আগুন নাটকের বিষয়বস্তু দ্বিতীয় সেমিস্টার একাদশ শ্রেণি বাংলা | Agun Natoker Bisoibostu 2nd Semester Class 11 wbchse
📌 একাদশ শ্রেণি প্রশ্নপত্র সেমি-২ Click Here
📌 একাদশ শ্রেণি প্রশ্নোত্তর বাংলা Click Here
📌 একাদশ শ্রেণি সিলেবাস বাংলা Click Here
সেমিস্টার – II
আগুন
—বিজন ভট্টাচার্য
∆ নাট্যকার পরিচিতি—
বিজন ভট্টাচার্য : (১৯০৬-১৯৭৮) নাট্যকার, অভিনেতা। ফরিদপুর জেলার খানখানাপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। নবনাট্য আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক বিজন ভট্টাচার্য গণজীবনের সংগ্রাম ও দুঃখ-দুর্দশা, শোষণ-বঞ্চনা, প্রগতিশীল চিন্তা ও সমাজবোধ নিয়ে নাটক রচনা করেন এবং এক্ষেত্রে তিনি স্বতন্ত্র বৈশিষ্টা ও বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন। তবে তাঁর শেষজীবনে রচিত নাটকে মার্কসীয় দর্শন, হিন্দু ধর্ম ও দর্শন সংমিশ্রিত হয়েছে। তিনিই প্রথম বাংলা রঙ্গমঞ্চকে পুরাণ ও ইতিহাসের রোম্যান্টিক প্রভাব থেকে মুক্ত করেন। তাঁর প্রথম নাটক আগুন (১৯৪৩) নাট্যভারতীতে অভিনীত হয়েছে। পরে তিনি রচনা করেন জবানবন্দী (১৯৪৩); এটি কৃষকজীবনের আলেখ্য। তাঁর প্রতিভার সার্থকতম নিদর্শন হলো নবান্ন (১৯৪৪) নাটক; বন্যা, দুর্ভিক্ষ ও মহামারির পটভূমিকায় রচিত এই নাটকে দুঃস্থ-নিপীড়িত কৃষকজীবন প্রতিফলিত হয়েছে। ১৯৪৮-৫০ সময়ে বিজন ভট্টাচার্য বোম্বাই চলচ্চিত্রে অভিনয় ও ফিল্মস্ক্রিপ্ট লেখার কাজও করেন। ১৯৭৮ সালের ১৯ জানুয়ারি কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।
উৎসঃ ‘আগুন’ নাটকটি ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২৩ এপ্রিল ‘অরণি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে বিজন ভট্টাচার্যের রচনা সংগ্রহে সংকলিত হয়।
∆ বিষয় সংক্ষেপ—
প্রথম দৃশ্য : নিম্নবিত্ত একটি পরিবারের প্রধান ‘পুরুষ’ চরিত্রটি বাড়ির অন্যদের ঘুম থেকে উঠতে দেরি দেখে মনে মনে চিন্তা করে রেশনের দোকানে চালের লাইনে দাঁড়িয়ে চাল পাওয়া যাবে কি না। তাই স্ত্রী এবং পুত্রকে ঘুম থেকে ওঠার জন্য সে তাড়া দেয়। কলমি শাক, দাঁতন কাঠি, কলা ইত্যাদি যা কিছু সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে, সেগুলি বাজারে বিক্রি করে তারপর রেশনের দোকানে লাইন দিয়ে চাল কিনতে হবে। তারা ঘুমিয়ে থাকতে থাকতে লোকটি গামছা ঘাড়ে নিয়ে ঘর থেকে কাজের জন্য বেরিয়ে পড়ে। তার স্ত্রী অর্থাৎ নেত্যর মা ঘুম থেকে জেগে ওঠে এবং নেত্যকে ডাকতে থাকে। নেত্য আড়মোড়া দিয়ে উঠে বসে, প্রতিদিন সে এই রেশনের দোকানের লাইন দেওয়া নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে। বাজারের সওদাগুলি একটা ঝুড়িতে ভরে নেত্যর মা নেত্যকে নিয়ে দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে।
দ্বিতীয় দৃশ্য : আগুন নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে দেখা যায়, চালা ঘরের উঠোনে দাঁড়িয়ে কৃষাণ তার স্ত্রীকে বলে চৈতালির ফসল মাচায় তুলতে পারলে কিছুদিনের মতো নিশ্চিন্ত থাকা যাবে। আর কয়েকটা দিন কষ্ট করতে হবে। সে তার স্ত্রীকে কেষ্টর মা-র সঙ্গে সকাল সকাল গিয়ে রেশনের দোকানের লাইনে দাঁড়াতে এবং একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসতে বলে।
তৃতীয় দৃশ্য : কারখানার দুই শ্রমিক সতীশ এবং জুড়োনের মধ্যে কথা হয়। সতীশ তার সমস্যার কথা বলে অর্থাৎ তার সংসার চালানো নিয়ে অসুবিধার কথা বলতে থাকে। রেশনের দোকানে লাইন দিয়ে আগের দিন তার স্ত্রী এবং মেয়েকে কীভাবে খালি হাতে ফিরে আসতে হয়েছিল, সে কথাও সতীশ জুড়োনকে বলে। তারপর তার মেয়ে এবং স্ত্রীকে ডাকতে থাকে। কাজে যাওয়ার আগে কিছু খাওয়ার প্রয়োজন, সেজন্যই তার এই ডাকাডাকি। কিন্তু সতীশের স্ত্রী ক্ষিরি সতীশের উদ্দেশ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। মূলত বাড়িতে খাবার না থাকার জন্য তার রাগের কারণ। সতীশ এবং ক্ষিরির মধ্যে তীব্র কথা কাটাকাটি হয়। রাগের মাথায় সতীশ ক্ষিরিকে লাথি মারে। বাড়ি থেকে মা মেয়ের খুব চিৎকার শোনা যায়। সতীশ বাড়ি থেকে দ্রুতগতিতে বেরিয়ে যায়।
চতুর্থ দৃশ্য : হরেকৃষ্ণ-মনোরমা ছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবার। কেরানি হরেকৃষ্ণ বাবু তাঁর স্ত্রী মনোরমার কথায় উঠে আসে সংসারের দৈনন্দিন সমস্যার কথা, চাল-চিনি-চা কোনো কিছু না থাকার কথা। চালের দোকানে লাইন দিলেও শেষপর্যন্ত চাল পাওয়া যাবে কি না সেই কথায় হরেকৃষ্ণবাবুকে বড় চিন্তায় ফেলেছে। হরেকৃষ্ণর কথাবার্তায় উঠে আসে কীভাবে তার অফিসে চাল-ডাল সস্তা দরে কর্মচারীদের দেওয়ার জন্য সেগুলি অফিসের কর্তারা চড়া দামে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে সে কথাও। শেষপর্যন্ত স্ত্রী মনোরমার কথায় ঠাকুরকে নমস্কার করে হরেকৃষ্ণ রেশনের দোকানের দিকে যাত্রা করেন।
পঞ্চম দৃশ্য : রেশনের দোকানের সামনে চাল পাওয়ার আশায় অসংখ্য মানুষের লাইন। সেখানে হরেকৃষ্ণ উড়িষ্যা থেকে লক্ষ লক্ষ মন চাল আসার খবরের কথা শোনায়। এক ওড়িয়াকে দেখে সকলে সে কথার সত্যতা জানতে চায়। যদিও ওড়িয়ার পক্ষে এর উত্তর জানা সম্ভব ছিল না। সিভিক গার্ডের আগমন ঘটে। সে সকলকে চাল কেনার জন্য খুচরো পয়সা সঙ্গে রাখার কথা বলে। তাই নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। একাধিক জনকে লাইনে না থাকা বা পরে ঢোকার অভিযোগে সিভিক গার্ড বের করে দিতে চায়। তা নিয়ে তর্কাতর্কি চলে। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য ব্যক্তিরা সিভিক গার্ডের আচরণের প্রতিবাদ করে। লাইনে অপেক্ষা মানুষদের মধ্যে এভাবে একতাবোধ তৈরি হয়। এদিকে নানা জাতির মানুষের একত্রিত সমাবেশ দেখে দোকানির মনে চিন্তা হয়। চাল বেশি দামে বাজারে বিক্রি করে দেওয়ার সুযোগ তার আর থাকবে না বলে সে হতাশা প্রকাশ করে। ওড়িয়া ব্যক্তিটি মানুষের চালের প্রয়োজনের কথা নতুন করে শোনায় এবং শেষপর্যন্ত সমস্ত মানুষ এক সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেয় যে, এই পরিস্থিতিতে বাঁচতে হলে সকলকেই মিলেমিশে একসঙ্গে থাকতে হবে।
নামকরণ : ১৩৫০ বঙ্গাব্দের ভয়াবহ মন্বন্তরকে প্রেক্ষাপট করে বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকটি রচিত। দুর্ভিক্ষের প্রভাবে যে খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছিল, তা প্রভাবিত করেছিল সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষকে। কৃষক, শ্রমিক, হতদরিদ্র মানুষ থেকে মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী সকলেই খাদ্যের সংকটে ভুগছিলেন। রেশনের দোকানে লাইন দিয়ে চাল-সংগ্রহ ছিল মানুষের প্রতিদিনের কাজ, এবং লাইন দিয়ে চাল না-পাওয়াও ছিল কারোর না কারোর অভিজ্ঞতা। এই নাটকের ৪টি দৃশ্যে সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিভিন্ন পেশার মানুষের জীবনের সমস্যাকে তুলে ধরা হয়েছে,যারা মিলে গেছে একটাই সূত্রে— তা হল অন্নের জন্য চিন্তা ভাবনা। পঞ্চম দৃশ্যে সরাসরি দেখানো হয়েছে রেশনের দোকানের লাইনে মানুষের উৎকণ্ঠা, অস্থিরতা এবং সেখানে সিভিক গার্ডের জুলুম। ওই রেশনের দোকানের লাইনেই এক যুবক বলেছে, ‘আগুন জ্বলছে আমাদের পেটে।’ গোটা নাটকই সেই খিদের আগুন জ্বলার কাহিনি– যার প্রভাবে কিশোর ছেলে সকালে ঘুমোতে পারে না, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সংঘাত তৈরি হয়। সমস্ত মানুষ একসঙ্গে থেকে এই সংকটময় সময়কে অতিক্রম করে যেতে চেয়েছে। থেকে গিয়েছে খিদের যন্ত্রণা, পেটের আগুন। এই পরিপ্রেক্ষিতেই নাটকের নামকরণ ‘আগুন’ অত্যন্ত সার্থক হয়ে উঠেছে।
◆ দ্বিতীয় সেমিস্টার বাংলা প্রশ্নোত্তর
◆ তেলেনাপোতা আবিষ্কার পাঠ্য বইয়ের গল্প
◆ তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের বিষয়বস্তু
◆ তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের প্রশ্নোত্তর
◆ ভাব সম্মিলন কবিতার বিষয়বস্তু
◆ ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর
◆ লালন শাহ্ ফকিরের গান বিষয়বস্তু
◆ লালন শাহ্ ফকিরের গান প্রশ্নোত্তর
◆ বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর
◆ আজব শহর কলকেতা প্রবন্ধের প্রশ্নোত্তর
◆ পঁচিশে বৈশাখ প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর
◆ আড্ডা প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর
◆ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ধারা (৩য়) প্রশ্নোত্তর
◆ লৌকিক সাহিত্যের নানা দিক (৪র্থ) প্রশ্নোত্তর
📌 আরো দেখুনঃ
📌 একাদশ শ্রেণি প্রশ্নপত্র সেমি-২ Click Here
📌 একাদশ শ্রেণি প্রশ্নোত্তর বাংলা Click Here
📌 একাদশ শ্রেণি সিলেবাস বাংলা Click Here
