর মানবতার সাহায্যে মানুষের অন্তরের বিদ্বেষ দূর করে। কবি তাই এই কবিতায় মানবতার বিজয়কামনায়, অবিনাশী অবয়বহীন গানেরই জয় কামনা করেছেন।

৫. ‘আমি এখন হাজার হাতে পায়ে’- কোন কবির কোন কবিতা থেকে নেওয়া ? ‘আমি’ কে ? ‘হাজার হাতে পায়ে’ বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতা থেকে প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি গৃহীত হয়েছে।

উদ্ধৃত রচনাংশে ‘আমি’ বলতে কবিতার কথককে বোঝানো হয়েছে। তবে এখানে কথক অস্ত্র প্রতিরোধ প্রত্যাশী সম্মিলিত মানবতায় বিশ্বাসী, শতসহস্র মানুষের প্রতিভূ ‘আমি’ এর পরিচয় হয়ে ওঠেন।

কবি একজন সাধারণ ও সামান্য মানুষ। অন্যদিকে অস্ত্রের ক্ষমতা প্রভূত। তাই অস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হলে যে বিপুল মানসিক শক্তির প্রয়োজন, তার জন্য প্রয়োজন সংঘবদ্ধ বিরুদ্ধতার। আর তা-ই প্রতীকায়িত হয়েছে সহস্র মানুষের প্রতিভূ– স্বরূপ ‘হাজার হাতে পায়ে’ শব্দবন্ধের মাধ্যমে। এই দৃঢ় প্রত্যয় শুধু ব্যক্তি মানুষের নয়, সম্মিলিত মানবতার। এজন্য কবি হাজার হাতে-পায়ে শুধু এগিয়েই আসেন না, উঠেও দাঁড়ান এবং হাত নাড়িয়ে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বন্দুকের গুলিকে প্রতিহতও করেন। এ কারণেই তিনি বলেছেন ‘এগিয়ে আসি, উঠে দাঁড়াই / হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াই।’ অর্থাৎ অন্তর্মনের অবজ্ঞাকে সম্বল করে চরম প্রতিকূলতাতেও লক্ষ্যে অবিচল থাকেন।

৬. ‘গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে’– কার কোন্ রচনাংশ ? মূল গ্রন্থ কী ? কে ‘গানের বর্ম’ পরেছে ? ‘গানের বর্ম’ বলার তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতার অংশ।
কবিতাটির মূল গ্রন্থটি হল ‘পাতার পোষাক’। প্রকাশকাল ১৯৯৭ সাল। কবিতার কথক এই গানের বর্ম ধারণ করেছেন। কারণ অস্ত্র থেকে গানের কর্ম নির্গত গুলি বা বুলেটকে প্রতিরোধ করতে হলে গানই একমাত্র রক্ষাকবচ হয়ে ওঠে।

‘গানের বর্ম’ বলতে এখানে কবি মানবিকতা ও মঙ্গলময়তার সুরময় প্রকাশকেই বুঝিয়েছেন। কবি জানেন অস্ত্রের ক্ষমতা বিপুল, কিন্তু অস্ত্র হিংস্রতা ও দানববৃত্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। আর অস্ত্র থেকে নির্গত দানবীয়তাকে প্রতিহত করতে, গানের মতো নরম ও পেলব হৃদয়বৃত্তির সুরমূর্ছনাই প্রয়োজন। তবেই গানের সাহায্যে, অস্ত্রের মতো পাশব শক্তিকে পরাহত করা যাবে। কেন না অস্ত্র যা পারে না, গান তা অনায়াসে করতে পারে। গান মানুষকে দানবত্ব পরিহার করে প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে শেখায়। উদ্ধৃতাংশে মানবাত্মার সেই জীবনজয়ী সুরের কথাই বলা হয়েছে।

৭. ‘রক্ত মুছি শুধু গানের গায়ে’- রক্তপাত হওয়ার কারণ কী ? গানের গায়ে রক্ত মোছার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ জয় গোস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি গৃহীত হয়েছে। অস্ত্র মানুষের হিংসা, অসুয়া, বিদ্বেষ, যুদ্ধবৃত্তি ও ভীতি প্রদর্শনের সহায়ক। অস্ত্র মানুষের জীবন পর্যন্ত নাশ করে। তাই অস্ত্র কখনোই কোনো সভ্যতার প্রগতির সূচক হতে পারে না। মানবতাকে ধ্বংস করে পাশববৃত্তিকে জয়যুক্ত করাই তার একমাত্র কাজ। যখনই কেউ অস্ত্রের বিরুদ্ধে লড়তে যায়, তখনই ঘটে রক্তপাত, তখনই ঘটে প্রাণহানি। দানববৃত্তির সহায়ক অস্ত্রের শক্তি তো পৈশাচিক হবেই। মানবতার পতন ঘটাতে পারলেই তাই অস্ত্রের জয়। কিন্তু কবির মতে মানুষকে অন্তর থেকে রূপান্তরিত করতে সক্ষম গানই শুধু এই দানবিক শক্তিকে পরাহত করতে পারে।

কবি অস্ত্র দিয়ে অস্ত্রের বিরুদ্ধে না লড়ে, গান দিয়ে অস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চান। কিন্তু সে পথ কঠিন। অস্ত্রের আঘাতে ঘটে চলা ক্ষয়, অপচয়, হানাহানি ও রক্তপাতকে কবি গানের সজীবতা দিয়ে শোধন করতে চান। কারণ গান হল মানুষের যৌথতার সহায়ক, গানের মাধ্যমে মানুষে মানুষে মৈত্রীর বন্ধন ও ভালোবাসার বন্ধন সুদৃঢ় হয়। তাই কবি গানকে অবলম্বন করেই অস্ত্রের শক্তিকে প্রতিহত করতে উদ্যত। কবি গানের অন্তরশক্তির জোরে মানুষের হিংস্রতা থেকে। নির্গত বুলেটের আঘাতে জেগে থাকা রক্তের দাগকে চিরতরে মুছে ফেলায় বিশ্বাসী। অন্তর থেকে বিদ্বেষের বিষরক্ত গানের সুরলালিত্যেই চিরতরে ধুয়ে ফেলা যায়।

৮. “আমার শুধু একটা কোকিল / গান বাঁধবে সহস্র উপায়ে”– কোন্ প্রসঙ্গে এমন মন্তব্য ? মন্তব্যটির যথার্থতা বোঝাও।

উত্তরঃ কবি জয় গোস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতা থেকে উক্ত অংশটি গৃহীত। মানবতার মূল মন্ত্র হিংসা কোরো না। কিন্তু যে কোনো অস্ত্র, মানুষের মধ্যে এই হিংসাবৃত্তির জন্মদাতা। কবি উদ্ধৃতাংশের প্রসঙ্গ তাই অস্ত্রের বিরুদ্ধ-শক্তি হিসেবে গানকে বেছে নিলেন। গান মানুষের হৃদয়বৃত্তির বিশুদ্ধ প্রকাশ। মানুষের অন্তরের সুরময় মানবতা গানের ভাষায় প্রকাশিত হয়। কিন্তু কবি জানেন, গান দিয়ে অস্ত্রের বিরুদ্ধতা করা খুব সহজ নয়। কারণ শকুন বা চিলরূপী সুযোগসন্ধানী মানুষের হানাদারি দৃষ্টি চতুর্দিকে প্রহরারত, তাই কোকিলের মতো বসন্তদূতকে তিনি সঙ্গী করে নেন।

কবি আজ এক মহান কর্মে ব্রতী হয়েছেন। তাঁর সাধ্য সামান্য হলেও স্বপ্নের পথটি দৃঢ় বসন্তদূত কোকিল শুষ্ক, রুক্ষ ও নিষ্প্রাণ পৃথিবীতে নবজীবনের বার্তা বয়ে আনে। কবির বিশ্বাস, এই রক্তাক্ত বিশ্বে ‘কোকিল’ হয়ে উঠবে মানবমনের মানবিক সজীবতার প্রতীক। সে সুরের সহস্র কৌশলে, মৈত্রী ও সহৃদয়তায় জীবনের উজ্জীবনী গানে সকলকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে বলে কবির দৃঢ় ধারণা।

৯. “অস্ত্র রাখো, অস্ত্র ফ্যালো পায়ে”- কার উদ্দেশ্যে এমন আবেদন ? এমন আবেদন করার কারণ কী ? এ আবেদনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ আবেদনের কারণ উত্তর কবি জয় গোস্বামী তাঁর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় পৃথিবীর সমস্ত শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের উদ্দেশ্যে এ আবেদন করেছেন।

অস্ত্রকে সঙ্গী করার কারণে মানবসভ্যতা ক্রমশ ধ্বংস-পথগামী। কবি জানেন, অস্ত্র কখনও কোনো শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের চিন্তা চেতনা ও শান্তিলাভের সহায়ক হতে পারে না। আসলে অস্ত্র মানুষকে বিদ্বেষ, হিংসা, ক্ষমতা ও দত্তের উপর নির্ভরশীল ও যুদ্ধবাজ করে তোলে, জন্ম দেয় পাপের। সংবেদনশীল কবি জানেন, প্রবলের অত্যাচার দমন করতে হলে, মানুষের যৌথতার প্রয়োজন। আর একমাত্র গানই পারে মানুষকে একত্রিত করতে। অস্ত্রের দ্বারা নীতিচ্যুত মানুষ শুধু অন্য মানুষের মনে ভয় প্রদর্শন করে।

এই বিধ্বংসী কালো দিনের হাত থেকে একমাত্র বাঁচাতে পারে গান। তাই কবি অস্ত্র বিসর্জনের আহ্বান জানান। মানুষ স্বশক্তিতে উজ্জীবিত হয়ে অস্ত্র পায়ে ফেলে, মানবতার উজ্জীবনকে সার্থক করতে পারে। সে দানববৃত্তি আবেদনের তাৎপর্য পরিহার করে মানবিকতার চিরস্থায়ী মহিমাকে অর্জন করতে পারে। এ আবেদনের সাফল্য আসবে একমাত্র সৃজনশীলতার মাধ্যমে, মানুষের অন্তরস্থিত সুরময় সত্তার বিকাশ ঘটিয়ে। গান মানুষের মানবিক সত্তার স্ফুরণ ঘটায়। মানুষের মধ্যে যৌথতা, মূল্যবোধের জাগরণ ঘটিয়ে মানবসভ্যতার প্রকৃত বিকাশে সাহায্য করে।

১০. “গান দাঁড়াল ঋষিবালক / মাথায় গোঁজা ময়ূরপালক”— কোন কবিতার অংশ ? প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বক্তব্যটির তাৎপর্য বুঝিয়ে লেখো।

উত্তরঃ উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতার অংশ। কবি মনে করেন অস্ত্র, মানবমনের হিংসা, অসূয়া, বিদ্বেষ ও যুদ্ধবৃত্তির দ্বারা মানুষের নেতিবাচক দিকের বিকাশ ঘটায়। অন্যদিকে, গান হল মানুষের অন্তরের সুরময় প্রকাশ , জীবনের যৌথতার প্রকাশ। অস্ত্রের দানবিক শক্তিকে গানের দৈব শক্তি দ্বারা জয় করা সম্ভব বলে কবি মনে করেন ষ। তাই কবি এত দিনের ক্ষমতা, অহং এর বর্ম খুলে সংস্কারমুক্ত, ভয়হীন মনে দেখতে বললেন যে ‘গান দাঁড়াল ঋষিবালক / মাথায় গোঁজা ময়ূরপালক / তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান / নদীতে, দেশগাঁয়ে’ কবির মনে হয়েছে, অন্তরকে গানের ঝরনাধারায় পরিশুদ্ধ করতে হবে। কবি জানেন, গান মানুষের অন্তরের চিরবালকটিকে প্রকাশ করবে; আর শৈশবের পবিত্রতায় মানুষ হয়ে উঠবে প্রকৃতিকোলের নিষ্পাপ রাখাল বালক, যার মাথায় বালক কৃয়ের মতোই ময়ূরপালক গোঁজা আছে। এভাবেই গান ক্লান্ত-অবসন্ন মানবপ্রাণের আরাম ঘটাবে। গান মানুষকে নিয়ে যাবে নদীতে, দেশে-গাঁয়ে। গানের তরঙ্গে মানুষের মনের ‘অহং’– এ আবদ্ধ মানবসত্তা প্রাণময়তার মুক্ত জোয়ারে ভেসে যাবে। এই পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি ঘটবে সমস্ত ভেদাভেদহীন মানবিকতার অবয়বহীন সুরের মূর্ছনায়, উদবোধন ঘটবে মানবতার।

১১. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটির নামকরণ কতদূর সার্থক আলোচনা করো।

উত্তরঃ সাহিত্যে নামকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এই নামকরণ নানান দিক থেকে হতে পারে, কখনও বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক, কখনও চরিত্রধর্মী, কখনও ব্যঞ্জনাধর্মী। ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতার শিরোনামটি ব্যঞ্জনাধর্মী। কবিতার বিষয়বস্তু অবশ্যই যুদ্ধবিরোধী কিন্তু এই বিরোধিতার কৌশল আলাদা। কবিতার শুরুতেই কবি বলেছেন-অস্ত্র ফেলার মধ্য দিয়ে আর পাঁচ জন শান্তিকামী মানুষের মতোই কবি শান্তির জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।পায়ের কাছে অস্ত্র রাখার আহ্বান যুদ্ধবাজদের আত্মসমর্পণের দিকটিকেই বড়ো করে তোলে। গানকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করে কবি সমস্ত অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চান। তাই অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান গাইতে গাইতেই কবি হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াতে পারেন। অর্থাৎ গানের শান্তি দিয়ে তিনি অনায়াসে যুদ্ধ আর ধ্বংসকে রুখে দিতে পারেন। সমাজে যখন লোভী চিল- শকুন রূপে যুদ্ধবাজদের আনাগোনা, কবির সম্বল তখন শুধু একটা কোকিল যা আসলে মানুষের সৃজনশীল সত্তা। এই কোকিলই কবিকে হাজার উপায়ে গান বেঁধে দেবে। গানই ঋষিবালকের মতো পবিত্রতার প্রতীক হয়ে কবি তথা সমাজকে মনুষ্যত্বের পথ দেখাবে। তাই হিংসার বিরুদ্ধে হিংসা বা অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র নয়— যাবতীয় অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে গানকে বর্ম করে কবি শান্তিতে পৌঁছোতে চান। এই মূলভাবকে সামনে রেখে কবিতাটির নাম গভীর ব্যঞ্ছনার ইঙ্গিত দেয়। তাই কবিতাটির নামকরণ সার্থক ও যথার্থ হয়েছে।

১২. “তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান / নদীতে , দেশগাঁয়ে”— কার, কোন্ রচনার অংশ ? প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বক্তব্যটির তাৎপর্য বুঝিয়ে লেখো।

উত্তরঃ আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটি কবি জয় গোস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতার অংশ।

পাঠ্য কবিতায় কবি অস্ত্রের বিরুদ্ধে গানকেই প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মানবীয় ভাষা বলে মনে করেছেন । অস্ত্র মানুষের হিংসা, বিদ্বেষ, ক্ষমতা ও যুদ্ধবৃত্তির বাহক। তাই অস্ত্র কখনোই মানবসভ্যতার প্রগতির সূচক হতে পারে না। এমনকি অস্ত্র যেন সভ্যতার নিয়ামকও না হয়ে ওঠে । কারণ অস্ত্র শুধু মানুষের মনে ভয়কে জাগ্রত রাখে। মানুষের শুভবুদ্ধির মৃত্যু ঘটায়, দানববৃত্তিকে চরমতা দান করে। তাই কবি অস্ত্রের বিরুদ্ধে গানকে নিয়ে এসেছেন কবিতায় শুধু নয়, সমাজভাবনায় ও মানবসভ্যতার উন্নতিকল্পে। গান মানুষের হৃদয়বৃত্তির প্রকাশ, গান মানুষের যৌথতার ধারক। শুদ্ধ শুচি ঋষিবালকের মতো নিষ্কলুষ, সৃজনশীল গানের জাগরণের মধ্য দিয়েই কলুষময় অস্ত্রের ঔদ্ধত্যের চিরতরে বিনাশ ঘটানো সম্ভব হবে। গানের হাত ধরেই এক সজীবতার সুরময় প্রকাশ মানবসভ্যতার নতুন পথের দিশা খুঁজতে খুঁজতে দেশ, গাঁয়ে ও নদীতে পাড়ি জমাবে। আসলে দেশ, গাঁ বা নদী কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নয়, যেখানেই অস্ত্রে রাঙানো ক্ষমতার দত্ত, সেখানেই গানের স্নিগ্ধতা ও শান্তি নিয়ে হাজির হবে মানুষের হৃদয়ে ঘুমিয়ে থাকা বিবেক।

১৩. পাঠ্য কবিতায় প্রাপ্ত সমাজচিত্রটি নিজের ভাষায় লেখো ।

উত্তরঃ কবি জয় গোস্বামী একসময় তার ‘গোঁসাই বাগান’ প্রথম খণ্ডে লিখেছিলেন, ‘একজন কবি কবিতা লেখেন প্রধানত তার জীবনযাপন থেকে। এই জীবনকে ধরতে পারি ২৪ ঘণ্টার যাপিত সময়টি দিয়ে ভাগ করে।’ আসলে কবি জয় গোস্বামীর সংবেদনশীল সমাজমনস্ক ব্যক্তিসত্তাটি নানাভাবে তাঁর লেখায় বা কবিতায় প্রকাশ পায়। মানবতার শ্বাসত সত্য কবির অন্বিষ্ট তাই তাঁর কবিতায় বার বার সাধারণ মানুষের কথা উঠে আসে। তিনি একজন সমাজ রূপকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে আপামর জনসাধারণের শুভবুদ্ধির উন্মেষ ঘটাতে চান, মানুষের কোমল পেলব মনটিকে অবলম্বন করে। তাই মানবতার শাশ্বত সত্যকে জাগ্রত করতেই তিনি অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ধরেন। কবিতায় প্রাপ্ত সমাজচিত্র কবির চোখে ধরা পড়েছে সমাজের অবক্ষয়, অরাজকতা ও শূন্যতা। আর এর পেছনে রয়েছে অস্ত্রের দত্ত ও ক্ষমতা। আসলে অস্ত্র মানে হিংসা, বিদ্বেষ, ভয় ও যুদ্ধবৃত্তির প্রকাশ। সে মানুষের দানবিক সত্তার প্রকাশ ঘটায়। আর কবির কথায় গান হল মানুষের সৃজনী সার প্রকাশক, মানুষের সুনিবিড় হৃদয়বৃত্তির বহিঃপ্রকাশ। তাই কবির অবলম্বন আজ গান। কবি বিশ্বাস করেন, গানের কোনো সীমাবন্ধতা নেই। তাই তিনি ঋবিবালকের মতো নিষ্পাপ গানকে সঙ্গী করে পৌঁছে যেতে যান পৃথিবীর আনাচেকানাচে। এ যেন কবির দায়ভার, এ যেন মানুষের বেঁচে থাকাকে শোভন, সুন্দর ও তাৎপর্যময় করে তোলার তাগিদ।

১৪. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় ভাষা, উপমা ও চিত্রকল্প ব্যবহারে যে অভিনবত্ব প্রকাশ পেয়েছে, তা নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তরঃ জয় গোস্বামী তাঁর ‘ অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় ভাষা, উপমা ও চিত্রকল্প ব্যবহারে অনবদ্য দক্ষতার ছাপ রেখেছেন। আধুনিক কালে কবিদের মধ্যে ভাষার ব্যবহারে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। সাধারণ প্রচলিত শব্দকেও প্রয়োগ ও ব্যবহারের মাধ্যমে কাব্যগুলে গুণান্বিত করতে তিনি সিদ্ধহস্ত। পাঠ্য কবিতাটিতে তিনি ‘অস্ত্র’, ‘সহস্ৰ’ প্রভৃতি তৎসম শব্দ ব্যবহারের পাশাপাশি ‘আদুড়’, ‘দেশগাঁয়ের’ মতো দেশি শব্দ অবলীলায় ব্যবহার করেছেন। দলবৃত্ত ছন্দে লেখা কবিতাটিকে অন্ত্যানুপ্রাস অলংকারের ব্যবহার করে কবি গতিময় করে তুলেছেন। আঠারো পক্তির এই কবিতায় কোনো পূর্ণযতি নেই; অর্ধযতি হিসেবে চারবার কমা ও দু-জায়গায় হাইফেনের ব্যবহার লক্ষ করা যায়।

জয় গোস্বামীর কবিপ্রতিভার অনন্যতা ধরা পড়েছে পাঠ্য কবিতার উপমা ও চিত্রকল্প ব্যবহারেও। কবি অস্ত্রের প্রতিরোধকল্পে যে উপমা (আমি উপমা – চিত্রকল্পের এখন হাজার হাতে পায়ে এগিয়ে আসি,) ব্যবহার করেছেন কিংবা সেই প্রতিরোধের উপায় যে গান, ব্যবহার তার সম্বল কম বোঝাতে (‘গান তো জানি একটা দুটো / আঁকড়ে ধরে সে– খড়কুটো’) যে উপমা ব্যবহার করেছেন তা অনবদ্য। চিত্রকল্পের ক্ষেত্রেও কবিকল্পনায় আশ্চর্য দৃষ্টান্ত দেখা যায়, যেমন— ‘গানের বর্ম আজ পরেছি গায়’, ‘আমার শুধু একটা কোকিল’ ইত্যাদি।

১৫. কবি জয় গোস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের যে প্রকাশ ঘটেছে, তা নিজের ভাষায় বিবৃত করো।

উত্তরঃ জয় গোস্বামী একজন সমাজমনস্ক , সংবেদনশীল কবি। তাই তাঁর প্রতিবাদ সামাজিক অসংগতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে। কবিতার আঙ্গিক ও ভাষায় তিনি অন্তত ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’- কবির যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের প্রকাশ তেমন দৃষ্টান্তই তুলে ধরেন। তাঁর কাব্য ও কবিতার ছত্রে ছত্রে প্রতিবাদী মুখগুলোর সমোচ্চারিত স্বর যেন অনুরণিত হয়। তবে তাঁর প্রতিবাদ যতটা না উচ্চকিত, তার চেয়েও বেশি মানবিক বিবেচনা– বিশ্লেষণে তৎপর। আমাদের পাঠ্য ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটির মধ্য দিয়ে তাঁর যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের এক আশ্চর্য প্রকাশ লক্ষ করা যায়। তবে এ প্রতিবাদ অস্ত্রের ঝনঝনানিতে নয়, বরং মানবিকতা সৌহার্দ্য ও সুরপ্লাবী অন্তরের গানের সম্বলকে অবলম্বন করে। তাইতো কবি বলতে পেরেছেন, অস্ত্র ত্যাগ করে তাকে চরণতলে নামিয়ে রেখে একাকিত্বের বাঁধন কেটে অসংখ্য মানুষের পদচারণায় এগিয়ে যাচ্ছি। শুধুমাত্র ‘গানের বর্ম’ অর্থাৎ আত্মশক্তি ও মানবিকতার বলে বলীয়ান হয়েই, হাত দিয়ে তিনি বুলেট তাড়াতে অর্থাৎ যুদ্ধের ভয়াবহতাকে থামিয়ে দিতে পারেন। কবি সীমিত শক্তি নিয়ে মানবিকতাকে খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরেন। নিজের বিবেকের বিশ্বাসের ওপর ভর করে প্রতিহিংসার রক্ত গানের অর্থাৎ মানবিকতার গায়ে মুছে চিল– শকুনকে (অর্থাৎ সুযোগ ও সন্ধানী শক্তিকে) উপেক্ষা করে তিনি এগিয়ে চলেন। কবি জানেন কোকিল বসন্তের দূত। আর বসন্ত যৌবনের প্রতীক। সেই যৌবনের ধর্মই তো নিজের বিশ্বাসের ওপর অহংকার। সেই মানবিক বিশ্বাসেই তিনি শত রক্তক্ষয়ী প্রতিকূলতাতেও পথ হাঁটেন। মানববিনাশী যুদ্ধ আর নয়। তিনি চান অস্ত্র ত্যাগ করে, হিংসার আবরণ খুলে, ঋষিবালকের বেশে গানের তথা মানবিকতার আবির্ভাব ঘটুক। এভাবেই পথেপ্রান্তরে গানের তথা মানবিকতার পুনর্জাগরণ ঘটবে, যুদ্ধকামী শত্রুদল পরাজিত হবে ও তাদের অস্ত্র অবনত হবে।

১৬. “অস্ত্র রাখাে গানের দুটি পায়ে।”– কবির বক্তব্য বিশ্লেষণ করাে।

উত্তরঃ উদ্ধৃতিটি কবি জয় গােস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতার অন্তিম পঙক্তির অংশবিশেষ। বলা যায়, অস্ত্রধারীর প্রতি বক্তব্যটি উক্ত কবিতার আশাবহ আবেদনকে মহিমান্বিত করে। কবি তাঁর উক্ত কবিতার প্রথমেই বললেন, ‘অস্ত্র ফ্যালাে, অস্ত্র রাখাে পায়ে।’ অর্থাৎ, অস্ত্রধারীকে অস্ত্র ফেলতে বলছেন, অস্ত্রকে পায়ে রাখতে বলছেন। চাইছেন, অস্ত্রের কার্যকারিতা বন্ধ হােক।

এ থেকে বলা যায়, কবির মনে যে পূর্ব প্রশ্নটি উঠে এসেছে, তা হলাে, মানুষের হাতে অস্ত্র কেন ? অস্ত্র কী মানুষকে সুখ দেয়, শান্তি দেয় ? নাকি অপূর্ব কোনাে নির্মাণকে সম্ভাবিত করে ? তা করে না। তাই কবির নির্দেশ— ‘অস্ত্র ফ্যালাে, অস্ত্র রাখাে পায়ে।’ কারণ, অস্ত্র যাবতীয় সৃষ্টিকে ধ্বংস করে। অপরিমাণ রক্তপাত ঘটায়। শিল্প, সভ্যতাকে বিনষ্ট করে। বিভীষিকা সৃষ্টি করে। একা কবি হাজারাের হাতে পায়ে এগিয়ে আসেন। উঠে দাঁড়িয়ে হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়ান। কেন-না গানের বর্ম পরেছেন তিনি। অস্ত্র কী করবে তার ? কবি গানেই মুছে ফেলেন অস্ত্রাঘাতের রক্তক্ষত। অর্থাৎ, গানেই মুছে ফেলেন সকল অন্তর্বেদনা। মাথার ওপর অস্ত্রধারী শকুন ও চিলেদের ওড়াওড়ি। কিন্তু কবির আছে গানের কোকিল; যে নিরস্ত করবে ওদের।

তাই কবি বলেন, বর্ম খুলে ফেলে আদুড় গায়ে দাঁড়াতে। সে তখন গানের ঋষিবালক। প্রসন্ন শুচিসুন্দর, মাথায় গোঁজা আনন্দের ময়ূরপালক। তাহলে সেই গান ওই অস্ত্র খুলে ফেলাদের নিয়ে বেড়াবে নদীতে, দেশগাঁয়ে, পৃথিবীময়। পৃথিবী তখন গানময়, শান্তিময়, আনন্দময়। সেই পাওয়া কি সর্বশ্রেষ্ঠ পাওয়া নয় ? সর্বশ্রেষ্ঠ জয় নয় ? তাই কবির সার্থক আবেদন — ‘অস্ত্র ফ্যালাে, অস্ত্র রাখাে গানের দুটি পায়ে’। কী মহিমময় উচ্চারণ !

📌 আরো দেখুনঃ

📌দশম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র Click Here

📌 দশম শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর Click Here

📌 মাধ্যমিক সমস্ত বিষয় প্রশ্নপত্র Click Here

📌 মাধ্যমিক সমস্ত বিষয় মক্ টেস্ট Click Here

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

Leave a Reply

  • Post comments:0 Comments
  • Reading time:16 mins read