আবহমান কবিতার বিষয়বস্তু নবম শ্রেণি বাংলা | Abohoman Kobitar Bishoibostu Class 9 Bengali West Bengal Board

সাহিত্য সঞ্চয়ন
নবম শ্রেণি বাংলা (প্রথম ভাষা)

আবহমান কবিতার বিষয়বস্তু, সারাংশ, সারমর্ম, সারসংক্ষেপ নবম শ্রেণি বাংলা | Abohoman Kobitar Bishoibostu Class 9 Bengali wbbse

আবহমান পাঠ্য কবিতা, কবি পরিচিতি, উৎস, বিষয় সংক্ষেপ, নামকরণ নবম শ্রেণি বাংলা।

📌নবম শ্রেণি ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র Click Here

📌 নবম শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর Click Here

আবহমান পাঠ্য কবিতা, কবি পরিচিতি, উৎস, বিষয় সংক্ষেপ, মূলভাব, নামকরণ নবম শ্রেণি বাংলা।

আবহমান
—নীরন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া,
লাউমাচাটার পাশে।
ছোট্ট একটা ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল
সন্ধ্যার বাতাসে।

কে এইখানে এসেছিল অনেক বছর আগে,
কেউ এইখানে ঘর বেঁধেছে নিবিড় অনুরাগে।
কে এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে,
এই মাটিকে এই হাওয়াকে আবার ভালবাসে।
ফুরয় না্‌ তার কিছুই ফুরয় না,
নটেগাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না!

যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া,
লাউমাচাটার পাশে।
ছোট্ট একটা ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল,
সন্ধ্যার বাতাসে।

ফুরয় না তার যাওয়া এবং ফুরয় না তার আসা,
ফুরয় না সেই একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা।
সারাটা দিন আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখে,
সারাটা রাত তারায়-তারায় স্বপ্ন এঁকে রাখে।
ফুরয় না, তার কিছুই ফুরয় না,
নাটেগাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না।

যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া,
লাউমাচাটার পাশে।
ছোট্ট একটা ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল,
সন্ধ্যার বাতাসে।

নেভে না তার যন্ত্রণা যে, দুঃখ হয় না বাসী,
হারায় না তার বাগান থেকে কুন্দফুলের হাসি
তেমনি করেই সূর্য ওঠে, তেমনি করেই ছায়া
নামলে আবার ছুটে আসে সান্ধ্য নদীর হাওয়া
ফুরয় না, তার কিছুই ফুরয় না,
নাটেগাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না।

যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া,
লাউমাচাটার পাশে।
ছোট্ট একটা ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল,
সন্ধ্যার বাতাসে।

কবি পরিচিতিঃ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (জন্ম ১৯২৪) : জন্মস্থান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলা। সত্যযুগ পত্রিকার সাংবাদিকরূপে কর্মজীবন শুরু করেন, পরবর্তীকালে আনন্দবাজার পত্রিকা-র সঙ্গে যুক্ত হন। বহুদিন তিনি আনন্দমেলা সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলা কবিতার জগতে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী অত্যন্ত জনপ্রিয় নাম। তাঁর কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে- নীল নির্জন, অন্ধকার বারান্দা, কলকাতার যীশু প্রভৃতি। উলঙ্গ রাজা কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেছেন।

উৎসঃ আবহমান কবিতাটির রচনাকাল ১৮ ভাদ্র, ১৩৬৫ বঙ্গাব্দ। আবহমান কবিতাটি কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী রচিত ‘অন্ধকার বারান্দা’ কাব্যগ্রন্থের ৩০ সংখ্যক কবিতা।

বিষয় সংক্ষেপঃ কোন এক গ্রাম বাংলার উঠোনের লাউমাচাটির পাশে সন্ধ্যার বাতাসে একটা ফুল দুলছে। ফেলে আসা শৈশবের এই উঠোনের এই ফুল জীবনের এক-একটা অতীত মুহূর্ত। এই স্মৃতিবিজড়িত অতীত মুহূর্তের কথাই কবি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন। এখানেই একদিন কেউ অনেক বছর আগে নিবিড় অনুরাগে ঘর বেঁধেছিল। হয়তো পরিস্থিতির কারণে একদিন হারিয়ে গিয়েছিল, হয়তো বা দূরে কোথাও চলে গিয়েছিল। এই মাটি, এই হাওয়াকে ভালোবেসেই আবার ফিরে আসে।

আসলে শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত গ্রাম বাংলার প্রতি ভালোবাসা-আকর্ষণ কোনোদিনই ফুরোয় না। তাই স্মৃতির সরণি বেয়ে আমরা ফিরে যাই আমাদের অতীতে, আপন মনে সারাটা দিন ঘাসের গন্ধ মাখি; সারাটা রাত স্বপ্নের জাল বুনি। তবু অতীত থেকে নির্বাসিত হওয়ার দুঃখ-যন্ত্রণা অন্তর্মনে সর্বদা জেগে থাকে। সেই দুঃখকে লালন করি বুকের ভেতর। কেননা সে দুঃখ কখনও বাসি হয় না। আসলে আমরা বড়ো হই, আমাদের বয়স বাড়ে, বৃদ্ধ হই, কিন্তু স্মৃতিমেদুর মনের বয়স বাড়ে না। নটে গাছটা বুড়িয়ে উঠলেও, মুড়িয়ে যায় না। উঠোন-লাউমাচা-সান্ধ্য হাওয়ার ফুল দোলা অর্থাৎ ফেলে আসা জীবন ও প্রকৃতির রূপচ্ছবি অবিকৃত থাকে। কেননা মাতৃভূমির সঙ্গে, শৈশব স্মৃতির সঙ্গে আমাদের সম্বন্ধ স্মৃতি-বিস্মৃতির ঊর্ধ্বে এক আবহমান চিরন্তনতার সাক্ষ্য বহন করে চলে। জীবনের সমস্ত দুঃখ-যন্ত্রণার পাশাপাশি অমলিন থাকে ছোটো ছোটো সুখানুভূতিগুলি। জীবন এগিয়ে চলে তার নিজস্ব ছন্দে।

মূলভাবঃ কবিতাটির মূলভাব হলো গ্রাম বাংলার আবহমান সৌন্দর্য, গ্রামবাসীর জীবনযাত্রা ও তাদের আবহমান সংস্কৃতির প্রতি কবির অগাধ ভালোবাসা। কবি কবিতাটিতে গ্রাম বাংলার প্রকৃতির বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি গ্রাম বাংলার আকাশ, বাতাস, নদী, মাঠ, ফুল, ফল, পাখি ইত্যাদির সৌন্দর্য বর্ণনা করেছেন। কবি গ্রামবাসীর জীবনযাত্রার কথাও বলেছেন। তিনি গ্রামবাসীদের সহজ-সরল জীবন, তাদের কঠোর পরিশ্রম, তাদের আবেগ-অনুভূতি ইত্যাদির কথা বলেছেন। কবি গ্রামবাসীদের আবহমান সংস্কৃতির কথাও বলেছেন। তিনি গ্রামবাসীদের ঐতিহ্যবাহী রীতিনীতি, তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস, তাদের লোকসংস্কৃতি ইত্যাদির কথা বলেছেন।

আবহমান কবিতার মূল বক্তব্যঃ আধুনিক বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা ‘আবহমান’ কবিতাটি আধুনিক নগরজীবনের ক্লান্তি ও সেই ক্লান্তির নিরাময়ে গ্রাম জীবনে ফিরে যাওয়ার আহ্বানকে সূচিত করেছে। এই কবিতাটি কবির লেখা ‘অন্ধকার বারান্দা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

‘আবহমান’ কথার অর্থ হল চিরন্তন বা চিরকালীন। এই কবিতায় ফুটে উঠেছে গ্রাম জীবনের চিরন্তন সমৃদ্ধি ও সৌন্দর্য। আধুনিক পৃথিবীতে মানুষ ভোগবাদী জীবনের প্রলোভনে শহরমুখী হয়েছে। কিন্তু নাগরিক জীবন ভোগের উপকরণ দিতে পারলেও মানুষকে দিতে পারেনি অন্তরাত্মার শান্তি। এই শান্তির খোঁজে তাই তাকে ফিরে যেতে হবে গ্রামের সহজ সরল আড়ম্বরহীন জীবনে। গ্রামের প্রকৃতি প্রতি মুহূর্তে তাকে ডাকছে। সুদূর অতীত কালে এই গ্রাম থেকেই শুরু হয়েছিল মানব সভ্যতার বিকাশ। আজও সেই গ্রাম-সভ্যতা নিজের সমৃদ্ধি ও সৌন্দর্য নিয়ে তেমনি রয়েছে। গ্রাম সভ্যতার জীবনতৃষ্ণা কোনোদিন ফুরাবে না। অনেকেই তাকে ছেড়ে গেছে, অনেকেই আবার ফিরে এসেছে। তাই ছেলেভুলানো গল্পের নটেগাছটি মুড়িয়ে গেলেও গ্রাম সভ্যতার নটেগাছটি বুড়িয়ে যায়, তবু মুড়িয়ে যায় না। অর্থাৎ এই সভ্যতা প্রাচীন হয়েছে, তবু প্রাণহীন হয়নি। তাই এখানেই ফিরতে হবে মানুষকে। এসে দাঁড়াতে হবে আবহমান উঠোনটিতে, লাউমাচাটির পাশে। একটি ছোট্ট ফুল দুলে দুলে চিরকাল ডাকবে আমাদের। তার কাছে যেতে বলবে চিরকাল।

‘যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া’– ব্যাখ্যা।

উদ্ধৃত অংশটি আধুনিক বাংলা ভাষার অন্যতম খ্যাতনামা কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা ‘আবহমান’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। আধুনিক নগরজীবনের ছুটোছুটিতে ক্লান্ত মানুষের প্রতি কবি এই পরামর্শ দিয়েছেন।

বিগত শতক থেকেই ভোগবাদী জীবনের টানে গ্রামের মানুষ ধীরে ধীরে শহরমুখী হয়েছে। গ্রাম ছেড়ে তারা বাসা বেঁধেছে শহরে। শহরের জীবন তাদের হয়তো কিছু ভোগের উপকরণ দিতে পেরেছে, কিন্তু যা দিতে পারেনি, তা হল অনাবিল শান্তি ও সৌন্দর্য। গ্রাম জীবনের চিরন্তন সৌন্দর্য আর অনাবিল শান্তি কবির মনে বার বার জাগিয়েছে প্রত্যাবর্তনের বাসনা। কবির সেই সুপ্ত বাসনাই এই কবিতায় বাত্ময় হয়ে উঠেছে। কবি বিশ্বাস করেন, গ্রামের এই জীবন কোনোদিনও প্রাণহীন হয় না। এই জীবন যতই পুরোনো হোক, কখনও মুড়িয়ে যায় না। এখানে ফিরতে পারলেই মিলবে এক পরিপূর্ণ আনন্দময় জীবনের আশ্বাস। এখানেই আছে আধুনিক শহুরে মানুষের সমস্ত যন্ত্রণার সুনিশ্চিত নিরাময়। গ্রাম জীবনের এই চিরন্তন সৌন্দর্য, চিরন্তন শান্তির মধ্যেই ফিরে আসতে হবে। শহরের রুক্ষ কঠোর জীবনের ক্লান্তি মুছে এক মুঠো সুখের সন্ধান পেতে হলে আমাদের কাছে আর অন্য কোনো পথ নেই।

নামকরণের সার্থকতাঃ আবহমান শব্দটির অর্থ যা চিরকালীন অর্থাৎ যা চিরকাল চলে আসছে তাই হল আবহমান আলোচ্য কবিতাটিতে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তেমনই এক চিরকালীন সত্যকে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন।

আবহমান কবিতায় কবি গ্রামবাংলার মানুষের দুঃখকষ্টে ভরা প্রকৃতির ছায়ায় লালিত জীবনের চিরন্তন ছবিকে নিপুণ তুলিতে এঁকেছেন। তার আজন্ম চেনা ঘর-বাড়ি, খোলা উঠোন, উঠোনের চারপাশের জল, হাওয়া, মাটি, সবুজ গাছগাছালি, ঘাসের গন্ধ, বাগান থেকে ভেসে আসা ফুলের সুঘ্রাণ, নদীর সান্ধ্য হাওয়া অর্থাৎ তার বড়ো হয়ে ওঠার সঙ্গে যে প্রাকৃতিক জগতের শিকড়ের যোগ, ক্রমে সে সেখান থেকেই বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে। শৈশবের চেনা জীবন থেকে দূরে কর্মময় জগতে তার নির্বাসন ঘটে। তবু সেই ফেলে আসা অতীত, ছেলেবেলার শৈশব-গন্ধ মাখা নানান আনন্দময় মুহূর্ত তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে তার শৈশবের বাসভূমিতে। সেখানকার মাটি, বাতাস, মানুষ, লাউমাচায় ঘেরা উঠোনের হাওয়ায় আন্দোলিত ছোট্ট ফুলটির আদুরে আহ্বান; অর্থাৎ মাতৃভূমির তার সন্তানের প্রতি আবেগ-আকুলতা তার স্মৃতিভূমিকে আন্দোলিত করে। সেই সুখস্বর্গ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার যন্ত্রণায় সে বেদনার্ত হয়। দিনভর ঘাসের গন্ধমাখা ছেলেবেলার স্মৃতিতাড়িত অনুভূতি বুকে নিয়ে সে সারারাত সুদূর তারায়-তারায় স্বপ্নসন্ধান করে ফেরে। এভাবেই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ এই বিচ্ছিন্নতার যন্ত্রণায় ভোগে, আবার প্রত্যেকের হৃদয়েই শৈশবের প্রতি এক অমোঘ আকর্ষণ ও ভালোবাসা চিরজাগ্রত অবস্থায় থাকে। তাই পরিবর্তমান সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার বয়স বাড়ে অর্থাৎ নটে গাছটি ক্রমশ বুড়োয়, ‘কিন্তু মুড়োয় না’। যার অর্থ-শিকড়ের খোঁজে ফিরে যাওয়ার অফুরান অনুভূতি; তাকে চিরন্তন মুক্তির আকুলতায় জাগিয়ে রাখে। এ এক শাশ্বত অনুভূতি। আর এই অনুভূতি সর্বজনীন। তাই কবি কবিতাটির নাম দিয়েছেন ‘আবহমান’। যুগ যুগ ধরে বয়ে চলা বাংলার গ্রামজীবন, তার প্রকৃতি আর তার কাছে মানুষের ঋণের কাহিনিই এই কবিতায় নিপুণভাবে তুলে ধরেছেন কবি। তাই বলা যায়, কবিতাটির আবহমান নামটি সার্থক ও যথার্থ হয়েছে বলেই মনে হয়।

📌 আরো দেখুনঃ

📌নবম শ্রেণি ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র Click Here

📌 নবম শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর Click Here

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

Leave a Reply

  • Post comments:0 Comments
  • Reading time:7 mins read