তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর একাদশ শ্রেণি বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার | Telenapota Abiskar Golper Question Answer Class 11 Bengali Second Semester wbchse

তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর একাদশ শ্রেণি বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার | Telenapota Abiskar Golper Question Answer Class 11 Bengali Second Semester wbchse

📌 একাদশ শ্রেণি প্রশ্নপত্র সেমি-২ Click Here

📌 একাদশ শ্রেণি প্রশ্নোত্তর বাংলা Click Here

📌 একাদশ শ্রেণি সিলেবাস বাংলা Click Here

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর : তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্প একাদশ শ্রেণি বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার | Telenapota Abiskar Golper Essay Type Question Answer Class 11 Bengali Second Semester wbchse

∆ অনধিক ১৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও : প্রতিটি প্রশ্নের মান- ৫

১. তেলেনাপোতা ত্যাগ করার পর থেকে কীভাবে তেলেনাপোতা এবং যামিনীর স্মৃতি গল্পকথকের মন থেকে ক্রমশ মলিন হয়ে যায় তা ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ অবলম্বনে লেখো।

উত্তরঃ প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ ছোটোগল্পে আমরা দেখি যে, তেলেনাপোতা থেকে ফিরে আসার সময় যামিনী-সহ তেলেনাপোতার স্মৃতিতে আচ্ছন্ন গল্পকথক। তিনি নিজের হৃদস্পন্দনের মধ্যে এই কথাটিই বারবার উচ্চারিত হতে শুনেছিলেন-” ফিরে আসব, ফিরে আসব।”

কলকাতায় ফিরে তেলেনাপোতায় দেওয়া প্রতিশ্রুতির দায়ভার কিছুটা ফিকে হয়ে গেলেও একদিন পারিপার্শ্বিক এবং মানসিক সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করে তেলেনাপোতায় যাওয়ার জন্য তিনি প্রস্তুত হলেন। কিন্তু সেখানে যাওয়ার দিনই আকস্মিক মাথার যন্ত্রণা এবং কাঁপানো শীতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ডাক্তারবাবুর শরণাপন্ন হলে তিনি জানালেন যে, কথক ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।

বহুদিন পর ম্যালেরিয়া থেকে সেরে উঠে, অতি দুর্বল দেহ নিয়ে কাঁপা পায়ে বাড়ির বাইরের আলো-বাতাসে যখন গল্পকথক এসে বসলেন, তখন তিনি বুঝতে পারলেন যে, ইতিমধ্যেই তাঁর দেহমনে নিজের অজান্তেই অনেক ধোয়া-মোছা হয়ে গেছে। কলকাতায় ফেরার দিনটিতে যে তেলেনাপোতা তাঁর কাছে ছিল এক উজ্জ্বল অনুভব, তাই বর্তমানে পরিণত হয়েছে ঝাপসা হয়ে আসা এক স্মৃতিতে। যামিনীকেও তিনি অনুভব করলেন তাঁর দুর্বল মুহূর্তের এক কুয়াশাচ্ছন্ন, অসম্ভব কল্পনা বলে। এভাবেই কথকের মন থেকে যামিনী সহ তেলেনাপোতার স্মৃতি ক্রমশ মলিন হয়ে গিয়েছিল।

২. তেলেনাপোতা যাওয়াকে লেখক ‘আবিষ্কার’ বলেছে কেন ?

উত্তরঃ বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের’ তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে তেলেনাপোতা এমন একটি জায়গার নাম যে জায়গাটি জনস্রোতে ভরা রাজধানী অঞ্চল থেকে খুব একটা দূরে নয়। ঠাসাঠাসি বাসে চেপে শহরাঞ্চল থেকে মাত্র দু-ঘণ্টার যাত্রাপথে এমন একটি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল রয়েছে, যেখানে জীবন যেন থেমে গেছে বলে বোধ হয়, অবসর সময় কাটাতে এবং মৎস্য শিকারের ইচ্ছা চরিতার্থ করার জন্যই কথক তার দুই বন্ধুর সঙ্গে তেলেনাপোতায় পাড়ি দেন।

লেখক এই তেলেনাপোতায় যাওয়ার ব্যাপারটিকে ‘আবিষ্কার’ বলে চিহ্নিত করেছেন। কারণ সভ্যজগতের এত কাছাকাছি দূরত্বের মধ্যে এমন একটি শান্ত জনবিরল পরিবেশের সন্ধান পাওয়া শহরাঞ্চলের ব্যস্ত মানুষের কাছে এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। এখানকার বড়শি- অনভিজ্ঞ মাছেরা প্রথম বড়শি বিদ্ধ হওয়ার অপেক্ষায় উদ্গ্রীব হয়ে আছে একশো – দেড়শো বছর আগে ম্যালেরিয়ার প্রকোপে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া এই অঞ্চল। প্রকৃতপক্ষে একটি শ্মশানের দেশ- যেখানে দশটা বাড়ি খুঁজলেও একটি পুরুষের দেখা মেলে না। এই তেলেনাপোতাতেই কথক মাছ ধরার ব্যর্থতার জন্য মাছরাঙার নীরব উপহাস পেয়েছিলেন। এই অঞ্চলটি বেশিরভাগ মানুষের কাছে অজ্ঞাত বলে তেলেনাপোতায় যাওয়াকে লেখক ‘আবিষ্কার’ বলে উল্লেখ করেছেন।

৩. ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প অবলম্বনে যামিনী চরিত্রটি সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের অন্যতম প্রধান নারী চরিত্র হল যামিনী। ‘যামিনী’ শব্দের অর্থ রাত। তাই যামিনী চরিত্রে আপাত অন্ধকারের ভাব লক্ষিত হয়। গল্পকথকের মনে হয়েছিল- ‘মেয়েটি কোন বয়সের আপনি বুঝতে পারবেন না। …তার ক্ষীণ দীর্ঘ অপুষ্ট শরীর দেখলে মনে হবে কৈশোর অতিক্রম করে যৌবনে উত্তীর্ণ হওয়া তার যেন স্থগিত হয়ে আছে।’ যামিনী চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

অমায়িক ব্যবহারঃ যামিনীর গতিবিধিতে গল্পকথক কোনো আড়ষ্টতা দেখেননি। শান্ত, করুণ আর অমায়িক তার ব্যবহার। কথক ও তাঁর বন্ধুদের খাবারের পরিবেশন যামিনী নিজ হাতে করেছে। যামিনীর মায়ের মুখে যামিনীর গুণ, কর্ম ও ব্যবহারের কথা শুনে কথক তাঁর চোখের জল গোপন করতে পারেননি।

সেবাপরায়ণতাঃ যামিনীর বৃদ্ধা মা কঙ্কালসার মূর্তির মতো হয়ে গেছেন। আর তাঁকে নির্বিকারভাবে সেবাযত্ন করে যামিনী। সংসারের যাবতীয় কাজের ভার তার উপর। যামিনীর মায়ের কথায়- “আমার মতো ঘাটের মড়ারা শুধু ভাঙা ইট আঁকড়ে এখানে-সেখানে ধুঁকছে, এর মধ্যে একাধারে মেয়ে পুরুষ হয়েও কী না করছে!”

বিচারবোধঃ নিরঞ্জনের অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যাওয়ার খবর যামিনী জানলেও মায়ের কাছে গোপন রেখেছে। কেননা তাতে মায়ের– নিশ্বাস বন্ধ হতে পারে। আবার কথকের বন্ধুদের কাছ থেকে মণিদাকে সন্তর্পণে যামিনী তার মায়ের কাছে এনে উপস্থিত করেছে। এই সমস্ত ঘটনায় যামিনীর বিচারবোধ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

প্রতিবেশীসুলভ আচরণঃ পুকুরঘাটে মৎস্য-আরাধনায় মত্ত ছিলেন গল্পকথক। কলশিতে জল নিয়ে ফেরার পথে মিশুকে প্রতিবেশীর মতো যামিনী বলেছে, “বসে আছেন কেন ? টান দিন।”

কথক ও তাঁর বন্ধুদের ফিরে যাওয়ার সময় যামিনীর হাসি কথকের হৃদয়বিদ্ধ করেছে। কথকের মতে মায়াপুরীর বন্দিনী রাজকুমারী শান্ত মধুর যামিনী গল্পের শেষে তাঁর কাছে অবাস্তব কুয়াশার কল্পনা হয়ে উঠেছে।

৪. “তাহলে হঠাৎ একদিন তেলেনাপোতা আপনিও আবিষ্কার করতে পারেন”– তেলেনাপোতা আবিষ্কার অভিযানের বাসযাত্রার বিবরণ দাও।

উত্তরঃ ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের সূচনাতেই গল্পকথক পাঠকদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন যে, কোনো এক শনিবার বা মঙ্গলবার, সম্ভবত মঙ্গলবারই, যোগাযোগ হলে তেলেনাপোতা নামক এক অখ্যাত স্থান পাঠকও আবিষ্কার করে ফেলতে পারেন। প্রতিদিনের কাজকর্ম এবং কলকাতার ভিড়ভাট্টায় হাঁপিয়ে ওঠার পর হঠাৎ যদি দু-দিনের ছুটি পেয়ে যান পাঠক এবং তাঁর কোনো বন্ধু যদি তাঁকে লোভ দেখান তেলেনাপোতা আবিষ্কারের যেখানকার দিঘিতে ইতিপূর্বে কেউ কখনও মাছ ধরেনি বলে সেখানকার মাছের দল বড়শিবিদ্ধ হওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে, তাহলে পাঠক হঠাৎ একদিন তেলেনাপোতা আবিষ্কার করতে পারবেন। আলোচ্য গল্পে, গল্পকথক তাঁর নামহীন এক ঘুমকাতুরে বন্ধু ও এক পানরসিক বন্ধু মণির সঙ্গে, কোনো এক পড়ন্ত বিকেলে, কলকাতা থেকে তিরিশ মাইল দূরের এক নামহীন একটি গ্রাম তেলেনাপোতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন। এ যাত্রায় তাদের বাহন ছিল মানুষে জিনিসে ঠাসাঠাসি একটি বাস। ভাদ্র মাসের পচা গরমে প্রায় দু-ঘণ্টা ধরে তাঁরা পথের ঝাঁকুনি ও মানুষের ঠেলা খেয়ে চলতে থাকেন। এরপর পথের ধূলো ও শরীরের ঘামে চটচটে হয়ে যাওয়া দেহ নিয়ে হঠাৎই তারা একসময় নেমে পড়েন তেলেনাপোতার সবচেয়ে কাছের বাসস্টপে, যার নাম আমরা পাঠ্যাংশে পাই না। এরপর সামনের নীচু একটা জলার মতে জায়গার ওপর দিয়ে লম্বা সাঁকো পেরিয়ে বিচিত্র ঘর্ঘর শব্দে বাসটি পথের বাঁকে অদৃশ্য হয়ে যায়।

৫. তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প অবলম্বনে এই গল্পের গল্পকথকের চরিত্র বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের কথকই হলেন এই গল্পের নায়ক। গল্পটির মধ্যে তাঁর চরিত্রের যে বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ করা যায়, সেগুলি হল—

রোমান্টিকতা: এই গল্পের কথক প্রাত্যহিক কাজকর্ম ও শহুরে কোলাহল থেকে মুক্তির জন্য কলকাতা ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন এক অখ্যাত গণ্ডগ্রাম তেলেনাপোতার উদ্দেশে। যামিনীর সঙ্গে সাময়িক প্রেমের অনুভূতির পর ফেরার সময় গোরুর গাড়ির একঘেয়ে শব্দকেই উপেক্ষা করে নিজের হৃৎস্পন্দনে তিনি কেবল একটি কথাই শুনতে পান, ‘ফিরে আসব, ফিরে আসব’।

আবেগপ্রবণতা: গল্পকথক হলেন অত্যন্ত আবেগপ্রবণ এক ব্যক্তি। তাই অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করে, মণি এবং যামিনীকে স্তম্ভিত করে দিয়ে তিনি মুহূর্তের মধ্যে যামিনীর মাকে যামিনীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেন।

দায়িত্ববোধের অভাব: এই গল্পে গল্পকথককে প্রাথমিকভাবে দায়িত্বপরায়ণ এক নাগরিক যুবক বলে মনে হলেও শেষে দেখা যায় যে, তেলেনাপোতা থেকে ফিরে আসার পর ম্যালেরিয়া জ্বরে বিপর্যস্ত হয়ে যামিনীর মাকে দেওয়া তাঁর সমস্ত প্রতিশ্রুতিই তিনি ভুলে যান।

বাকপটুতা: ফেরার সময় যামিনী গল্পকথকের কাছে গিয়ে যখন বলে যে, তাঁর বড়শি-টড়শি সব পড়ে রইল, তখন কথক হেসে বলেন যে, সেসব সেখানেই থাকুক। একবার পারেননি বলে, তেলেনাপোতার মাছ কিন্তু মোটেও তাঁকে বারবার ধোঁকা দিতে পারবে না। বাকপটু ব্যক্তি ছাড়া ইমেজের এমন ব্যবহার কে করতে পারে ?

৬. “কে, নিরঞ্জন এলি ?”– নিরঞ্জন কে ? কোন্ পরিস্থিতিতে গল্পকথক নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন ?

উত্তরঃ নিরঞ্জনের পরিচয়: আলোচ্য অংশটি কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প থেকে সংগৃহীত। গল্পকথকের বন্ধু মণির কণ্ঠে নিরঞ্জনের পরিচয় পাওয়া যায়। মণি বিরক্তির স্বরে বলেছিলেন, নিরঞ্জন বলে দূর-সম্পর্কের এক বোনপোর সঙ্গে ছেলেবেলায় যামিনীর সম্বন্ধ উনি (যামিনীর মা) ঠিক করেছিলেন। চার বছর আগে নিরঞ্জন এসে যামিনীকে বিয়ে করবে বলে জানায়। সেই থেকে যামিনীর মা আশায় আশায় দিন গুনছে।

নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার কারণ: মহানগরী থেকে ত্রিশ মাইল দূরে গল্পকথক তেলেনাপোতার সন্ধানে আসেন। মৎস্য-আরাধনার জন্য তিনি যখন পুকুরঘাটে ছিলেন তখন যামিনীকে দেখেছিলেন। কথক তাঁর বন্ধু মণির কাছ থেকে যামিনীর পরিচয় জানতে পারে। যামিনীদের বাড়িতেই তারা দুপুরের ভোজন সারে। খাওয়ার পর বিশ্রামের সময় যামিনী ও তার মণিদা নিম্নস্বরে আলাপ করে। এরপর গল্পকথক মণির মুখে নিরঞ্জনের কথা জানতে পারে। নিরঞ্জন যামিনীর মাকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন বিদেশ থেকে ফিরে যামিনীকে বিয়ে করবে বলে। নিরঞ্জনের প্রতিশ্রুতির প্রতি যামিনীর মায়ের এখনও আস্থা। অথচ নিরঞ্জন দিব্যি বিয়ে করে সংসার করছে। এই পরিস্থিতিতে কথকের হৃদয় বিগলিত হয়ে পড়ে। মণি ও যামিনীর সঙ্গে তিনিও বৃদ্ধার ঘরে যান। অন্ধ বৃদ্ধা কথককে নিরঞ্জন ভেবে বলে-“কে, নিরঞ্জন এলি ? অভাগী মাসিকে এতদিনে মনে পড়ল বাবা ?” কথককে দেখে বৃদ্ধা তার অস্থিরতা প্রকাশ করে। এই পরিস্থিতে গল্পকথক যামিনীর মাকে কষ্ট দিতে চান না বলে নিরঞ্জনের ভূমিকা নিয়েছিলেন।

৭. ‘আপনার আসল উদ্দেশ্য আপনি নিশ্চয় বিস্মৃত হবেন না’– ‘আসল উদ্দেশ্য’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? উদ্দেশ্যটি পূরণের জন্য তিনি কী করেছিলেন ?

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের প্রধান পুরুষ চরিত্র, যাকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে তার আসল উদ্দেশ্য ছিল মৎস্যশিকার। পৃথিবীর সরলতম মাছেরা নাকি তেলেনাপোতার সরোবরেই রয়েছে। সেই মাছগুলিকে বড়শিবিদ্ধ করবার উদ্দেশ্যেই উদ্দিষ্ট ব্যক্তির মহানগর থেকে তেলেনাপোতায় আগমন।

তেলেনাপোতার ধ্বংসপুরীতে রাত্রিযাপনের পর সকাল থেকেই উদ্দিষ্ট ব্যক্তি মাছ ধরবার তোড়জোড় শুরু করে দেয়। উত্তম মৎস্যশিকারীর মতো ‘ষোড়শোপাচার আয়োজন’ নিয়ে সে শ্যাওলা-ঢাকা, ভাঙা ঘাটের একপাশে বসে পড়ে। তারপর ‘যথোচিত নৈবেদ্য’ সমেত বড়শি জলে নামিয়ে দেয়। গুড়ি-পানায় সবুজ পুকুরের ঘাটে অধীর আগ্রহে সে মাছেদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।

ক্রমশ বেলা বাড়তে থাকে কিন্তু উদ্দিষ্ট ব্যক্তির স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। তার অবস্থা দেখে যেন মাছরাঙা পাখিও তাকে বিদ্রুপ করতে শুরু করে। একজোড়া ফড়িংয়ের নাচানাচি, ঘুঘুর ডাক এবং সবশেষে একটি মেয়ের আবির্ভাব- এমনি করেই সময় পেরিয়ে যায়। একটিও মাছ ধরতে না পারায় নিতান্ত হতাশ হয়ে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি মাছ ধরবার সাজসরঞ্জাম নিয়ে উঠে পড়েন এবং তেলেনাপোতা অভিযানের আসল উদ্দেশ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

৮. এই ধ্বংসাবশেষেরই একটি অপেক্ষাকৃত বাসযোগ্য ঘরে আপনাদের থাকার ব্যবস্থা করে নিতে হবে।’— কাদের থাকার ব্যবস্থা করে নিতে হবে ? বাসযোগ্য ঘরটির বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র বিরচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে মহানগর নিবাসী গল্পকথক ও তার বন্ধুদের থাকার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।

গল্পকথক ও তাঁর বন্ধুরা মহানগর থেকে ভিড় বাসে করে মাঝপথে নেমেছিল। তারপর গোরুর গাড়িতে করে তারা তেলেনাপোতায় পৌঁছোন। সেখানে একটি নাতিক্ষুদ্র পুকুরের পাশে বিশালায়তন জীর্ণ অট্টালিকাটি দুর্গ-প্রাকারের মতো অবস্থিত ছিল। ঘরটি ঝুল, জঞ্জাল আর ভ্যাপসা গন্ধে পরিপূর্ণ। একটু চলাফেরাতেই ঘরের ছাদ ও দেয়াল থেকে জীর্ণ পলেস্তারা খসে পড়ছে। ঘরের অধিকার নিয়ে দু-তিনটি চামচিকা কথকদের সঙ্গে সমস্ত রাত বিবাদ করবে। ঘরে পৌঁছে কথকের দুই বন্ধু তাদের নিজ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়বে। রাত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মশাদের আক্রমণ বৃদ্ধি পাবে। গল্পকথক গরম থেকে পরিত্রাণের জন্য ছাদে উঠবেন। প্রতিমুহূর্তে ইট বা টালি ছাদ থেকে খসে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। কথক ছাদে গিয়ে দেখবেন, ‘অলিসা ভেঙে ধুলিসাৎ হয়েছে, ফাটলে ফাটলে অরণ্যের পঞ্চম বাহিনী ষড়যন্ত্রের শিকড় চালিয়ে ভিতর থেকে এ-অট্টালিকার ধ্বংসের কাজ অনেকখানি এগিয়ে রেখেছে।’ রাস্তার ওপারের ভগ্নস্তূপের একটি জানালায় কথক ছায়ামূর্তি লক্ষ করবেন। পরবর্তীকালে তা স্বপ্নের বুদবুদের মতো মনে হবে। ছাদ থেকে নেমে কথক দুই বন্ধুর মাঝে ঘুমিয়ে পড়বে। ঘরটির বর্ণনায় বোঝা যায় ঘরটি একসময় জাঁকজমকপূর্ণ ছিল কিন্তু বর্তমানে ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে।

৯. তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পে গোরুর গাড়িতে করে যাওয়ার অভিনব অভিজ্ঞতার বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্পে গল্পের কথক এবং তার দুই বন্ধু কলকাতা থেকে ঘণ্টা-দুই বাসযাত্রা করে একটি নির্দিষ্ট বাসস্টপে নামেন। নালার পাশে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর পাশের জঙ্গলের মধ্যে থেকে ভেসে আসা এক অপরূপ শ্রুতিবিস্ময়কর আওয়াজ শােনার পর প্রতীক্ষা চঞ্চল গল্পকথকরা দেখতে পেলেন, জঙ্গলের ভেতর থেকে শ্লথ, শান্ত ও দোলায়মান গতিতে একটি গােরুর গাড়ি তাঁদেরই উদ্দেশে এগিয়ে আসছে। গােরুর গাড়িটি সামনে এলে গল্পকথকরা তিনজন সেই গােরুর গাড়ির অপ্রশস্ত ছই-এর ভিতর কোনােক্রমে গাদাগাদি করে বসলেন। তারপর যে পথে এসেছিল, সেই জঙ্গলে ঘেরা পথেই গােরুর গাড়িটি চলতে শুরু করলে গল্পকথকরা বিস্মিত হয়ে দেখেন যে, গাড়িটি সেই ঘনান্ধকার দুর্ভেদ্য জঙ্গলে সুড়ঙ্গের মতাে অপরিসর পথ একটু একটু করে কেটে বের করে নিয়ে ধীরগতিতে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে।

গাড়ির ঝাকুনিতে গল্পকথকের সঙ্গে তাঁর বন্ধুদের অনিচ্ছাকৃত সংঘর্ষও ঘটতে লাগল মাঝেমধ্যেই। তারপর জঙ্গলের ভিতর থেকে ক্যানেস্তারা পেটানাের শব্দ ভেসে আসে। গাড়ােয়ানের কাছ থেকে জানতে পারেন যে, ক্যানেস্তারা বাজিয়ে সে আসলে চিতাবাঘ তাড়াচ্ছে। ছই-এর মধ্যে বসেই কৃষ্ণপক্ষের বিলম্বিত, ক্ষয়প্রাপ্ত চাঁদের আলােয় গল্পকথক দেখতে পেলেন যে, চলমান গােরুর গাড়ির দু-পাশ দিয়ে ক্রমশ সরে যাচ্ছে পুরােনাে মন্দির এবং প্রাসাদের বিভিন্ন ভগ্নাংশ। দু-তিনবার বাঁক ঘুরে গােরুর গাড়িটি অবশেষে একটি জীর্ণ অট্টালিকার সামনে এসে কথকদের নামিয়ে দেয়।

১০. ‘হঠাৎ এক সময় উৎকট এক বাদ্য-ঝঞ্জনায় জেগে উঠে দেখবেন।’- উৎকট বাদ্য-ঝঞ্জনার পরিচয় দাও। বাদ্য যন্ত্রটি বাজানোর কারণ লেখো।

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প থেকে আলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে। গল্পকথক ও তাঁর বন্ধুরা বাস থেকে নেমে দীর্ঘক্ষণ প্রতিক্ষা করার পর একটি গরুর গাড়ি দেখতে পান এবং তাতেই উঠে পড়েন। গোরুর গাড়ির ছইয়ের অল্পতম স্থানে তাঁরা কষ্ট করে বসেন। সূর্য না ডুবলেও চারিদিকে জঙ্গলের জন্য ঘন অন্ধকার হয়ে যায়। বন্ধুরা পরস্পরের মুখ ভালোভাবে দেখা যায় না। এমনই প্রকৃতির নির্মল নির্জন অন্ধকারময় পরিবেশে হঠাৎই বাদ্য-ঝঞ্জনার উৎকট শব্দ অর্থাৎ ক্যানেস্তারা বাজানোর শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন। ক্যানেস্তারা হল টিনের তৈরি বড়ো একধরনের পাত্র। এটি বাজালে ঝঞ্জনার মতো শব্দ তৈরি হয়।

গাড়োয়ান উৎসাহের সঙ্গে ক্যানেস্তারা বাজাচ্ছিল। গল্পকথক এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে গাড়োয়ান নির্বিকারভাবে জানান, “এজ্ঞে, ওই শালার বাঘ খেদাতে।” বাঘ মানে চিতাবাঘ একান্ত ক্ষুধার্ত না হলে এর শব্দ থেকে দূরে থাকে। বাঘের কথা শুনে কথক শঙ্কিত হয়ে ওঠেন। মহানগরী থেকে ত্রিশ মাইল দূরে কীভাবে বাঘের অস্তিত্ব থাকতে পারে, এ কথা ভাবতে ভাবতে গোরুর গাড়ি বিরাট একটি মাঠ কতক্ষণে অতিক্রম করবে সে চিন্তা গল্প কথককে গ্রাস করে ফেলে।

১১. ‘মেয়েটির চোখে কৌতূহল আছে কিন্তু গতিবিধিতে সলজ্জ আড়ষ্টতা নেই।’– কে, কোন্ প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করেছিল ? মেয়েটির সম্পর্কে আর কী জানা যায় ? ৩+২

উত্তরঃ গল্পকথক সূদুর মহানগরী থেকে মৎস্যশিকারের উদ্দেশ্যে তেলেনাপোতায় গিয়েছিলেন। জীর্ণ অট্টালিকায় রাত্রিবাসের পরদিন সকালে কথক ষোলো রকমের উপকরণ নিয়ে মৎস্য-আরাধনা শুরু করেছিলেন। বেলা বাড়তে থাকলে মাছরাঙা পাখি উপহাস ও বিদ্রুপ করতে থাকে। মোটা একটা সাপ কথককে শঙ্কিত করে তোলে। দুটো ফড়িং ফাতনার উপর বসার চেষ্টা করে। কথক ঘুঘুর ডাকে আনমনা হয়ে পড়েন। তারপর জলের শব্দে কথক চমক ভেঙে দেখেন আপনার ছিপের ফাতনা মৃদুমন্দভাবে দুলছে। তারপর ঘাড় ফিরিয়ে দেখেন একটি মেয়ে পিতলের ঝকঝকে কলশিতে পুকুরের পানা সরিয়ে জল ভরছে। এই মেয়েটিই হল যামিনী। পুকুরঘাটে মাছ ধরবার সময় জল নিতে আসা মেয়েটিকে লক্ষ করে গল্পকথক প্রশ্নে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছিলেন।

গল্পকথক তাঁর বন্ধু মণির কাছ থেকে যামিনীর পরিচয় জানতে পেরেছিলেন। নিরঞ্জন নামের এক দূর-সম্পর্কের বোনপোর সঙ্গে ছেলেবেলায় যামিনীর মা যামিনীর বিয়ে ঠিক করেছিলেন। বছর চারেক আগে নিরঞ্জন বলে গিয়েছিল বিদেশের চাকরি থেকে ফিরে যামিনীকে বিয়ে করবে। নিরঞ্জনের এই প্রতিশ্রুতি মিথ্যা ছিল। সে অন্যত্র বিয়ে করে দিব্যি সংসার করছে। যামিনী নিজে এই সত্য জানলেও তার মাকে জানায়নি। যামিনীর নানা প্রশংসা করে যামিনীর মা কথককে যামিনী সম্পর্কে জানায়, “একাধারে মেয়ে পুরুষ হয়ে ও কী না করছে।”

১২. “বসে আছেন কেন ? টান দিন।”— কে, কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলেছিল ? উদ্দিষ্ট ব্যক্তি ছিপে টান দিতে ভুলে গিয়েছিলেন কেন ? ৩+২

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে গল্পকথক ও তাঁর দুই বন্ধু তেলেনাপোতায় মৎস্যশিকারের উদ্দেশ্যে এসেছিলেন। কথক একটি শ্যাওলা ঢাকা পুকুরের ভাঙা ঘাটের ধারে বসে নানা উপকরণ নিয়ে মৎস্য শিকারে নিযুক্ত ছিলেন। একটি মাছরাঙা পাখি প্রতি মুহূর্তে তাঁকে উপহাস ও বিদ্রুপ করছিল। একটি মোটা সাপ কথককে ভীত করে পুকুর সাঁতরে পার হয়েছিল। ঘুঘু পাখির ডাকে কথক অন্যমনস্ক হয়ে পড়েন। জলের শব্দে তিনি চমকে যান। স্থির জলের ঢেউয়ে কথকের ছিপের ফাতনা হালকাভাবে দুলতে থাকে। কথক ঘাড় ফিরিয়ে দেখেন, ‘একটি মেয়ে পিতলের ঝকঝকে কলশিতে পুকুরের পানা ঢেউ দিয়ে সরিয়ে জল ভরছে।’ মেয়েটি কথকের ফাতনার দিকে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে কলশিটা কোমরে তুলে নেয়। মেয়েটির মুখের শান্ত করুণ গাম্ভীর্য দেখে কথকের মনেমনে হয় ‘জীবনের সুদীর্ঘ নির্মম পথ সে পার হয়ে এসেছে।’ পুকুরঘাটে গল্পকথকের মৎস্য-আরাধনার প্রসঙ্গে মেয়েটি, অর্থাৎ যামিনী আলোচ্য কথাগুলি বলেছিল।

গল্পকথক অপরিচিত যামিনীর শান্ত মধুর ও গম্ভীর কণ্ঠস্বর শুনে তাঁর কাছে স্বাভাবিক মনে হয়। গল্পকথক ‘শুধু আকস্মিক চমকের দরুন বিহ্বল হয়ে ছিপে টান দিতে’ ভুলে যান। তারপর ডুবে যাওয়া ফাতনা আবার ভেসে উঠলে তিনি ছিপ তুলে দেখেন- ‘বঁড়শিতে টোপ আর নেই।’ মেয়েটি কথকের দিকে তাকিয়ে ধীর পায়ে ঘাট ছেড়ে চলে যায়। মেয়েটির শান্ত করুণ মুখের দীপ্ত হাসি কথককে আবিষ্ট করে তোলে। মৎস্য শিকারের উপকরণ নিয়ে গল্পকথক হতাশ হয়ে একসময় উঠে চলে যান।

১৩. তবু এ-অভিযানে তারা এসেছে, কে জানে আর কোন অভিসন্ধিতে’— কোন্ অভিযানের কথা বলা হয়েছে ? পাঠ্য গল্প অবলম্বনে তাদের অভিযানের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও। ২+৩

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে গল্পকথক দুদিনের ছুটিতে তাঁর দুইজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে মহানগরী থেকে ত্রিশ মাইল দূরে ঠাসাঠাসি বাসে চেপে শহরাঞ্চল থেকে মাত্র দু-ঘণ্টার যাত্রাপথে এমন একটি প্রত্যন্ত গ্রামে যান। যেখানে জীবন যেন থেমে গেছে বলে বোধ হয়, অবসর সময় কাটাতে এবং মৎস্য শিকারের ইচ্ছা চরিতার্থ করার জন্যই কথক তার দুই বন্ধুর সঙ্গে তেলেনাপোতায় পাড়ি দেন। একেই অভিযান বলা হয়েছে।

গল্পকথকরা ঘণ্টা-দুই বাসযাত্রা করে কাছের বাসস্টপে নামেন। নালার পাশে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর পাশের জঙ্গলের মধ্যে থেকে ভেসে আসা এক অপরূপ শ্রুতিবিস্ময়কর আওয়াজ শােনার পর প্রতীক্ষা চঞ্চল গল্পকথকরা দেখতে পেলেন, জঙ্গলের ভেতর থেকে শ্লথ, শান্ত ও দোলায়মান গতিতে একটি গােরুর গাড়ি তাঁদেরই উদ্দেশে এগিয়ে আসছে। গােরুর গাড়িটি সামনে এলে গল্পকথকরা তিনজন সেই গােরুর গাড়ির অপ্রশস্ত ছই-এর ভিতর কোনােক্রমে গাদাগাদি করে বসলেন। তারপর যে পথে এসেছিল, সেই জঙ্গলে ঘেরা পথেই গােরুর গাড়িটি চলতে শুরু করলে গল্পকথকরা বিস্মিত হয়ে দেখেন যে, গাড়িটি সেই ঘনান্ধকার দুর্ভেদ্য জঙ্গলে সুড়ঙ্গের মতাে অপরিসর পথ একটু একটু করে কেটে বের করে নিয়ে ধীরগতিতে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। দু-তিনবার বাঁক ঘুরে গােরুর গাড়িটি অবশেষে একটি জীর্ণ অট্টালিকার সামনে এসে কথকদের নামিয়ে দেয়।

১৪. তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প অবলম্বনে তেলেনাপোতার গ্রাম্য পরিবেশের বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পটি একটি গ্রাম্য পরিবেশকে কেন্দ্র করেই বর্ণিত হয়েছে। গল্পের পটভূমি হল মহানগর থেকে ত্রিশ মাইল দূরের একটি গ্রাম। গল্পকথক ও তাঁর দুই বন্ধু ভিড় বাসে উঠে মাঝরাস্তায় নেমে প্রতীক্ষা করতে থাকেন। অবশেষে জঙ্গলের ভিতর থেকে দোদুল্যমান গতিতে ‘পাতালের কোনো বামনের দেশ থেকে’ একটি গোরুর গাড়ির ক্ষুদ্র সংস্করণ বেরিয়ে আসে। কথকের মনে হবে পরিচিত পৃথিবীকে দূরে কোথাও ফেলে এসেছেন, চারিদিকে জঙ্গল আর অন্ধকারে একাত্ম হয়ে থাকবে। গাড়ি থামতে একটা কটু গন্ধ গল্পকথক ও তাঁর বন্ধুদের স্বাগত জানাবে- ‘বুঝতে পারবেন সেটা পুকুরের পানা-পচা গন্ধ।’

একটি নাতিক্ষুদ্র পুকুরের পাশে জীর্ণ অট্টালিকার একটি বাসযোগ্য ঘরে কথকদের থাকার ব্যবস্থা হবে। কোনো এক দুর্বার আকর্ষণে কথক ঘরটির ছাদে উঠবেন। দেখবেন অরণ্যের পঞ্চম বাহিনী কীভাবে অট্টালিকাকে ধ্বংস করছে। সকালে উঠে কথক দেখবেন, ‘এই রাত্রির দেশেও সকাল হয়, পাখির কলরবে চারিদিক ভরে যায়।’ শ্যাওলা ঢাকা ভাঙা পুকুরঘাটে কথক বঁড়শি দিয়ে মাছ ধরবেন। একটি মাছরাঙা পাখি কথককে উপহাস ও বিদ্রুপ করবে। মোটা একটা সাপ পুকুর সাঁতরে পার হয়ে যাবে। ঘুঘু পাখির ডাকে কথক আনমনা হয়ে পড়বেন। পুকুরের পানা সরিয়ে একটি মেয়ে কলশিতে জল নিয়ে যাবে। মেয়েটির নাম যামিনী, তার মায়ের কথায়, ‘এই শ্মশানের দেশ, দশটা বাড়ি খুঁজলে একটা পুরুষ মেলে না।’

১৫. আপনাকে কৌতূহলী হয়ে যামিনীর পরিচয় জিজ্ঞাসা করতেই হবে।’ -আলোচ্য অংশটির প্রসঙ্গ নির্দেশ করো। উদ্দিষ্ট ব্যক্তি যামিনী সম্পর্কে কী কী তথ্য জানতে পারবেন ?

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটি সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প থেকে সংগৃহীত হয়েছে। এই গল্পে গল্পকথক সকালে উঠে বিবিধ উপকরণ নিয়ে মাছ ধরতে নিয়োজিত হন। স্থির জলে ঢেউ লেগে কথকের ফাতনা হালকাভাবে দুলবে। কথক দেখবেন, ‘একটি মেয়ে পিতলের ঝকঝকে কলশিতে পুকুরের পানা ঢেউ দিয়ে সরিয়ে জল ভরছে।’ একসময় ব্যর্থ হয়ে কথক মাছ ধরার উপকরণ নিয়ে উঠে পড়বেন। কথকের মাছ ধরার কাহিনি বন্ধুরা জানতে পারবেন। কথক তাঁর বন্ধু মণির কাছ থেকে জানবেন যামিনী স্বচক্ষে তাঁর মাছ ধরার বিষয়টি দেখেছে। গল্পকথক তখন কৌতূহলী হয়ে প্রশ্নে উল্লেখিত কথাটি বলেছিলেন।

যামিনী সম্পর্কে যা যা জানতে পারবেন : গল্পকথক জানতে পারবেন, ‘পুকুর ঘাটের সেই অবাস্তব করুণনয়না মেয়েটি আপনার পানরসিক বন্ধুটিরই জ্ঞাতিস্থানীয়া।’ দুপুরের খাওয়া শেষ হলে বিশ্রামের সময় যামিনী মণিদাকে ডাকবে আর জানাবে তার মায়ের নিরঞ্জন আসার খেয়ালের কথা। ব্যাপারটা সম্পর্কে কথক জানতে চাইলে তাঁর বন্ধু মণি জানাবে যে, নিরঞ্জন বলে যামিনীর মায়ের দূর-সম্পর্কের এক বোনপোর সঙ্গে ছেলেবেলায় যামিনীর সম্বন্ধ তিনি ঠিক করেছিলেন। কিন্তু নিরঞ্জন বিদেশের চাকরির মিথ্যা কথা বলে চলে যায় আর ফেরেনি। আসলে সে অন্যত্র বিয়ে করে দিব্যি সংসার করছে। যামিনী বিষয়টা জানলেও তার মাকে জানায়নি। যামিনীর এই দুঃখময় অতীত জানার পর গল্পকথক যামিনীর মায়ের কাছ থেকে যামিনীর নানা প্রশংসা শোনেন। তিনি জানান দুঃখযন্ত্রণায় মেয়েকে নিরন্তর গঞ্জনা দিলেও সে মুখে রা কাটে না। একাধারে নারী ও পুরুষ হয়ে যামিনী গোটা সংসারটা সামলায়।

১৬. ছোটোগল্প হিসাবে ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ কতখানি সার্থক হয়েছে তা আলোচনা করো।

উত্তরঃ কথাসাহিত্যের একটি বিশেষ রূপভেদ হল ছোটোগল্প, যা দৈর্ঘ্যে ক্ষুদ্র এবং একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। ছোটোগল্প যথাসম্ভব বাহুল্যবর্জিত ও রসঘন হয়। ছোটোগল্পে চরিত্রের সংখ্যা কম এবং সূচনায় নাটকীয় আবেশ থাকে। রবীন্দ্রনাথের মতে, ‘অন্তরে অতৃপ্তি রবে/সাঙ্গ করি মনে হবে/শেষ হয়ে হইল না শেষ।’, অর্থাৎ ছোটোগল্পের সমাপ্তিতে নাটকীয় ব্যঞ্জনা থাকতে পারে। ছোটোগল্পে জীবনের পরিপূর্ণ অংশকে না ধরে জীবনের খন্ডাংশকে ধরে আর সেই জন্য ছোটোগল্পে কোনো উপকাহিনি থাকে না। ছোটোগল্পের এই বৈশিষ্ট্যগুলি কীভাবে ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে উপস্থিত হয়েছে তা দেখে নেব—

প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততা থেকে একটু পরিত্রাণের জন্য গল্পকথক ভিড় বাসে করে তেলেনাপোতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। বাস থেকে নেমে গোরুর গাড়িতে চড়েন। গোরুর গাড়ি একটি জীর্ণ অট্টালিকার সামনে এসে থামে। সেই অট্টালিকার একটি বাসযোগ্য ঘরে গল্পকথক ও তাঁর বন্ধুদের থাকার ব্যবস্থা হবে। পরদিন সকালে মাছ ধরার উপকরণ নিয়ে পুকুরঘাটে উপস্থিত হবেন। পুকুরঘাটে জল নিতে আসা যামিনীর সঙ্গে গল্পকথকের চোখাচোখি হবে। বন্ধু মণির কাছ থেকে যামিনী ও নিরঞ্জনের বিয়ের সম্পর্কের কথা তিনি জানতে পারবেন, নিরঞ্জনের ব্যাপারে উৎকণ্ঠিত যামিনীর অন্ধ বৃদ্ধা মায়ের কাছে গল্পকথক নিরঞ্জনের ভূমিকা নিয়ে প্রতিশ্রুতি দেবেন-“আমি তোমায় কথা দিচ্ছি মাসিমা। আমার কথার নড়চড় হবে না।” গল্পকথক মহানগরের রাজপথে ফিরে আসলে তেলেনাপোতার স্মৃতি অস্পষ্ট হয়ে যাবে। তেলেনাপোতার স্মৃতি অতল গভীরে নিমজ্জিত হবে।

গল্পের কাহিনির এই পরিসরটি আয়তনে ক্ষুদ্র। গল্পকথককে কেন্দ্র করে ঘটনাগুলি আবর্তিত হয়েছে। এখানে কোনো উপকাহিনি নেই। গল্পের সূচনা ও সমাপ্তিতে নাটকীয় ব্যঞ্জনা সৃষ্টি হয়েছে। যেমন সূচনায় বলা হয়েছে-‘শনি ও মঙ্গলের, মঙ্গলই হবে বোধ হয়,’ গল্পকথক ও তাঁর দুই বন্ধু, যামিনী ও তার বৃদ্ধা মা আর গাড়োয়ান এই কয়েকটি চরিত্রের মধ্য দিয়েই গল্পের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। শব্দচয়ন ও চিত্রকল্প ব্যবহারে যথেষ্ট পারদর্শিতা দেখা যায়। যেমন-‘মনে হবে নীচের জলা থেকে একটু ক্রুর কুণ্ডলিত জলীয় অভিশাপ ধীরে ধীরে অদৃশ্য ফণা তুলে উঠে আসছে।’ কয়েকটি শব্দ যেমন-‘আশ্চর্য সরোবর’, ‘মশাদের ঐকতান’, ‘মৎস্য-আরাধনা’, প্রভৃতি ব্যবহারে গল্পটি পেয়েছে এক অন্য মাত্রা। ক্ষুদ্র পরিসরে গল্পকথকের জীবনের এক খন্ডাংশকে অসাধারণ নিপুণতায় লেখক উপস্থিত করেছেন। তাই ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ বাংলা সাহিত্যে একটি অনন্য সাধারণ ছোটোগল্পের মর্যাদা লাভ করেছে।

১৭. “না মাসিমা আর পালাব না”-কে, কাকে উদ্দেশ্য করে উক্তিটি করেছে ? এই উক্তির আলোকে বক্তার মানসিকতার পরিচয় লিপিবদ্ধ করো।

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন গল্পকথক। গল্পকথক মাসিমা, অর্থাৎ যামিনীর বৃদ্ধা মাকে উদ্দেশ্য করে উক্তিটি করেছেন।

বক্তার মানসিকতার পরিচয় : গল্পকথক তেলেনাপোতায় এসে পুকুরঘাটে মাছ ধরার সময় যামিনীকে দেখতে পান। কথক তাঁর বন্ধু মণির থেকে যামিনীর পরিচয় পেয়েছিলেন। যামিনী ও নিরঞ্জন সম্পর্কের কথা জেনে গল্পকথক মণির সঙ্গে গিয়ে যামিনীর বৃদ্ধা মায়ের কাছে পৌঁছোন। যামিনীর অন্ধ মা নিরঞ্জনের সঙ্গে দেখা করার জন্য উৎকণ্ঠায় থাকেন। মণি ও তাঁর বন্ধুদের মধ্যে অপরিচিত কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়ে যামিনীর মা নিরঞ্জন এসেছে বলে মনে করে বলে, “অভাগী মাসিকে এতদিনে মনে পড়ল বাবা? তুই আসবি বলে প্রাণটা যে আমার কণ্ঠায় এসে আটকে আছে। কিছুতেই নিশ্চিন্ত হয়ে মরতে পারছিলাম না। এবার তো আর অমন করে পালাবি না?” যামিনীর বৃদ্ধা অন্ধ মায়ের এই করুণ আর্তিতে গল্পকথক নিরঞ্জনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নে উল্লেখিত উক্তিটি করেছেন।

নাগরিক জীবনে অভ্যস্ত গল্পকথকের এই উক্তির মধ্যে দিয়ে তার দায়িত্ববোধের প্রকাশ পাওয়া যায়। মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজের প্রতিনিধি সুলভ চরিত্র মানসিকতার স্বরূপ হয়ে উঠেছেন কথক। তেলেনাপোতার গ্রাম্যজীবনে সময় অতিবাহিত করার পর, সেই স্মৃতি কথকের কাছে অস্পষ্ট হয়ে যায়। ভালোবাসার অঙ্গীকার পালনের কথা তিনি ভুলে যান। তেলেনাপোতার স্মৃতি গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায়।

১৮. সে শব্দে আপনারা কিন্তু প্রতীক্ষায় চঞ্চল হয়ে উঠবেন।’- কারা, কোথায় প্রতীক্ষা করবেন ? কোন্ শব্দের কথা বলা হয়েছে ? তাদের প্রতীক্ষা ব্যর্থ হবে কিনা লেখো।

উত্তরঃ কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে দেখা যায় গল্পকথক ও তাঁর দুই বন্ধু তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্যে বিকেলবেলার পড়ন্ত রোদে বের হন। তাঁরা জিনিসে-মানুষে ঠাসাঠাসি একটি বাসে ওঠেন। ভাদ্রের গরমে ঘামে তাদের শরীর ভিজে যায়। তারপর ‘ঘণ্টা দুয়েক বাদে রাস্তার মাঝখানে নেমে পড়তে হবে আচমকা।’ সূর্য অস্ত না গেলেও জঙ্গলে চারিদিক অন্ধকার হয়ে এসেছে। তাঁরা কোনো মানুষজন বা পাখিও দেখতে পাবেন না। বড়ো রাস্তা থেকে নেমে কথক ভিজে জলার কাছে গিয়ে দাঁড়াবেন। ঘন জঙ্গলের ভিতর কাদাজলের নালা তাঁরা দেখতে পাবেন। গল্পকথক ও তাঁর বন্ধুরা, অর্থাৎ তিনজনে বাস থেকে নেমে জঙ্গলের এই নালার কাছে প্রতীক্ষা করবেন।

অপেক্ষা করতে করতে ঘন অন্ধকারে তাঁরা পরস্পরের মুখ ভালো করে দেখতে পাবেন না। এখান থেকেই ফিরে যাবেন কিনা ভাববেন। তখন জঙ্গলের কাদাজলের নালা থেকে, ‘অপরূপ একটি শ্রুতিবিস্ময়কর আওয়াজ পাবেন।’ এই আওয়াজটি হল গোরুর গাড়ি আসার শব্দ। এই শব্দের কথা এখানে বলা হয়েছে।

এই শব্দ শুনে কথক ও তাঁর বন্ধুরা অস্থির হয়ে উঠবেন। তাঁদের প্রতীক্ষা আর ব্যর্থ হবে না। অস্পষ্ট অন্ধকারে দেখা যাবে, ‘একটি গোরুর গাড়ি জঙ্গলের ভিতর থেকে নালা দিয়ে ধীর মন্থর দোদুল্যমান গতিতে বেরিয়ে আসবে।’ গাড়ি ও গোরুগুলি দেখে মনে হবে ‘পাতালের কোন বামনের দেশ’ থেকে বেরিয়ে এসেছে। বেশি কথা না বলে তিনজনে গোরুর গাড়ির ছইয়ের মধ্যে প্রবেশ করবেন। ছইয়ের মধ্যেকার অল্প জায়গায় তাঁরা কষ্ট করে বসবেন। তারপর গোরুর গাড়িটি যে পথ দিয়ে এসেছিল সেই নালার পথ ধরে চলতে থাকবে।

১৯. একবার ক্ষণিকের জন্য আবিষ্কৃত হয়ে তেলেনাপোতা আবার চিরন্তন রাত্রির অতলতায় নিমগ্ন হয়ে যাবে।’- কোন্ প্রসঙ্গে লেখক এই মন্তব্য করেছেন ? তেলেনাপোতা কীভাবে চিরন্তন রাত্রির অতলতায় নিমগ্ন হয়ে যাবে ?

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে সুদূর মহানগরী থেকে গল্পকথক মাছ ধরার নেশায় তেলেনাপোতায় উপস্থিত হন। পুকুরঘাটে মাঝরাঙা পাখি, সাপ কিংবা ফড়িং কথককে নানা সমস্যার সম্মুখীন করবে। স্থির জলে ঢেউ উঠলে তিনি দেখবেন একটি মেয়ে কলশিতে জল ভরছে। মেয়েটির নাম যামিনী ও তার সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বন্ধু মণির কাছ থেকে কথক জানতে পারবেন। যামিনীর অন্ধ বৃদ্ধা মায়ের কাছে নিরঞ্জনরূপী গল্পকথক যামিনীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দেবেন। কিন্তু গল্পকথক তাঁর সেই প্রতিশ্রুতিরক্ষার জন্য আর তেলেনাপোতায় উপস্থিত হতে পারবেন না। এই প্রসঙ্গে আলোচ্য উক্তিটি করা হয়েছে।

শহুরে কর্মব্যস্ততা থেকে একটু পরিত্রাণের জন্য গল্পকথক ও তাঁর দুই বন্ধু ‘জিনিসে-মানুষে ঠাসাঠাসি বাসে’ ঘণ্টাদুয়েক যাত্রার পর গোরুর গাড়িতে করে তেলেনাপোতায় পৌঁছোন। সেখানকার জীর্ণ অট্টালিকায় রাত্রিযাপন, নিশীথ রাত্রের ছায়ামূর্তি ও মৎস্যশিকার নৈপুণ্য প্রভৃতি ঘটনায় কথক রোমাঞ্চ অনুভব করবেন। ভালোবাসার অঙ্গীকার পূরণে ব্যর্থতা কথকের নাগরিক মধ্যবিত্ত মানসিকতাকে লেখক তুলে ধরেছেন। তেলেনাপোতার গ্রামীণ পরিবেশ থেকে ফিরে গিয়ে কথক ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত হন। দীর্ঘদিন বাদে দুর্বল শরীর নিয়ে কম্পিত পদে কথক আলোতে বসেন। এরই মধ্যে তাঁর দেহ ও মনে অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে-‘অস্ত যাওয়া তারার মতো তেলেনাপোতার স্মৃতি আপনার কাছে ঝাপসা একটা স্বপ্ন বলে মনে হবে।’ মনে হবে তেলেনাপোতা বলে আসলে কোথাও কিছু নেই। আর যামিনীকে ‘অবাস্তব কুয়াশার কল্পনা মাত্র’ বলে মনে হবে। তাই তেলেনাপোতার নানাবিধ স্মৃতি কথক ও তাঁর বন্ধুরা কিছু সময়ের জন্য আবিষ্কার করলেও চিরন্তন রাত্রির গভীরে তা নিমজ্জিত হয়ে যায়। লেখক কথক ও তাঁর বন্ধু এই চরিত্র সংযোজনের মধ্য দিয়ে মধ্যবিত্ত নাগরিক মানুষের চাওয়া-পাওয়াকে ব্যক্ত করেছেন।

২০. তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের রচনাশৈলী সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ বাংলা সাহিত্যে প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ একটি অসাধারণ ছোটোগল্প। গল্পটিতে লেখক বর্ণনার ভঙ্গি, বিষয়বস্তু উপস্থাপন, চরিত্র সংযোজন, কৌতুকপ্রিয়তা, রহস্যময়তা, বাক্য সংযোজন প্রভৃতি ক্ষেত্রে এক অভিনব উপস্থাপন রীতির পরিচয় দিয়েছেন। গল্পের সূচনায় রহস্যময়তার ইঙ্গিত, ‘শনি ও মঙ্গলের, মঙ্গলই হবে বোধ হয়, যোগাযোগ হলে তেলেনাপোতা আপনারাও একদিন আবিষ্কার করতে পারেন।’ গল্পকথক ও তাঁর দুই বন্ধু শহরের কর্মব্যস্ততা থেকে মুক্তি এবং মাছ ধরার জন্য ভিড় বাস ও গোরুর গাড়িতে করে তেলেনাপোতায় পৌঁছোন। গল্পের সূচনা থেকে উত্তম পুরুষে বলা এই গল্পে কথক পাঠককে মধ্যম পুরুষে সম্বোধন করে গেছেন। কাহিনির বর্ণনার মধ্যেই আছে চিত্রকল্প, ‘মনে হবে নীচের জলা থেকে একটু কুরকুণ্ডলিত জলীয় অভিশাপ ধীরে ধীরে অদৃশ্য ফণা তুলে উঠে আসছে।’

গল্পের কাহিনির বর্ণনার মধ্যে লেখক কৌতুকের আবহ সৃষ্টি করেছেন। ‘প্রথম বঁড়শিতে হৃদয়বিদ্ধ’, ‘সাবালক মশা’, ‘পাতালের কোন বামনের দেশ’, ‘মশাদের ঐক্যতান’ প্রভৃতি পাঠে পাঠকের মনে হাস্যরসের সঞ্চার হয়। লেখকের ব্যঞ্জনাময় ভাষা প্রয়োগ, ‘ফাটলে ফাটলে অরণ্যের পঞ্চম বাহিনী ষড়যন্ত্রের শিকড় চালিয়ে ভিতর থেকে এ অট্টালিকার ধ্বংসের কাজ অনেকখানি এগিয়ে রেখেছে;’ চরিত্রের মুখে সংযোজন করেছেন সহজ সরল ভাষা। যামিনীর মা কথকরূপী নিরঞ্জনকে বলেছে, “কে নিরঞ্জন এলি? অভাগী মাসিকে এতদিনে মনে পড়ল বাবা?” গল্পকথকের মৎস্যশিকার, যামিনীর মায়ের সঙ্গে কথোপকথন, তেলেনাপোতার স্মৃতি- সবকিছুরই বর্ণনায় লেখক অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।

‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ হল আমাদের অন্তরের অন্তরস্থলের অনুসন্ধান করা। আর সেইসব সফল হয়েছে লেখকের অসামান্য রচনাশৈলী প্রকাশের গুণে।

২১. একটি স্বপ্নের বুদবুদ ক্ষণিকের জন্য জীবনের জগতে ভেসে উঠে আবার মিলিয়ে গিয়েছে।’-অংশটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প থেকে আলোচ্য অংশটি সংগৃহীত হয়েছে। গল্পকথক ও তাঁর দুই বন্ধু মাঝরাস্তায় বাস থেকে নেমে গোরুর গাড়িতে কষ্ট সহ্য করে তেলেনাপোতায় পৌঁছোন। ক্ষুদ্র পুকুরের পাশে জীর্ণ একটি অট্টালিকায় বাসযোগ্য ঘরে কথক ও তাঁর বন্ধুদের থাকার ব্যবস্থা হবে। কথকের দুই বন্ধুর মধ্যে একজন শতরঞ্চি পেতে নাক ডেকে ঘুমোবেন এবং অপরজন মদ্যপান করবেন। গুমোট গরম থেকে পরিত্রাণের জন্য কথক ছাদে উঠবেন। ছাদে গিয়ে কথক দেখবেন অলিসা ভগ্ন অবস্থায় আছে। ‘ফাটলে ফাটলে অরণ্যের পঞ্চম বাহিনী ষড়যন্ত্রের শিকড় চালিয়ে ভিতর থেকে এ অট্টালিকার ধ্বংসের কাজ অনেকখানি এগিয়ে রেখেছে।’ গল্পকথকের মনে হবে মৃত্যু-নিদ্রায়-আচ্ছন্ন মায়াপুরীর কোনো গোপন গৃহে বন্দিনী রাজকুমারী সোনার কাঠি রূপার কাঠি পাশে রেখে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। রাস্তার ওপারের ভগ্নস্তূপের জানলায় কথক একটি ক্ষীণ আলোকরেখা দেখতে পাবেন। এরপর সেই আলোকরেখা আড়াল করে যেন এক রহস্যময়ী ছায়ামূর্তি সেখানে এসে দাঁড়াবে, তখন ‘গভীর নিশীথরাত্রে কে যে এই বাতায়নবর্তিনী, কেন যে তার চোখে ঘুম নেই, আপনি ভাববার চেষ্টা করবেন’। গল্পকথকের কাছে সবকিছু চোখের ভুল বলে মনে হবে। খানিক আগে দেখা জানলার ছায়ামূর্তি সরে গিয়েছে। আলোর হালকা রেখাও মুছে যাবে। গল্পকথক ছাদে গভীর রাতে যে নারীমূর্তি প্রত্যক্ষ করেছিলেন তা একটি স্বপ্নের বুদবুদ বলে মনে হবে। আর সেই স্বপ্ন কল্পনা জীবনে অল্প সময়ের জন্য ভেসে উঠে আবার মিলিয়ে যাবে।

২২. আমি তোমায় কথা দিচ্ছি মাসিমা। আমার কথার নড়চড় হবে না।”-কে, কাকে বলেছে কথাটি ? সত্যিই কী তার কথার নড়চড় হয়নি-তা লেখো।

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে গল্পকথক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন। যামিনীর মাকে উদ্দেশ্য করে উক্তিটি করা হয়েছে।

প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে গল্পকথক তেলেনাপোতায় পৌঁছে যামিনীর সাক্ষাৎ পান। বন্ধু মণির কাছ থেকে তিনি যামিনী ও নিরঞ্জনের সম্পর্কে জানতে পারেন। নিরঞ্জন কীভাবে যামিনীকে ফাঁকি দিয়ে অন্যত্র বিবাহ করেছে-এই ঘটনা কথককে বেদনার্ত করে তোলে। গল্পকথক ও তাঁর বন্ধু মিলে যামিনীর মায়ের কাছে যায়। নিরঞ্জনের চিন্তায় উৎকণ্ঠিত যামিনীর অন্ধ বৃদ্ধা মা কথককে দেখে নিরঞ্জন বলে মনে করে। যামিনীর মা যামিনীর নানা প্রশংসা নিরঞ্জনরূপী কথকের কাছে তুলে ধরে আর বলে, “যামিনীকে তুই নিবি তো বাবা? তোর শেষ কথা না পেলে আমি মরেও শান্তি পাব না।” যামিনীর মায়ের এই কথাগুলি শোনার পর গল্পকথক প্রশ্নে উল্লেখিত কথাগুলি বলেছিলেন।

মহানগর থেকে তেলেনাপোতায় আশা গল্পকথকের মনে স্বপ্ন আছে কিন্তু স্বপ্নপূরণের সামর্থ্য তার মধ্যে দেখা যায় না। তিনি ভালোবাসতে পারেন কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণে অনীহা দেখান। কথক যামিনীকে গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারেননি। তিনি তেলেনাপোতা থেকে শহরে পৌঁছে ম্যালেরিয়ায় জ্বরে আক্রান্ত হন। তাঁর দেহ ও মনের নানা পরিবর্তন ঘটে যায়। তেলেনাপোতার স্মৃতি তাঁর কাছে ‘ঝাপসা একটা স্বপ্ন’ বলে মনে হয়। আর যামিনী হয়ে ওঠে ‘অবাস্তব কুয়াশার কল্পনামাত্র।’ আসলে নিরঞ্জনের মতো মানুষেরা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারে না। তাই নিরঞ্জনরূপী কথকের কথার নড়চড় হয়ে যায়।

২৩. মনে হবে তেলেনাপোতা বলে কোথায় কিছু সত্যি নেই।’- এ কথা কার, কেন মনে হবে ? এই মনে হওয়ার কারণ কী ?

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্র বিরচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে গল্পকথকের মনে হবে তেলেনাপোতা বলে সত্যি কোথাও কিছু নেই। তেলেনাপোতা যেন অবাস্তব ও কাল্পনিক স্থান।

গল্পকথক তেলেনাপোতা থেকে ফিরে মহানগরের উজ্জ্বল রাজপথে পৌঁছোন। কথকের মনে হবে, ‘তেলেনাপোতার স্মৃতি সুদূর অথচ অতি অন্তরঙ্গ একটি তারার মতো উজ্জ্বল হয়ে আছে।’ তারপর একদিন সমস্ত বাধা-বিঘ্ন পরিত্যাগ করে তেলেনাপোতায় ফিরে যাওয়ার জন্য কথক প্রস্তুত হবেন। সেদিনই তিনি ম্যালেরিয়ায় জ্বরে আক্রান্ত হবেন। জ্বরের ঘোরে তিনি আচ্ছন্ন হয়ে পড়বেন। অনেকদিন পর অত্যন্ত দুর্বল শরীর নিয়ে বাইরের আলো বাতাসে কম্পিত পদে এসে তিনি বসবেন। তিনি বুঝতে পারবেন দেহ ও মনে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। তাঁর মনে হবে, ‘অস্ত যাওয়া তারার মতো তেলেনাপোতার স্মৃতি আপনার কাছে ঝাপসা একটা স্বপ্ন বলে মনে হবে।’ গল্পের এই প্রসঙ্গেই কথকের প্রশ্নে উল্লেখিত কথাগুলি মনে হয়েছিল।

গল্পকথক ও তাঁর দুই বন্ধু তেলেনাপোতায় মাছ ধরার জন্য যান, সেখানে কথকের যামিনীর সঙ্গে পরিচয় ঘটে। তিনি যামিনী ও নিরঞ্জনের বিষয় জেনে নিরঞ্জনের ভূমিকা নিয়ে যামিনীর মাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসেন। মহানগরে ফিরে সেই প্রতিশ্রুতি তিনি ভুলে যান। আসলে তেলেনাপোতা হল গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক প্রতীক। তেলেনাপোতার জীর্ণ অট্টালিকায় ম্যালেরিয়ার মতো রোগ, অসহায় বৃদ্ধার করুণ প্রতিচ্ছবি এগুলি যেন কোনো পল্লিগ্রামেরই নিদর্শন। নাগরিক জীবনে অভ্যস্ত মানুষেরা কয়েকদিনের অবসর কাটানোর জন্য গ্রামে উপনীত হয়, তাই মধ্যবিত্ত মানুষের প্রতিনিধিস্বরূপ গল্পকথক যামিনীর মাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভুলে যান। কথকের মনে হয়, ‘ধ্বংসপুরীর ছায়ার মতো সেই মেয়েটি হয়তো আপনার কোনো দুর্বল মুহূর্তের অবাস্তব কুয়াশার কল্পনা মাত্র।’

২৪. তেলেনাপোতা যাওয়ার কারণ কী ? একে লেখক ‘আবিষ্কার’ বলেছেন কেন ?

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে দুই বন্ধুর সঙ্গে গল্পকথক দুদিনের ছুটি উপভোগ করতে এবং ‘আশ্চর্য সরোবরে’ মাছ ধরার জন্য তেলেনাপোতায় যাওয়ার মনস্থির করেন।

আবিষ্কার বলার কারণ : সুদূর মহানগরী থেকে ত্রিশ মাইল দূরে তেলেনাপোতা অবস্থিত। এখানে যাওয়ার ব্যাপারকে লেখক আবিষ্কার বলে উল্লেখ করেছেন। আলোচ্য গল্পে লেখক একাধিক বার নানা প্রসঙ্গে ‘আবিষ্কার’ শব্দের প্রয়োগ করেছেন। শহরের কর্মব্যস্ত মানুষের কাছে তেলেনাপোতা নামক গ্রাম্য পরিবেশের খোঁজ পাওয়া সত্যিই এক অভূতপূর্ব আবিষ্কার। অন্ধকারাচ্ছন্ন জঙ্গলাকীর্ণ গ্রাম্য পরিবেশ, যাত্রাপথের বিস্ময়কর বর্ণনা, জীর্ণ অট্টালিকার বাসযোগ্য ঘরে রাত্রিযাপন, পুকুরঘাটে মৎস্যশিকার, যামিনী ও তাঁর অন্ধ বৃদ্ধা মায়ের নিরঞ্জনের জন্য উৎকণ্ঠা এই সবকিছুরই মধ্যে এক আবিষ্কারের প্রচেষ্টা লক্ষিত হয়েছে। গল্পকারের ভাষায়, ‘…আর জীবনে কখনো কয়েকটা পুঁটি ছাড়া অন্য কিছু জল থেকে টেনে তোলার সৌভাগ্য যদি আপনার না হয়ে থাকে, তাহলে হঠাৎ একদিন তেলেনাপোতা আপনিও আবিষ্কার করতে পারেন।’ আসলে তেলেনাপোতা একটি অবাস্তব ও কল্পিত স্থান। নিজ অন্তরের গভীর আত্মানুসন্ধানই হল তেলেনাপোতা। ম্যালেরিয়ার মড়কে তেলেনাপোতার চলমান জীবন্ত জগৎ এখন বিস্মৃতি বিলীন। শহরের অধিকাংশ মানুষের কাছে এই সৃষ্টি অপরিচিত। তাই তেলেনাপোতায় যাওয়াকে লেখক আবিষ্কার বলেছেন।

২৫. আমি জানতাম, তুই না এসে পারবি না বাবা। তাই তো এমন করে এই প্রেতপুরী পাহারা দিয়ে দিন গুনছি।”- কে, কখন এই মন্তব্য করেছিল ? উদ্দিষ্ট ব্যক্তি এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে কী জানাবেন?

উত্তরঃ কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে দেখা যায় গল্পকথক দুদিনের অবসর পেয়ে তেলেনাপোতায় আসেন। পৌঁছোনোর পরদিন সকালে নানাবিধ উপকরণ নিয়ে মৎস্যশিকারে নিয়োজিত হন। মাছ ধরার সেই পুকুরঘাটে কথক যামিনীকে দেখতে পান। কথকের বন্ধু মণির কাছ থেকে যামিনীর নানা পরিচয় শুনতে পান। যামিনীর অন্ধ মা নিরঞ্জনের সঙ্গে দেখা করার জন্য উৎকণ্ঠায় থাকেন। এদিকে গল্পকথক বন্ধু মণির সঙ্গে যান যামিনীর মায়ের কাছে দেখা করতে। কথক ঘরে গিয়ে দেখবেন একটি ভাঙা তক্তাপোশে ‘ছিন্ন-কথা জড়িত একটি শীর্ণ কঙ্কালসার মূর্তি শুয়ে আছে।’ গল্পকথকদের পায়ের শব্দ শুনে যামিনীর মা বলবে, “কে নিরঞ্জন এলি? অভাগী মাসিকে এতদিনে মনে পড়ল বাবা?” এই ধরনের কথা শুনতে শুনতে কথক যামিনীর অন্ধ বৃদ্ধা মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকবেন। ধীরে ধীরে কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর যামিনীর মা গল্পকথককে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নে উদ্ধৃত কথাগুলি বলবেন।

বৃদ্ধা কথাগুলি বলে হাঁফাবেন। কথক যামিনীর উপর একবার দৃষ্টি বুলিয়ে নেবেন। বৃদ্ধা আবার বলবেন, “যামিনীকে নিয়ে তুই সুখী হবি বাবা।” যামিনীর মা নিরঞ্জনরূপী গল্পকথককে যামিনীর বিবিধ গুণ ও প্রশংসার কথা শোনাবেন। কথাগুলি শোনার পর কথকের চোখে জল এসে যাবে। প্রশ্নে উল্লিখিত কথার পরিপ্রেক্ষিতে গল্পকথক জানাবেন, “আমি তোমায় কথা দিচ্ছি মাসিমা। আমার কথার নড়চড় হবে না।” এরপর বিকেলবেলায় গোরুর গাড়ি আসলে কথক ও তাঁর বন্ধুরা তাতে উঠে পড়বেন। তেলেনাপোতার গ্রাম্য পরিবেশ ছেড়ে কথক মহানগরের আলোকোজ্জ্বল রাজপথে উপস্থিত হবেন। যামিনীর মাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা কথক ভুলে যাবেন।

২৬. “মাছেরা আপনার শক্তি-সামর্থ্য সম্বন্ধে গভীর অবজ্ঞা নিয়েই বোধ হয় আর দ্বিতীয়বার প্রতিযোগিতায় নামতে চাইবে না।”- কোন্ প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করা হয়েছে ? মাছেরা দ্বিতীয়বার প্রতিযোগিতায় নামতে চাইবে না কেন ?

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে গল্পকথক ও তাঁর দুই বন্ধু মহানগরী থেকে ত্রিশ মাইল দূরে তেলেনাপোতায় এসেছিলেন। কথকের আসল উদ্দেশ্য ছিল মাছ ধরা। ‘এক সময়ে ষোড়শোপচার আয়োজন নিয়ে মৎস্য-আরাধনার জন্যে… যথোচিত নৈবেদ্য সমেত বঁড়শি নামিয়ে দেবেন।’ একটি মাছরাঙা কথককে উপহাস করবে। আবার ঘুঘু পাখির ডাকে কথক আনমনা হয়ে যাবেন। তারপর স্থির জলে ঢেউ উঠলে ফাতনা দুলতে থাকবে। কথক দেখবেন একটি মেয়ে কলশিতে জল ভরছে। মেয়েটি চলে যাওয়ার সময় বলবে, “বসে আছেন – কেন? টান দিন।” মেয়েটির কণ্ঠস্বর কথককে আবিষ্ট করে তুলবে। হঠাৎ চমকিত হওয়ার জন্য কথক ছিপে টান দিতে ভুলে যাবেন। ‘তারপর ডুবে – যাওয়া ফাতনা আবার ভেসে উঠবার পর ছিপ তুলে দেখবেন বঁড়শিতে টোপ আর নেই।’ গল্পকথকের আসল উদ্দেশ্য ছিল মাছ ধরা কিন্তু তাতে – তিনি ব্যর্থ হলেন। কথকের মাছ ধরার ব্যর্থতার প্রসঙ্গেই আলোচ্য উক্তিটি করা হয়েছে।

মাছেরা দ্বিতীয়বার প্রতিযোগিতায় নামতে চাইবে না কারণ: মাছেরা এরই মধ্যে বুঝতে পেরেছে কথক মাছ ধরার থেকে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন বেশি। পুকুরঘাটের নির্জনতা ভঙ্গ হয় না। মাছরাঙা পাখি লজ্জা দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করে আগেই উড়ে গেছে। গল্পকথক মাছ – ধরার থেকে পুকুরঘাটে জল নিতে আসা যামিনীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়েছেন। তার শান্ত মধুর, গম্ভীর কণ্ঠ কথকের অস্বাভাবিক মনে হয় না। – মেয়েটির দীপ্ত হাসি কথককে চমকিত করবে। মাছ ধরার বিষয়ে কথক উদাসীন হয়ে পড়বে। তাই কথকের বঁড়শিতে হৃদয়বিদ্ধ হওয়ার জন্য মাছেরা দ্বিতীয়বার প্রতিযোগিতায় নামতে চাইবে না।

২৭. “একটু এখানে শুনে যাও মণিদা”-বক্তা ও মণিদার পরিচয় দাও। মণিদাকে ডাকার কারণ লেখো।

উত্তরঃ বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প থেকে আলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে। প্রশ্নে উল্লেখিত অংশটির বক্তা হলেন যামিনী। গল্পকথক তেলেনাপোতায় এসেছিলেন দুইজন বন্ধুর সহযোগে। একজন পানরসিক এবং অপরজন নিদ্রাবিলাসী। গল্পকথকের পানরসিক বন্ধুটির নাম মণি। মেয়েটি পানরসিক বন্ধুর জ্ঞাতিস্থানীয়া।

গল্পকথক ও তাঁর বন্ধুরা যামিনীদের বাড়িতে – সেদিনের দুপুরের ভোজন করেন। আয়োজন খুবই অল্প ছিল এবং যামিনী নিজ হাতে পরিবেশন করে। খাওয়ার পর বিশ্রাম করার সময় যামিনী তার মণিদাকে ডেকেছিল। যামিনী খুব কাতর স্বরে মণিদাকে জানায়, “মা তো কিছুতেই শুনছেন না। তোমাদের আসার খবর পাওয়া অবধি কী যে অস্থির হয়ে উঠেছেন কী বলব!” এরপর মণি বলবে, “ওঃ সেই খেয়াল এখনো! নিরঞ্জন এসেছে, ভাবছেন বুঝি?” যামিনীর মা ছেলেবেলায় তার দূর-সম্পর্কের এক বোনপো নিরঞ্জনের সঙ্গে যামিনীর বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলেন। নিরঞ্জন জানিয়ে যায় বিদেশের চাকরি থেকে ফিরে তার মেয়েকে বিয়ে করবে। সেই থেকে যামিনীর মা আশায় আশায় বসে আছেন। যামিনীর মা এখন বৃদ্ধা ও অন্ধ হয়ে গেছে। বাড়িতে কেউ এলে মনে করেন বুঝি নিরঞ্জন এসেছে। তাই গল্পকথক ও তাঁর বন্ধুরা যখন যামিনীদের বাড়িতে আহার করছিলেন তখন যামিনীর মা মনে করে নিরঞ্জন এসেছে, আর যামিনীকে জানায়, “সে নিশ্চয় এসেছে! শুধু লজ্জায় আমার সঙ্গে দেখা করতে পারছে না।” নিরঞ্জন আসার ব্যাপারে যামিনীর মায়ের ধারণা ভুল। আর এই ভুলটি শুধরে দেওয়ার জন্যই যামিনী মণিদাকে ডাকতে যায়।

দ্বিতীয় সেমিস্টার বাংলা প্রশ্নোত্তর

ছুটি পাঠ্য বইয়ের গল্প

ছুটি গল্পের বিষয়বস্তু

ছুটি গল্পের প্রশ্ন উত্তর

তেলেনাপোতা আবিষ্কার পাঠ্য বইয়ের গল্প

তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের বিষয়বস্তু

তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের প্রশ্নোত্তর

ভাব সম্মিলন কবিতার বিষয়বস্তু

ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর

লালন শাহ্ ফকিরের গান বিষয়বস্তু

লালন শাহ্ ফকিরের গান প্রশ্নোত্তর

নুন কবিতার বিষয়বস্তু

নুন কবিতার প্রশ্ন উত্তর

আগুন পাঠ্য বইয়ের নাটক

আগুন নাটকের বিষয়বস্তু

আগুন নাটকের প্রশ্ন উত্তর

বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর

আজব শহর কলকেতা প্রবন্ধের প্রশ্নোত্তর

পঁচিশে বৈশাখ প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর

আড্ডা প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ধারা (৩য়) প্রশ্নোত্তর

লৌকিক সাহিত্যের নানা দিক (৪র্থ) প্রশ্নোত্তর

📌 আরো দেখুনঃ

📌 একাদশ শ্রেণি প্রশ্নপত্র সেমি-২ Click Here

📌 একাদশ শ্রেণি প্রশ্নোত্তর বাংলা Click Here

📌 একাদশ শ্রেণি সিলেবাস বাংলা Click Here

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

Leave a Reply

  • Post comments:0 Comments
  • Reading time:30 mins read