কর্ভাস গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নবম শ্রেণি বাংলা | Korvas Golper Essay Type Question Answer Class 9 Bengali wbbse

প্রোফেসর শঙ্কুর ডায়রি
নবম শ্রেণি। বাংলা সহায়ক পাঠ

কর্ভাস গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নবম শ্রেণি বাংলা | Korvas Golper Essay Type Question Answer Class 9 Bengali wbbse

📌নবম শ্রেণি ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র Click Here

📌 নবম শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর Click Here

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর কর্ভাস গল্প (সত্যজিৎ রায়) নবম শ্রেণি বাংলা সহায়ক পাঠ | Essay Type Question Answer Korvas Class 9 Bengali wbbse

• কম-বেশী ১৫০টি শব্দের মধ্যে উত্তর দাও : প্রতিটি প্রশ্নের মান-৫

১. ‘অন্য প্রাণীর তুলনায় পাখির ক্ষমতা আরও আরও বিস্ময়কর’— ‘কর্ভাস’ গল্প অনুসারে মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো।

উত্তরঃ সত্যজিৎ রায়ের রচিত কর্ভাস গল্পে,প্রোফেসর শঙ্কু প্রথমেই বাবুইয়ের দৃষ্টান্ত দেন। সামান্য খড়কুটোর সাহায্যে তারা যে বাসা বানায় তা আমাদের বিস্মিত করে।একজন মানুষের পক্ষে এমন বাসা বানানো প্রায় অসম্ভব, আর যদি-বা সম্ভব হয় তাহলে মাসখানেকের অক্লান্ত গল্পাংশে বর্ণিত নানান পরিশ্রমের প্রয়োজন হবে। এরপর তিনি পাখির ক্ষমতা অস্ট্রেলিয়ান ম্যালি-ফাউলের প্রসঙ্গে আসেন। তারা ডিমে তা দেয় না। তার বদলে বালি, মাটি ও উদ্ভিদ দিয়ে ঢিপির মতো বাসা বানায়। বাইরের আবহাওয়ার তারতম্য সত্ত্বেও এই বাসার ভিতরের তাপমাত্রা আটাত্তর ডিগ্রি ফারেনহাইটের এদিক-ওদিক হয় না।আর ডিম ফুটে ছানা বেরোনোর জন্য এই উত্তাপেরই প্রয়োজন হয়। পাখিদের আশ্চর্য রহস্যময় ক্ষমতা আরও আছে, যেমন গ্রিব। তারা যে কেন নিজেদের পালক ছিঁড়ে খায় এবং ছানাদের খাওয়ায় তা কেউ জানে না। আবার এরাই শত্রুদের হাত থেকে বাঁচতে দেহ ও পালক থেকে বাতাস বের করে শরীরের স্পেসিফিক গ্র্যাভিটি বাড়িয়ে গলা অবধি জলে ডুবেও ভেসে থাকে। এ ছাড়াও যাযাবর পাখির দিকনির্ণয় ক্ষমতা, বাজপাখির শিকারের দক্ষতা, শকুনের ঘ্রাণশক্তি এবং বিভিন্ন পাখির সংগীতপ্রতিভা প্রভৃতির কথা বিবেচনা করেই শঙ্কু অন্য প্রাণীদের তুলনায় পাখিদের বিস্ময়কর ক্ষমতার প্রশংসা করেছেন।

২. “আমার সে ধারণা প্রায় পালটে গেল।”– কার, কোন ধারণার কথা বলা হয়েছে ? তা কীভাবে পালটে গেল ?

উত্তরঃ সত্যজিৎ রায় রচিত ‘কর্ভাস’ কাহিনি থেকে উদ্ধৃত উক্তিটিতে প্রোফেসর শঙ্কুর ধারণার কথা বলা হয়েছে।

ছেলেবেলায় প্রোফেসর শঙ্কুর ধারণা ছিল যে পাখি কথা বললেও সেই কথার মানে বোঝে না।

ছেলেবেলায় প্রোফেসর শঙ্কুর বাড়িতে একটি পোষা ময়না ছিল। প্রোফেসর শঙ্কু তাকে একশোর উপর বাংলা শব্দ স্পষ্টভাবে বলতে শিখিয়েছিলেন। কিন্তু এই সময় তাঁর ধারণা ছিল, পাখি কথা বললেও সেই কথার মানে বুঝতে পারে না। একদিন দুপুরবেলা তিনি স্কুল থেকে ফেরার পর তাঁর মা যখন তাঁকে মোহনভোগ খেতে দিয়েছেন তখন হঠাৎই ময়নাটা ‘ভূমিকম্প, ভূমিকম্প’ বলে চেঁচিয়ে ওঠে। সেই সময় কেউ কোনো কম্পন অনুভব করতে পারেনি। কিন্তু পরের দিন কাগজে বেরোয় যে সিসমোগ্রাফ যন্ত্রে সত্যিই নাকি একটা মৃদু কম্পন ধরা পড়েছে। এই ঘটনার পর থেকেই প্রোফেসর শঙ্কুর এই ধারণা পালটে যায় যে পাখি কথা বললেও কথার মানে বোঝে না। তিনি বুঝতে পারেন, পাখিরা যেমন কথা বলতে পারে, তেমন সেই কথার মানেও বুঝতে পারে।

৩. “কর্ভাস যে এখন সাধারণ কাকের থেকে নিজেকে আলাদা রাখতে চায়”– কী করে বোঝা যায় কর্ভাস সাধারণ কাকের থেকে নিজেকে আলাদা রাখতে চায় ?

উত্তরঃ সেদিন ছিল ২২শে অক্টোবর। দুপুরে হঠাৎ বজ্রবিদ্যুৎ-সহ প্রচন্ড বৃষ্টি হয়েছিল। বেলা তিনটে নাগাদ একটা কান ফাটানো বাজ পড়ার শব্দ শুনে জানালার কাছে গিয়ে প্রফেসর শঙ্কু দেখলেন যে, তার বাগানের শিমুল গাছের মাথা থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। বিকেলে বৃষ্টি থামার পর, সেই তল্লাটে যত কাক ছিল সব ওই মরা শিমুল গাছটার জড়ো হয়ে কোলাহল করছিল। তখন তিনি চাকর প্রহ্লাদকে ব্যাপারটা দেখতে পাঠান। সে ফিরে এসে জানালো একটা কাক মরে পড়ে আছে গাছটার নিচে। তাই সমস্ত কাক সেখানে হল্লা লাগিয়েছে। কিন্তু কর্ভাস ঘর থেকে বের হবার কোনো আগ্রহ দেখালো না। সে একমনে পেন্সিল মুখে দিয়ে প্রাইম নাম্বার লিখে যাচ্ছিল। এই ঘটনা থেকেই বোঝা যায় যে,কর্ভাস এখন সাধারণ কাকের থেকে নিজেকে আলাদা রাখতে চায়।

৪. ‘সব পাখির মধ্যে একটি বিশেষ পাখি বিশেষভাবে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।’– প্রসঙ্গ উল্লেখ করে লেখো কোন্ বিশেষ পাখি কী কারণে প্রোফেসর শঙ্কুর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল ? এই পাখিটিকে শঙ্কু কোন্ কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন ?

উত্তরঃ সত্যজিৎ রায়ের কর্ভাস কাহিনি থেকে উদ্ধৃত অংশে উল্লিখিত পাখিটি হল একটি সাধারণ কাক।

প্রসঙ্গঃ প্রোফেসর শঙ্কু লক্ষ করে দেখেন যে কাকটির হাবভাব অন্যান্য কাকের চেয়ে আলাদা। কাকটির ডান চোখের নীচে একটা সাদা ফুটকি থাকায় তাকে অন্য কাকেদের থেকে সহজেই আলাদা করে চেনা যেত। প্রোফেসর খেয়াল করে দেখতে পান কাকটি ঠোঁটে পেনসিল নিয়ে টেবিলের ওপর আঁচড় কাটছে। এই ধরনের আচরণ তিনি অন্য কোনো পাখিকে করতে দেখেননি।

দৃষ্টি আকর্ষণঃ একটা ব্যাপারে তো তিনি রীতিমতো হকচকিয়ে গিয়েছিলেন। একদিন একটা খচখচ শব্দ পেয়ে তিনি ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখেন, কাকটা একটা আধখোলা দেশলাইয়ের বাক্স থেকে ঠোঁট দিয়ে কাঠি বের করে তার মাথাটা বাক্সের পাশটায় ঘষছে। প্রোফেসর হুসহুস শব্দ করে তাকে থামালে সে জানলায় বসে মুখ দিয়ে দ্রুত এমন একটা শব্দ করে যা শুনে প্রোফেসর শঙ্কুর মনে হয় সে যেন হাসছে। এই সমস্ত কারণেই এই কাকটি বিশেষভাবে প্রোফেসর শঙ্কুর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।

উদ্দিষ্ট কাজঃ এই কাকটিকে প্রোফেসর শঙ্কু তাঁর পাখি নিয়ে গবেষণার কাজের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন।

৫. ম্যালি ফাউল ও গ্রিব নামের পাখি সম্পর্কে আমরা কর্ভাস গল্পে কী কী তথ্য পাই ?

উত্তরঃ সত্যজিৎ রায় রচিত কর্ভাস গল্পে আমরা ম্যালি ফাউল এবং গ্রিব নামক পাখির বৈশিষ্ট্যের কথা জানতে পারি।

ম্যালি ফাউলঃ অস্ট্রেলিয়াতে বসবাসকারী ম্যালি-ফাউল বলে এক বিশেষ প্রজাতির পাখির উল্লেখ আছে, যারা মাটিতে বাসা তৈরি করে। বালি, মাটি আর নানারকম উদ্ভিজ্জ দিয়ে তারা একটি ঢিপি তৈরি করে, আর তার ভিতরে ঢোকার জন্য একটি গর্ত থাকে। তারা বাসার ভিতরে ডিম পাড়ে, কিন্তু ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার জন্য ডিমে তা দেয় না। ম্যালি-ফাউলরা কোনো-এক আশ্চর্য ও অজ্ঞাত কৌশলে বাসার ভিতরের তাপমাত্রা ঠিক আটাত্তর ডিগ্রি ফারেনহাইট রাখে, এক ডিগ্রিও এদিক-ওদিক হতে দেয় না। বাইরের আবহাওয়া ঠান্ডা বা গরম যাই থাকুক না কেন, তাদের বাসার ভিতরের তাপমাত্রা আটাত্তর ডিগ্রি ফারেনহাইটেই স্থির থাকে। এই উষ্ণতাই ডিম ফুটে শাবক বেরোনোর জন্য আদর্শ।

গ্রিব পাখিঃ গ্রিব নামক একধরনের পাখি আছে যারা নিজেরাই নিজেদের পালক ছিঁড়ে খায় আর শাবকদেরও খাওয়ায়। তাদের এই আচরণের কারণ কেউ জানে না। এরা আবার জলে ভাসমান অবস্থায় কোনো শত্রুর আগমনের ইঙ্গিত পেলে, নিজের দেহ ও পালক থেকে কোনো-এক অজ্ঞাত উপায়ে বায়ু বার করে দিয়ে শরীরের স্পেসিফিক গ্র্যাভিটি বা আপেক্ষিক গুরুত্ব বাড়িয়ে গলা অবধি জলে ডুবে থাকতে পারে।

৬. পাখি সম্পর্কে প্রফেসর শঙ্কুর কৌতুহলের পরিচয় দাও।

উত্তরঃ প্রত্যেক প্রাণীরই কিছু নির্দিষ্ট সহজাত ক্ষমতা থাকে। প্রফেসর শঙ্কুর ধারণায়, অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় পাখির ক্ষমতা আরো বেশি বিস্ময়কর। একটা বাবুই পাখির বাসা হাতে নিয়ে দেখলে অবাক হতে হয়। একজন মানুষকে যদি ঐরকম একটা বাসা তৈরি করতে বলা হয় সেই কাজটা আদৌ করতে পারা যাবে না আর করা গেলেও অনেক পরিশ্রম লেগে যাবে।

অস্ট্রেলিয়ার ম্যালি-ফাউল পাখি মাটিতে বাস করে। তারা ডিম পাড়ে বাসার ভেতরে কিন্তু ডিমে তা দেয় না। তারা এক আশ্চর্য অজ্ঞাত কৌশলে বাসার ভেতরে তাপমাত্রা 78 ডিগ্রী ফারেনহাইটের 1 ডিগ্রীও এদিক ওদিক হতে দেয় না। তারা নিজেদের পালক নিজেরাই ছিঁড়ে খায় এবং শাবকদের খাওয়ায়। এরা জলে ভাসমান অবস্থায় কোন শত্রুর আগমনের ইঙ্গিত পেলে নিজের দেহে ও পালক থেকে বায়ু বের করে দিয়ে শরীরে স্পেসিফিক গ্রাভিটি বাড়িয়ে গলা পর্যন্ত ডুবে থাকতে পারে। এছাড়াও যাযাবর পাখির দিক নির্ণয় ক্ষমতা, ঈগল,বাজের শিকার ক্ষমতা, শকুনের ঘ্রাণশক্তি প্রভৃতি সম্পর্কে প্রফেসর শঙ্কুর এরকম ধারনা ছিল।

৭. ‘আমার অরনিথন যন্ত্র আজ তৈরি শেষ হলো।’— যন্ত্রটির পরিচয় দাও। এই যন্ত্রটির ব্যবহার কীভাবে শুরু হল ?

উত্তরঃ অরনিথন যন্ত্র : সত্যজিৎ রায়ের কর্ভাস গল্পে প্রোফেসর শঙ্কু পাখিকে পড়ানোর জন্য এই অরনিধন যন্ত্রটি তৈরি করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন এই কাজের জন্য তৈরি যন্ত্রের গঠন এবং কার্যপদ্ধতি সরল হোক। এই যন্ত্রটির দুটি অংশ — একটি অংশ খাঁচার মতো, পাখি থাকবে এই খাঁচার মধ্যে। আর এই খাঁচার সঙ্গে দ্বিতীয় অংশের বৈদ্যুতিক যোগ থাকবে। এই দ্বিতীয় অংশ থেকে জ্ঞান ও বুদ্ধি চালিত হবে পাখির মস্তিষ্কে।

যন্ত্রের ব্যবহার : অরনিথন যন্ত্রটি তৈরি শেষ হলে সেটি টেবিলে রেখে দরজা খুলে দিলে প্রোফেসর শঙ্কুর পছন্দের কাকটি নিজে থেকেই লাফাতে লাফাতে যন্ত্রের ভিতর ঢুকে পড়ে। এর থেকে বোঝা যায় কাকটির শেখার আগ্রহ ছিল প্রবল। প্রোফেসর ঠিক করলেন প্রথমে কাকটিকে ভাষা শেখাবেন। তাই তিনি সহজ বাংলা দিয়েই তার শিক্ষা শুরু করলেন। শেখাবার সমস্ত বিষয় যন্ত্রটিতে আগে থেকেই রেকর্ড করা ছিল, শুধু বোতাম টিপে দিলেই তা চলতে শুরু করত। আশ্চর্যের কথা হল, যন্ত্রটির ব্যবহারের শুরুতে বোতাম টিপলেই কাকটার চোখ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসত। আর সঙ্গে সঙ্গে তার নড়াচড়াও বন্ধ হয়ে যেত। কাকের মতো ছটফটে পাখির পক্ষে এটা প্রায় অস্বাভাবিক আচরণ। এভাবেই প্রোফেসর অরনিধন যন্ত্রের ব্যবহার শুরু করেন।

৮. ‘তার সঙ্গে বেরিয়েছে পেনসিল মুখে কর্ভাসের ছবি-কোথায় কর্ভাসের ছবি বেরিয়েছিল ? এর কারণ কী ছিল ?

উত্তরঃ সত্যজিৎ রায়ের রচিত ‘কর্ভাস’ গল্পে,চিলির সানতিয়াগো শহরের ‘কোরিয়েরে দেল সানতিয়াগো’ নামক কাগজের সান্ধ্য সংস্করণে কর্ভাসের ছবিসহ খবর প্রকাশিত হয়েছিল।

কর্ভাসের শিক্ষা শেষ হওয়ার পর শঙ্কু তাকে নিয়ে চিলির সানতিয়াগো শহরে বিশ্ব পক্ষিবিজ্ঞানী সম্মেলনে যোগ দেন।সেখানে প্রথমে পাখির মস্তিষ্ক বিষয়ে শঙ্কু একটি পেপার পড়েন।তারপর কর্ভাসকে নিয়ে লাইভ ডিমন্‌সট্রেশন চলে এক ঘণ্টার ওপর। শঙ্কুর বক্তব্য, কর্ভাস উপস্থিত সকলের সঙ্গে বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনার পর হাততালির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঠোঁট দিয়ে টেবিল ঠুকে করধ্বনির আওয়াজ করে। এরপর গত দু-মাসে সে যা যা শিখেছে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে উপস্থিত করে দর্শকদের অবাক করে দেয়।

কর্ভাসের ছবি খবরের কাগজে বেরোনোর কারণ সভাশেষে অভ্যাগতরা সকলেই মানতে বাধ্য হয়, মানুষের জ্ঞান বুদ্ধিও যে এভাবে পাখির মধ্যে সঞ্চারিত করা যায়,তা কেউ কল্পনা করতেও পারেননি। এই অত্যাশ্চর্য ঘটনার স্বীকৃতি হিসেবে কর্ভাসের ছবিসহ খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল।

৯. “ওই পাখি আমার চাই প্রফেসর”– বক্তা কে ? কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি ? শেষ পর্যন্ত তিনি কী করেছিলেন ?

উত্তরঃ সত্যজিৎ রায় রচিত ‘প্রফেসর শঙ্কুর ডায়েরি’ গল্পের অন্তর্গত ‘কর্ভাস’ অংশের আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন চিলিয়ান জাদুকর আর্গাস।

আর্গাস পাখি নিয়ে ম্যাজিক দেখাতেন। তিনি খবরের কাগজে কর্ভাসের সংবাদ পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তাই তিনি হোটেলে প্রফেসর শঙ্কুর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ায় ভদ্রতাবশত শঙ্কু তাকে ঘরে ডেকে পাঠান। কর্ভাস বিরক্ত হয়ে খাঁচা থেকে বেরিয়ে ঠোঁট দিয়ে আলো নিভিয়ে আবার খাঁচায় ঢুকে ঠোট দিয়ে খাঁচার দরজা বন্ধ করে দেয়। আর্গাস সামান্য পাখির এই কান্ড দেখে অবাক হয়ে যায়। তাই তিনি যে কোন প্রকারে কর্ভাসকে পাওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তিটি করেছিলেন।

আর্গাস কিছুক্ষণের মধ্যে বুঝতে পারেন যে শঙ্কু এবং কর্ভাস কেউই তার প্রস্তাবে রাজি নন। তখন তিনি শঙ্কুকে লোভ দেখিয়ে কর্ভাসকে নিতে চান। কিন্তু তাতে কোনরকম ইচ্ছা প্রকাশ করেনি। তাই তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় তিনি পরেরদিন দুপুরে অনুপস্থিতির সুযোগে রুমবয়দের সুযোগ নিয়ে কর্ভাসকে চুরি করেছিলেন।

১০. চিলিয়ান জাদুকর আর্গাসের চরিত্র সম্পর্কে যা জান লেখো।

উত্তরঃ বিখ্যাত সাহিত্যিক ও চিত্রকর সত্যজিৎ রায়ের রচিত ‘প্রফেসর শঙ্কুর ডাইরি’ কাহিনী অংশে আমরা, আর্গাস নামক এক চিলিয়ান যাদুকরের পরিচয় পেয়ে থাকি।

চেহারার স্বতন্ত্রতা : আর্গাস ছিলেন ছ-ফুটেরও বেশি লম্বা। তাঁর টিয়াপাখির মতো নাক, গ্রামোফোন রেকর্ডের মতো চকচকে চুল, সামনে সিঁথি করে পিছনে টান করে আঁচড়ানো। চোখে মাইনাস কুড়ি পাওয়ারের চশমা। এই চেহারা এবং শীর্ণ ও ফ্যাকাসে হাতের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির দ্বারা তিনি দর্শকদের সম্মোহিত করতেন।

অতিরিক্ত কৌতূহল : আর্গাসের ম্যাজিকের একটি বিশেষত্ব ছিল যে তিনি তাঁর ম্যাজিকের খেলায় বিভিন্ন পাখিকে ব্যবহার করতেন। কর্ভাসের খবর পেয়ে তিনি সেই রাত্রেই হোটেলে কর্ভাসকে দেখতে চলে আসেন তাঁর কৌতূহল মেটাতে কর্ভাসের বুদ্ধির নমুনা তিনি তক্ষুনিই দেখতে চান।

লোভ ও অহংকার : কর্ভাসের বুদ্ধির পরিচয় পাওয়ার পর আর্গাস আর নিজের লোভ সংবরণ করতে না পেরে, টাকার বিনিময়ে তিনি প্রোফেসরের কাছ থেকে কর্ভাসকে কিনে নিতে চান। তিনি অহংকারের সঙ্গে এও বুঝিয়েও দেন যে তিনি কোটিপতি, তাই তিনি চাইলে কর্ভাসকে যে-কোনো মূল্যে কিনে নিতে পারেন। কিন্তু প্রোফেসর শঙ্কু সেই প্রস্তাবে রাজি না হলে তিনি ছলনার আশ্রয় নিয়ে কর্ভাসকে চুরি করে নিয়ে যান।

১১. ‘বেশ বুঝতে পারছি সে অবাক, হতভম্ব।’- সে কে ? সে কোন্ ঘটনায় ‘অবাক, হতভম্ব হয়েছিল ?

উত্তরঃ সত্যজিত রায়ের ‘কভার্স’ গল্প থেকে উদ্ধৃত উক্তিটিতে ‘সে’ হল বিখ্যাত চিলিয়ান জাদুকর আর্গাস।

অবাক হওয়ার কারণ : সানতিয়াগো’র সান্ধ্য সংস্করণে কর্ভাসের ছবিসহ সংবাদ পড়ে জাদুকর আর্গাস সেদিন রাতেই একসেলসিয়র হোটেলের ঘরে প্রোফেসর শঙ্কুর সাথে দেখা করতে আসেন। প্রোফেসরের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলার পর আর্গাস খাঁচার মধ্যে কর্ভাসকে দেখতে পান। আর্গাসের অট্টহাসির আওয়াজে কর্ভাস জেগে ওঠে। কর্ভাসকে দেখেই আর্গাস কালবিলম্ব না করে প্রোফেসর শঙ্কুকে অনুরোধ করেন যে তিনি তখনই একবার কর্ভাসের বুদ্ধির নমুনা দেখতে চান। প্রোফেসর জানান যে কর্ভাস এখন ক্লান্ত, তাই ওকে দিয়ে জোর করে কিছু করানো সম্ভব নয়। কর্ভাসের মর্জি না হলে সে কিছুই করবে না। এরপর প্রোফেসর খাঁচার দরজা খুলে দিলে কর্ভাস বেরিয়ে এসে ডানা ঝাপটিয়ে খাটের পাশে টেবিলে গিয়ে ঠোটের এক ঠোকরে ল্যাম্পটা নিবিয়ে দেয়।। কর্ভাস ডানা ঝাপটিয়ে আবার খাঁচায় ঢুকে ঠোঁট দিয়ে দরজা টেনে বন্ধ করে দেয়। কর্ভাস এভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছিল যে সে বিশ্রাম চাইছে। সেই সময় প্রোফেসর শঙ্কু আর্গাসের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারেন যে কর্ভাসের এই আচরণে তিনি অবাক ও হতভম্ব হয়ে গেছেন।

১২. “কিন্তু কী অসামান্য তার বুদ্ধি!”– এটি কার উক্তি ? কার, কোন্ অসামান্য বুদ্ধির কথা এখানে বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ সত্যজিৎ রায় রচিত কর্ভাস কাহিনি থেকে নেওয়া আলোচ্য উক্তিটি চিলির বিখ্যাত জাদুকর আর্গাসের।

উদ্দিষ্ট ও তার অসামান্য বুদ্ধি : এখানে শঙ্কুর পোষা কাক কর্ভাসের অসামান্য বুদ্ধির কথা বলা হয়েছে। জাদুকর আর্গাস প্রোফেসর শঙ্কুর পোষা কর্ভাসের কীর্তিকলাপ দেখে তাকে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। তিনি প্রোফেসর শঙ্কুকে প্রস্তাব দেন যে দশ হাজার এস্কুডোর বদলে প্রোফেসর যেন কর্ভাসকে তাঁর হাতে তুলে দেন । প্রোফেসর রাজি না হওয়ায় আর্গাসকে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়। কিন্তু তিনি পরের দিন প্রফেসারের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে রুমবয়দের সম্মোহিত করে হোটেলের ঘর থেকে কর্ভাসকে চুরি করে পালান। গাড়ি করে শহরের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কর্ভাস বুদ্ধি করে আর্গাসের চোখের মাইনাস কুড়ি পাওয়ারের চশমাটা ঠোঁট দিয়ে খুলে নেয়। চশমা ছাড়া আর্গাসের তখন প্রায় অন্ধের মতো অবস্থা। গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছের গুঁড়িতে ধাক্কা মেরে তিনি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসেন। এই সুযোগে কর্ভাস চশমাটি নিয়ে উড়ে গিয়ে একটি গাছের ডালে বসে। প্রোফেসর শঙ্কুরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আর্গাস অন্ধের মতো দু – হাতে পিস্তল নিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে। ততক্ষণে কারেরাস ও অন্য পুলিশরা সেখানে পৌঁছে যায়। এইভাবেই কর্ভাস তার অসামান্য বুদ্ধির পরিচয় রেখে আর্গাসকে জব্দ করেছিল।

১৩. গল্পের শেষে কর্ভাস কীভাবে জাদুকর আর্গাসকে জব্দ করেছিল ?

উত্তরঃ উদ্দিষ্ট ও তার অসামান্য বুদ্ধি : এখানে শঙ্কুর পোষা কাক কর্ভাসের অসামান্য বুদ্ধির কথা বলা হয়েছে। জাদুকর আর্গাস প্রোফেসর শঙ্কুর পোষা কর্ভাসের কীর্তিকলাপ দেখে তাকে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। তিনি প্রোফেসর শঙ্কুকে প্রস্তাব দেন যে দশ হাজার এস্কুডোর বদলে প্রোফেসর যেন কর্ভাসকে তাঁর হাতে তুলে দেন । প্রোফেসর রাজি না হওয়ায় আর্গাসকে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়। কিন্তু তিনি পরের দিন প্রফেসারের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে রুমবয়দের সম্মোহিত করে হোটেলের ঘর থেকে কর্ভাসকে চুরি করে পালান। গাড়ি করে শহরের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কর্ভাস বুদ্ধি করে আর্গাসের চোখের মাইনাস কুড়ি পাওয়ারের চশমাটা ঠোঁট দিয়ে খুলে নেয়। চশমা ছাড়া আর্গাসের তখন প্রায় অন্ধের মতো অবস্থা। গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছের গুঁড়িতে ধাক্কা মেরে তিনি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসেন। এই সুযোগে কর্ভাস চশমাটি নিয়ে উড়ে গিয়ে একটি গাছের ডালে বসে। প্রোফেসর শঙ্কুরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আর্গাস অন্ধের মতো দু – হাতে পিস্তল নিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে। ততক্ষণে কারেরাস ও অন্য পুলিশরা সেখানে পৌঁছে যায়। এইভাবেই কর্ভাস তার অসামান্য বুদ্ধির পরিচয় রেখে আর্গাসকে জব্দ করেছিল।

১৪. “পরে সম্পর্কটা বন্ধুত্বে পরিণত হলেও আশ্চর্য হব না।”- এখানে কোন্ সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে ? কোন্ ঘটনা ঘটেছিল ?

উত্তরঃ সত্যজিৎ রায় রচিত ‘কর্ভাস’ গল্প থেকে গৃহীত এই উদ্ধৃতিটিতে প্রোফেসর শঙ্কুর পোষা বিড়াল নিউটনের সঙ্গে কর্ভাস নামের তাঁরই পোষা কাকের সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে।

নিউটন প্রথমদিকে কোনো পাখিকে পছন্দ না করলেও পরবর্তীকালে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার এই স্বভাব বদলাতে থাকে। তাই কভার্সকে সে মেনে নিয়েছিল। তবে একদিনের একটি ঘটনায় প্রোফেসর শঙ্কুর মনে হয় নিউটন ও কর্ভাসের সম্পর্কটা হয়তো ভবিষ্যতে বন্ধুত্বে পরিণত হতে পারে। একদিন দুপুরে নিউটন প্রোফেসরের আরাম কেদারার পাশে কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়েছিল, কর্ভাস সেই সময় ঘরে ছিল না। হঠাৎ নোট লিখতে লিখতে প্রোফেসর ডানার ঝটপটানির শব্দ শুনে জানালার দিকে চেয়ে দেখেন কর্ভাস ঘরে ঢুকেছে, আর তার ঠোঁটে ঝুলছে সদ্য-কাটা একটি মাছের টুকরো। প্রোফেসরকে প্রায় অবাক করে দিয়ে কর্ভাস নিউটনের সামনে সেই মাছের টুকরোটি ফেলে দিয়ে জানালায় ফিরে গিয়ে বসে ঘাড় বেঁকিয়ে এদিক-ওদিক দেখতে থাকে। নিউটনের জন্য কর্ভাসের এই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ দেখে প্রোফেসরের মনে হয়েছিল এদের দুজনের সম্পর্কটা হয়তো ভবিষ্যতে বন্ধুত্বে পরিণত হতে পারে।

১৫. কর্ভাস কী করে চুরি হল ? কর্ভাসকে কীভাবে পাওয়া গিয়েছিল তা কাহিনী অনুসারে লেখো।

উত্তরঃ বিখ্যাত চিত্র পরিচালক ও সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের এক কল্প বিজ্ঞানমূলক কাহিনী হল। ‘প্রফেসর শঙ্কুর ডায়েরি’।

চিলির রাজধানী শান্তিয়াগোতে পক্ষীবিজ্ঞানী সম্মেলনে প্রফেসর শঙ্কু তার মানবসুলভ বুদ্ধিসম্পন্ন কাক অর্থাৎ কর্ভাসকে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানকার এক বিখ্যাত জাদুঘর যার নাম আর্গাস তিনি কর্ভাসের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পেয়ে প্রফেসর শঙ্কুর কাছ থেকে কর্ভাসকে কিনে নিতে চেয়েছিলেন। টাকার লোভ দেখিও যখন প্রফেসর শঙ্কুর কাছ থেকে পাখিটি কিনতে ব্যর্থ হন, তখন প্রফেসর শঙ্কুর অনুপস্থিতিতে আর্গাস পাখিটিকে চুরি করে নিয়ে চলে যায়।

হোটেলে ফিরে প্রফেসর শঙ্কু কর্ভাসকে না দেখতে পেয়ে বুঝে নেয় আর্গাস তার কর্ভাসকে চুরি করে নিয়েছে। এরপর কভারুবিয়াসের শরণাপন্ন হলে তিনি কয়েকজন লোক এবং একটি গাড়ি দিয়ে আর্গাসকে খুঁজে পেতে প্রফেসর শঙ্কুকে সাহায্য করেন। খানিক রাস্তা যাওয়ার পর হাই রোডের কাছে আর্গাসের গাড়িটি অ্যাক্সিডেন্ট অবস্থায় দেখতে পায়। গাড়ি আছে কিন্তু জাদুকর বা কর্ভাস কোথাও নেই দেখে প্রফেসর শঙ্কু খানিক বাদে আর্গাসের চিৎকার শুনতে পান। আসলে কর্ভাস বুদ্ধি করে খাঁচা থেকে বেরিয়ে আর্গাসের চশমাটি খুলে নিয়েছিল। কিছু না দেখতে পেয়েছি এক্সিডেন্ট করে বসে। এরপর আর্গাসকে গ্রেফতার করা হয়, শেষে প্রফেসর শঙ্কু তার করভাসকে একাশিয়া গাছের উপর খুঁজে পায়। আলোচ্য গল্পে এই ভাবেই প্রফেসর শঙ্কু তার হৃদয় প্রিয় কর্ভাসকে খুঁজে পেয়েছিল।

১৬. কর্ভাস কে ? তার চরিত্রের কী পরিচয় এই গল্পে পাওয়া যায় ? ১+৪

উৎসঃ আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যে গোয়েন্দাপ্রধান গবেষণাধর্মী রচনাধারার সার্থক স্রষ্টা “সত্যজিৎ রায়” রচিত “প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি”-এর অন্তর্গত “কর্ভাস” গল্পে আমরা কর্ভাস নামক কাকের পরিচয় পাই।

কর্ভাসের পরিচয়ঃ সত্যজিৎ রায়ের ‘কর্ভাস’ কাহিনিতে কর্ভাস হল একটি কাক যাকে প্রোফেসর শঙ্কু তাঁর পাখি সংক্রান্ত গবেষণার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।

কর্ভাসের চরিত্রের পরিচয়ঃ প্রোফেসর শঙ্কু অন্যান্য অনেক পাখির মধ্য থেকে এই কাকটিকেই বেছে নিয়েছিলেন, কারণ তার চেহারা ও আচরণের মধ্যে কিছু বিশেষত্ব ছিল। ‘কর্ভাস’-এর চরিত্রের বৈশিষ্ট্য নীচে দেওয়া হল

বন্ধুপ্রীতিঃ একদিন কর্ভাস প্রফেসারের বিড়াল নিউটনের জন্য বাইরে থেকে সদ্য-কাটা মাছের টুকরো নিয়ে আসে, যেটি নিঃসন্দেহে বন্ধুত্বসুলভ।

স্বাতন্ত্র্যবোধঃ কর্ভাস অন্য কাকেদের থেকে নিজেকে আলাদা করে নিয়েছিল। একদিন বাজ পড়ে একটি কাক মারা যায়। কাকের দল কোলাহল শুরু করলেও কর্ভাস সেই ঘটনায় কোনো আগ্রহ দেখায়নি।

মানবসুলভ বুদ্ধি ও সচেতনতাঃ শিক্ষা চলাকালীন কর্ভাসের মধ্যে একপ্রকার মানবসুলভবুদ্ধি জেগে ওঠে। প্রোফেসর শঙ্কুর সুটকেসের চাবি ঠোঁটে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কিংবা তাঁকে পাসপোর্টের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার ঘটনা তার মানবসুলভ বুদ্ধি ও সচেতনতারই প্রমাণ।

মানবসুলভ অনুভূতি ও উপস্থিত বুদ্ধিঃ জাদুকর আর্গাসের সামনে টেবিল ল্যাম্পের আলো নিভিয়ে দেওয়া কিংবা তাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় আর্গাসের চশমা খুলে নেওয়ার মধ্য দিয়ে কর্ভাসের মানবসুলভ অনুভূতি ও উপস্থিত বুদ্ধিরই প্রমাণ মেলে।

রসিকতায় পারদর্শিতাঃ জাপানি পক্ষীবিজ্ঞানীর ক্লান্তিকর ভাষণের সময় চেয়ারের হাতলে কর্ভাসের ঠোঁটতালি সবাইকে আনন্দ দিয়েছিল। এই ঘটনা কর্ভাসের রসবোধেরই প্রমাণ।

এইরূপে আমরা কর্ভাস চরিত্রের পরিচয় লাভ করি।

১৭. চিলিয়ান জাদুকর আর্গাসের চরিত্র সম্পর্কে যা জান লেখো।

উৎসঃ আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যে গোয়েন্দাপ্রধান গবেষণাধর্মী রচনাধারার সার্থক স্রষ্টা “সত্যজিৎ রায়” রচিত “প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি”-এর অন্তর্গত “কর্ভাস” গল্পে আমরা চিলিয়ান জাদুকর আর্গাসের কথা জানতে পারি।

আর্গাসের চরিত্রঃ সত্যজিৎ রায়ের ‘কর্ভাস’ গল্পে প্রোফেসর শঙ্কু কর্ভাসকে নিয়ে সানতিয়াগোতে পক্ষীবিজ্ঞানীদের সম্মেলনে গিয়ে চিলিয়ান জাদুকর আর্গাসের ম্যাজিক দেখেছিলেন।

এই গল্পে আর্গাসের চরিত্রের যে সকল পরিচয় পাই তা নিম্নরূপ—

চেহারার স্বতন্ত্রতাঃ আর্গাস ছিলেন ছ-ফুটেরও বেশি লম্বা। তাঁর টিয়াপাখির মতো নাক, গ্রামোফোন রেকর্ডের মতো চকচকে চুল সামনে সিঁথি করে পিছনে টান করে আঁচড়ানো আর চোখে মাইনাস কুড়ি পাওয়ারের চশমা। এই চেহারা এবং শীর্ণ ও ফ্যাকাশে হাতের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির দ্বারা তিনি দর্শকদের সম্মোহিত করতেন।

অতিরিক্ত কৌতূহলঃ আর্গাসের ম্যাজিকের একটি বিশেষত্ব ছিল যে, তিনি তাঁর ম্যাজিকের খেলায় বিভিন্ন পাখিকে ব্যবহার করতেন। কর্ভাসের খবর পেয়ে তিনি সেই রাত্রেই হোটেলে কর্তাসকে দেখতে চলে আসেন তাঁর কৌতূহল মেটাতে। কর্ভাসের বুদ্ধির নমুনা তিনি তক্ষুনিই দেখতে চান।

লোভ ও অহংকারঃ কর্ডাসের বুদ্ধির পরিচয় পাওয়ার পর আর্গাস আর নিজের লোভ সংবরণ করতে পারেননি। টাকার বিনিময়ে তিনি প্রফেসারের কাছ থেকে কর্ভাসকে কিনে নিতে চান। তিনি অহংকারের সঙ্গে এও বুঝিয়েও দেন যে তিনি কোটিপতি, তাই তিনি চাইলে কর্ভাসকে যে-কোনো মূল্যে কিনে নিতে পারেন। কিন্তু প্রোফেসর শঙ্কু সেই প্রস্তাবে রাজি না হলে তিনি চালাকির আশ্রয় নিয়ে কর্ভাসকে চুরি করে নিয়ে যান।

১৮. কর্ভাসের মধ্যে ‘মানবসুলভ বুদ্ধি’ জেগে উঠেছে এমন দুটি ঘটনা উল্লেখ করো। ৫

উৎসঃ আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যে গোয়েন্দাপ্রধান গবেষণাধর্মী রচনাধারার সার্থক স্রষ্টা “সত্যজিৎ রায়” রচিত “প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি”-এর অন্তর্গত “কর্ভাস” গল্পে আমরা কর্ভাস নামক কাকের পরিচয় পাই।

দুটি ঘটনার পরিচয়ঃ কর্ভাস অরনিথন যন্ত্রের মাধ্যমে অঙ্ক, জ্যামিতি, ইতিহাস, ভূগোল, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করার পাশাপাশি মানবসুলভ বুদ্ধি বা ‘হিউম্যান ইনটেলিজেনস্’-এরও অধিকারী হয়ে উঠেছিল। তেমনই দুটি ঘটনা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা যেতে পারে-

প্রথম ঘটনাঃ চিলির রাজধানী সানতিয়াগোতে পক্ষীবিজ্ঞানীদের সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে যাবেন বলে প্রফেসর শঙ্কু তার ব্যাগ গোছাচ্ছিলেন। তার কাজ সমাপ্ত হলে যখন তিনি বাক্সের ঢাকনা বন্ধ করেন তখন তিনি বিস্মিত হয়ে দেখেন কর্ভাস সেই সুটকেসের চাবিটা ঠোঁটে নিয়ে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে।

দ্বিতীয় ঘটনাঃ চিলির উদ্দেশ্যে রওনা দেবার পূর্বে প্রফেসর শঙ্কু লক্ষ্য করেছিলেন কর্ভাস তার খাঁচার থেকে বেরিয়ে আসবার জন্য ছটফট করছে। প্রকৃত বিষয়টি অনুধাবন করতে অসমর্থ প্রফেসর শঙ্কু কর্ভাসকে খাঁচা থেকে মুক্তি প্রদান করলে সে প্রফেসর শঙ্কুর লেখার টেবিলের উপর গিয়ে বসে এবং তার ঠোঁট দিয়ে উপরের দেরাজে ভীষণ ব্যস্তভাবে টোকা দিতে থাকে। তখন প্রফেসর শঙ্কু দেরাজ খুলে দেখেন যে, তার পাসপোর্টটা সেখানেই রয়ে গিয়েছিল।

মূল্যায়ণঃ অতএব আলোচনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম কর্ডাসের মধ্যে যে, মানবসুলভ বুদ্ধি বা ‘হিউম্যান ইনটেলিজেন্স’ জেগে উঠেছিল সেই বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।

১৯. ‘খাঁচাসমেত কর্ভাস উধাও।’— কর্ভাস কীভাবে উধাও হয়ে গিয়েছিল ?

উত্তরঃ সত্যজিৎ রায়ের রচিত ‘কর্ভাস’ গল্পে পক্ষীবিজ্ঞানীদের সম্মেলনের দিন রাত্রিবেলায় চিলিয়ান জাদুকর আর্গাস প্রোফেসর শঙ্কুর কাছে এসে দশ হাজার একুডো অর্থাৎ পনেরো হাজার টাকার বদলে কর্ভাসকে চান। কিন্তু প্রোফেসর রাজি না হওয়ায় তাঁকে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়। পরদিন সম্মেলনে জাপানি বিজ্ঞানীর ভাষণ-সহ অন্যান্য বক্তৃতা শোনার পর প্রোফেসর শঙ্কু কর্ভাসকে হোটেলের ঘরে রেখে অভ্যাগতদের সঙ্গে দুপুরের খাবার খেতে যান। খাওয়া শেষ করে প্রায় আড়াইটে নাগাদ তিনি হোটেলে ফিরে চাবি দিয়ে দরজা খুলতে গিয়ে দেখেন দরজা খোলা। মুহূর্তের মধ্যে একটা চরম বিপদের আশঙ্কা তাঁকে শঙ্কিত করে তোলে। তিনি ঘরে ঢুকে দেখেন খাঁচাসমেত কর্ভাস উধাও। পরে তিনি হোটেলের দারোয়ানের কাছে জানতে পারেন যে প্রায় আধ ঘণ্টা আগে আর্গাস তাঁর রুপোলি ক্যাডিলাক গাড়ি নিয়ে হোটেলে এসেছিলেন। তার ঠিক দশ মিনিট পরে হাতে একটা সেলোফেনের ব্যাগ নিয়ে তিনি হোটেল থেকে বেরিয়ে যান। বোঝা যায়, আর্গাস তাঁর জাদুবলে হোটেলের রুমবয়দের সম্মোহিত করে তাদের থেকে চাবি নিয়ে নিজের কাজ হাসিল করেছেন। এরপর কর্ভাসকে নিয়ে আর্গাস তাঁর গাড়িতে করে ভালপারাইজোের রাস্তা ধরে হাইওয়ের দিকে পালাতে চেষ্টা করেন।

২০. আমার সে ধারণা প্রায় পালটে গেল। – কার, কোন্ ধারণার কথা বলা হয়েছে ? তা কীভাবে পালটে গেল ?

উত্তরঃ সত্যজিৎ রায় রচিত কর্ভাস কাহিনি থেকে উদ্ধৃত উক্তিটিতে প্রোফেসর শঙ্কুর ধারণার কথা বলা হয়েছে।

ধারণার বদলঃ প্রাথমিক ধারণা – ছেলেবেলায় প্রোফেসর শঙ্কুর ধারণা ছিল যে পাখি কথা বললেও সেই কথার মানে বোঝে না। ছেলেবেলায় প্রোফেসর শঙ্কুর বাড়িতে একটি পোষা ময়না ছিল। প্রোফেসর শঙ্কু তাকে একশোরও বেশি বাংলা শব্দ স্পষ্টভাবে বলতে শিখিয়ে ছিলেন। কিন্তু এই সময় তাঁর ধারণা ছিল, পাখি কথা বললেও সেই কথার মানে বুঝতে পারে না।

পরিবর্তীত ধারণাঃ একদিন দুপুরবেলা তিনি স্কুল থেকে ফেরার পর তাঁর মা যখন তাঁকে মোহনভোগ খেতে দিয়েছেন তখন হঠাৎই ময়নাটা ভূমিকম্প, ভূমিকম্প বলে চেঁচিয়ে ওঠে। সেই সময় যদিও কেউ কোনো কম্পন বুঝতে পারেনি। কিন্তু পরের দিন কাগজে বেরোয় যে সিসমোগ্রাফ যন্ত্রে সত্যিই নাকি একটা মৃদু কম্পন ধরা পড়েছে। এই ঘটনার পর থেকেই প্রোফেসর শঙ্কুর এই ধারণা পালটে যায় যে পাখি কথা বললেও কথার মানে বোঝে না। তিনি বুঝতে পারেন, পাখিরা যেমন কথা বলতে পারে, তেমন সেই কথার মানেও বুঝতে পারে।

২১. ‘দু-সপ্তাহে অভাবনীয় প্রোগ্রেস।’– কোন্ বিষয়ে এ কথা বলা হয়েছে ? কীরকম প্রোগ্রেস হয়েছিল ?

উত্তরঃ বক্তব্যের বিষয়– সত্যজিৎ রায় রচিত কর্ভাস গল্পে প্রোফেসর শঙ্কুর তৈরি অরনিথন যন্ত্রের সাহায্যে কর্ভাস নামের কাকটির শিক্ষাগ্রহণের বিষয়ে এ কথা বলা হয়েছে।

প্রোগ্রেস-এর ধরন—

প্রোফেসর শঙ্কু তাঁর আবিষ্কৃত অরনিথন যন্ত্রের সাহায্যে প্রথমে কর্ভাসকে ভাষাশিক্ষা দিতে শুরু করেন।

ভাষা শিক্ষালাভঃ প্রথম পর্যায়ে সহজ বাংলা ভাষা এবং পরবর্তী পর্যায়ে ইংরেজি ভাষাশিক্ষা শুরু হয় তার।

লেখার দক্ষতা অর্জনঃ মাত্র দু- সপ্তাহের মধ্যেই কর্ভাস ঠোঁটে পেনসিল নিয়ে ইংরেজি কথা আর সংখ্যা লিখতে শুরু করে। টেবিলের উপর কাগজ রেখে কর্ভাস তার উপরেও লিখতে শেখে। ইংরেজিতে নিজের নাম C-O-R-V-U-S লিখতে এবং সহজ যোগ-বিয়োগ করতে শেখে। ইংল্যান্ডের রাজধানীর নাম, প্রফেসারের পদবিও লিখতে শেখে। দেখা যায়, সে মাস, বার, তারিখও লিখতে পারছে। কোনো – এক শুক্রবারে প্রোফেসর সেদিন কী বার জিজ্ঞেস করায় সে পরিষ্কার করে লেখে F-R-I-D-A-Y।

দক্ষতার বিকাশঃ এই যন্ত্রের সাহায্যে অন্যান্য বিষয়েও কর্ভাসের দক্ষতার বিকাশ ঘটতে শুরু করে মাত্র দু-সপ্তাহেই। বুদ্ধির প্রকাশ – এ ছাড়া খাওয়ার ব্যাপারেও কর্ভাসের বুদ্ধির পরিচয় পাওয়া গেছে। প্রোফেসর শঙ্কু একদিন একটা পাত্রে রুটি-টোস্টের টুকরো আর – একটা পাত্রে খানিকটা পেয়ারার জেলি কর্ভাসের সামনে রেখেছিলেন। সে রুটির টুকরো মুখে পোরার আগে প্রতিবারই ঠোঁট দিয়ে তাতে খানিকটা জেলি মাখিয়ে নিচ্ছিল।

ইতিকথাঃ এভাবেই অরনিথন যন্ত্রের সাহায্যে কর্ভাসের জ্ঞান ও বুদ্ধির সামগ্রিক বিকাশ ঘটতে থাকে।

২২. “কভার্স যে এখন সাধারণ কাকের থেকে নিজেকে আলাদা রাখতে চায়, তার স্পষ্ট প্রমাণ আজকে পেলা”– কোন্ ঘটনায় এই প্রমাণ পেয়েছিলেন প্রোফেসর শঙ্কু ?

উত্তরঃ ঘটনার পরিচয়—

শিক্ষায় উন্নতিঃ সত্যজিৎ রায় রচিত কর্ভাস গল্পে প্রোফেসর শঙ্কুর তৈরি অরনিথন যন্ত্রের মাধ্যমে দু- সপ্তাহের মধ্যে কর্ভাসের শিক্ষায় অভাবনীয় উন্নতি ঘটেছিল। আর তারপর থেকেই সে নিজেকে অন্য সাধারণ কাকদের থেকে আলাদা মনে করতে শুরু করে।

বজ্রপাত পরবর্তী ঘটনাঃ একদিন দুপুরে হঠাৎ খুব বৃষ্টি শুরু হয়, সঙ্গে বিদ্যুৎ ও বজ্রপাত । তিনটে নাগাদ এক কান – ফাটানো বাজ পড়ার শব্দ হলে প্রোফেসর শঙ্কু জানালার কাছে গিয়ে দেখেন তাঁর বাগানের বাইরের শিমুল গাছটা থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। বিকেলে বৃষ্টি থেমে গেলে বাইরে কাকেদের প্রচণ্ড কোলাহল শোনা যায়। সে অঞ্চলের সব কাক ওই মরা গাছটার কাছে এসে কোলাহল করতে শুরু করে। প্রোফেসর তাঁর চাকর প্রহ্লাদকে ব্যাপারটা দেখতে পাঠালে, সে ফিরে এসে জানায় যে ওই গাছটার নীচে একটা কাক মরে পড়ে আছে। তাই কাকেরা এত চেঁচাচ্ছে। বোঝা যায় ওই বাজ পড়ার ফলেই কাকটার মৃত্যু হয়েছে।

কর্ভাসের অনাগ্রহ প্রকাশঃ আশ্চর্যের বিষয় হল– যেখানে কাকেরা এসে জড়ো হয়েছে, সেখানে কর্ভাস প্রফেসারের ঘর থেকে বেরোনোর কোনোরকম কোনো আগ্রহ দেখায়নি। সে একমনে তখন পেনসিল দিয়ে প্রাইম নাম্বারস অর্থাৎ মৌলিক সংখ্যা লিখছিল। এই ঘটনায় প্রোফেসর শঙ্কু বুঝতে পারেন যে কর্ভাস নিজেকে সাধারণ কাকেদের থেকে আলাদা করে রাখতে চায়।

২৩. “কর্ভাসকে এখন সদর্পে বৈজ্ঞানিক মহলে উপস্থিত করা চলে।”— কীভাবে প্রোফেসর শঙ্কু বুঝলেন যে কর্ভাস বৈজ্ঞানিকমহলে উপস্থিত হওয়ার উপযুক্ত হয়ে উঠেছে ?

উত্তরঃ পারদর্শিতা অর্জন– সত্যজিৎ রায় রচিত কর্ভাস গল্পে অরনিধন যন্ত্রের সাহায্যে কর্ভাস সব বিষয়ে পারদর্শী এমন একটি শিক্ষিত পাখি হয়ে ওঠে যার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও নেই।

আচরণে ভিন্নতাঃ কর্ভাসের আচরণ ক্রমশ অন্য সাধারণ কাকেদের থেকে আলাদা হতে থাকে। প্রোফেসর শঙ্কুর যন্ত্রের মাধ্যমে সে প্রথমে সহজ বাংলা এবং ইংরেজি ভাষা আয়ত্ত করে। এরপরে সে অঙ্ক, জ্যামিতি, ইতিহাস, ভূগোল, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ইত্যাদি সব বিষয়েই প্রশ্নের উত্তর সংখ্যা বা অল্প কয়েকটি শব্দের সাহায্যে লিখতে শিখে নেয়।

মানবসুলভ বুদ্ধির প্রকাশঃ এই জ্ঞান অর্জনের সঙ্গেই কর্ভাসের মধ্যে একপ্রকার মানবসুলভ বুদ্ধি বা হিউম্যান ইনটেলিজেন্‌স জেগে ওঠে, যার সঙ্গে পাখিদের কোনো সম্পর্ক নেই। এর উদাহরণস্বরূপ একটা ঘটনার উল্লেখ করেছেন প্রোফেসর শঙ্কু। সানতিয়াগো যাওয়ার দিন সকালে তিনি সুটকেস গোছাচ্ছিলেন। গোছানো শেষ হলে বাক্সের ঢাকনা বন্ধ করে তিনি পাশ ফিরে অবাক হয়ে দেখলেন যে কর্ভাস তাঁর সুটকেসের চাবিটা ঠোঁটে নিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।

শেষের কথাঃ কর্ভাসের এই জ্ঞান ও বুদ্ধির পরিচয় পেয়ে প্রোফেসর বুঝেছিলেন যে তিনি কর্ভাসকে গর্বের সাথে বৈজ্ঞানিকমহলে উপস্থিত করতে পারবেন।

২৪. “পাখির চেয়ে আমার অনেক বেশি ইনটারেস্টিং মনে হলো জাদুকর ব্যক্তিটিকে।”– এই জাদুকর ব্যক্তির পরিচয় দাও। তাঁকে ইনটারেস্টিং মনে হওয়ার কারণ কী ?

উত্তরঃ জাদুকরের পরিচয়– সত্যজিৎ রায় রচিত কর্ভাস কাহিনি থেকে উদ্ধৃত উক্তিটিতে এই জাদুকর ব্যক্তি হলেন চিলির বিখ্যাত জাদুকর আর্গাস। প্রোফেসর শঙ্কু তার পক্ষীবিজ্ঞানী বন্ধু গ্রেনফেলের সঙ্গে সানতিয়াগোর প্লাজা থিয়েটারে আর্গাসের ম্যাজিক দেখতে গিয়েছিলেন। আর্গাসের ম্যাজিকের বিশেষত্ব হল তিনি হাঁস, কাকাতুয়া, পায়রা, মোরগ, সারস, হামিং বার্ড প্রভৃতি পাখিকে ম্যাজিকে ব্যবহার করেন।

জাদুকরকে ইনটারেস্টিং মনে হওয়ার কারণ—

পাখিদের শিক্ষাদানঃ প্রোফেসর শঙ্কু আর্গাসের ম্যাজিক দেখে বুঝলেন যে তিনি তাঁর পাখিদের যত্ন সহকারেই শিক্ষা দিয়েছেন কিন্তু তাদের কাজ কর্ভাসের কৃতিত্বের কাছে কিছুই নয়।

চেহারা ও সাজপোশাকঃ সবথেকে বড়ো কথা আর্গাসের পাখিদের ম্যাজিকের চেয়ে প্রফেসারের আর্গাসকেই অনেক বেশি ইনটারেস্টিং মনে হয়েছিল তার চেহারা ও সাজপোশাকের জন্য। আর্গাসের নাক টিয়াপাখির মতো, মাথার মাঝখানে সিঁথি করা, গ্রামোফোন রেকর্ডের মতো চকচকে চুল টান করে পিছনে আঁচড়ানো। আর সবথেকে আকর্ষণীয় হল তাঁর চোখে মাইনাস কুড়ি পাওয়ারের চশমা যার কাচ এত পুরু যে চোখের মণি দুটোকে তীক্ষ্ণ বিন্দুর মতো দেখায়। জাদুকর আর্গাস ছ-ফুটেরও বেশি লম্বা। চকচকে কালো কোটের আস্তিনের ভিতর থেকে দুটো শীর্ণ ফ্যাকাসে হাত বেরিয়ে আছে। এই হাতের ভঙ্গিমাই দর্শককে সম্মোহিত করে রাখে।

মূল্যায়নঃ আর্গাসের জাদু উঁচুদরের না হলেও, তাঁর চেহারা ও হাবভাব দেখেই লোকে আকৃষ্ট হয়।

২৫. “অরনিথন যন্ত্রের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।”— অরনিথন যন্ত্রের প্রয়োজন হয়েছিল কেন ? তার প্রয়োজন ফুরিয়েই বা গেল কেন ?

উত্তরঃ

(ক) অরনিথন যন্ত্রের প্রয়োজনীয়তার কারণ—

নতুন শিক্ষাদান– পাখিদের বুদ্ধির বেশ আশ্চর্য কিছু পরিচয় পেয়ে প্রোফেসর শঙ্কুর মনে হয়েছিল এমন একটা যন্ত্র তৈরির কথা যা দিয়ে পাখির সহজাত বুদ্ধির বাইরে তাকে নতুন জিনিস শেখানো যাবে, কিংবা মানুষের জ্ঞান, বুদ্ধি তার মধ্যে সঞ্চার করা যাবে। এই লক্ষ্যেই তিনি একটি পাখি – পড়ানো যন্ত্র নির্মাণে উদ্যোগী হন। অত্যন্ত সহজভাবে এই যন্ত্র নির্মাণ হয়।

যন্ত্রটির অংশ – তার দুটি অংশের একটি হবে খাঁচার মতো, যার মধ্যে পাখি থাকবে। আর তার সঙ্গে দ্বিতীয় অংশের বৈদ্যুতিক যোগ থাকবে। দ্বিতীয় অংশ থেকে জ্ঞান ও বুদ্ধি চালিত হবে পাখির মস্তিষ্কে।

(খ) যন্ত্রটির প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ার কারণ—

প্রয়োগের সুযোগ – প্রোফেসর শঙ্কু তাঁর উদ্ভাবিত যন্ত্র অরনিথন – এর প্রয়োগের সুযোগ পেয়ে যান তাঁর ঘরের ভিতরে চলে আসা বিভিন্ন পাখির মধ্যে অত্যন্ত বুদ্ধিমান একটি কাকের উপরে।

কর্ভাসকে ভাষা শিক্ষা – তাকে প্রথমে ভাষাশিক্ষা দেওয়া হয়। দু-সপ্তাহ পরে কর্ভাস ঠোঁটে পেনসিল নিয়ে ইংরেজি কথা আর সংখ্যা লেখে, নিজের নামও লেখা শেখে।

অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষা – এরপরে অঙ্ক, জ্যামিতি, ইতিহাস, ভূগোল, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ইত্যাদি বিষয়ের যেসব প্রশ্নের উত্তর সংখ্যার সাহায্যে বা অল্প কথায় দেওয়া যায়, কর্ভাস তা শিখে নিয়েছিল।

শেষের কথা – এর ফলে শিক্ষিত হয়ে ওঠা কর্ভাসের জন্য অরনিথন যন্ত্রের আর প্রয়োজন ছিল না।

২৬. “বেশ বুঝতে পারছি সে অবাক, হতভম্ব।”— সে কে ? সে কোন্ ঘটনায় অবাক, হতভম্ব হয়েছিল ?

উত্তরঃ সত্যজিৎ রায়ের কর্ভাস গল্প থেকে নেওয়া আলোচ্য উক্তিটিতে সে হল বিখ্যাত চিলিয়ান জাদুকর আর্গাস।

উদ্দিষ্ট ঘটনাঃ সানতিয়াগোর সংবাদপত্র কোরিয়েরে দেল সানতিয়াগোর সান্ধ্য সংস্করণে কর্ভাসের ছবি – সহ সংবাদ পড়ে জাদুকর আর্গাস সেদিন রাতেই একসেলসিয়র হোটেলের ঘরে প্রোফেসর শঙ্কুর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। প্রফেসারের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলার পর আর্গাস খাঁচার মধ্যে কর্ভাসকে দেখতে পান। আর্গাসের খুব জোরে হাসির আওয়াজে কর্ভাস জেগে ওঠে। কর্ভাসকে দেখেই আর্গাস দেরি না করে প্রোফেসর শঙ্কুকে অনুরোধ করেন যে তিনি তখনই একবার কর্ভাসের বুদ্ধির নমুনা দেখতে চান। প্রোফেসর জানান যে কর্ভাস এখন ক্লান্ত, তাই ওকে দিয়ে জোর করে কিছু করানো সম্ভব নয়। কর্ভাসের মর্জি না হলে সে কিছুই করবে না।

এরপর প্রোফেসর খাঁচার দরজা খুলে দিলে কর্ভাস বেরিয়ে এসে ডানা ঝাপটিয়ে খাটের পাশে টেবিলে গিয়ে ঠোঁটের এক ঠোকরে ল্যাম্পটা নিবিয়ে দেয়। অন্ধকার ঘরের জানলা দিয়ে রাস্তার সবুজ নিয়নের ফিকে আলো ঘরে প্রবেশ করে। কর্ভাস ডানা ঝাপটিয়ে আবার খাঁচায় ঢুকে ঠোঁট দিয়ে দরজা টেনে বন্ধ করে দেয়। কর্ভাস এভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছিল যে সে বিশ্রাম চাইছে। সেই সময় প্রোফেসর শঙ্কু আর্গাসের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারেন যে কর্ভাসের এই আচরণে তিনি অবাক ও হতভম্ব হয়ে গেছেন।

২৭. “শয়তান পাখি, কিন্তু কী অসামান্য তার বুদ্ধি!”— কোন্ প্রসঙ্গে কার এই উক্তি ? এর পরে কী ঘটনা ঘটেছিল ?

উত্তরঃ কর্ভাস গল্পে উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছে আর্গাস। কর্ভাসকে নিয়ে আর্গাস তার সিলভার ক্যাডিলাক গাড়িতে করে পালাচ্ছিল। সেইসময় কর্ভাস খাঁচা থেকে বেরিয়ে আর্গাসের চশমাটি নিয়ে গাড়ি থেকে উধাও হয়ে যায়। মাইনাস কুড়ি পাওয়ারের চশমা ছাড়া সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তিহীন আর্গাস তার দুরবস্থার জন্য কর্ভাসকে গাল দিতে থাকে। ইতিমধ্যে গাছের গুঁড়িতে ধাক্কা মেরে আর্গাসের গাড়িটি রাস্তার একপাশে ছিটকে গেছে। প্রচণ্ডক্রোধে কর্ভাসকে কটুকথা বললেও তার বুদ্ধিকে মেনে নিতে বাধ্য হয় আর্গাস। এই প্রসঙ্গেই তার এই উল্লিখিত মন্তব্য।

পরবর্তী ঘটনাঃ এরপরে গ্রেনফেল দেখতে পান যে রাস্তার উলটোদিকে একটা ন্যাড়া অ্যাকেসিয়া গাছের সবচেয়ে উঁচু ডালে কর্ভাস বসে আছে। তিনি শঙ্কুকে তা দেখান। কর্ভাস তাঁদের দিকেই ঘাড় নিচু করে দেখছিল। তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকতেই সে গোঁত খাওয়া ঘুড়ির মতো গাছের থেকে নেমে এসে শঙ্কুদের মারসেডিসের ছাদের উপরে এসে বসে। তারপরে খুব সাবধানে আর্গাসের সোনার চশমাটা সামনে নামিয়ে রাখে।

📌 আরো দেখুনঃ

📌নবম শ্রেণি ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র Click Here

📌 নবম শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর Click Here

Leave a Reply

  • Post comments:0 Comments
  • Reading time:25 mins read