মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র ২০২০ পশ্চিমবঙ্গ বোর্ড | Madhyamik History Question Paper 2020 with Answers West Bengal Board
2020 History Question Paper with answers for Madhyamik students of West Bengal Board of Secondary Education. Question and Answers of the question paper are given below.
মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের অধীন মাধ্যমিক ছাত্র ছাত্রীদের জন্য ২০২০ সালের উত্তরসহ ইতিহাস বিষয়ের প্রশ্নপত্র।
📌মাধ্যমিক বিগত বছরের প্রশ্নপত্র সমস্ত বিষয় | Madhyamik Previous Years Question Paper All Subject CLICK HERE
2020
HISTORY
Time 3 Hours 15 Minutes
(First 15 minutes for reading the question paper only)
Full Marks: 90 For Regular Candidates
Full Marks: 100 For External Candidates
Special credit will be given for answers which are brief and to the point. Marks will be deducted for spelling mistakes, untidiness and bad handwriting.
[ ‘ক’ বিভাগ থেকে ‘ঙ’ বিভাগ পর্যন্ত প্রদত্ত প্রশ্ন নিয়মিত ও বহিরাগত সব পরীক্ষার্থীদের জন্য। ‘চ’ বিভাগে প্রদত্ত প্রশ্ন শুধুমাত্র বহিরাগত পরীক্ষার্থীদের জন্য ]
[ ‘ক’ বিভাগে সকল প্রশ্ন আবশ্যিক। অন্য বিভাগে বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়। ‘খ’ বিভাগে কেবলমাত্র দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীরা বিকল্প প্রশ্নের নির্দেশ অনুযায়ী উত্তর লিখবে। অন্য সকলে মানচিত্র চিহ্নিত করবে। ]
বিভাগ ‘ক’
১। সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখ : ১×২০ = ২০
১.১ ‘বিশ্বপরিবেশ দিবস’ পালিত হয়—
(ক) ৮ ই জানুয়ারি (খ) ২৪ শে ফেব্রুয়ারি
(গ) ৮ ই মার্চ (ঘ) ৫ ই জুন
উত্তরঃ (ঘ) ৫ ই জুন
১.২ ভারতীয়রা আলুর ব্যবহার শিখেছিল যাদের কাছ থেকে—
(ক) পর্তুগিজ (খ) ইংরেজ (গ) মুঘল (ঘ) ওলন্দাজ
উত্তরঃ (ক) পর্তুগিজ
১.৩প্রথম সরকারি শিক্ষা কমিশন (হান্টার কমিশন) গঠিত হয়—
(ক) ১৮৭২ খ্রিঃ (খ) ১৮৭৮ খ্রিঃ
(গ) ১৮৮২ খ্রিঃ (ঘ) ১৮৯০ খ্রিঃ
উত্তরঃ (গ) ১৮৮২ খ্রিঃ
১.৪ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্মসমাজে যোগ দেন—
(ক) ১৮৩০ খ্রিঃ (খ) ১৮৩৩ খ্রিঃ
(গ) ১৮৪৩ খ্রিঃ (ঘ) ১৮৫০ খ্রিঃ
উত্তরঃ (খ) ১৮৩৩ খ্রিঃ
১.৫ বাংলার নবজাগরণ ছিল—
(ক) ব্যক্তিকেন্দ্রিক (খ) প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক
(গ) কলকাতাকেন্দ্রিক (ঘ) গ্রামকেন্দ্রিক
উত্তরঃ (গ) কলকাতাকেন্দ্রিক
১.৬ দ্বিতীয় অরণ্য আইনে (১৮৭৮) লাভবান হয়েছিল—
(ক) আদিবাসী সম্প্রদায়
(খ ) ব্রিটিশ সরকার
(গ) ব্যবসায়ী শ্রেণি
(ঘ) ব্রিটিশ সরকার ও আদিবাসীশ্রেণি উভয়েই
উত্তরঃ (ঘ) ব্রিটিশ সরকার ও আদিবাসীশ্রেণি উভয়েই
১.৭ ‘হুল’ কথাটির অর্থ হল—
(ক) ঈশ্বর (খ) স্বাধীনতা (গ) অস্ত্র (ঘ) বিদ্রোহ
উত্তরঃ (ঘ) বিদ্রোহ
১.৮ মহারানির ঘোষণাপত্রের (১৮৫৮) প্রধান উদ্দেশ্য ছিল—
(ক) ভারতবাসীর আনুগত্য অর্জন
(খ) ভারতে ব্রিটিশদের একচেটিয়া ব্যবসার অধিকার লাভ
(গ) ভারতীয় প্রজাদের স্বায়ত্ত্বশাসনের অধিকার প্রদান
(ঘ) মহাবিদ্রোহে (১৮৫৭) বন্দী ভারতীয়দের মুক্তিদান
উত্তরঃ (গ) ভারতীয় প্রজাদের স্বায়ত্ত্বশাসনের অধিকার প্রদান
১.৯ ল্যান্ডহোল্ডার্স সোসাইটির সভাপতি ছিলেন—
(ক) রাজা রাধাকান্ত দেব (খ) প্রসন্ন কুমার ঠাকুর
(গ) রাজা রামমোহন রায় (ঘ) দ্বারকানাথ ঠাকুর
উত্তরঃ (ক) রাজা রাধাকান্ত দেব
১.১০ হিন্দুমেলার সম্পাদক ছিলেন—
(ক) নবগোপাল মিত্র (খ) গণেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) রাজনারায়ণ বসু (ঘ) গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
উত্তরঃ (ঘ) গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
১.১১ বাংলা ভাষায় প্রথম বই ছাপা হয়—
(ক) ১৫৫৬ খ্রিঃ (খ) ১৭৭৮ খ্রিঃ
(গ) ১৭৮৫ খ্রিঃ (ঘ) ১৮০০ খ্রিঃ
উত্তরঃ (খ) ১৭৭৮ খ্রিঃ
১.১২ বেঙ্গল টেক্নিক্যাল ইনস্টিটিউট এর প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন—
(ক) অরবিন্দ ঘোষ (খ) সতীশচন্দ্র বসু
(গ) যোগেশচন্দ্র ঘোষ (ঘ) প্রমথনাথ বসু
উত্তরঃ (ঘ) প্রমথনাথ বসু
১.১৩ ‘দেশপ্রাণ’ নামে পরিচিত ছিলেন—
(ক) সতীশচন্দ্র সামস্ত
(খ) অশ্বিনীকুমার দত্ত
(গ) বীরেন্দ্রনাথ শাসমল
(ঘ) যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত
উত্তরঃ (গ) বীরেন্দ্রনাথ শাসমল
১.১৪ মোপলা বিদ্রোহ (১৯২১) হয়েছিল—
(ক) মালাবার উপকূলে
(খ) কোঙ্কন উপকূলে
(গ) গোদাবরী উপত্যকায়
(ঘ) তেলেঙ্গানা অঞ্চলে
উত্তরঃ (ক) মালাবার উপকূলে
১.১৫ ‘মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা’ (১৯২৯) হয়েছিল—
(ক) জাতীয় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে
(খ) বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে
(গ) শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে
(ঘ) কৃষক নেতাদের বিরুদ্ধে
উত্তরঃ (গ) শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে
১.১৬ ‘নারী সত্যাগ্রহ সমিতি’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল—
(ক) বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময়ে
(খ) অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে
(গ) আইন অমান্য আন্দোলনের সময়ে
(ঘ) ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময়ে
উত্তরঃ (খ) অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে
১.১৭ ‘মাস্টার দা’ নামে পরিচিত ছিলেন—
(ক) বেণীমাধব দাস (খ) সূর্য সেন (গ) কৃয়কুমার মিত্র (ঘ) হেমচন্দ্র ঘোষ
উত্তরঃ (খ) সূর্য সেন
১.১৮ মাদ্রাজে ‘আত্মসম্মান আন্দোলন’ শুরু করেন—
(ক) রামস্বামী নাইকার (খ) নারায়ণ গুরু
(গ) ভীমরাও আম্বেদকর (ঘ) গান্ধিজি
উত্তরঃ (ক) রামস্বামী নাইকার
১.১৯ স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতের সবচেয়ে বড় দেশীয় রাজ্য ছিল—
(ক) কাশ্মীর (খ) জুনাগড় (গ) হায়দ্রাবাদ (ঘ) জয়পুর
উত্তরঃ (গ) হায়দ্রাবাদ
১.২০ পুনর্গঠিত কেরল রাজ্যটি অবস্থিত ছিল—
(ক) গোদাবরী উপত্যকায়
(খ) দক্ষিণ উড়িষ্যায়
(গ) কাথিয়াবাড় উপদ্বীপে
(ঘ) মালাবার উপকূলে
উত্তরঃ (ঘ) মালাবার উপকূলে
বিভাগ ‘খ’
২। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (প্রতিটি উপবিভাগ থেকে অন্ততঃ ১ টি করে মোট ১৬ টি প্রশ্নের উত্তর দাও) : ১×১৬ = ১৬
উপবিভাগ : ২.১
২.১ একটি বাক্যে উত্তর দাও : ১x৪=৪
(২.১.১) বিপিনচন্দ্র পালের আত্মজীবনী গ্রন্থের নাম কী ?
উত্তরঃ সত্তর বৎসর।
(২.১.২) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভারতীয় উপাচার্য কে ছিলেন ?
উত্তরঃ গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।
(২.১.৩) কত খ্রিষ্টাব্দে ‘নীল কমিশন’ গঠিত হয় ?
উত্তরঃ ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে।
(২.১.৪) ‘বর্ণপরিচয়’ কে রচনা করেন ?
উত্তরঃ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
উপবিভাগ : ২.২
২.২ ঠিক বা ভুল নির্ণয় করো : ১×৪=৪
(২.২.১) ‘নদীয়া কাহিনী’ গ্রন্থটি ‘শহরের ইতিহাস’ -এর অন্তর্গত।
উত্তরঃ ভুল।
(২.২.২) বাবা রামচন্দ্র ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের নেতা।
উত্তরঃ ভুল।
(২.২.৩) ফরোয়ার্ড ব্লক প্রতিষ্ঠা করেন সুভাষচন্দ্র বসু।
উত্তরঃ ঠিক।
(২.২.৪) লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রতিষ্ঠা করেন বাসন্তী দেবী।
উত্তরঃ ভুল।
উপবিভাগ : ২.৩
২.৩ ‘ক’ স্তম্ভের সঙ্গে ‘খ’ স্তম্ভ মেলাও : ১×৪=৪
‘ক’ স্তম্ভ | ‘খ’ স্তম্ভ |
(২.৩.১) টমাস ব্যাবিংটন মেকলে | (১) ল্যান্ডহোল্ডার্স সোসাইটি |
(২.৩.২) কেশবচন্দ্র সেন | (২) বর্তমান ভারত |
(২.৩.৩) রাজা রাধাকান্ত দেব | (৩) পাশ্চাত্য শিক্ষা |
(২.৩.৪) স্বামী বিবেকানন্দ | (৪) নববিধান |
উত্তরঃ ২.৩.১ টমাস ব্যাবিংটন মেকলে – (৩) পাশ্চাত্য শিক্ষা
২.৩.২ কেশবচন্দ্র সেন – (৪) নববিধান
২.৩.৩ রাজা রাধাকান্ত দেব – (১) ল্যান্ড হোল্ডার্স – সোসাইটি
২.৩.৪ স্বামী বিবেকানন্দ – (২) বর্তমান ভারত
উপবিভাগ : ২.৪
২.৪ প্রদত্ত ভারতবর্ষের রেখা মানচিত্রে নিম্নলিখিত স্থানগুলি চিহ্নিত কর ও নামাঙ্কিত করো : ১×৪=৪
(২.৪.১) বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের বারাসাত।
(২.৪.২) নীলবিদ্রোহের অন্যতম কেন্দ্র – যশোহর নদিয়া।
(২.৪.৩) মহাবিদ্রোহের (১৮৫৭) অন্যতম কেন্দ্র মিরাট।
(২.৪.৪) পুনর্গঠিত রাজ্য (১৯৬০) – মহারাষ্ট্র।
অথবা,
(কেবলমাত্র দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীদের জন্য)
শূন্যস্থান পূরণ কর : ১x৪=৪
(২.৪.১) সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের একজন নেতা ছিলেন ____________।
উত্তরঃ ভবানী পাঠক।
(২.৪.২) নীলবিদ্রোহের একটি কেন্দ্র ছিল ____________।
উত্তরঃ নদীয়া।
(২.৪.৩) মহাবিদ্রোহের (১৮৫৭ খ্রিঃ) সময়ে ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন ____________।
উত্তরঃ লর্ড ক্যানিং
(২.৪.৪) হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি স্বাধীন ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় _________ খ্রিষ্টাব্দে।
উত্তরঃ ১৯৪৮
উপবিভাগ : ২.৫
নিম্নলিখিত বিবৃতিগুলির সঙ্গে সঠিক ব্যাখ্যাটি নির্বাচন করো : ১x৪=৪
(২.৫.১) বিবৃতি : হ্যালহেড তাঁর বাংলা ব্যাকরণ গ্রন্থ লেখেন এদেশীয় ইংরেজ কর্মচারীদের বাংলা ভাষা শেখাবার জন্য।
ব্যাখ্যা ১ : কারণ, এ দেশের ইংরেজ কর্মচারীরা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অনুরাগী ছিলেন।
ব্যাখ্যা ২ : কারণ, বাংলা ভাষা না জানলে ইংরেজ কর্মচারীদের পদোন্নতি হত না।
ব্যাখ্যা ৩ : কারণ, এ দেশে বাণিজ্য ও প্রশাসন চালাবার জন্য ইংরেজ কর্মচারীদের বাংলা ভাষা আয়ত্ত করা প্রয়োজন ছিল।
উত্তরঃ ব্যাখ্যা ৩ : কারণ, এ দেশে বাণিজ্য ও প্রশাসন চালাবার জন্য ইংরেজ কর্মচারীদের বাংলা ভাষা আয়ত্ত করা প্রয়োজন ছিল।
(২.৫.২) বিবৃতি : বারদৌলি সত্যাগ্রহ অনুষ্ঠিত হয় ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে।
ব্যাখ্যা ১ : এই আন্দোলন ছিল, ভূ-স্বামী ধনী কৃষকদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ভূমিহীন দরিদ্র কৃষি-শ্রমিকদের আন্দোলন।
ব্যাখ্যা ২ : এই আন্দোলন ছিল, ভূমি রাজস্ব বৃদ্ধির প্রতিবাদে সরকারের বিরুদ্ধে ভূ-স্বামী ধনী কৃষকশ্রেণির আন্দোলন।
ব্যাখ্যা ৩ : এই আন্দোলন ছিল, ভূমি রাজস্ব বৃদ্ধির প্রতিবাদে ভূ-স্বামী ধনী কৃষকশ্রেণি এবং ভূমিহীন দরিদ্র কৃষক শ্রেণির মিলিত আন্দোলন।
উত্তরঃ ব্যাখ্যা ৩ : এই আন্দোলন ছিল, ভূমি রাজস্ব বৃদ্ধির প্রতিবাদে ভূ-স্বামী ধনী কৃষকশ্রেণি এবং ভূমিহীন দরিদ্র কৃষক শ্রেণির মিলিত আন্দোলন।
(২.৫.৩) বিবৃতি : ভারতছাড়ো আন্দোলনের (১৯৪২) সময়ে ভোগেশ্বরী ফুকোননী পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন।
ব্যাখ্যা ১ : ভোগেশ্বরী ফুকোননী পুলিশের সঙ্গে সশস্ত্র সংগ্রামে মারা যান।
ব্যাখ্যা ২ : পলাতকা বিপ্লবী ভোগেশ্বরী ফুকোননী আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃত হলে পুলিশ তাকে গুলি করে।
ব্যাখ্যা ৩ : ভোগেশ্বরী ফুকোননী অসমের নওগাঁ জেলার পুলিশ থানায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের চেষ্টা করলে পুলিশের গুলিতে মারা যান।
উত্তরঃ ব্যাখ্যা ১ : ভোগেশ্বরী ফুকোননী পুলিশের সঙ্গে সশস্ত্র সংগ্রামে মারা যান।
(২.৫.৪) বিবৃতি : সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারার (১৯৩২) মাধ্যমে অনুন্নত শ্রেণিদের পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হলে গান্ধিজি তার প্রতিবাদে আমরণ অনশন শুরু করেন।
ব্যাখ্যা ১ : গান্ধিজি ছিলেন অনুন্নত শ্রেণিদের নির্বাচনী অধিকারের বিরোধী।
ব্যাখ্যা ২ : হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ তৈরীর প্রতিবাদে গান্ধিজি অনশন করেন।
ব্যাখ্যা ৩ : জাতীয় কংগ্রেসের নির্দেশে গান্ধিজি প্রতিবাদী অনশন করেছিলেন।
উত্তরঃ ব্যাখ্যা ২ : হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ তৈরীর প্রতিবাদে গান্ধিজি অনশন করেন।
বিভাগ ‘গ’
৩। দু’টি অথবা তিনটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (যে কোনো ১১ টি) : ২×১১=২২
৩.১ আধুনিক ভারতের ইতিহাস চর্চার উপাদান রূপে ‘সরকারি নথিপত্রে’র সীমাবদ্ধতা কী ?
উত্তরঃ আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার উপাদানরূপে সরকারি নথিপত্রের সীমাবদ্ধতা গুলি হল—
(ক) এই নথিপত্রগুলি পুলিশ বা গোয়েন্দা বা সরকারি আধিকারিকদের দ্বারা রচিত হত বলে এই ধরনের লেখাগুলি সরকারি নীতির প্রতি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমর্থন জানাত।
(খ) এই ধরনের নথিপত্রে সাধারণ মানুষ বা বিদ্রোহী জনগণের মনোভাব অনেকক্ষেত্রেই উপেক্ষিত হয়েছে।
৩.২ আত্মজীবনী এবং স্মৃতিকথা বলতে কী বোঝায় ?
উত্তরঃ নিজের জীবন ও সেই সংক্রান্ত ঘটনাবলি যখন কোনো ব্যক্তি নিজে লিপিবদ্ধ করেন, তখন সেই লিপিবদ্ধ কাহিনিকে আত্মজীবনী বলা হয়। আবার যখন কোনো ব্যক্তি অতীতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা দীর্ঘদিন পর স্মৃতি থেকে মনে করে লিপিবদ্ধ করেন তখন তা হয়ে ওঠে স্মৃতিকথা। এখানে উল্লেখ্য যে, সব আত্মজীবনীই স্মৃতিকথা; কিন্তু সব স্মৃতিকথাই আত্মজীবনী নয়।
৩.৩ এ দেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে খ্রিষ্টান মিশনারীদের প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল ?
উত্তরঃ ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারিদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল (১) এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে ভারতীয় সমাজ-সংস্কৃতির অগ্রগতি ঘটানো। (২) এদেশে পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটানো (৩) সর্বোপরি ভারতীয়দের মধ্যে খ্রিস্টান ধর্মের প্রসার ঘটানো।
৩.৪ ‘নববিধান’ কী ?
উত্তরঃ ‘নববিধান’ কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল ‘নতুন বিধান’ বা ‘নতুন নিয়ম রীতি’। নববিধান হল ব্রাহ্মনেতা কেশবচন্দ্র সেন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মসমাজের একটি শাখা। কেশবচন্দ্র সেন ও শিবনাথ শাস্ত্রীর মধ্যে বিরোধ শুরু হলে শিবনাথ শাস্ত্রী তাঁর অনুগত তরুণদের নিয়ে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন এবং কেশবচন্দ্ৰ ১৮৮০ সালে তার অনুগামীদের নিয়ে নববিধান প্রতিষ্ঠা করেন।
৩.৫ চুয়াড় বিদ্রোহের (১৭৯৮-১৭৯৯) গুরুত্ব কী ছিল ?
উত্তরঃ চুয়াড় বিদ্রোহের গুরুত্ব হল—
(ক) এই বিদ্রোহের পর চুয়াড়দের ওপর পুলিশি দমন-পীড়ন বৃদ্ধি পায়।
(খ) চুয়াড়দের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্দেশ্যে তাদের জন্য দুর্গম অঞ্চল নিয়ে জঙ্গলমহল জেলা গঠন করা হয়।
(গ) এই বিদ্রোহ পরবর্তীকালে ব্রিটিশবিরোধী পথ দেখায় ৷
(ঘ) বিদ্রোহে ইরেজদের বিরুদ্ধে চুয়াড় কৃষক ও জমিদাররা ঐক্যবদ্ধ হয়
৩.৬ ফরাজি আন্দোলন কী নিছক ধর্মীয় আন্দোলন ছিল ?
উত্তরঃ ফরাজি আন্দোলন শুধুই ধর্মীয় ছিল কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে। অনেকে মনে করেন যে, এটি নিছকই হিন্দুবিরোধী এবং ধর্মীয় আন্দোলন ছিল। নরহরি কবিরাজ, অভিজিৎ দত্ত প্রমুখ ধর্মীয় আন্দোলনের পাশাপাশি ফরাজি আন্দোলনে কৃষকশ্রেণির ব্যাপক অংশগ্রহণ, তীব্র ব্রিটিশ-বিরোধিতা প্রভৃতিও লক্ষ্য করেছেন৷
৩.৭ ‘ল্যান্ডহোল্ডার্স সোসাইটি’ কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় ?
উত্তরঃ ল্যান্ডহোল্ডার্স সোসাইটি প্রতিষ্ঠার (১৮৩৮ খ্রি.) প্রধান উদ্দেশ্য হল– (১) চিরস্থায়ী ভূমিব্যবস্থার মধ্যে জমিদারদের নিজেদের স্বার্থরক্ষা করা। (২) খাজনা-মুক্ত ভূমিব্যবস্থা প্রণয়নের সরকারি উদ্যোগ প্রতিহত করা। (৩) ভারতীয়দের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী জাতীয় চেতনার বিকাশ
ঘটানো।
৩.৮ উনিশ শতকে জাতীয়তাবাদের উন্মেষে ‘আনন্দ মঠ’ উপন্যাসটির কীরূপ অবদান ছিল ?
উত্তরঃ উনিশ শতকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উন্মেষে বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। এই উপন্যাসটি যুবসমাজকে শেখায় যে, জন্মভূমি স্বদেশ হল মা। মায়ের মুক্তির উদ্দেশ্যে সন্তানের চুড়ান্ত আত্মত্যাগের প্রয়োজন। দেশসেবায় আনন্দমঠের সন্তানদলের আত্মত্যাগ বিপ্লবীদের অনুপ্রাণিত করে।
৩.৯ বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনে ছাপাখানার বিকাশের প্রভাব কতটা ?
উত্তরঃ বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনে ছাপাখানার বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যেমন– (১) বাংলায় গণশিক্ষার প্রসার শুরু হয়। (২) উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সস্তায় বইপত্র শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছোতে থাকে। (৩) সাধারণ মানুষ সুলভে বইপত্র থেকে বিভিন্ন জ্ঞান আহরণের সুযোগ পায়। (৪) বইয়ের ব্যাবসার নতুন বাজার গড়ে ওঠে।
৩.১০ ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ ছিল কেন ?
উত্তরঃ ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ ছিল। কারণ, ভারতের চিরাচরিত শিক্ষায় যা কিছু সদর্থক ছিল ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা তা ধ্বংস করে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাকাঠামোয় ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে অবহেলা করা হয়। ইংরেজি ভাষার বাহন এই শিক্ষা ভারতে গণশিক্ষার প্রসারে ব্যর্থ হয়। এই শিক্ষার মাধ্যমে ইংরেজদের গোলাম করণিক তৈরি এবং খ্রিস্টান ধর্মের প্রসার ঘটানো সম্ভব হয়।
৩.১১ মোপলা বিদ্রোহের (১৯২১) কারণ কী ?
উত্তরঃ ১৮৩৬ সাল থেকে ১৮৫৮ সালের মধ্যে কেরলের মালাবার অঞ্চলে দরিদ্র কৃষিজীবী সম্প্রদায় মোপলারা বার বার বিদ্রোহ করে। ইংরেজদের বলপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া বিপুল রাজস্বের বোঝা, স্থানীয় জমিদারের তীব্র শোষণ ও অত্যাচার এবং ঋণের জালে জর্জরিত করা ছিল মোপলাদের বারংবার বিদ্রোহের কারন।
৩.১২ কী উদ্দেশ্যে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল প্রতিষ্ঠিত হয় ?
উত্তরঃ কংগ্রেসের অভ্যন্তরে কংগ্রেস সমাজতান্ত্রিক দল (১৯৩৪ খ্রি.) প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হল— (১) কংগ্রেসে সমাজতান্ত্রিক আদর্শগুলি গ্রহণ করার জন্য বর্ষীয়ান নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। (২) দরিদ্র দেশবাসীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার দাবিতে কাজ করা। (৩) পুঁজিপতি, জমিদার ও দেশীয় রাজাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া (৪) ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার লক্ষ্যে কাজ করা।
৩.১৩ ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ই অক্টোবর বাংলার নারী সমাজ কেন অরন্ধন পালন করে ?
উত্তরঃ স্বদেশি আন্দোলনের সূচনালগ্নে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর আহ্বানে বাংলার নারী সমাজের অরন্ধন পালন করার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল (১) বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা, (২) হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে বাঙালি ঐক্যের স্বরূপ তুলে ধরা, (৩) নারীদের অংশগ্রহণে স্বদেশি আন্দোলনকে শক্তিশালী করা।
৩.১৪ ননীবালা দেবী স্মরণীয় কেন ?
উত্তরঃ ননীবালা দেবী ছিলেন এক দুঃসাহসী বিপ্লবী। তিনি নিজের বাড়িতে বিপ্লবীদের গোপনে আশ্রয় দিয়ে গ্রেপ্তার হন। তাকে মাটির নীচে জানালাহীন কক্ষে আটক রাখা হয়। প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি অবস্থায় তিনি পুলিশ সুপার গোল্ডিকে কষিয়ে চড় মারেন। তিনি ছিলেন বাংলার প্রথম রাজবন্দি।
৩.১৫ সর্দার প্যাটেলকে ‘ভারতের লৌহমানব’ বলা হয় কেন ?
উত্তরঃ ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার প্যাটেলকে ভারতের লৌহমানব বলা হয় ৷ কারণ, তিনি ছিলেন সর্বদা নীতি ও আদর্শে অটল। তিনি অনমনীয় দৃঢ়তার সঙ্গে স্বাধীন ভারতে অধিকাংশ দেশীয় রাজ্যের ভারতভুক্তি ঘটান।
৩.১৬ কী পরিস্থিতিতে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (১৯৫৩) গঠিত হয়েছিল ?
উত্তরঃ স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের রাজ্য পুনর্গঠনের ভিত্তি নির্ধারণে ব্যাপক সমস্যা দেখা দেয়। এই সময় কংগ্রেস ভাষাভিত্তিক পুনর্গঠনের বিরোধিতা করলে সারা দেশে বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে তেলুগু গান্ধিবাদী নেতা পত্তি শ্রীরামুলু পৃথক অপ্রদেশ গঠনের দাবিতে অনশন করে মৃত্যুবরণ করলে তেলুগুভাষী জেলাগুলিতে দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠিত হয়।
বিভাগ ‘ঘ’
৪। সাত বা আটটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও। প্রতিটি উপবিভাগ থেকে অন্ততঃ ১ টি করে মোট ৬ টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। ৪x৬=২৪
উপবিভাগ : ঘ.১
৪.১ ‘উডের নির্দেশনামা’(১৮৫৪)কে এদেশের শিক্ষা বিস্তারের ‘মহাসনদ’ বলা হয় কেন ?
উত্তরঃ ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি চার্লস উড ভারতে যে শিক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশনামা’ প্রকাশ করেন তাকে এদেশের পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের ‘ম্যাগনাকার্টা’ বলা হয়।
ভারতে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রসার ঘটলেও সুনির্দিষ্ট পাঠক্রম ও কাঠামো ছিল না। উডের নির্দেশনামার ওপর ভিত্তি করে ভারতে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো গড়ে উঠেছিল।
এই নির্দেশনামায় নিম্নতম পর্যায় থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থাকে বিন্যস্ত করার কথা বলা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কলেজ ও প্রেসিডেন্সিগুলিতে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। পৃথক একটি শিক্ষা বিভাগ ও ‘ডিরেক্টর অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন’ পদের সৃষ্টি করা হয়। শিক্ষক- শিক্ষণ-এর উপর জোর দেওয়া হয়। নারীশিক্ষা প্রসারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। অন্যদিকে গণশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষার বহুল ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়।
উডের নির্দেশনামার ওপর ভিত্তি করে প্রত্যেক প্রদেশে ‘জনশিক্ষা দপ্তর’ স্থাপন করা হয় । ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।
৪.২ শ্রীরামকৃষ্ণের ‘সর্বধর্ম সমন্বয়’ -এর আদর্শ ব্যাখ্যা করো।
উপবিভাগ : ঘ.২
৪.৩ মহাবিদ্রোহের (১৮৫৭) প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের মনোভাব কীরূপ ছিল ?
উত্তরঃ ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহকে শিক্ষিত বাঙালি সমাজ সাধারণভাবে সমর্থন করেননি।
ইংরেজদের উপর বিশ্বাসঃ তখনকার পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালি সমাজ ইংরেজদের প্রতি অধিক আগ্রহ পোষণ করত। তারা ভাবে এই সময় ভারতের ওপর থেকে ইংরেজ শক্তি চলে গেলে ভারতকে সঠিকভাবে চালানো যাবে না। তখনকার বাঙালি শিক্ষিত সমাজ ব্রিটিশ শাসনকে ভারতের পক্ষে কল্যাণকর বলে মনে করত।
বিদ্রোহের অযৌক্তিকতাঃ ১৮৫৭ সালে বিদ্রোহকে সমকালীন বাঙালি সমাজ অপ্রয়োজনীয় মনে করেছিল। বিদ্রোহে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটলে ভারতে আবার মুসলিম শাসনের দিন আসতে পারে, এই আশঙ্কা মূলত হিন্দু বাঙালিদের ছিল।
অন্যান্য বাঙালিদের অভিমতঃ বিভিন্ন বাঙালি যেমন হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, রাজনারায়ণ বসু ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ বিদ্রোহের উদ্দেশ্যের প্রতি তাদের অনাস্থা প্রকাশ করেন। তখনকার যুগে বাঙালি মধ্যবিত্তের এক বিরাট অংশ ইংরেজদের অধীনে চাকরি করত, তাই তারা ইংরেজদের বিরুদ্ধে যেতে চায়নি।
1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে যখন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে তখন শিক্ষিত বাঙালি সমাজের সমর্থনের অভাবে বাংলায় তা খুব একটা শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেনি।
৪.৪ ভারত সভার প্রতিষ্ঠা ও বিকাশে সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জির ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ ভূমিকা : আনন্দ মোহন বসু, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, দ্বারকানাথ গাঙ্গুলি, শিবনাথ শাস্ত্রী প্রমুখের উদ্যোগে ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন বা ভারতসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। নানা কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপনায় ভারতসভার প্রাণপুরুষ হয়ে ওঠেন। তাঁকে ‘রাষ্ট্রগুরু’ সম্মানে ভূষিত করা হয়।
দেশব্যাপী প্রচার : ভারতসভাকে একটি সর্বভারতীয় সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করেন এবং সভা-সমাবেশের মাধ্যমে জনমত গঠনের উদ্যোগ নেন।
বিভিন্ন শাখা স্থাপন : সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সক্রিয় উদ্যোগ ও প্রচারের ফলে লখনউ, মিরাট, লাহোর, সিন্ধু প্রভৃতি অঞ্চলে শীঘ্রই ভারতসভার বেশ কিছু শাখা স্থাপিত হয়।
আন্দোলনে নেতৃত্বদান : সুরেন্দ্রনাথ আই সি এস পরীক্ষার বসার ঊর্ধ্বতম বয়স ১৯ থেকে বাড়িয়ে ২২ বছর করার দাবি জানান। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে লর্ড লিটন প্রবর্তিত দেশীয় ভাষার সংবাদপত্র আইন’ ও ‘অস্ত্র আইন’-র বিরুদ্ধে তিনি আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিনি ইলবার্ট বিল-এর সমর্থনে আন্দোলন গড়ে তোলেন। কৃষকদের স্বার্থরক্ষার দাবিতেও তিনি আন্দোলন করেন।
সর্বভারতীয় জাতীয় সম্মেলন : সুরেন্দ্রনাথের সক্রিয় উদ্যোগে কলকাতায় ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে সর্বভারতীয় জাতীয় সম্মেলন বা অলিম্পিক ইন্ডিয়া ন্যাশনাল কনফারেন্স নামে মহাসভা প্রতিষ্ঠিত হয়।
জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় প্রেরণা : ড. অমলেশ ত্রিপাঠী ‘সর্বভারতীয় জাতীয় সম্মেলন’ কে ‘জাতীয় কংগ্রেসের মহড়া’ বলে অভিহিত করেছেন। কারণ, এই সম্মেলনের প্রেরণায় অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউম ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন।
কংগ্রেসকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ভূমিকা : ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশন বসলে সুরেন্দ্রনাথ তাঁর অনুগামীদের নিয়ে অধিবেশনে যোগ দেন। ফলে কংগ্রেস অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
উপসংহার : ভারতে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পূর্বে সুরেন্দ্রনাথই প্রথম ভারতবাসীকে রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। পরে কংগ্রেস গড়ে উঠলে তিনি সদলবলে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে ভারতীয়দের রাজনৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ় করেন।
উপবিভাগ : ঘ.৩
৪.৫ বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রতি জাতীয় কংগ্রেসের কীরূপ মনোভাব ছিল ?
উত্তরঃ
ভূমিকা : বারদৌলি সত্যাগ্রহ (১৯২৮) ছিল ব্রিটিশ সরকারের অন্যায় রাজস্ব বৃদ্ধি এবং কৃষকদের উপর আরোপিত অতিরিক্ত করের বিরুদ্ধে একটি সফল অহিংস আন্দোলন। এটি গুজরাটের বারদৌলি তালুকায় সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। এই আন্দোলন কেবল স্থানীয় নয়, বরং ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে ওঠে।
জনসচেতনায় ভূমিকা : ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে তুলোর দাম বৃদ্ধি ও রাজস্ব ৩০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রতিবাদে গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হয়েছিল। বারদৌলি তালুকে কংগ্রেস নেতারা সত্যাগ্রহের আদর্শ প্রচার করে জনগণকে সচেতন করে তুলতে থাকেন।
বল্লভভাই প্যাটেলের উদ্যোগ : বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার উদ্দেশ্যে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে গান্ধীবাদী যুবক বল্লভভাই প্যাটেল বারদৌলিতে আসেন। তার নেতৃত্বে বারদৌলির কৃষকরা খাজনা প্রদান বন্ধ করার শপথ নেয়। প্যাটেল বারদৌলি অঞ্চলকে ১৩ টি অংশে বিভক্ত করে বিভিন্ন অংশের আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্ব পৃথক পৃথক নেতাদের হাতে তুলে দেন। ছাত্র, যুবক সহ ১৫০০ স্বেচ্ছাসেবক আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
নারী প্রগতিতে : বারদৌলি সত্যাগ্রহে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ জাতীয় কংগ্রেসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মিঠুবেন প্যাটেল, মনিবেন প্যাটেল, সারদা মেহতা প্রমুখ নারী বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যোগ দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেন। বারদৌলির কৃষক রমণীরাই বল্লভভাই প্যাটেলকে ‘সর্দার’ উপাধি দেন।
গান্ধীজীর ভূমিকা : গান্ধীজি ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ২ আগস্ট বারদৌলিতে আসেন। বল্লভ ভাইপ্যাটেলকে পুলিশ গ্রেফতার করলে তিনি এই আন্দোলনের নেতৃত্ব ভার গ্রহণ করেন। সরকার আন্দোলনকে স্তব্ধ করার জন্য যে তদন্ত কমিশন গঠন করে তার সুপারিশ গান্ধীজীর সমর্থনে কৃষকরা মেনে নিয়েছিল। এই সুপারিশে খাজনার হার কমিয়ে ৬.০৩ শতাংশ করা হয়।
উপসংহার : বারদৌলি সত্যাগ্রহ জাতীয় কংগ্রেসের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক এবং আদর্শগত বিজয় ছিল। ব্রিটিশ সরকার চাপে পড়ে ম্যাক্সওয়েল তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং রাজস্বের হার কমিয়ে ৬.০৩ শতাংশ করে। এর ফলে বারদৌলি কৃষক সমস্যা জাতীয় স্তরে উন্নীত হয়। এছাড়া এই আন্দোলনের সমর্থনে বোম্বে আইনসভার সদস্য কে.এম. মুন্সি এবং লালজি নারানজি পদত্যাগ করেন।
৪.৬ বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময়ে শ্রমিক শ্রেণির ভূমিকা কীরূপ ছিল ?
উত্তরঃ
ভূমিকা : বঙ্গভঙ্গ বিরোধী বা স্বদেশি আন্দোলন (১৯০৫-১৯১১) ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মূলত বাংলায় শুরু হলেও, এই আন্দোলন ধীরে ধীরে সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে।
আন্দোলনের উদ্দেশ্য : বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে শ্রমিকশ্রেণির উদ্দেশ্য শুধুমাত্র আর্থিক দাবি পূরণে সীমাবদ্ধ ছিল না। তাদের বোঝানো হয়েছিল যে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান না ঘটলে তাদের মুক্তি সম্ভব নয়। এভাবে শ্রমিকরা জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল এবং তাদের আন্দোলন জাতীয় আন্দোলনের অংশ হয়ে ওঠে।
শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্ব : বিশ শতকের গোড়া থেকেই শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে জাতীয়তাবাদী নেতাদের একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। লালা লাজপত রায় এবং বিপিনচন্দ্র পালের মতো নেতারা শ্রমিকদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে তাঁদের আন্দোলনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছিলেন।
শ্রমিক আন্দোলনের বিস্তার—
(১) বাংলা—
(ক) হাওড়া বার্ন কোম্পানি : ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ দিবসে বার্ন কোম্পানির ১২,০০০ শ্রমিক ধর্মঘট শুরু করে।
(খ) পাট শিল্প : বাংলার ৩৭ টি পাটকলের মধ্যে ১৮ টি ধর্মঘটে যোগ দেয়। হাওড়ার ফোর্ট গ্লস্টার পাটকলের ধর্মঘট বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
(গ) ছাপাখানা শ্রমিক : অতুলানন্দ উপাধ্যায় প্রিন্টার্স অ্যান্ড কম্পোপ্রিন্টার্স লিগ গঠন করেন এবং ছাপাখানার কর্মীদের সংগঠিত করেন।
(ঘ) রেল শ্রমিক : ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রেল কর্মীরা চিওরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে আন্দোলনে অংশ নেন।
(২) তামিলনাড়ু : তুতিকোরিনে বাড়তি মজুরির দাবিতে চিদাম্বরম পিল্লাইয়ের নেতৃত্বে ধর্মঘট শুরু হয়। পিল্লাই গ্রেপ্তার হলে শ্রমিকরা আন্দোলন আরও জোরদার করে।
(৩) বোম্বাই : বালগঙ্গাধর তিলকের গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে বোম্বাইয়ে ধর্মঘট শুরু হয়। ১৯০৮ সালে প্রায় ৮,০০০ শ্রমিক ধর্মঘটে যোগ দেয়।
(৪) অন্যান্য স্থান : আমেদাবাদ, কানপুর, এবং জামালপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপের শ্রমিকরা ধর্মঘটের মাধ্যমে আন্দোলনকে সমর্থন জানায়।
উপসংহার : বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে শ্রমিকশ্রেণি তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়। ঐতিহাসিক বিপিনচন্দ্রের মতে, স্বদেশি আন্দোলন শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই আন্দোলনে শ্রমিকশ্রেণি শুধু একটি সামাজিক গোষ্ঠী হিসেবে নয়, বরং জাতীয় আন্দোলনের স্রোতের অংশীদার হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করে।
উপবিভাগ : ঘ.৪
৪.৭ জুনাগড় রাজ্যটি কী ভাবে ভারতভুক্ত হয় ?
উত্তরঃ
ভূমিকা : ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর ভারতীয় ভূখণ্ডের অধিকাংশ দেশীয় রাজ্য ভারতে যোগদান করলেও কয়েকটি রাজ্য ভারতে যোগ দিতে অস্বীকার করে। এগুলির মধ্যে অন্যতম ছিলকাথিয়াবাড় উপদ্বীপে অবস্থিত জুনাগড়।
সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি : দেশীয় রাজ্য জুনাগড়ের জনসংখ্যার অন্তত ৮০ শতাংশই ছিল হিন্দু। কিন্তু সেখানকার মুসলিম নবাব জুনাগড়কে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করেন। জুনাগড়ের দেওয়ান শাহনওয়াজ ভুট্টো-ও ছিলেন মুসলিম লিগের উগ্র সমর্থক ।
প্রজা বিদ্রোহ : জুনাগড়ের নবাব রাজ্যটিকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করতে চাইলে সেখানকার অ-মুসলিম প্রজাদের মধ্যে প্রবল গণবিক্ষোভ দেখা যায় ও চারিদিকে ব্যাপক বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে।
সেনা অভিযান : জুনাগড়ে তীব্র প্রজাবিদ্রোহের ফলে সেখানকার নবাব পাকিস্তানে পালিয়ে যান। এই পরিস্থিতিতে ভারতের সেনাবাহিনী জুনাগড়ে প্রবেশ করে।
গণভোট : জুনাগড়ের বাসিন্দারা ভারত না পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দিতে আগ্রহী তা জানার জন্য সেখানে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে গণভোটের আয়োজন করা হয়। গণভোটে সেখানকার মানুষ ভারতে যোগদানের পক্ষে মত দেয়।
জুনাগড়ের ভারতভুক্তি : গণভোটের পর জুনাগড় ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।
উপসংহার : জুনাগড়ের ভারতে অন্তর্ভুক্তির ফলে দেশীয় রাজ্য দখলে এনে পাকিস্তানের শক্তিবৃদ্ধির প্রয়াসেবাধা সৃষ্টি হয়। এর ফলে ভারতের সুবিধা হয়।
৪.৪.৮ উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে ভারত সরকার কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করে ?
উত্তরঃ 1947 খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের পর পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ পূর্ববঙ্গ থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আশ্রয় নেয়। স্বাধীন ভারত সরকারকে বাধ্য হয়ে উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে নানা উদ্যোগ নিতে হয়।
সরকারের উদ্যোগ : উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে ভারত সরকার যে সমস্ত উদ্যোগ গুলি নেয়া হয়েছিল সেগুলি হল—
(১) পুনর্বাসন নীতি : ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু উদ্বাস্তু সমস্যার ব্যাপকতা উপলব্ধি করেন এবং ছিন্নমূল উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের নীতির ওপর গুরুত্ব দেন বলে স্বাধীনতার প্রথম পাঁচ বছর পুনর্বাসনের যুগ নামে পরিচিত।
(২) আশ্রয়দান : ভারতে আগত নিঃস্ব-রিক্ত উদ্বাস্তুরা অনেকেই প্রথমে বিভিন্ন রেলস্টেশন, ফুটপাত, পরিত্যক্ত ঘর বাড়িতে বা খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেয় সরকারি বিভিন্ন স্থানে উদ্বাস্তু শিবির প্রতিষ্ঠা করে আপাতত সেখানে উদ্বাস্তুদের বসবাসের ব্যবস্থা করে।
(৩) ত্রাণ : উদ্বাস্তু শিবির গুলিতে বসবাসের সময় সরকার উদ্বাস্তুদের খাদ্য, পোশাক-পরিচ্ছদ পানীয় জল, আলো, ঔষধপত্র কিছু নগদ অর্থ প্রভৃতি সরবরাহ করত। উদ্বাস্তু পরিবারগুলির বালক বালিকাদের জন্য শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়।
(৪) সরকারি সাহায্য : গ্রামীণ স্তরের উদ্বাস্তুদের জমি দান কৃষি ঋণ ও গৃহ নির্মাণে ভর্তুকি বা সরকারী সাহায্য দেওয়া হয়। এবং শহরাঞ্চলে উদ্বাস্তুদের জন্য শিল্প ও কারিগরি শিক্ষা প্রদান ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করা হয়।
(৫) দিল্লি চুক্তি : ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানের জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের সঙ্গে নেহেরু লিয়াকত চুক্তি অর্থাৎ দিল্লী চুক্তিতে আবদ্ধ হন 1950 খ্রিস্টাব্দে। সেখানে বলা হয় সংখ্যালঘু রাষ্ট্রের প্রতি উদ্বাস্তুরা অনুগত থাকবে এবং উদ্বাস্তুদের নিজের দেশে প্রত্যাবর্তন উৎসাহ দান করা হবে।
মূল্যায়ন : পরিশেষে বলা যায় যে, উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে ভারত সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও তা ছিল মূলত দিল্লি এবং পূর্ব পাঞ্জাব নির্ভর তুলনামূলকভাবে পশ্চিমবঙ্গের উদ্বাস্তু সমস্যা যথেষ্ট অবহেলিত হয়েছিল।
বিভাগ ‘ঙ’
৫। পনেরো বা ষোলটি বাক্যে যে কোন একটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৮×১=৮
৫.১ উনিশ শতকের প্রথমার্ধে সতীদাহ প্রথা বিরোধী প্রচেষ্টাগুলির পরিচয় দাও। রামমোহন রায় কী ভাবে সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলনকে সাফল্যমন্ডিত করেন ?
উত্তরঃ উনিশ শতকের প্রথমার্ধে সতীদাহপ্রথা ভারতীয় উপমহাদেশের, বিশেষ করে বাংলার একটি গভীরভাবে বদ্ধমূল ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছিল। বিধবা স্ত্রীকে তার স্বামীর মৃতদেহের সঙ্গে চিতায় জ্বালিয়ে দেওয়ার এই প্রথাটি হিন্দু সমাজে বিস্তৃত ছিল। এই প্রথার বিরুদ্ধে একাধিক সমাজ সংস্কারক ও বুদ্ধিজীবী কণ্ঠ উঠলেও, রামমোহন রায় ছিলেন এই আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ।
প্রেক্ষাপট : উনিশ শতকের শুরুতেও হিন্দুসমাজে স্বামীর মৃত্যুর পর তাদের বিধবা স্ত্রীরা সীমাহীন উপেক্ষার শিকার হত। তৎকালীন সমাজ সতীদাহ বা সহমরণের হাত থেকে তাদের রক্ষা না করে বরং এই প্রথাকে সমর্থন করত। ব্রিটিশ সরকার এই কুপ্রথার বিরোধী হলেও তারা প্রথমদিকে এই প্রথা নিষিদ্ধ করে হিন্দু সম্প্রদায়কে ক্ষিপ্ত করতে চায়নি।
আন্দোলন সংগঠন : সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম রাজা রামমোহন রায় শক্তিশালী প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু করেন। তিনি লোকশিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করে হিন্দুসমাজ থেকে এই কুপ্রথার অবসান ঘটানোর চেষ্টা চালান।
শাস্ত্রীয় প্রমাণ : রক্ষণশীল হিন্দুরা সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে রামমোহন রায়ের আন্দোলনে ক্ষুদ্ধ হলে তিনি ‘মনুসংহিতা-সহ বিভিন্ন হিন্দুশাস্ত্র ও ধর্মগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, সতীদাহ প্রথা হিন্দুধর্ম ও শাস্ত্রবিরোধী। তিনি এই বিষয়ে সম্বাদ কৌমুদী পত্রিকায় নিয়মিত প্রবন্ধ প্রকাশ করেন।
সচেতনতা বৃদ্ধি : বিভিন্ন পুস্তিকা প্রকাশের মাধ্যমে সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে রামমোহন সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। তিনি ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে একটি বাংলা পুস্তিকা প্রকাশ করে শিক্ষিত মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি এই বিষয়ে পরবর্তীকালে আরও কয়েকটি বাংলা ও ইংরেজি পুস্তিকা প্রকাশ করেন।
নিষিদ্ধকরণ : রামমোহন সতীদাহ প্রথা বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়ে বাংলার বিশিষ্ট নাগরিকদের স্বাক্ষর-সংবলিত একটি আবেদনপত্র তৎকালীন ভারতের বড়োলাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক-এর কাছে জমা দেন। এই আবেদনে সাড়া দিয়ে বেন্টিঙ্ক ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর১৭নং রেগুলেশন আইন পাস করে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেন।
উপসংহার : লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক কর্তৃক সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধকরণ আইনকে রামমোহন রায় অকুণ্ঠ সমর্থন জানান। এরপর দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা এইবর্বর নিষ্ঠুর প্রথার অবসান ঘটে।
৫.২ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাচিন্তা ও শান্তিনিকেতন ভাবনার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তরঃ
ভূমিকা : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঔপনিবেশিক শিক্ষাধারার সমালােচনা করে শান্তিনিকেতনে ‘ব্ৰহ্মচর্যাশ্রম’ নামে এক বিদ্যালয় স্থাপন (১৯০১ খ্রি.) করে এক বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থার সূচনা করেন।
শান্তিনিকেতন ভাবনা : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক শান্তিনিকেতনে ব্ৰহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য গুলি হল –
(১) প্রকৃতি, মানুষ ও শিক্ষার মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে এক নতুন ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
(২) আবাসিক ব্ৰহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রাচীন ভারতের ব্ৰহ্মচর্যাশ্রমের গুরু-শিষ্য সম্পর্ককে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
শিক্ষা ব্যবস্থা : রবীন্দ্রনাথ তাঁর এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শিখন বা শিক্ষণ সম্পর্কেনিম্নলিখিত বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেন।
(১) তিন নীতি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই নতুন ধরনের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রকৃতির সঙ্গে সংযােগ রেখে মনের চর্চার ওপর গুরুত্ব দেন এবং অবাধ স্বাধীনতা, অবাধ চলাফেরা ও খেলাধুলা – এই তিনটি নীতি প্রয়ােগ করেন।
(২) সাংস্কৃতিক বিষয় : প্রকৃতি থেকে আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষার পাশাপাশি কলা, নৃত্য, নাটক, সংগীত-অঙ্কন প্রভৃতি উন্নত সাংস্কৃতিক বিষয়গুলিকে পাঠক্রমে রাখা হয়।
(৩) কারিগরি শিক্ষা : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার এই বিদ্যালয়ে একইসঙ্গে ব্যক্তি ও সমষ্টির শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেন। তাছাড়া কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থাও করা হয়।
উপসংহার : উপরােক্ত আলােচনা থেকে দেখা যায় যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রচলিত শ্রেণিকক্ষের চার দেওয়ালের পরিবর্তে প্রকৃতি, মানুষ ও শিক্ষার মধ্যে সমন্বয়সাধন করেন।
৫.৩ বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তরঃ
ভূমিকা : ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতের দলিত সম্প্রদায় তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য যে সমস্ত আন্দোলনগুলি শুরু করে বাংলার ‘নমঃশূদ্র’ বা ‘চণ্ডাল’ বা ‘মতুয়া’ আন্দোলন (১৮৭২-১৯৪৭ খ্রি.) ছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
বসবাস : নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল পূর্ববঙ্গের মূলত ঢাকা, খুলনা, ময়মনসিংহ, যশোহর, ফরিদপুর বাখরগঞ্জ প্রভৃতি জেলায়।
আন্দোলনের কারণ—
(i) নমঃশূদ্রদের অর্থনৈতিক অবস্থা : নমঃশূদ্রদের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষিকাজ। পূর্ববঙ্গের হিন্দু কৃষকদের প্রায় ৯০ শতাংশ ছিল নমঃশূদ্র শ্রেণিভূক্ত অথচ নমঃশূদ্র অধ্যুষিত এলাকায় উচ্চবর্ণের হিন্দু ও সৈয়দ মুসলমানদের একচেটিয়া অধিকার ছিল। তাঁতবোনা, মাছধরা, নৌকা চালানো, অপরের জমি ও বাড়িতে দিন মজুরের কাজ করে তারা কোনোরকমে জীবনযাপন করত। দারিদ্র্য ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী।
(ii) নমঃশূদ্রদের সামাজিক অবস্থা : উচ্চবর্ণের হিন্দুরা নমঃশূদ্রদের অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখত। তাদের বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন,বঞ্চনার শিকার হতে হত। সমাজের সকলের সঙ্গে শিক্ষালাভ, চিকিৎসা পরিষেবা লাভ ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ প্রভৃতি থেকে এরা ছিল বঞ্চিত।
(iii) ধর্মপ্রচারকের নেতৃত্ব : নমঃশূদ্রদের ধর্মগুরু ছিলেন শ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর। তিনি ‘মতুয়া’ নামে এক নতুন ধর্ম সম্প্রদায় তৈরি করেন । মতুয়া ধর্মকে কেন্দ্র করে নমঃশূদ্র আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র শ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের সময় এই আন্দোলন আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে নমঃশূদ্র আন্দোলনে নেতৃত্বদান করেন রাজেন্দ্রনাথ মণ্ডল, মুকুন্দবিহারী মল্লিক, বিরাটচন্দ্র মণ্ডল, যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল, প্রমথরঞ্জন ঠাকুর প্রমুখ।
(iv) নমঃশূদ্র আন্দোলনের সূচনা : ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে বাংলার ফরিদপুর ও বাখরগঞ্জ অঞ্চলে নমঃশূদ্র আন্দোলনের সূচনা হয়। ওই অঞ্চলের এক গ্রামের এক বিশিষ্ট নমঃশূদ্রের মায়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে গ্রামের উচ্চ-সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদের নিমন্ত্রণ করলে তারা সেখানে অংশগ্রহণে অস্বীকৃত হয়। নমঃশূদ্ররাও তাদের সঙ্গে সমস্ত রকম সম্পর্ক ছিন্ন করে। যদিও তাদের অবস্থান দীর্ঘস্থায়ী হয়নি তবুও স্বল্পস্থায়ী এই আন্দোলন পরবর্তীকালে বৃহত্তর নমঃশূদ্র আন্দোলনের সূচনা করে।
(v) শ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের ভূমিকা : নমঃশূদ্রদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে প্রথম সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন শ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, শিক্ষার প্রসার ছাড়া নমঃশূদ্রদের সচেতনতা বৃদ্ধি সম্ভব নয়। তাই শিক্ষার বিস্তার, যাত্রাগান, সাপ্তাহিক মুষ্ঠি সংগ্রহ ইত্যাদির মাধ্যমে তিনি নমঃশূদ্রদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করেন।
(vi) সংগঠন স্থাপন : নমঃশূদ্রদের অবস্থার উন্নয়নে ও তাদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য বিভিন্ন সংগঠন গড়ে ওঠে। এগুলির মধ্যে ‘উন্নয়নী সভা’ (১৯০২ খ্রি.), ‘বেঙ্গল নমঃশূদ্র অ্যাসোসিয়েশন’ (১৯১২ খ্রি.), নিখিল বঙ্গ নমঃশূদ্র সমিতি’ (১৯২৬ খ্রি.), ‘বেঙ্গল ডিপ্রেসড ক্লাসেস অ্যাসোসিয়েশন’ (১৯২৬ খ্রি.), ‘অল ইণ্ডিয়া ডিপ্রেসড্ ক্লাসেস অ্যাসোসিয়েশন’ (১৯৩০ খ্রি.) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
(vii) দাবিদাওয়া আদায় : উপরিউক্ত বিভিন্ন সংগঠনগুলির মাধ্যমে নমঃশূদ্ররা নিজেদের দাবিদাওয়াগুলি আদায়ে উদ্যোগী হয়—
(ক) তারা শিক্ষার সুযোগ ও সরকারি চাকরির দাবি করে ও অনেকক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা লাভ করে।
(খ) তারা পৃথক নির্বাচন ও স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিধি বৃদ্ধির দাবি জানায়। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনে বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভায় তাদের একজন প্রতিনিধি মনোনয়নের দাবি স্বীকৃত হয়।
(গ) নিজেদের স্বার্থে তারা ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ‘বঙ্গভঙ্গ’কে সমর্থন করে, আম্বেদকরের ‘পৃথক নির্বাচন’ ও ব্রিটিশ সরকারের সাম্প্রদায়িক বাঁটোযারা নীতিকে সমর্থন জানায়।
(ঘ) নমঃশূদ্ররা উচ্চবর্ণের সংস্কৃতি যেমন উপবীত ধারণ, এগারো দিন অশৌচ পালন ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে।
(ঙ) তাদের দাবির ভিত্তিতে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারিতে চণ্ডাল নামের পরিবর্তে তাদের ‘নমঃশূদ্র’ নামে স্বীকৃতি দান করা হয়।
উপসংহার : বাংলার দলিত আন্দোলনের ইতিহাসে নমঃশূদ্রদের আন্দোলন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আপাতদৃষ্টিতে বঙ্গভঙ্গ ও সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি সমর্থন, দলিতদের পৃথক নির্বাচনের দাবি জাতীয়তা-বিরোধী মনে হতে পারে। তবে তাদের দাবিগুলি ছিল যুক্তিসংগত। দেশভাগের সময় নমঃশূদ্র নেতা যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল পূর্ব পাকিস্তানে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেও প্রমথরঞ্জন ঠাকুরের নেতৃত্বে নমঃশূদ্ররা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় উদ্বাস্তুরূপে বসতি স্থাপন করে। এরপর থেকে নমঃশূদ্র আন্দোলন তার গতি ও শক্তি হারায়। স্বাধীন ভারতে এখনও নমঃশূদ্ররা সামাজিক ও আর্থিক দিক থেকে অবহেলিত। শুধু আইনের দ্বারা নয়, এর প্রতিকারে প্রয়োজন শিক্ষার প্রসার ও উদার মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি।
(কেবলমাত্র বহিরাগত পরীক্ষার্থীদের জন্য)
বিভাগ ‘চ’
৬। ৬.১ একটি পূর্ণ বাক্যে উত্তর দাও (যে কোনো ৪টি) : ১×৪ = ৪
৬.১.১ ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন ?
উত্তরঃ দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ।
৬.১.২ ‘নীলদর্পণ’ নাটকটি ইংরাজিতে কে অনুবাদ করেন ?
উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
৬.১.৩ এশিয়াটিক সোসাইটি কোন বছর প্রতিষ্ঠিত হয় ?
উত্তরঃ ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে।
৬.১.৪ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য কে ছিলেন ?
উত্তরঃ রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
৬.১.৫ দীপালি সংঘ কে প্রতিষ্ঠা করেন ?
উত্তরঃ লীলা নাগ
৬.১.৬ পুনা চুক্তি (১৯৩২) কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল ?
উত্তরঃ মহাত্মা গান্ধী ও বাবাসাহেব।
৬.২ দুটি বা তিনটি বাক্যে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (যে কোনো তিনটি) : ২×৩=৬
৬.২.১ ‘মেকলে মিনিট’ কী ?
উত্তরঃ জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি টমাস ব্যাবিংটন মেকলে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের দাবি জানিয়ে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ২ ফেব্রুয়ারি বড়োলাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের কাছে একটি প্রস্তাব রাখেন, যা ‘মেকলে মিনিট’ নামে পরিচিত। এই প্রস্তাবে মেকলে বলেন যে, প্রাচ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা খুবই পশ্চাৎপদ। এজন্য এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তিত হওয়া উচিত।
৬.২.২ তিতুমির স্মরণীয় কেন ?
উত্তরঃ তিতুমির ছিলেন বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রধান নেতা। তিনি দরিদ্র ও নির্যাতিত মুসলিমদের নিয়ে অত্যাচারী জমিদার, মহাজন ও নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন এবং বারাসাত বসিরহাটের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘোষণা করেন। শেষপর্যন্ত ব্রিটিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি নিহত হন।
৬.২.৩ পঞ্চানন কর্মকার কে ছিলেন ?
উত্তরঃ বাংলার ছাপাখানার বিকাশে পঞ্চানন কর্মকারের ভূমিকা ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি ছিলেন বাংলা ভাষার ছাপাখানার হরফ নির্মাণের অন্যতম রূপকার। তিনি বাংলা ছাপাখানায় সচল ধাতু হরফের প্রচলন করেছিলেন।
৬.২.৪ ‘ভারতমাতা’ চিত্রটির গুরুত্ব কী ?
উত্তরঃ ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশি আন্দোলনের সময় হিন্দুদের ধনসম্পদের দেবী লক্ষ্মীর অনুকরণে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ‘ভারতমাতা’ চিত্রটি শিক্ষিত ও প্রগতিশীল ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
৬.২.৫ ‘নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি’ (১৯৫০) কেন স্বাক্ষরিত হয় ?
উত্তরঃ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন, উভয় দেশের উদ্বাস্তুদের তাদের মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে দেওয়া, ফিরে যাওয়া উদ্বাস্তুদের পৈতৃক সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়া, অপহৃতা উদ্বাস্তু নারীদের ফিরিয়ে দেওয়া, সংখ্যালঘুদের অধিকার সুনিশ্চিত করা প্রভৃতি উদ্দেশ্যে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
M.P History Question Papers | ||||
---|---|---|---|---|
2017 | 2018 | 2019 | 2020 | 2021 |
2022 | 2023 | 2024 | 2025 | 2026 |