অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার বিষয়বস্তু দশম শ্রেণি বাংলা | Astrer Biruddhe Gaan Kobitar Bishoibostu Class 10 Bengali West Bengal Board

অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান
—জয় গোস্বামী

অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার বিষয়বস্তু দশম শ্রেণি বাংলা | Astrer Biruddhe Gaan Kobitar Bishoibostu Class 10 Bengali West Bengal Board

সাহিত্য সঞ্চয়ন
দশম শ্রেণি বাংলা (প্রথম ভাষা)

অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার কবিতা, কবি পরিচিতি, বিষয়বস্তু, সারাংশ, সারমর্ম, সারসংক্ষেপ, নামকরণ দশম শ্রেণি বাংলা | Astrer Biruddhe Gaan Kobitar Bishoibostu Class 10 Bengali wbbse

📌দশম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র Click Here

📌 দশম শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর Click Here

অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান
—জয় গোস্বামী

অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো পায়ে
আমি এখন হাজার হাতে পায়ে
এগিয়ে আসি, উঠে দাঁড়াই
হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াই
গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে

গান তো জানি একটা দুটো
আঁকড়ে ধরে সে-খড়কুটো
রক্ত মুছি শুধু গানের গায়ে
মাথায় কত শকুন বা চিল
আমার শুধু একটা কোকিল
গান বাঁধবে সহস্র উপায়ে

অস্ত্র রাখো, অস্ত্র ফ্যালো পায়ে
বর্ম খুলে দ্যাখো আদুড় গায়ে
গান দাঁড়াল ঋষিবালক
মাথায় গোঁজা ময়ূরপালক
তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান
নদীতে, দেশগাঁয়ে

অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো গানের দুটি পায়ে…

জয় গোস্বামী : জন্ম ১৯৫৪, কলকাতায়। বাংলা সাহিত্যের এক খ্যাতিমান কবি। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য কবিতার বই ‘প্রত্নজীব’, ‘উন্মাদের পাঠক্রম’, ‘ভুতুমভগবান’, ‘ঘুমিয়েছ ঝাউপাতা?’, ‘বজ্রবিদ্যুৎভর্তি খাতা’, ‘পাগলী তোমার সঙ্গে’, ‘সূর্য পোড়া ছাই’, ‘হরিণের জন্য একক’, ‘ভালোটি বাসিব’, ‘হার্মাদ শিবির’, ‘গরাদ! গরাদ!’ প্রভৃতি। ‘যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল’ তাঁর স্মরণীয় কাব্য-উপন্যাস। তাঁর রচিত বিখ্যাত উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘সেই সব শেয়ালেরা’, ‘সুড়ঙ্গ ও প্রতিরক্ষা’ প্রভৃতি। বাংলা কবিতার আলোচনায় তাঁর লেখা ‘আকস্মিকের খেলা’, ‘আমার রবীন্দ্রনাথ’, ‘গোঁসাইবাগান (তিন খণ্ড)’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। সাহিত্যকৃতির জন্য তিনি আনন্দ পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার সহ বহুবিধ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।

উৎস : ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটি ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত ‘পাতার পোষাক’ কাব্যগ্রন্থ থেকে গৃহীত। ‘পাতার পোষাক’ কাব্যটিতে মোট কবিতার সংখ্যা পঞ্চান্নটি। ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটি এই গ্রন্থের ২০ সংখ্যক কবিতা।

মূল বক্তব্য / যুদ্ধবিরোধী কবিতা : আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জয় গোস্বামীর লেখা অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতায় ধ্বনিত হয়েছে আধুনিক বিশ্বের উন্মত্ত হিংসার বিরুদ্ধে এক অভিনব প্রতিবাদ।

ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে গোটা পৃথিবীর রাষ্ট্রশক্তিগুলি আজ ছুটে চলেছে এক অদ্ভুত অবক্ষয়ের দিকে। অস্ত্রের প্রতিযোগিতা, হিংসার বেসাতি আর যুদ্ধের হুংকার বিপন্ন করছে শান্তিকামী সাধারণ মানুষের জীবনকে। এইসব সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হয়েই কবির কণ্ঠ থেকে উঠে এসেছে এক পরম আহ্বান: “অস্ত্র ফেলো, অস্ত্র রাখো গানের দুটি পায়ে।” গান হল সংবেদনশীলতা ও সৌন্দর্যের প্রতীক। একজন স্রষ্টা হিসেবে নিজের সুললিত ছন্দোবদ্ধ কবিতার মধ্যে দিয়ে মানব হৃদয়কে সুবাসিত করাই কবির কাজ। এই দিক দিয়ে একজন গায়কের সঙ্গে কবির কোনো পার্থক্য নেই; পার্থক্য নেই গানের সঙ্গে কবিতার। অহিংসায় বিশ্বাসী কবি তাঁর গানের ডালি নিয়ে হিংসার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন। নিজের সুললিত সৃষ্টির দ্বারা তিনি মুছে দিতে চান হিংসার ক্ষত। লড়াই অসম জেনেও কবি এগিয়ে আসেন। বুলেটের বিরুদ্ধে বুলেট নয়, হিংসার বিরুদ্ধে হিংসা নয়, তিনি লড়ছেন নিজের কবিতার অস্ত্রে। মানব সমাজকে তিনি অহিংসার মন্ত্রে দীক্ষা দিতে ব্রতী হয়েছেন। এই কবিতার ছত্রে ছত্রে রয়েছে হিংসা ত্যাগ করে সৌন্দর্যের প্রতীক। একজন স্রষ্টা হিসেবে নিজের সুললিত ছন্দোবদ্ধ কবিতার মধ্যে দিয়ে মানব হৃদয়কে সুবাসিত করাই কবির কাজ। এই দিক দিয়ে একজন গায়কের সঙ্গে কবির কোনো পার্থক্য নেই; পার্থক্য নেই গানের সঙ্গে কবিতার। অহিংসায় বিশ্বাসী কবি তাঁর গানের ডালি নিয়ে হিংসার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন। নিজের সুললিত সৃষ্টির দ্বারা তিনি মুছে দিতে চান হিংসার ক্ষত। লড়াই অসম জেনেও কবি এগিয়ে আসেন। বুলেটের বিরুদ্ধে বুলেট নয়, হিংসার বিরুদ্ধে হিংসা নয়, তিনি লড়ছেন নিজের কবিতার অস্ত্রে। মানব সমাজকে তিনি অহিংসার মন্ত্রে দীক্ষা দিতে ব্রতী হয়েছেন। এই কবিতার ছত্রে ছত্রে রয়েছে হিংসা ত্যাগ করে সৌন্দর্যের প্রতিরূপ সঙ্গীতের কাছে আশ্রয় নেওয়ার বার্তা। তাই মোটের উপর সমগ্র কবিতাটিকেই একটি সার্থক যুদ্ধবিরোধী বা হিংসাবিরোধী কবিতা বলা যায়।

বিষয়সংক্ষেপ : কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় যুদ্ধ ও হিংসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। কবি বলেছেন— অস্ত্র ত্যাগ করে জীবনমুখী গানকে অবলম্বন করতে হবে। হাতে ধরা অস্ত্র পায়ে ফেলে দিয়ে তার অহংকার ও ক্ষমতাকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে।

কবি মানবসমাজের প্রতিনিধি হয়ে ঐক্যবদ্ধ মানুষের শক্তিকে সামনে এনেছেন। সাম্রাজ্যবাদীর বুলেটকে তিনি তাচ্ছিল্যের সঙ্গে উপেক্ষা করেছেন, কারণ তাঁর হাতে আছে অহিংসার গান— মানবতার গান।

একটা-দুটো গানও মানুষের বেঁচে থাকার ভরসা। সেই গানের গরিমাই অস্ত্রের ঔদ্ধত্যকে হার মানাতে পারে। অস্ত্রধারীরা শকুন বা চিলের মতো মানুষের প্রাণ নিতে উদ্যত, কিন্তু কবির হৃদয় কোকিলের মতো শান্তি ও মানবতার গান শোনাতে চায়।

অস্ত্র ফেলে অহংকারের বর্ম খুলে দাঁড়ালে দেখা যাবে ঋষিবালকের বেশে গান— সরল, নিষ্পাপ ও প্রেমময়। তার মাথায় ময়ূরপালক, যা সৌন্দর্যের প্রতীক। সেই গান মানুষকে জীবন ও পৃথিবীর প্রকৃত রূপ চিনতে সাহায্য করবে। গ্রামেগঞ্জে, নদীনালায় ছড়িয়ে পড়বে মানবপ্রেমের বার্তা।

অতএব কবি বার্তা দিয়েছেন— অস্ত্রকে গানের পায়ে নামিয়ে রেখে অহিংসা, মানবতা ও প্রেমের পথে চলাই মানুষের সত্যিকারের মুক্তি।

সহজ কথায় : এই কবিতার মূল বক্তব্য হলো অস্ত্র নয়, গানই মানুষের রক্ষাকবচ। গান মানেই শান্তি, প্রেম আর মানবতা।

নামকরণ : সাহিত্যে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কবিতা বা গল্পের নামকরণের মধ্যেই তার মূল ভাব বা ব্যঞ্জনা ফুটে ওঠে। কাজেই নামকরণ কখনও বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক, কখনও চরিত্রধর্মী আবার কখনও ব্যঞ্জনাধর্মী হতে পারে।

‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতার শিরোনামটি ব্যঞ্জনাধর্মী। কবিতার মূল বক্তব্য যুদ্ধবিরোধী হলেও, কবি এখানে অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র নয়, বরং গানের শক্তিকে বেছে নিয়েছেন। কবিতার শুরুতেই কবি শান্তিকামী মানুষের মতোই অস্ত্র ফেলার আহ্বান জানিয়েছেন। যুদ্ধবাজদের আত্মসমর্পণের প্রতীক হিসেবে কবি গানকে ব্যবহার করেছেন। তাঁর বিশ্বাস, গান নামক শান্তির বর্ম দিয়ে অশুভ শক্তি ও ধ্বংসকে রোখা সম্ভব। কবিতায় চিল-শকুন যুদ্ধবাজদের প্রতীক আর কোকিল মানুষের সৃজনশীল সত্তার প্রতীক। এই কোকিল কবিকে গান দেবে, যা সমাজকে মনুষ্যত্বের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাই কবি হিংসার বিরুদ্ধে হিংসা নয়, বরং গানকে বর্ম করেই শান্তি অর্জন করতে চান। অতএব বলা যায়, কবিতার শিরোনাম ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ গভীর ব্যঞ্জনা বহন করে এবং মূল ভাবকে সার্থকভাবে প্রকাশ করেছে। তাই কবিতাটির নামকরণ যথার্থ ও সার্থক।

📌 আরো দেখুনঃ

📌দশম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র Click Here

📌 দশম শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর Click Here

📌 মাধ্যমিক সমস্ত বিষয় প্রশ্নপত্র Click Here

📌 মাধ্যমিক সমস্ত বিষয় মক্ টেস্ট Click Here

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

Leave a Reply

  • Post comments:0 Comments
  • Reading time:5 mins read