মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র ২০২৫ পশ্চিমবঙ্গ বোর্ড | Madhyamik History Question Paper 2025 with Answers wbbse

মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র ২০২৫ পশ্চিমবঙ্গ বোর্ড | Madhyamik History Question Paper 2025 with Answers West Bengal Board

2025 History Question Paper with answers for Madhyamik students of West Bengal Board of Secondary Education. Question and Answers of the question paper are given below.
মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের অধীন মাধ্যমিক ছাত্র ছাত্রীদের জন্য ২০২৫ সালের উত্তরসহ ইতিহাস বিষয়ের প্রশ্নপত্র।

📌মাধ্যমিক বিগত বছরের প্রশ্নপত্র সমস্ত বিষয় | Madhyamik Previous Years Question Paper All Subject CLICK HERE

2025
HISTORY

Time : 3 Hours 15 Minutes

(First 15 minutes for reading the question paper only)

Full Marks : 90 For Regular Candidates
Full Marks : 100 For External Candidates

Special credit will be given for answers which are brief and to the point. Marks will be deducted for spelling mistakes, untidiness and bad handwriting.

[ ‘ক’ বিভাগ থেকে ‘ঙ’ বিভাগ পর্যন্ত প্রদত্ত প্রশ্ন নিয়মিত ও বহিরাগত সব পরীক্ষার্থীদের জন্য।
‘চ’ বিভাগে প্রদত্ত প্রশ্ন শুধুমাত্র বহিরাগত পরীক্ষার্থীদের জন্য। ]

[ ‘ক’ বিভাগে সকল প্রশ্ন আবশ্যিক। অন্য বিভাগে বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়। ‘খ’ বিভাগে কেবলমাত্র দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীরা বিকল্প প্রশ্নের নির্দেশ অনুযায়ী উত্তর লিখবে। অন্য সকলে মানচিত্র চিহ্নিত করবে। ]

বিভাগ – ক

১। সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো : ১×২০=২০

১.১ ‘বঙ্গলক্ষ্মীর ব্রতকথা’ রচনা করেন
(ক) সরলাদেবী চৌধুরানি (খ) রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী
(গ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (ঘ) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর

উত্তরঃ (খ) রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী

১.২ ‘জয়শ্রী’ পত্রিকার সম্পাদিকা ছিলেন—
(ক) লীলা নাগ (খ) কল্পনা দত্ত (গ) বাসন্তী দেবী
(ঘ) লীলাবতী মিত্র

উত্তরঃ (ক) লীলা নাগ

১.৩ সূর্যসেন শহীদ হন—
(ক) ১৯৩০ খ্রিঃ (খ) ১৯৩২ খ্রিঃ (গ) ১৯৩৩ খ্রিঃ
(ঘ) ১৯৩৪ খ্রিঃ

উত্তরঃ (ঘ) ১৯৩৪ খ্রিঃ

১.৪ ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারতীয় স্বাধীনতা আইন পাস ক—
(ক) ৪ঠা জুন, ১৯৪৬ খ্রিঃ
(খ) ১৮ই জুলাই, ১৯৪৭ খ্রিঃ
(গ) ১৪ই আগস্ট, ১৯৪৭ খ্রিঃ
(ঘ) ১৫ই আগস্ট, ১৯৪৭ খ্রিঃ

উত্তরঃ (খ) ১৮ই জুলাই, ১৯৪৭ খ্রিঃ

১.৫ রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের (১৯৫৩) সভাপতি ছিল—
(ক) এস. কে. দার (খ) বল্লভভাই প্যাটেল
(গ) ভি. পি. মেনন (ঘ) ফজল আলি

উত্তরঃ (ঘ) ফজল আলি

১.৬ হালহেড রচিত ‘এ গ্রামার অফ দি বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’ বইটি ছাপা হয়েছিল—
(ক) কলকাতায় (খ) শ্রীরামপুরে (গ) হুগলিতে (ঘ) ঢাকায়

উত্তরঃ (গ) হুগলিতে।

১.৭ মাসিক ‘সন্দেশ’ পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয়
(ক) ১৮৯৬ খ্রিঃ (খ) ১৯০৪ খ্রিঃ (গ) ১৯০৭ খ্রিঃ
(ঘ) ১৯১৩ খ্রিঃ

উত্তরঃ (ঘ) ১৯১৩ খ্রিঃ

১.৮ ‘কৃষক প্রজাপার্টি’ গঠন করেছিলেন—
(ক) বাবা রামচন্দ্র (খ) স্বামী সহজানন্দ
(গ) মৌলানা ভাসানী (ঘ) ফজলুল হক

উত্তরঃ (ঘ) ফজলুল হক

১.৯ স্বামী বিদ্যানন্দ বিহারে কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন
(ক) স্বদেশি আন্দোলনে
(খ) অসহযোগ আন্দোলনে
(গ) আইন-অমান্য আন্দোলনে
(ঘ) ভারত-ছাড়ো আন্দোলনে

উত্তরঃ (খ) অসহযোগ আন্দোলনে

১.১০ বাংলার শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন—
(ক) লালা লাজপত রায়
(খ) অশ্বিনীকুমার দত্ত
(গ) অশ্বিনীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
(ঘ) অরবিন্দ ঘোষ

উত্তরঃ (গ) অশ্বিনীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

১.১১ কোল বিদ্রোহ (১৮৩১-১৮৩২) দমনে কোম্পানির সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেন
(ক) ক্যাপ্টেন রজার্স
(খ) ক্যাপ্টেন স্কট
(গ) ক্যাপ্টেন উইল কিনসন
(ঘ) মেজর উইলিয়ামস্

উত্তরঃ (গ) ক্যাপ্টেন উইল কিনসন

১.১২ ‘বাংলার নানাসাহেব’ নামে পরিচিত ছিলেন
(ক) হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়
(খ) কাদের মোল্লা
(গ) রেভাঃ জেমস লঙ্
(ঘ) রামরতন মল্লিক

উত্তরঃ (ঘ) রামরতন মল্লিক

১.১৩ ঔপনিবেশিক ভারতের প্রথম ‘রাজপ্রতিনিধি’ ছিলেন—
(ক) ওয়ারেন হেষ্টিংস্ (খ) লর্ড বেন্টিঙ্ক (গ) লর্ড ক্যানিং
(ঘ) লর্ড মাউন্টব্যাটেন

উত্তরঃ (গ) লর্ড ক্যানিং

১.১৪ বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন—
(ক) রামমোহন রায় (খ) রাজা রাধাকান্ত দেব
(গ) কালীনাথ রায়চৌধুরী (ঘ) মদনমোহন তর্কালঙ্কার

উত্তরঃ (গ) কালীনাথ রায়চৌধুরী

১.১৫ ‘বিরূপবজ্র’ গ্রন্থটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন—
(ক) গণেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(খ) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) উপেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরী
(ঘ) গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

উত্তরঃ (গ) উপেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরী

১.১৬ প্রথম বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রটি হল—
(ক) সম্বাদ ভাস্কর (খ) সংবাদ কৌমুদি
(গ) সংবাদ প্রভাকর (ঘ) সমাচার দর্পণ

উত্তরঃ (গ) সংবাদ প্রভাকর

১.১৭’বঙ্গদর্শন’ প্রথম প্রকাশিত হয়
(ক) ১৭৮০ খ্রিঃ (খ) ১৮১৫ খ্রিঃ (গ) ১৮৬৩ খ্রিঃ
(ঘ) ১৮৭২ খ্রিঃ

উত্তরঃ (ঘ) ১৮৭২ খ্রিঃ

১.১৮ হিন্দু মেট্রোপলিটান কলেজ (১৮৫৩ খ্রিঃ) প্রতিষ্ঠা করেন—
(ক) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (খ) রাধাকান্ত দেব
(গ) বিদ্যাসাগর (ঘ) মতিলাল শীল

উত্তরঃ (গ) বিদ্যাসাগর

১.১৯ কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য জমিদান করেন—
(ক) দ্বারকানাথ ঠাকুর(খ) বৈষ্ণনবচরণ শেঠ
(গ) ডেভিড হেয়ার (ঘ) মতিলাল শীল

উত্তরঃ (ঘ) মতিলাল শীল

১.২০ ‘দ্য রিফর্মার’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন
(ক) রামমোহন রায় (খ) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) কেশবচন্দ্র সেন (ঘ) প্রসন্ন কুমার ঠাকুর

উত্তরঃ (ঘ) প্রসন্ন কুমার ঠাকুর

বিভাগ ‘খ’

২। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (প্রতিটি উপবিভাগ থেকে অন্ততঃ ১টি করে, মোট ১৬টি প্রশ্নের উত্তর দাও): ১×১৬=১৬

উপবিভাগ: ২.১

একটি বাক্যে উত্তর দাও: ১×৪=৪

(২.১.১) একটি ‘স্থানীয় ইতিহাস’ গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তরঃ রাজতরঙ্গীনি

(২.১.২) কোন্ বছর ভারতে প্রথম রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা শুরু হয়?

উত্তরঃ ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে।

(২.১.৩) কোন্ বছর কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ?

উত্তরঃ ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে।

(২.১.৪) কোন্ বিদ্রোহে সুইমুণ্ডা নেতৃত্ব দেন?

উত্তরঃ কোলবিদ্রোহ

উপবিভাগ : ২.২

‘ক’ স্তম্ভের সঙ্গে ‘খ’ স্তম্ভ মেলাও :১×৪=৪

‘ক’ স্তম্ভ ‘খ’ স্তম্ভ
(২.২.১) রেভাঃ কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় (১) কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল
(২.২.২) বিদ্যাসাগর (২) ভারতসভা
(২.২.৩) মিনু মাসানি (৩) বিপ্লবী কার্যকলাপ
(২.২.৪) কল্পনা দত্ত (৪) নারী শিক্ষা

উত্তরঃ

(২.২.১) রেভাঃ কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় (২)
(২.২.২) বিদ্যাসাগর (৪)
(২.২.৩) মিনু মাসানি (১)
(২.২.৪) কল্পনা দত্ত (৩)

উপবিভাগ: ২.৩

ঠিক বা ভুল নির্ণয় করো : ১×৪=৪

(২.৩.১) স্বামী সহজানন্দ ছিলেন বারদৌলি আন্দোলনের অন্যতম নেতা।

উত্তরঃ ভুল।

(২.৩.২) নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ।

উত্তরঃ ভুল।

(২.৩.৩) কৃষ্ণকুমার মিত্র ছিলেন অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটির সভাপতি।

উত্তরঃ ভুল।

(২.৩.৪) অল ইন্ডিয়া সিডিউলড কাস্ট ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করেন বি. আর. আম্বেদকর।

উত্তরঃ ঠিক

উপবিভাগ: ২.৪

প্রদত্ত ভারতবর্ষের রেখা মানচিত্রে নিম্নলিখিত স্থানগুলি চিহ্নিত করো ও নামাঙ্কিত করো : ১×৪=৪

(২.৪.১) কোল বিদ্রোহের (১৮৩১-১৮৩২) এলাকা।

(২.৪.২) সাঁওতাল বিদ্রোহের (১৮৫৫-১৮৫৬) এলাকা।

(২.৪.৩) মহাবিদ্রোহের (১৮৫৭) একটি কেন্দ্র, লক্ষ্ণৌ।

(২.৪.৪) মহাবিদ্রোহের (১৮৫৭) একটি কেন্দ্র, ঝাঁসি।

অথবা

(কেবলমাত্র দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীদের জন্য)

শূন্যস্থান পূরণ করো: ১×৪=৪

(২.৪.১) হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন ____________।

(২.৪.২) সিধু ও কানু ছিলেন __________
বিদ্রোহের নেতা।

(২.৪.৩) ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থটির লেখক ছিলেন ____________।

(২.৪.৪) ‘ভারতসভা’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ____________ খ্রিঃ।

উপবিভাগ: ২.৫

নিম্নলিখিত বিবৃতিগুলির সঙ্গে সঠিক ব্যাখ্যাটি নির্বাচন করো: ১×৪-৪

(২.৫.১) বিবৃতি: ‘হিন্দু পেট্রিয়ট’ ছিল উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি ইংরেজি সাপ্তাহিক পত্রিকা।

ব্যাখ্যা ১: এটি ছিল, হিন্দু বিপ্লবীদের একটি মুখপত্র।

ব্যাখ্যা ২: এটি ছিল, নব্যহিন্দু আন্দোলনের একটি মুখপত্র।

ব্যাখ্যা ৩: এটি ছিল, একটি স্বাধীন, সাহসী ও প্রগতিশীল সংবাদপত্র।

উত্তরঃ ব্যাখ্যা ৩: এটি ছিল, একটি স্বাধীন, সাহসী ও প্রগতিশীল সংবাদপত্র।

২.৫.২ বিবৃতি: উনিশ শতকের বাংলায় একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল নব্যবঙ্গ দলের আবির্ভাব।

ব্যাখ্যা ১: উনিশ শতকের বাংলায় ইংরেজি শিক্ষিত ছাত্ররা নব্যবঙ্গ নামে পরিচিত ছিল।

ব্যাখ্যা ২: এটি ছিল, ডিরোজিও কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কলকাতার তরুন ছাত্রদের একটি দল।

ব্যাখ্যা ৩: হিন্দু কলেজের শিক্ষক ডিরোজিও-র ছাত্রগণ যৌথভাবে ‘নব্যবঙ্গ’ নামে পরিচিত ছিল।

উত্তরঃ ব্যাখ্যা ২: এটি ছিল, ডিরোজিও কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কলকাতার তরুন ছাত্রদের একটি দল।

(২.৫.৩) বিবৃতি: উনিশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলার প্রকাশকগণ তাদের পুস্তক বিক্রয়ের জন্য ফেরিওয়ালাদের উপর নির্ভরশীল ছিলেন।

ব্যাখ্যা ১: ঐ সময়ে পুস্তক ব্যবসাকে সম্মানীয় পেশারূপে গণ্য করা হত না।

ব্যাখ্যা ২: ঐ সময়ে বইয়ের দোকানের সংখ্যা ছিল খুবই সীমিত

ব্যাখ্যা ৩: ঐ সময়ে ফেরিওয়ালাদের মাধ্যমে অধিক সংখ্যক মানুষের কাছে বই পৌঁছানো ছিল সহজ এবং সুলভ।

উত্তরঃ ব্যাখ্যা ৩: ঐ সময়ে ফেরিওয়ালাদের মাধ্যমে অধিক সংখ্যক মানুষের কাছে বই পৌঁছানো ছিল সহজ এবং সুলভ।

(২.৫.৪) বিবৃতি: ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারী মাসে জুনাগড় রাজ্যটি ভারতীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়।

ব্যাখ্যা ১: জুনাগড় রাজ্যটির শাসক ভারতীয় ইউনিয়নে স্বেচ্ছায় যোগদান করেন।

ব্যাখ্যা ২: ভারতীয় সেনাবাহিনী জুনাগড় রাজ্যটি আক্রমণ ও দখল করে।

ব্যাখ্যা ৩: জুনাগড় রাজ্যটির জনগণ গণভোটের মাধ্যমে ভারতীয় ইউনিয়নে যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

উত্তরঃ ব্যাখ্যা ৩: জুনাগড় রাজ্যটির জনগণ গণভোটের মাধ্যমে ভারতীয় ইউনিয়নে যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

বিভাগ – ‘গ’

৩। দু’টি অথবা তিনটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (যে কোনো ১১টি) : ২×১১=২২

৩.১ বারাসাত বিদ্রোহ ব্যর্থ হ’ল কেন ?

উত্তরঃ বারাসাত বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার প্রধান কারণ ছিল নেতৃত্বের অভাব ও ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর দমননীতি। এছাড়াও, বিদ্রোহীদের মধ্যে ঐক্য ও সংগঠনের অভাব, সামরিক দুর্বলতা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা অভাব এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সমর্থনও সীমিত ছিল।

৩.২ সাঁওতাল বিদ্রোহের (১৮৫৫-১৮৫৬) গুরুত্ব কী ?

উত্তরঃ সাঁওতাল বিদ্রোহ ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের প্রথম বৃহৎ সংঘবদ্ধ আন্দোলন ছিল। এই বিদ্রোহ ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি নড়বড়ে করে দিয়েছিল এবং পরবর্তীতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রভাব ফেলেছিল।

৩.৩ ল্যান্ডহোল্ডার্স সোসাইটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তরঃ ল্যান্ডহোল্ডার্স সোসাইটি (১৮৩৮) প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল জমিদারদের স্বার্থরক্ষা এবং ব্রিটিশ সরকারের নীতি সম্পর্কে মতামত প্রদান। কৃষি এবং গ্রাম উন্নয়নের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা ও সমাধানের মঞ্চ প্রদান করা।

৩.৪ সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় স্মরণীয় কেন ?

উত্তরঃ সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় স্মরণীয় কারণ তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী, সমাজ সংস্কারক ও জাতীয়তাবাদী নেতা। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এবং ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে প্রথম আইসিএস অফিসার হিসেবে চাকরিচ্যুত হন। এছাড়া, তিনি স্বদেশী আন্দোলন ও জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং “জাতীয়তাবাদের জনক” নামে পরিচিত।

৩.৫ ‘অলিন্দ যুদ্ধ’ বলতে কী বোঝায় ?

উত্তরঃ “অলিন্দ যুদ্ধ” বলতে রাইটার্স বিল্ডিং-এর অলিন্দে অর্থাৎ বারান্দায় সংঘটিত বন্দুক যুদ্ধকে বোঝায়। এই যুদ্ধটি ১৯৩০ সালের ৮ই ডিসেম্বর বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত নামক তিনজন বিপ্লবী যুবকের সাথে তৎকালীন ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনীর মধ্যে হয়েছিল। এই যুদ্ধে বিপ্লবী তিনজন ব্রিটিশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল সিম্পসনকে হত্যা করে, এরপর পুলিশের সাথে তাদের বন্দুক যুদ্ধ হয়।

৩.৬ কী উদ্দেশ্যে ‘নারী কর্মমন্দির’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ?

উত্তরঃ ‘নারী কর্মমন্দির’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল চরকা ও খদ্দর জনপ্রিয় করার উদ্দেশ্যে। তাছাড়া এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ছিল নারীদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা। প্রতিষ্ঠানটি ১৯২১ সালে ঊর্মিলা দেবী প্রতিষ্ঠা করেন।

৩.৭ শেখ আবদুল্লা কে ছিলেন ?

উত্তরঃ শেখ আবদুল্লা ছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের একজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা এবং “কাশ্মীরের শের” নামে পরিচিত। তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া, তিনি জাতীয় কনফারেন্স দলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এবং কাশ্মীরের জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য দীর্ঘ সময় আন্দোলন চালিয়েছিলেন।

৩.৮ ‘দার কমিশন’ (১৯৪৮) কেন গঠিত হয়েছিল ?

উত্তরঃ ১৯৪৮ সালে ‘দার কমিশন’ গঠিত হয় ভারতে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে রাজস্ব বণ্টনের নীতি নির্ধারণের জন্য। স্বাধীনতার পর নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরির প্রয়োজন হয়েছিল, তাই এই কমিশন রাজস্ব ভাগাভাগি, কর ব্যবস্থাপনা ও রাজ্যগুলোর আর্থিক সাহায্যের নীতি নির্ধারণে সুপারিশ প্রদান করে।

৩.৯ মানুষের খাদ্যাভাসের উপর ভৌগোলিক পরিবেশের প্রভাব কতটা ?

উত্তরঃ মানুষের খাদ্যাভাস ভৌগোলিক পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আবহাওয়া, মাটি, জলবায়ু ও প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাপ্যতা খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেমন, উত্তর ভারতে গমভিত্তিক খাদ্য বেশি প্রচলিত, আর দক্ষিণ ভারতে ভাত প্রধান খাদ্য।

৩.১০ আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার উপাদানরূপে বিপিনচন্দ্র পালের আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘সত্তরবৎসর’ এর গুরুত্ব কী ?

উত্তরঃ বিপিনচন্দ্র পালের আত্মজীবনী ‘সত্তরবৎসর’ আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বইটিতে বিপিনচন্দ্র পালের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়েছে, যা ঔপনিবেশিক ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বুঝতে সহায়ক। এটি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, স্বদেশী আন্দোলন এবং জাতীয় কংগ্রেসের বিবর্তন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে, যা গবেষকদের জন্য মূল্যবান দলিল।

৩.১১ হরিনাথ মজুমদার স্মরণীয় কেন ?

উত্তরঃ হরিনাথ মজুমদার স্মরণীয় কারণ তিনি একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক, সমাজসংস্কারক এবং প্রজাদরদি ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি ১৮৩৩ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’ নামের পত্রিকা সম্পাদনা করেন। এই পত্রিকায় তিনি সরকার ও জমিদারদের শোষণ এবং গ্রামবাংলায় শিক্ষার প্রসারের পক্ষে প্রচার চালান। তার স্মৃতিতে কুমারখালীতে একটি স্মৃতি জাদুঘর স্থাপিত হয়েছে।

৩.১২ লর্ড হার্ডিঞ্জ এর শিক্ষানীতির (১৮৪৪) গুরুত্ব কী ?

উত্তরঃ লর্ড হার্ডিঞ্জের ১৮৪৪ সালের শিক্ষানীতি অনুযায়ী সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে শিক্ষিত ভারতীয়দের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, যা ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই নীতির ফলে ভারতীয়দের মধ্যে আধুনিক শিক্ষা গ্রহণের আগ্রহ বাড়ে এবং প্রশাসনিক কাজে ইংরেজি শিক্ষিত কর্মী পাওয়া সহজ হয়।

৩.১৩ বাংলা ছাপাখানার বিকাশে সুরেশচন্দ্র মজুমদার-এর অবদান কী ছিল?

উত্তরঃ সুরেশচন্দ্র মজুমদারের বাংলা ছাপাখানার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হলো— তিনি ১৮৮৩ সালে ‘সন্দেশ’ পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন, যা বাংলা শিশু-সাহিত্য ও ছাপাখানার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উন্নত মুদ্রণপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলা সাহিত্যকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সাহায্য করেন, যা বাংলা প্রকাশনা জগতকে সমৃদ্ধ করে।

৩.১৪ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কী উদ্দেশ্যে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শিক্ষার একটি নতুন ধারার প্রচলনের উদ্দেশ্যে। তিনি চেয়েছিলেন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের জ্ঞান ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে মুক্ত পরিবেশে শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করতে, যেখানে শিক্ষার্থীরা প্রকৃতির সান্নিধ্যে থেকে সৃজনশীল ও মৌলিক চিন্তাশক্তি অর্জন করতে পারে।

৩.১৫ বাংলায় কৃষক আন্দোলনে বীরেন্দ্রনাথ শাসমল কীরূপ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন ?

উত্তরঃ বীরেন্দ্রনাথ শাসমল বাংলার কৃষক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি চাষিদের অধিকার রক্ষায় সক্রিয় ছিলেন এবং তাদের জমিদার ও ব্রিটিশ শাসকদের শোষণের বিরুদ্ধে সংগঠিত করেন। বিশেষ করে তেভাগা আন্দোলন ও নোয়াখালি কৃষক আন্দোলনে তার নেতৃত্ব কৃষকদের ন্যায়সংগত দাবি আদায়ে সহায়ক হয়েছিল।

৩.১৬ ‘মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা’টি কী ?

উত্তরঃ মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা ছিল ব্রিটিশ সরকারের দায়ের করা একটি রাজনৈতিক মামলা (১৯২৯), যেখানে কমিউনিস্ট নেতা ও শ্রমিক আন্দোলনের কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ শাসন উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়। এই মামলায় মুজফফর আহমদ, এস.এ. ডাঙ্গে, শ্রীরাম শর্মা প্রমুখ গ্রেফতার হন, যা ভারতের শ্রমিক আন্দোলন দমনের একটি প্রচেষ্টা ছিল।

বিভাগ ‘ঘ’

৪। সাত বা আটটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও। প্রতিটি উপবিভাগ থেকে অন্ততঃ ১টি করে মোট ৬টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। ৪×৬=২৪

উপবিভাগ: ঘ.১

৪.১ দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির বিষয়ে সর্দার প্যাটেলের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ মুণ্ডা বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ শাসন ও জমিদারি শোষণের বিরুদ্ধে এক গুরুত্বপূর্ণ উপজাতীয় আন্দোলন, যা বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছিল। এই বিদ্রোহের গুরুত্ব নিম্নলিখিত দিক থেকে বিশ্লেষণ করা যায়—

(১) ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ : মুণ্ডা জনগোষ্ঠী ব্রিটিশ প্রশাসনের জবরদস্তি, জমিদারদের অত্যাচার ও মহাজনদের সুদখোর নীতির বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়েছিল। এটি ব্রিটিশ বিরোধী উপজাতীয় প্রতিরোধের অন্যতম দৃষ্টান্ত।

(২) উপজাতীয় ঐক্যের জন্ম : বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে বিভিন্ন উপজাতীয় গোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, যা পরবর্তী উপজাতীয় আন্দোলনগুলোর অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।

(৩) ধর্মীয় ও সামাজিক পুনর্জাগরণ : বিদ্রোহ কেবল রাজনৈতিক ছিল না, এটি একটি সামাজিক ও ধর্মীয় পুনর্জাগরণও ছিল। বিরসা মুণ্ডা তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে সামাজিক সংস্কার আনতে চেয়েছিলেন এবং আদিবাসী সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন।

(৪) ব্রিটিশ প্রশাসনিক পরিবর্তন : বিদ্রোহ দমন করলেও ব্রিটিশ সরকার উপজাতীয়দের জমির অধিকার রক্ষায় কিছু ব্যবস্থা নেয়, যেমন– ‘ছোটনাগপুর টেন্যান্সি অ্যাক্ট, ১৯০৮’, যা উপজাতীয়দের জমি সুরক্ষিত রাখে।

(৫) ভবিষ্যৎ সংগ্রামের অনুপ্রেরণা : মুণ্ডা বিদ্রোহ পরবর্তী কালে অন্যান্য উপজাতীয় বিদ্রোহ এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাথমিক পর্যায়ের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।

মুণ্ডা বিদ্রোহ শুধুমাত্র একটি উপজাতীয় আন্দোলনই ছিল না, এটি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিরোধের অন্যতম প্রধান দৃষ্টান্ত, যা ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

৪.২ ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার কারণ কী ?

উত্তরঃ নীলবিদ্রোহ (১৮৫৯-১৮৬০) ছিল বাংলার কৃষকদের দ্বারা পরিচালিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিদ্রোহ, যা ইংরেজ নীলকরদের শোষণের বিরুদ্ধে সংঘটিত হয়েছিল। শিক্ষিত বাঙালি সমাজ এই বিদ্রোহে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে, যা নিম্নলিখিতভাবে বিশ্লেষণ করা যায়—

(১) নীলচাষের শোষণের বিরোধিতা : বিদ্রোহের সময় শিক্ষিত বাঙালি সমাজ কৃষকদের প্রতি সহানুভূতি দেখায় এবং নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।

(২) সাহিত্য ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে প্রচার : বিদ্যাসাগর, আকশয় কুমার দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র প্রমুখ লেখক ও সমাজ সংস্কারক নীলকরদের অত্যাচার সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে সাহিত্য রচনা করেন। দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটক নীলচাষিদের দুর্দশা তুলে ধরে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

(৩) সংবাদপত্রের ভূমিকা : হিন্দু প্যাট্রিয়ট, সোমপ্রকাশ, অমৃতবাজার পত্রিকা প্রভৃতি পত্রিকায় নীলচাষিদের দুঃখ-দুর্দশার খবর প্রকাশিত হয়, যা জনমত গঠনে সাহায্য করে।

(৪) আইনগত সহায়তা : কিছু শিক্ষিত বাঙালি আইনজীবী কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের পক্ষে মামলা লড়েন এবং ব্রিটিশ সরকারের কাছে নীলকরদের অত্যাচারের বিচার দাবি করেন।

(৫) সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি : শিক্ষিত সমাজের প্রতিবাদ ও প্রচারের ফলে ব্রিটিশ সরকার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখে এবং ১৮৬১ সালে ‘নীল কমিশন’ গঠন করে, যা নীলচাষ প্রথার অবসানে সহায়ক হয়।

উপসংহারঃ শিক্ষিত বাঙালি সমাজ নীলবিদ্রোহে সরাসরি অংশ না নিলেও তাদের লেখনী, সংবাদপত্র ও আইনগত সহায়তার মাধ্যমে কৃষকদের প্রতি সহমর্মিতা দেখায় এবং নীলকরদের শোষণের অবসানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উপবিভাগ: ঘ.২

৪.৩ বাংলায় ছাপাখানার বিকাশে শ্রীরামপুর মিশনারীদের অবদান বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ যানবাহন-যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাস সভ্যতার বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এটি সমাজের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করেছে। যানবাহন ব্যবস্থা মানুষের গতিশীলতা বাড়িয়েছে, যা বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে বাণিজ্য, সংস্কৃতি এবং ধারণার আদান-প্রদানকে সহজতর করেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা, যেমন টেলিগ্রাফ, টেলিফোন এবং ইন্টারনেট, তথ্য আদান-প্রদানের গতি বৃদ্ধি করেছে, যা আধুনিক সভ্যতার প্রসারে অবদান রেখেছে।

যানবাহন-যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব নিম্নরূপ—

(১) অর্থনৈতিক বিকাশ : এটি বাণিজ্যকে সহজতর করেছে, যা অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।

(২) সাংস্কৃতিক বিনিময় : বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে বিনিময় ঘটেছে, যা সামাজিক বৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করেছে।

(৩) রাজনৈতিক একীকরণ : দূরবর্তী অঞ্চলগুলিকে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের সাথে সংযুক্ত করেছে, যা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় অবদান রেখেছে।

(৪) সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান : যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি বিশ্বের বিভিন্ন সমাজ ও সংস্কৃতির মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছে। এর ফলে ভাষা, শিল্প, ধর্ম ও রীতিনীতি বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে, যা বিশ্বায়নকে ত্বরান্বিত করেছে।

(৫) মানব সভ্যতার বিকাশ : কৃষি যুগ থেকে শিল্পবিপ্লব ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগ পর্যন্ত যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সভ্যতার প্রতিটি পর্যায়ে মানুষকে নতুন দিগন্ত উন্মোচনে সহায়তা করেছে। দ্রুতগামী যানবাহন ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা আজকের বিশ্বকে ‘গ্লোবাল ভিলেজ’-এ পরিণত করেছে।

এই ব্যবস্থাগুলি সভ্যতার বিকাশে একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেছে।

৪.৪ বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স’ এর অবদান বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ ‘সোমপ্রকাশ’ (প্রথম প্রকাশ- ১৮৫৮) বাংলা ভাষায় প্রকাশিত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্র ছিল। দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ সম্পাদিত এই পত্রিকাটি উনিশ শতকের বাংলার সমাজ, রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল। এর গুরুত্ব নিম্নলিখিতভাবে বিশ্লেষণ করা—

(১) প্রথম বাঙালি পরিচালিত সংবাদপত্র : ‘সোমপ্রকাশ’ ছিল প্রথম বাংলা সংবাদপত্র, যা কোনো ইউরোপীয় নয়, বরং এক বাঙালি সম্পাদকের অধীনে প্রকাশিত হয়েছিল। এটি বাংলা ভাষায় সংবাদপত্রের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

(২) সামাজিক সংস্কার আন্দোলনের সমর্থন : এই পত্রিকাটি সতীদাহ প্রথা, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, বিধবা বিবাহ নিষেধের মতো কুসংস্কার ও সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল এবং বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল।

(৩) রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি : ‘সোমপ্রকাশ’ ব্রিটিশ প্রশাসনের নানা অন্যায়, যেমন নীলকরদের অত্যাচার ও চরম করনীতির বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করেছিল। নীল বিদ্রোহের সময় কৃষকদের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেছিল, যা পরোক্ষভাবে কৃষক আন্দোলনকে উজ্জীবিত করেছিল।

(৪) ধর্ম ও সমাজ নিয়ে বিতর্ক : পত্রিকাটি ধর্ম ও সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করত। ব্রাহ্মসমাজের আদর্শকে সমর্থন করলেও এটি স্বাধীনভাবে নানা মতের আলোচনা করত, যা চিন্তার মুক্ত পরিবেশ গঠনে সহায়ক হয়েছিল।

(৫) সাংবাদিকতার বিকাশ : ‘সোমপ্রকাশ’ বাংলা সাংবাদিকতার জগতে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। এর নিরপেক্ষ ও তথ্যনির্ভর সাংবাদিকতা পরবর্তী সংবাদপত্রগুলোর জন্য পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠে।

উপসংহারঃ ‘সোমপ্রকাশ’ ছিল বাংলার সমাজ ও রাজনীতির ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রভাবশালী সংবাদপত্র। এটি শুধু সংবাদ প্রচারের মাধ্যমই ছিল না, বরং বাঙালি সমাজের চিন্তাধারা গঠনে ও সামাজিক সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

উপবিভাগ: ঘ.৩

৪.৫ মুণ্ডা বিদ্রোহের (১৮৯৯-১৯০০) গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ স্বাধীনতার সময় ভারত প্রায় ৫৬৫টি দেশীয় রাজ্যে বিভক্ত ছিল, যা ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর স্বাধীন থাকার বা পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ভারতের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একীভূত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর ভূমিকা নিম্নলিখিতভাবে বিশ্লেষণ করা যায়—

(১) রাজনৈতিক কূটনীতি ও “ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাকসেশন” : সর্দার প্যাটেল দেশীয় রাজ্যের শাসকদের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে আলোচনা করে তাদের ভারতভুক্ত হওয়ার জন্য রাজি করান। তিনি দেশীয় রাজ্যগুলিকে “Instrument of Accession” স্বাক্ষর করতে উৎসাহিত করেন, যার মাধ্যমে তারা ভারতের অংশ হয়ে যায়।

(২) শক্তি ও সামরিক হস্তক্ষেপঃ

কিছু রাজা ভারতভুক্ত হতে রাজি হননি, বিশেষ করে—

হায়দরাবাদ : নিজাম স্বাধীন থাকতে চেয়েছিলেন, কিন্তু প্যাটেল ‘অপারেশন পোলো’ (১৯৪৮) পরিচালনার মাধ্যমে সেনাবাহিনী পাঠিয়ে হায়দরাবাদকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করেন।

জুনাগড় : পাকিস্তানে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিলে, জনগণের দাবির ভিত্তিতে ভারত সেনা পাঠিয়ে জুনাগড় দখল করে।

কাশ্মীর : মহারাজা হরি সিং প্রথমে স্বাধীন থাকতে চাইলেও পাকিস্তানি অনুপ্রবেশের মুখে ভারতীয় সেনা পাঠানো হয় এবং কাশ্মীর ভারতভুক্ত হয়।

৪.৬ নীলবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙ্গালী সমাজের ভূমিকা কীরূপ ছিল ?

উত্তরঃ স্বাধীনতার পর ভারতের রাজ্যগুলোর সীমা ব্রিটিশ প্রশাসনিক বিভাজনের ভিত্তিতে নির্ধারিত ছিল, যা ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে ভারসাম্যপূর্ণ ছিল না। ফলে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয় এবং ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের দাবি জোরালো হয়। এর প্রয়োজনীয়তা নিম্নলিখিতভাবে ব্যাখ্যা করা যায়—

(১) প্রশাসনিক কার্যকারিতা বৃদ্ধি : একই ভাষাভাষী মানুষের জন্য প্রশাসনিক কাজ সহজ হয়। যোগাযোগ, নীতিনির্ধারণ ও সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা অধিক কার্যকর হয়, যা উন্নয়নের পথ সুগম করে।

(২) সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত স্বীকৃতি : ভাষা মানুষের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের ফলে বিভিন্ন ভাষার সুরক্ষা ও বিকাশের সুযোগ তৈরি হয় এবং জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষিত হয়।

(৩) গণতন্ত্র ও আঞ্চলিক সম্প্রীতি বজায় রাখা : যদি জনগণের ভাষা অনুযায়ী প্রশাসনিক ব্যবস্থা না হয়, তাহলে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের ফলে আঞ্চলিক বিরোধ কমে এবং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা সুদৃঢ় হয়।

(৪) জাতীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষা : ভাষাগত স্বীকৃতি না দিলে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য অটুট থাকে এবং বিভাজন এড়ানো সম্ভব হয়।

(৫) অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন : একই ভাষাভাষী অঞ্চলে শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সরকারি নীতি বাস্তবায়ন সহজ হয়, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে।

উপসংহারঃ ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠন ভারতের প্রশাসনিক কার্যকারিতা, সাংস্কৃতিক সুরক্ষা ও জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। ১৯৫৬ সালে “States Reorganization Act” অনুযায়ী এই নীতি বাস্তবায়ন করা হয়, যা পরবর্তীকালে ভারতের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বজায় রাখতে সহায়তা করেছে।

উপবিভাগ: ঘ.৪

৪.৭ সভ্যতার বিকাশের ইতিহাসে ‘যানবাহন-যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাস’ করো।

উত্তরঃ ছাপাখানার বিকাশে শ্রীরামপুর মিশনারীদের অবদান—

ভারতে আধুনিক মুদ্রণ ব্যবস্থার প্রসারে শ্রীরামপুর মিশনারীদের বিশেষ ভূমিকা ছিল। ১৮০০ সালে উইলিয়াম কেরি, জোশুয়া মার্শম্যান এবং উইলিয়াম ওয়ার্ড শ্রীরামপুরে একটি মিশনারি স্থাপন করেন, যা পরবর্তীকালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

(১) প্রথম ছাপাখানার স্থাপনঃ শ্রীরামপুর মিশনারিরা ১৮০০ সালে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন, যা বাংলা, সংস্কৃতসহ বিভিন্ন ভাষার বই প্রকাশ করতে সক্ষম ছিল। এটি ভারতের অন্যতম প্রথম মিশনারি প্রেস।

(২) বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনা প্রসারঃ মিশনারিরা বাংলা ভাষায় গ্রন্থ মুদ্রণের উদ্যোগ নেন। উইলিয়াম কেরির নেতৃত্বে ১৮০১ সালে প্রথম বাংলা মুদ্রিত গ্রন্থ “বাইবেল” প্রকাশিত হয়। এছাড়া বাংলা ব্যাকরণ ও অভিধানও প্রকাশিত হয়, যা ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।

(৩) শিক্ষার প্রসার ও সংবাদপত্র প্রকাশঃ শ্রীরামপুর মিশনারিরা বাংলা ভাষার প্রথম সংবাদপত্র “সমাচার দর্পণ” (১৮১৮) প্রকাশ করেন। এটি বাংলা সংবাদপত্রের বিকাশে পথপ্রদর্শক ছিল। এছাড়া বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণেও তাঁরা ভূমিকা রাখেন।

(৪) বহু ভাষায় গ্রন্থ মুদ্রণঃ শুধু বাংলা নয়, শ্রীরামপুর প্রেস থেকে সংস্কৃত, হিন্দি, মারাঠি, ওড়িয়া, তামিলসহ ৪০টিরও বেশি ভাষায় গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এটি ভারতের ভাষাগত ঐতিহ্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

উপসংহারঃ শ্রীরামপুর মিশনারিদের প্রচেষ্টায় বাংলা ভাষার মুদ্রণ ও প্রকাশনার এক নতুন যুগের সূচনা হয়। তাঁরা শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন, যা পরবর্তীকালে নবজাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৪.৮ সংবাদপত্ররূপে ‘সোমপ্রকাশ’ এর গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ ভারতে আধুনিক বিজ্ঞান চর্চার সূচনা ও প্রসারে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স’ (IACS) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৮৭৬ সালে ড. মহেন্দ্রলাল সরকার এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন, যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয়দের মধ্যে বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণার প্রচলন ঘটানো।

(১) বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষার প্রচারঃ IACS-এর অন্যতম লক্ষ্য ছিল মাতৃভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার। সেই সময় কলকাতা ও অন্যান্য অঞ্চলে ইংরেজি ভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষা চালু থাকলেও, সাধারণ মানুষের কাছে তা সহজবোধ্য করে তোলার জন্য বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

(২) গবেষণা ও পরীক্ষাগারের প্রতিষ্ঠাঃ IACS ভারতের প্রথম স্বাধীন বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ছিল। এখানে আধুনিক গবেষণাগার স্থাপন করা হয়, যেখানে ছাত্ররা সরাসরি পরীক্ষাগারে কাজ করার সুযোগ পেত। এটি বাংলায় বিজ্ঞান গবেষণার একটি মাইলফলক সৃষ্টি করে।

(৩) বিজ্ঞানীদের উন্নয়ন ও গবেষণা সুযোগঃ এই প্রতিষ্ঠানেই ভারতের প্রথম নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্র নাথ বসু এবং সি. ভি. রমন তাঁদের গবেষণা করেছিলেন। বিশেষত, সি. ভি. রমনের ‘রমন ইফেক্ট’ (১৯২৮) এই গবেষণা কেন্দ্র থেকেই প্রকাশিত হয়, যা ভারতীয় বিজ্ঞানকে বিশ্বদরবারে পরিচিত করে।

(৪) বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানগ্রন্থ রচনা ও প্রসারঃ IACS থেকে বাংলায় বিভিন্ন বিজ্ঞান গ্রন্থ ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা তৈরিতে সাহায্য করে। মহেন্দ্রলাল সরকারসহ অন্যান্য বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞান চর্চার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে প্রচার চালান।

উপসংহারঃ IACS শুধুমাত্র গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেনি, বরং বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এর মাধ্যমে বাংলার ছাত্ররা গবেষণার সুযোগ পেয়েছে এবং ভারতীয় বিজ্ঞান আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরিচিতি লাভ করেছে।

বিভাগ ‘ঙ’

৫। পনেরো বা ষোলটি বাক্যে যে কোন একটি প্রশ্নের উত্তর দাও: ৮×১=৮

৫.১ সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এর ভূমিকা বিশ্লেষণ করো। বিংশ শতকের ভারতে নারী আন্দোলনে দীপালি সংঘের কিরূপ ভূমিকা ছিল ? ৩+৫

উত্তরঃ সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ভূমিকা—

বিংশ শতকের ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে আত্মোৎসর্গকারী প্রথম বাঙালি নারী বিপ্লবী।

(১) বিপ্লবী দলে যোগদান ও প্রশিক্ষণঃ প্রীতিলতা চট্টগ্রামের মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী দলের সদস্য ছিলেন। তিনি অস্ত্র চালনা, বোমা তৈরি ও গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন।

(২) পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণঃ ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে প্রীতিলতা নেতৃত্ব দেন। এই ক্লাবটিতে একটি নোটিশ ছিল— “Indians and Dogs Not Allowed”, যা ব্রিটিশ শাসনের বর্ণবাদী নীতির পরিচায়ক ছিল। প্রীতিলতা বিপ্লবীদের নিয়ে ক্লাব আক্রমণ করেন এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।

(৩) আত্মবলিদান ও অনুপ্রেরণাঃ এই অভিযানের সময় তিনি আহত হন এবং গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। তাঁর আত্মবলিদান ভারতীয় নারীদের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণে অনুপ্রাণিত করে।

উপসংহারঃ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আত্মত্যাগ ভারতীয় বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের সাহসী ভূমিকার প্রতীক হয়ে আছে। তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে নারীরাও ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম।

বিংশ শতকের ভারতে নারী আন্দোলনে দীপালি সংঘের ভূমিকা—

দীপালি সংঘ ছিল ব্রিটিশ বিরোধী নারী বিপ্লবীদের একটি সংগঠন, যা নারীদের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে যুক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

(১) প্রতিষ্ঠা ও উদ্দেশ্যঃ ১৯২০-এর দশকে বিপ্লবী লীলা নাগ (পরবর্তী সময়ে লীলা রায়) দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল নারীদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা গড়ে তোলা এবং তাঁদের সশস্ত্র বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করা।

(২) নারী শিক্ষার প্রসার ও বিপ্লবী আদর্শ প্রচারঃ সংগঠনটি নারীদের শিক্ষা ও সমাজসেবার পাশাপাশি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করত। এখানে আত্মরক্ষা, অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হতো।

(৩) বিপ্লবী কার্যকলাপে অংশগ্রহণঃ দীপালি সংঘের সদস্যরা চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন (১৯৩০), গোপন বিপ্লবী সভা, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন এবং গুপ্তচরবৃত্তির কাজে সক্রিয় ছিলেন।

(৪) নারী নেতৃত্বের বিকাশঃ এই সংঘ থেকে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্যাণী দাসী, বিভাবতী ঘোষ, বীণা দাসের মতো অনেক নারী বিপ্লবী উঠে আসেন, যারা স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

উপসংহারঃ দীপালি সংঘ নারীদের বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যুক্ত করার পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগ্রত করতে বিশাল অবদান রেখেছিল। এটি নারী স্বাধীনতা আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছে।

৫.২ বাংলা ছাপাখানার বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বহুবিধ কর্মপ্রচেষ্টার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। ৮

উত্তরঃ সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ—

সময়কাল : ১৭৬০ থেকে ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত।

নেতৃত্ব : মজনু শাহ, ভবানী পাঠক, দেবী চৌধুরানী, পরাগল শাহ, সোবহান শাহ, করিম শাহ, ইত্যাদি।

প্রস্তাবনা : পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে খাজনা আদায়ের অধিকার চলে যাওয়ায় করের বোঝা বেড়ে যায়, যা সন্ন্যাসী ও ফকিরদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে।

প্রতিরোধের কারণ : ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে খাজনা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক শোষণ, এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণের প্রতিবাদস্বরূপ এই বিদ্রোহ শুরু হয়।

আন্দোলনের বিস্তার : এই বিদ্রোহ বাংলা ও বিহারের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এবং সন্ন্যাসী ও ফকিররা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগঠিতভাবে যুদ্ধ করে।

বিদ্রোহের দমন : ব্রিটিশরা কঠোরভাবে এই বিদ্রোহ দমন করে, অনেক সন্ন্যাসী ও ফকিরকে হত্যা করে এবং তাদের নেতা ও সমর্থকদের বন্দী করে।

ঐতিহাসিক তাৎপর্য—

(১) প্রথম সংগঠিত প্রতিরোধ আন্দোলন : সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ ছিল বাংলায় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন, যা পরবর্তী কৃষক বিদ্রোহ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য পথপ্রদর্শক হয়।

(২) ব্রিটিশ শাসনের শোষণ প্রকট করে তোলে : এই বিদ্রোহ ব্রিটিশদের শোষণমূলক নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অসন্তোষকে তুলে ধরে এবং তাদের অন্যায় আচরণের ব্যাপারে জনমত তৈরি করে।

(৩) গেরিলা যুদ্ধের কৌশল : এই বিদ্রোহীদের গেরিলা যুদ্ধ কৌশল পরবর্তী বিদ্রোহ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।

(৪) ধর্মীয় ও সামাজিক সংহতি : হিন্দু সন্ন্যাসী ও মুসলিম ফকিরদের একত্রে লড়াই ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল।

(৪) ব্রিটিশদের কঠোর দমননীতি : এই বিদ্রোহ দমনের জন্য ব্রিটিশরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে, যা তাদের কঠোর ও দমনমূলক শাসনের পরিচয় বহন করে।

সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ শুধু একটি সামরিক প্রতিরোধ ছিল না, এটি ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বাংলার জনগণের প্রথম সংগঠিত প্রতিবাদ, যা ভারতের পরবর্তী স্বাধীনতা আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছিল।

৫.৩ সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের (১৭৬৩-১৮০০) সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। এই বিদ্রোহের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী ছিল ? ৫+৩

উত্তরঃ বাংলা ছাপাখানার বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা—

বাংলা ছাপাখানার বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি শুধু একজন বিদগ্ধ পণ্ডিত ও সমাজ সংস্কারকই ছিলেন না, বাংলা মুদ্রণ শিল্পের উন্নতিতেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ছাপাখানার আধুনিকীকরণে তার প্রচেষ্টা, নতুন হরফ তৈরি ও গ্রন্থ প্রকাশনার ক্ষেত্রে তার অবদান বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কর্মপ্রচেষ্টার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে দেওয়া হলো—

(১) ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা : বিদ্যাসাগর ১৮৪৭ সালে “সংস্কৃত প্রেস ডিপজিটরি” নামে একটি বইয়ের দোকান খোলেন এবং পরে বন্ধু মদনমোহন তর্কালঙ্কারের সাথে যৌথভাবে “সংস্কৃত যন্ত্র” নামে একটি ছাপাখানা স্থাপন করেন।

(২) বর্ণমালার সংস্কার : বই মুদ্রণের ক্ষেত্রে অক্ষর বা বর্ণমালা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনিই প্রথম য়, ড়, ঢ়, হ, র, ফ, এবং প্রচলন করেন।

(৩) সুলভ মূল্যে বই প্রকাশ : তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্পমূল্যে বই প্রকাশ করেন, যাতে শিক্ষার প্রসার ঘটে।

(৪) প্রথম গ্ৰন্থ প্রকাশ : বিদ্যাসাগরের ছাপাখানা থেকে প্রথম প্রকাশিত গ্ৰন্থ হল রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রচিত অন্নদামঙ্গল কাব্য। তিনি নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরের রাজবাড়িতে এসে মূল অন্নদামঙ্গল কাব্যের পাণ্ডুলিপিটি সংগ্রহ করেন। এরপর তাঁর সম্পাদনায় এই গ্ৰন্থটি তাঁর ছাপাখানা থেকে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়।

(৫) পুস্তকের ব্যবসা : ছাপানো বই বিক্রির কাজেও বিদ্যাসাগর এগিয়ে আসেন। তাঁর নিজস্ব ছাপাখানায় মুদ্রিত পুস্তক বিভিন্ন উদ্দেশ্যে তিনি ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে ‘সংস্কৃত প্রেস ডিপজিটারি’ এবং ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে ‘কলিকাতা পুস্তকালয়’নামে দুটি বইয়ের দোকান খোলেন। তাঁর নিজের লেখা ‘বর্ণপরিচয়’ বইটির দুটি খণ্ড (প্রথম ভাগ ও দ্বিতীয় ভাগ) বিক্রি করে তিনি কয়েক হাজার টাকা উপার্জন করেন।

বিদ্যাসাগরের এই সকল কর্মপ্রচেষ্টার ফলে বাংলা ছাপাখানা একটি নতুন রূপে বিকশিত হতে শুরু করে এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সাধারণ মানুষের কাছে আরও সহজে পৌঁছে যায়।

(কেবলমাত্র বহিরাগত পরীক্ষার্থীদের জন্য)

বিভাগ ‘চ’

৬। ৬.১ একটি পূর্ণবাক্যে উত্তর দাও (যে কোনো ৪টি) : ১×৪=৪

৬.১.১ ‘আত্মীয়সভা’ কে প্রতিষ্ঠা করেন ?

৬.১.২ ‘যত মত, তত পথ’ এর আদর্শ কে প্রচার করেন ?

৬.১.৩ তিতুমিরের প্রকৃত নাম কী ?

৬.১.৪ ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসটি কে রচনা করেন ?

৬.১.৫ শাস্তিনিকেতন কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ?

৬.১.৬ ‘সর্দার’ উপাধিতে কে ভূষিত হন ?

৬.২ দু’টি অথবা তিনটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (যে কোনো তিনটি) : ২x৩=৬

৬.২.১ পরিবেশের ইতিহাস বলতে কী বোঝায় ?

৬.২.২ ‘বিপ্লব’ বলতে কী বোঝায় ?

৬.২.৩ সাঁওতাল বিদ্রোহের দু’জন নেতার নাম লেখ।

৬.২.৪ ‘রসিদ আলি দিবস’ কেন পালিত হয়েছিল ?

৬.২.৫ কী উদ্দেশ্যে ‘শ্রীনিকেতন’ গড়ে ওঠে ?

M.P History Question Papers
2017 2018 2019 2020 2021
2022 2023 2024 2025 2026

Leave a Reply

  • Post comments:0 Comments
  • Reading time:24 mins read