আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ধারা প্রশ্ন উত্তর দ্বিতীয় সেমিস্টার একাদশ শ্রেণি বাংলা | Adhunik Bangla Sahityar Dhara Question Answer 2nd semester wbbse

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ধারা প্রশ্ন উত্তর দ্বিতীয় সেমিস্টার একাদশ শ্রেণি বাংলা | Adhunik Bangla Sahityar Dhara Question Answer 2nd semester

সেমিস্টার – II

বাঙালির শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি (প্রথম পর্যায়)

📌 একাদশ শ্রেণি প্রশ্নপত্র সেমি-২ Click Here

📌 একাদশ শ্রেণি প্রশ্নোত্তর বাংলা Click Here

📌 একাদশ শ্রেণি সিলেবাস বাংলা Click Here

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর : আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ধারা দ্বিতীয় সেমিস্টার একাদশ শ্রেণি বাংলা | Adhunik Bangla Sahityar Dhara Essay Type Question Answer 2nd Semester Class 11 Bengali wbchse

অনধিক একশো পঞ্চাশ শব্দে উত্তর দাও : প্রতিটি প্রশ্নের মান- ৫

১। বাংলা সাহিত্যের ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদান উল্লেখ করো।

ভূমিকা : ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে কোলকাতার লালবাজার অঞ্চলে ওয়েলেসলি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ স্থাপন করেন। বাংলা গদ্য চর্চা ও বিকাশের ক্ষেত্রে এই কলেজের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উদ্দেশ্য : ইংল্যান্ড থেকে আগত ইংরেজ রাজকর্মচারীদের দেশীয় ভাষা শিক্ষাদান।

লেখকবৃন্দ : বাংলা সাহিত্যে ধারাবাহিক গদ্যরচনার সূত্রপাত ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ গোষ্ঠীর লেখকদের মাধ্যমে। কলেজের লেখকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন- উইলিয়াম কেরি, রামরাম বসু, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, গোলকনাথ শর্মা, চণ্ডীচরণ মুনসী, রাজীবলোচন মুখ্যোপাধ্যায়, হরপ্রসাদ রায়।

উইলিয়াম কেরি : উইলিয়াম কেরির উল্লেখযোগ্য রচনা ‘ইতিহাসমালা’ ও ‘কথোপকথন’। কথ্যভাষায় গদ্য রচনায় তিনি পরবর্তী গদ্যকারদের পথপ্রদর্শক হয়ে উঠেছিলেন।

রামরাম বসু : রামরাম বসুর লেখা দুটি গ্রন্থ হলো ‘রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র’ ও ‘লিপিমালা’। ‘রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র’ বাঙালির লেখা প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থ ও মৌলিক রচনা।

মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার : ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের সফল গদ্য রচয়িতা মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলি হলো- ‘বত্রিশ সিংহাসন’, ‘রাজাবলি’, ‘হিতোপদেশ’, ‘প্রবোধচন্দ্রিকা’, ‘বেদান্তচন্দ্রিকা’। বাংলা গদ্যের যে আদর্শ রূপ ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের লেখনীতে ধরা পড়েছিল তার সূচনা হয়েছিল মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের হাতে।

অপ্রধান লেখকদের রচনা : চণ্ডীচরণ মুনসীর ‘তোতা ইতিহাস’, হরপ্রসাদ রায়ের ‘পুরুষপরীক্ষা’ ইত্যাদি গ্রন্থও বাংলা গদ্য রচনার প্রথম যুগের উল্লেখযোগ্য নিদর্শন।

অনেক ত্রুটি ও অসংগতি থাকা সত্যেও বাংলা গদ্যের সূচনাপর্বে গদ্যের বিকাশ ও বিবর্তনে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়।

২। বাংলা গদ্যের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো। [সংসদ একাদশ বার্ষিক পরীক্ষা ২০১৬, ২০১৮, ২০২০]

উত্তরঃ উনবিংশ শতকের বিস্ময় বীরসিংহের সিংহশিশু বিদ্যাসাগর ছিলেন “বাংলা গদ্যের প্রথম যথার্থ শিল্পী।” বিদ্যাসাগরের সাহিত্যকীর্তিকে কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করে আলোচনা করা যায়।

অনুবাদমূলক রচনা : ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’, ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম’, ‘ভ্রান্তিবিলাস’, ‘বোধোদয়’, ‘কথামালা’, ‘সীতার বনবাস’, ‘বাঙ্গালার ইতিহাস’ প্রভৃতি অনূদিত গ্রন্থের মাধ্যমে বাংলা গদ্য সাহিত্যের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়।

সমাজ সংস্কারমূলক রচনা : ‘বিধবা বিবাহ চলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’, ‘বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক বিচার’ ইত্যাদি হলো বিদ্যাসাগরের সমাজ সংস্কারমূলক রচনা।

শিক্ষামূলক রচনা : বিদ্যাসাগরের শিক্ষামূলক রচনার মধ্যে ‘বর্ণপরিচয়’, ‘কথামালা’, ‘চরিতাবলী’, ‘আখ্যান মঞ্জুরী’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

হাস্যরসাত্মক রচনা : ছদ্মনামে লেখা হাস্যরসাত্মক রচনা হলো ‘অতি অল্প হইল’, ‘আবার অতি অল্প হইল’ ‘ব্রজবিলাস’, ‘রত্ন পরীক্ষা’।

মৌলিক রচনা : ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক তাঁর একটি মৌলিক রচনা ‘সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃত সাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাব’। ‘বিদ্যাসাগর চরিত’ নামে আত্মজীবনীটি একটি অসম্পূর্ণ রচনা। এছাড়া তিনি ‘প্রভাবতী সম্ভাষণ’ নামে একটি ব্যক্তিগত শোক আখ্যান রচনা করেন।

বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যভাষাকে সুষমামণ্ডিত করে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দেন। সাধু বাংলা গদ্যের সৌন্দর্য তাঁর হাতেই বিকশিত হয়। ভাষার ওজস্বিতার সঙ্গে রচনার লালিত্য বিদ্যাসাগরের অবদান। তিনি বাংলা গদ্যের গঠনরীতি, ছন্দবদ্ধতা, যতি স্থাপন, বাক্য ও অর্থের সংগতিস্থাপন ইত্যাদির সম্পূর্ণ সংস্কারসাধন করেছিলেন।

পরিশেষে বলা যায় বিদ্যসাগর বাংলা গদ্যের একটি রাজপথ তৈরি করে দিয়েছিলেন, সে পথে পরবর্তীকালে বহুতর পদাতিকের আগমন ঘটেছে।

৩। বাংলা গীতিকাব্যের ধারায় বিহারীলাল চক্রবর্তীর অবদান আলোচনা করো।

অথবা, গীতিকবিতা কাকে বলে ? এই ধারায় বিহারীলাল চক্রবর্তীর অবদান আলোচনা করো। ২+৩ [সংসদ একাদশ বার্ষিক পরীক্ষা -২০১৫, ২০১৮, ২০২২]

উত্তরঃ গীতিকবিতা : বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট সম্পদ তার গীতিকবিতা। ‘লিরিক’-এই ইংরেজি শব্দটির বাংলা করা হয়েছে গীতিকবিতা। কবিমনের একান্ত ভাবনা যে কবিতার মাধ্যমে ফুটে ওঠে তাকেই গীতিকবিতা বলা হয়। বঙ্কিমচন্দ্র গীতিকবিতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, “বক্তার ভাবোচ্ছ্বাসের পরিস্ফুটনমাত্র যাহার উদ্দেশ্য, সেই কাব্যই গীতিকাব্য।”

কাব্যপরিচয় : বাংলা সাহিত্যের গীতিকবিতার মৌলিক সুরটি যে কবির হাতে প্রথম বেজে উঠেছিল তিনি হলেন বিহারীলাল চক্রবর্তী। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগুলি হলো ‘সংগীতশতক’, ‘বঙ্গসুন্দরী’, ‘নিসর্গসন্দর্শন’, বন্ধুবিয়োগ’, ‘প্রেমপ্রবাহিনী’, ‘সারদামঙ্গল’, ‘সাধের আসন’, ‘বাউল বিংশতি’।

বঙ্গসুন্দরী’ বিহারীলালের প্রথম সার্থক গীতিকাব্য। এই কাব্যটি দশটি সর্গে বিভক্ত। কবি এই কাব্যে বঙ্গ নারীর বন্দনা করেছেন। ‘নিসর্গ সন্দর্শন’ কাব্যের বিষয় কবির সৌন্দর্যচেতনা। বিহারীলালের শ্রেষ্ঠ কীর্তি ‘সারদামঙ্গল’ (১৮৭৯ খ্রিঃ) কাব্য। এই কাব্যে বিশুদ্ধ সৌন্দর্যের সঙ্গে কবির ভাবজগতের অনুভূতির মিশ্রণ ঘটেছে।

বিহারীলালের গীতিকবিতার প্রধান উপাদানই হলো প্রেম ও প্রকৃতি। তাঁর কবিতা শুধু পাঠককে আবিষ্ট করেনি, এক কাব্যগোষ্ঠী গঠন করতেও সক্ষম হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে গীতকবিতার জগতে ‘ভোরের পাখি’ বলে উল্লেখ করেছেন।

৪। বাংলা গদ্য সাহিত্যের ইতিহাসে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান উল্লেখ করো।

উত্তরঃ বাংলা গদ্য তথা প্রবন্ধ সাহিত্যের ইতিহাসে রাজা রামমোহন রায় একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। যদিও তিনি বাংলা গদ্যের বিকাশের জন্য কলম ধরেননি, নব জাগরণের অগ্রদূত হিসাবে তাঁর লেখনীর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সমাজ সংস্কার। যে বহু পুরাতন হিন্দু ধর্মের রক্ষণশীলতা জনজীবনে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছিল, লেখার মধ্যে দিয়ে তাকে সরিয়ে জনজীবনে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করাই ছিল তাঁর অন্যতম লক্ষ্য। রামমোহন রায় সেই লেখক যিনি প্রথম পাঠ্য পুস্তকের বাইরে বাংলা গদ্যের ব্যবহার করেছিলেন।

রাজা রামমোহন রায় রচিত গ্রন্থ সমূহ : ‘বেদান্ত গ্রন্থ ‘( ১৮১৫), ‘ বেদান্ত সার ‘ (১৮১৫), ‘উৎসবানন্দ বিদ্যাবাগীশের সহিত বিচার ‘ ( ১৮১৬), ‘ গোস্বামীর সহিত বিচার’ ( ১৮১৮), ‘ ভট্টাচার্যের সহিত বিচার’ (১৮১৭), ‘সহমরণ বিষয়ক প্রবর্তক ও নিবর্তক সম্বাদ ‘ (১৮১৮), ‘ কবিতাকারের সহিত বিচার ‘ ( ১৮২০ ), ‘ পথ্য প্রদান’ ( ১৮২৩),’ গৌড়ীয় ব্যাকরণ’ (১৮৩৩), ‘ব্রাহ্মণ সেবধি’ (১৮২১), ‘কায়স্থের সহিত মদ্যপান বিষয়ক বিচার’ (১৮২৬), ব্রহ্মপাসনা ( ১৮২৮), ‘সুব্রহ্মণ্য শাস্ত্রীর সহিত বিচার’ (১৮২০ )।

‘গৌড়ীয় ব্যাকরণ’ নামক প্রথম বাংলা ব্যাকরণ গ্রন্থ তিনিই রচনা করেন, যা তাঁর মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়েছিল। রামমোহন রায়ের গদ্য রচনায় ধর্ম, দর্শন, রাজনীতি এবং রাজনীতি বিষয়ক আলোচনা স্থান পেয়েছে।

ঈশ্বর গুপ্ত রামমোহন রায়ের রচনা রীতি সম্পর্কে বলেছেন—

“দেওয়ানজি জলের ন্যায় সহজ ভাষায় লিখিতেন, এই জন্য পাঠকেরা অনায়াসেই হৃদয়ঙ্গম করিতেন।”

পরিশেষে বলতে হয়, রাজারামমোহন রায় বাংলা সাহিত্যের সার্থক গদ্য সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়নি ঠিকই, কিন্তু আমাদের বিচারে তিনি বাংলা গদ্যের পথিকৃৎ। তিনি বাংলাদেশ, বাংলাভাষায় ও বাঙালির জ্ঞান সমৃদ্ধিতে যে নবযুগের সূচনা করেন, তার জন্য বাঙালিরা তার অবদান চিরদিন সগৌরবে বহন করবে। কারণ, তিনি নবজাগরনের ‘শুকতারা’, বাংলাগদ্য রচনার ‘অগ্রদূত’।

৫। বাংলা উপন্যাস সাহিত্যের ধারায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা করো।

উত্তরঃ বাংলা উপন্যাস সাহিত্যের জনক হিসেবে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়। তিনি পাশ্চাত্য উপন্যাস রীতির প্রভাব গ্রহণ করে ভারতীয় সমাজ, সংস্কৃতি ও জাতীয় চেতনার সঙ্গে মিলিয়ে বাংলা উপন্যাসকে স্বতন্ত্র রূপ প্রদান করেন। তাঁর উপন্যাসে কেবল বিনোদনের উপাদান নয়, সমাজজীবনের নানা সমস্যা, নৈতিক মূল্যবোধ, প্রেম, ইতিহাসচেতনা ও দেশপ্রেম একসূত্রে গাঁথা হয়ে উঠে এসেছে।

১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত দুর্গেশনন্দিনী বাংলা উপন্যাসের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী সৃষ্টি। এর পরবর্তী সময়ে কপালকুণ্ডলা, বিষবৃক্ষ, কৃষ্ণকান্তের উইল, রাজসিংহ, আনন্দমঠ প্রভৃতি উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ সমৃদ্ধি এনে দেয়। বিশেষ করে আনন্দমঠ উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্রের রচিত “বন্দেমাতরম” গান পরবর্তীকালে ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনের প্রেরণাসূত্রে পরিণত হয়।

বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসে চরিত্রচিত্রণ, কাহিনির বিন্যাস, ভাষার শৈলী এবং ভাবগভীরতা-সবই পাঠককে নতুন এক সাহিত্যজগতে নিয়ে যায়। তাঁর রচনায় দেখা যায় সমাজসংস্কারের আহ্বান, নারীমুক্তির ইঙ্গিত, এবং জাতীয় গৌরবের উদ্দীপনা। এভাবেই বঙ্কিমচন্দ্র বাংলা উপন্যাসকে নতুন জীবন, নতুন রূপ ও গভীর তাৎপর্য দান করে বাংলা সাহিত্যকে এক নয়া দিগন্তে উন্নীত করেন।

৬। বাংলা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কৃতিত্বের পরিচয় দাও।

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা উপন্যাসে এক নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্রের সমাজকেন্দ্রিক উপন্যাসের ধারা অতিক্রম করে রবীন্দ্রনাথ উপন্যাসকে মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, নৈতিক মূল্যবোধ ও মানবমনের সূক্ষ্ম অনুভূতির প্রকাশের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর উপন্যাসে কাহিনির চেয়ে চরিত্রের অন্তর্জগৎ ও মানসিক টানাপোড়েন বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ব্যক্তিজীবনের দ্বন্দ্ব, প্রেম, সামাজিক সমস্যা, জাতীয় চেতনা ও নারীর মুক্তির আকাঙ্ক্ষা তাঁর উপন্যাসে বারবার উঠে এসেছে।

‘চোখের বালি’ উপন্যাসে বিধবা নারীর প্রেম ও সামাজিক অবস্থানকে তিনি গভীর মানবিক দৃষ্টিতে দেখেছেন। ‘নৌকাডুবি’ ও ‘যোগাযোগ’-এ পারিবারিক বন্ধন ও সামাজিক মূল্যবোধের সংঘাত চিত্রিত হয়েছে। ‘ঘরে বাইরে’ উপন্যাসে স্বদেশি আন্দোলনের পটভূমিতে দেশপ্রেম ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের দ্বন্দ্ব অসাধারণভাবে প্রকাশ পেয়েছে, যেখানে নায়ক-নায়িকার মানসিক দ্বিধা জাতীয়তাবাদী আবেগের সঙ্গে মিশে গেছে। ‘গোরা’ উপন্যাসে জাতীয়তাবাদ, ধর্ম ও আত্মপরিচয়ের প্রশ্ন তীব্রভাবে আলোচিত হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসে ভাষা, ভাব ও রচনাশৈলীতে যেমন গভীরতা রয়েছে, তেমনি রয়েছে আধ্যাত্মিকতা ও মানবতার বোধ। তিনি বাংলা উপন্যাসকে কেবল বিনোদনের উপকরণ না করে এক গভীর চিন্তাশীল সাহিত্যধারায় পরিণত করেছেন। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা উপন্যাসে মনস্তাত্ত্বিক ও দার্শনিক বাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচনকারী হিসেবে চিরস্মরণীয়।

৭। বাংলা উপন্যাস জগতে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা করো।

উত্তরঃ‌ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা উপন্যাস জগতে এক অনন্য সংযোজন। তাঁর রচনায় প্রকৃতি, মানবজীবন ও মানবমনের গভীর সম্পর্ক অনন্যভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি গ্রামীণ জীবনের সরলতা, আনন্দ-বেদনা, আশা-আকাঙ্ক্ষাকে এমন বাস্তবতা ও আবেগের সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন যে পাঠক প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক অনুভব করতে পারেন। তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা ‘পথের পাঁচালী’ ও ‘অপরাজিত’-তে দরিদ্র কিন্তু হৃদয়সমৃদ্ধ গ্রামের জীবনের কাহিনি এমন মানবিক আবেগে ভরপুর যে তা বিশ্বসাহিত্যে এক উচ্চ আসন অধিকার করেছে। ‘আরণ্যক’ উপন্যাসে তিনি প্রকৃতির নীরব রহস্য, মানুষের নিঃসঙ্গতা ও আত্মজিজ্ঞাসাকে এক সুরে মিলিয়েছেন। তাঁর ভাষা সরল, হৃদয়স্পর্শী ও চিত্রময়, যা পাঠককে জীবনের গভীরে পৌঁছে দেয়। বিভূতিভূষণ কেবল গল্পকার নন, তিনি এক দার্শনিক শিল্পী, যিনি প্রকৃতি ও মানুষের আত্মিক ঐক্যকে সাহিত্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর লেখায় মানবতার মমত্ববোধ, নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার সুর স্পষ্ট। তিনি বাংলা উপন্যাসকে কেবল সামাজিক বাস্তবতার সীমায় আবদ্ধ রাখেননি, বরং তাকে দিয়েছেন মানবিক ও বিশ্বজনীন মাত্রা। এভাবেই বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা উপন্যাসকে করেছেন সমৃদ্ধ, গভীর ও বিশ্বমর্যাদাসম্পন্ন।

৮। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসসমূহের পরিচয় দাও।

উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা উপন্যাস জগতে এক অনন্য নাম। তিনি সমাজবাস্তবতা, মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ও মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে একত্র করে বাংলা কথাসাহিত্যে নতুন যুগের সূচনা করেন। তাঁর রচনায় জীবনের অন্ধকার দিক, দারিদ্র্য, যৌনতা, মনোবিকার ও সমাজের শোষিত মানুষের সংগ্রাম বাস্তব ও নিরাবরণভাবে প্রকাশ পেয়েছে।

‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ উপন্যাসে তিনি মানুষকে সমাজের অজানা শক্তির দ্বারা পরিচালিত পুতুলরূপে চিত্রিত করেছেন। ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসে নদীকে কেন্দ্র করে দরিদ্র জেলেদের জীবনের দুঃখ, প্রেম, পরিশ্রম ও স্বপ্নকে গভীর সহানুভূতির সঙ্গে তুলে ধরেছেন। ‘দিবারাত্রির কাব্য’-তে মানবমনের জটিল মনস্তত্ত্ব ও আত্মসংঘাতের কাহিনি ফুটে উঠেছে। ‘অহিংসা’ ও ‘চতুষ্কোণ’ প্রভৃতি উপন্যাসে সামাজিক অসাম্য, শ্রেণি-সংঘাত ও নৈতিক মূল্যবোধের টানাপোড়েন স্পষ্টভাবে প্রকাশিত।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় জীবনের বাস্তব রূপকে যেমন নির্মমভাবে দেখিয়েছেন, তেমনি মানবমনের গভীরে প্রবেশ করে তার জটিল অনুভূতি, হতাশা ও আকাঙ্ক্ষাকেও তুলে ধরেছেন। তাঁর সাহিত্য সমাজের নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর, যেখানে বৈপ্লবিক চেতনা ও গভীর মানবিকতা মিলেমিশে গেছে। তাই তিনি আধুনিক বাংলা উপন্যাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাস্তবতাবাদী লেখক হিসেবে স্বীকৃত।

৯। বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকা উল্লেখ করো।

উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে এক অনন্য স্থান অধিকার করেছেন। তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষের হৃদয়ের সাহিত্যিক। তাঁর উপন্যাসে বাংলার গ্রামীণ ও মধ্যবিত্ত সমাজজীবনের দুঃখ, দারিদ্র্য, প্রেম, অন্যায়-অবিচার এবং নৈতিক সংকট বাস্তবভাবে চিত্রিত হয়েছে। তিনি সমাজের শোষিত, অবহেলিত মানুষের কষ্ট ও সংগ্রামকে গভীর সহানুভূতির সঙ্গে প্রকাশ করেছেন। বিশেষত নারীর জীবনসংগ্রাম, প্রেম, ত্যাগ ও আত্মমর্যাদার প্রশ্ন তাঁর রচনার মূল সুর। ‘চরিত্রহীন’, ‘দত্তা’, ‘গৃহদাহ’, ‘পল্লীসমাজ’, ‘বিন্দুর ছেলে’ ইত্যাদি উপন্যাসে সমাজসংস্কার, নৈতিক মূল্যবোধ ও মানবতার আহ্বান ধ্বনিত হয়েছে।

শরৎচন্দ্রের ভাষা ছিল সহজ, সরল ও আবেগপূর্ণ, যা পাঠকের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। তাঁর কাহিনিতে জীবনের বাস্তবতা যেমন আছে, তেমনি আছে আদর্শ ও ন্যায়ের আকাঙ্ক্ষা। ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসে জীবনের দার্শনিক উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতার গভীর বিশ্লেষণ পাওয়া যায়। তিনি সমাজের কুসংস্কার ও নারীর প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর তুলেছিলেন।

মানবিকতা, প্রেম, সহানুভূতি ও সংস্কারের বার্তা দিয়ে শরৎচন্দ্র বাংলা উপন্যাসকে মানুষের জীবনের কাছাকাছি এনে দিয়েছেন। তাঁর সাহিত্য সমাজমনস্ক, আবেগনির্ভর ও গভীর মানবতাবোধে উজ্জ্বল। ফলে তিনি বাংলা উপন্যাসকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উন্নীত করেছেন।

১০। বাংলা উপন্যাসের ক্ষেত্রে তিন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা করো।

উত্তরঃ বাংলা কথাসাহিত্যের তিন বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক হলেন বিভূতিভূষণ, তারাশঙ্কর ও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। এঁদের সম্মিলিত অবদানেই বাংলা উপন্যাস বাস্তবজীবন, সমাজচেতনা ও মনস্তত্ত্বের এক নতুন দিগন্তে পৌঁছায়।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির অন্তরঙ্গ সম্পর্ককে তাঁর উপন্যাসে গভীর মানবিক আবেগে রূপ দিয়েছেন। ‘পথের পাঁচালী’, ‘অপরাজিত’, ‘আরণ্যক’, ‘দেবযান’ ইত্যাদি উপন্যাসে তিনি গ্রামীণ জীবনের সরলতা, দুঃখ, আনন্দ ও প্রকৃতিপ্রেমের মধ্য দিয়ে মানুষের জীবনের সৌন্দর্য ও আধ্যাত্মিকতা প্রকাশ করেছেন।

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ রুক্ষ রাঢ় অঞ্চলের সমাজজীবন, লোকসংস্কৃতি ও মানবজীবনের জটিলতা বাস্তবতার মাটিতে স্থাপন করেছেন। ‘গণদেবতা’, ‘ধাত্রীদেবতা’, ‘কালিন্দী’, ‘কবি’, ‘পঞ্চগ্রাম’ প্রভৃতি উপন্যাসে তিনি বৃহত্তর সমাজজীবনের সংঘাত ও মানবমনের গভীরতা প্রকাশ করেছেন।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ সমাজবাস্তবতা ও মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মানুষের মানসিক ও অর্থনৈতিক টানাপোড়েনকে বিশ্লেষণ করেছেন। ‘পদ্মানদীর মাঝি’, ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’, ‘দিবারাত্রির কাব্য’ প্রভৃতি রচনায় দারিদ্র্য, মনোবিকার ও জীবনের অন্ধকার দিকগুলি তীব্র বাস্তবতায় ফুটে উঠেছে।

এই তিন বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনাশৈলী, ভাবনাপ্রবণতা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে এক অমর ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছে।

১১. মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাট্য প্রতিভা সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা নাটকের আধুনিক যুগের সূচনা করেন। তাঁর নাটকে পাশ্চাত্য নাট্যরীতির প্রভাব থাকলেও তিনি ভারতীয় সমাজজীবনের বাস্তবতা, নীতি ও সংস্কৃতির সঙ্গে সেটিকে মিশিয়ে এক স্বতন্ত্র নাট্যরূপ সৃষ্টি করেছেন। তাঁর প্রথম নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’ (১৮৫৯) বাংলা সাহিত্যে কাব্যনাট্যের প্রবর্তন ঘটায়। এতে কাব্যগুণ, কল্পনা ও নাট্যরসের চমৎকার সমন্বয় দেখা যায়। পরবর্তী নাটক ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ এবং ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’-তে তিনি তৎকালীন সমাজের ভণ্ড সভ্যতা, ইংরেজি সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ ও নৈতিক অবক্ষয়কে তীব্র ব্যঙ্গের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।

তাঁর নাট্যে কৌতুক, ব্যঙ্গ ও গাম্ভীর্যের এক অনন্য মিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়। চরিত্রচিত্রণে তিনি ছিলেন বাস্তবতাবাদী, ভাষা ছিল শৈল্পিক ও ছন্দোময়। বিশেষত তাঁর নারীচরিত্রগুলির মধ্যে সংবেদনশীলতা, আত্মসম্মানবোধ ও প্রতিবাদের সুর স্পষ্ট। তাঁর নাটক কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং সমাজসংশোধনের হাতিয়ার হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ।

সব মিলিয়ে বলা যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা নাট্যসাহিত্যে নবজাগরণের সূচনা করেন। তিনি বাংলা নাটককে আধুনিক, সমাজসচেতন ও শিল্পসমৃদ্ধ রূপ দিয়ে পরবর্তী নাট্যধারার দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেন।

১২. ছোটোগল্পকার রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ছোটোগল্পের জনক ও সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পী। তিনি ছোটোগল্পকে জীবনের সূক্ষ্ম অনুভূতি, মানবিক সম্পর্ক ও সমাজবাস্তবতার জীবন্ত প্রকাশের মাধ্যম করে তুলেছিলেন। তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘গল্পগুচ্ছ’ বাংলা ছোটোগল্প সাহিত্যের এক মাইলফলক।

রবীন্দ্রনাথের গল্পে গ্রামের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সমাজের উচ্চবিত্ত পর্যন্ত সবার জীবন উঠে এসেছে। যেমন—‘ছুটি’, ‘পোস্টমাস্টার’, ‘সমাপ্তি’, ‘কাবুলিওয়ালা’, ‘দেনাপাওনা’ প্রভৃতি গল্পে মানুষের প্রেম, বেদনা, ত্যাগ, মাতৃত্ব, নিঃসঙ্গতা ও আত্মসম্মানের চিত্র ফুটে উঠেছে। তাঁর গল্পে চরিত্রগুলি জীবন্ত, ভাষা সহজ ও সংবেদনশীল।

তিনি কেবল কাহিনি বলেননি, মানুষের মনের গভীরে প্রবেশ করে মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ করেছেন। ছোট আকারের মধ্যেই তিনি গভীর জীবনদর্শন প্রকাশ করেছেন—এটাই তাঁর গল্পের প্রধান কৃতিত্ব। তাঁর গল্পে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কও গভীরভাবে যুক্ত, যা তাঁর সাহিত্যদর্শনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তিনি সামাজিক বৈষম্য, নারীজীবনের অবস্থান ও মানবপ্রেমের ভাবনাকে গল্পে সূক্ষ্মভাবে উপস্থাপন করেছেন। তাঁর রচনায় মানবিকতা ও সহানুভূতির যে সুর ধ্বনিত হয়েছে, তা বাংলা ছোটোগল্পকে নতুন মর্যাদা দিয়েছে।

অতএব, রবীন্দ্রনাথ বাংলা ছোটোগল্পকে সাহিত্যিক মর্যাদা ও শিল্পরূপ দান করেছেন, যা তাঁকে শ্রেষ্ঠ ছোটোগল্পকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

১৩. বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশে উইলিয়াম কেরির অবদান আলোচনা করো।

উত্তরঃ বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশে উইলিয়াম কেরির (William Carey) অবদান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক। তিনি ছিলেন ইংরেজ মিশনারি ও শিক্ষাবিদ, যিনি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় আগমন করেন এবং বাংলাভাষার উন্নতি ও প্রসারে অসামান্য ভূমিকা পালন করেন। কেরি বাংলা গদ্যকে ছাপাখানার মাধ্যমে প্রথম স্থায়ী ভিত্তি দেন। তিনি ১৮০১ সালে শ্রীরামপুরে প্রথম বাংলা ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন এবং বাংলা ভাষায় বহু গ্রন্থ প্রকাশ করেন।

উইলিয়াম কেরি বাংলার প্রথম সংবাদপত্র ‘সমাচার দার্পণ’ প্রকাশে প্রধান ভূমিকা নেন, যা বাংলা সাংবাদিকতার সূচনা করে। তিনি বাংলা ভাষা শিক্ষার উন্নতির জন্য বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন এবং ইংরেজি-বাংলা অভিধান প্রণয়ন করেন। কেরি অনুবাদের মাধ্যমে বাংলায় সাহিত্যচর্চার নতুন দিক উন্মোচন করেন—তিনি বাইবেলসহ নানা ইংরেজি গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করেন, যা বাংলা গদ্যের গঠন ও শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে।

কেরি ও তাঁর সহকর্মীরা শ্রীরামপুর কলেজ প্রতিষ্ঠা করে উচ্চশিক্ষা ও ভাষা-চর্চার কেন্দ্র গড়ে তোলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় বাংলা গদ্য ক্রমে সরল, প্রাঞ্জল ও শিক্ষণীয় রূপ লাভ করে। তাই বলা যায়, উইলিয়াম কেরি আধুনিক বাংলা গদ্যের প্রথম যুগের অন্যতম ভিত্তিস্থাপক, যাঁর অবদানে বাংলা ভাষা সাহিত্যিক মর্যাদা ও স্থায়ী রূপ লাভ করে।

১৪. বাংলা কাব্যে জীবনানন্দ দাশের অবদান সম্পর্কে লেখো।

উত্তরঃ জীবনানন্দ দাশ আধুনিক বাংলা কবিতার এক অনন্য শিল্পী। তিনি রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগে বাংলা কবিতায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন। তাঁর কবিতায় প্রকৃতি, নিঃসঙ্গতা, সময়চেতনা ও অস্তিত্বের গভীর অনুসন্ধান একত্রে মিশে গেছে। জীবনানন্দের কাব্যভাষা অনন্য— এখানে রয়েছে চিত্রকল্পের বৈচিত্র্য, গূঢ় প্রতীক, শব্দের সঙ্গীতধর্মিতা এবং এক রহস্যময় সৌন্দর্যবোধ।

তাঁর কবিতায় বাংলার প্রকৃতি ও মানুষ একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। “বনলতা সেন”, “রূপসী বাংলা”, “মহাপৃথিবী” প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থে কবি বাংলার মাটি, নদী, গাছ, পাখি ও মানুষের অস্তিত্বকে গভীর মানবিকতায় রূপ দিয়েছেন। তিনি নগরজীবনের যান্ত্রিকতার বিপরীতে প্রকৃতি ও অতীতের শান্ত, রূপময় জগতের প্রতি এক অন্তর্মুখী আকর্ষণ প্রকাশ করেছেন।

জীবনানন্দ দাশ বাংলা কবিতায় “নির্জনতার কবি” হিসেবে খ্যাত। তাঁর কবিতায় জীবন ও মৃত্যুর রহস্য, সময়ের অস্থিরতা এবং মানুষের অস্তিত্বসংকট এক সূক্ষ্ম দার্শনিক ভাবনায় প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর কাব্য আধুনিক বাংলা কবিতাকে এক নতুন ভাবধারায় ও শৈলীতে সমৃদ্ধ করেছে।

সুতরাং বলা যায়, জীবনানন্দ দাশ বাংলা কাব্যে আধুনিকতার গভীরতা, নান্দনিকতা ও মানবতাবোধের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বাংলা সাহিত্যকে অনন্য উচ্চতায় উন্নীত করেছেন।

দ্বিতীয় সেমিস্টার বাংলা প্রশ্নোত্তর

ছুটি পাঠ্য বইয়ের গল্প

ছুটি গল্পের বিষয়বস্তু

ছুটি গল্পের প্রশ্ন উত্তর

তেলেনাপোতা আবিষ্কার পাঠ্য বইয়ের গল্প

তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের বিষয়বস্তু

তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের প্রশ্নোত্তর

ভাব সম্মিলন কবিতার বিষয়বস্তু

ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর

লালন শাহ্ ফকিরের গান বিষয়বস্তু

লালন শাহ্ ফকিরের গান প্রশ্নোত্তর

নুন কবিতার বিষয়বস্তু

নুন কবিতার প্রশ্ন উত্তর

আগুন পাঠ্য বইয়ের নাটক

আগুন নাটকের বিষয়বস্তু

আগুন নাটকের প্রশ্ন উত্তর

বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর

আজব শহর কলকেতা প্রবন্ধের প্রশ্নোত্তর

পঁচিশে বৈশাখ প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর

আড্ডা প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ধারা (৩য়) প্রশ্নোত্তর

লৌকিক সাহিত্যের নানা দিক (৪র্থ) প্রশ্নোত্তর

📌 আরো দেখুনঃ

📌 একাদশ শ্রেণি প্রশ্নপত্র সেমি-২ Click Here

📌 একাদশ শ্রেণি প্রশ্নোত্তর বাংলা Click Here

📌 একাদশ শ্রেণি সিলেবাস বাংলা Click Here

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

Leave a Reply

  • Post comments:0 Comments
  • Reading time:14 mins read