সাহিত্য সঞ্চয়ন
নবম শ্রেণি বাংলা (প্রথম ভাষা)
রাধারাণী গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নবম শ্রেণি বাংলা | Radharani Golper Essay Type Question Answer Class 9 Bengali wbbse
📌নবম শ্রেণি ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র Click Here
📌 নবম শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর Click Here
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর রাধারাণী গল্প (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) নবম শ্রেণি বাংলা | Essay Type Question Answer Radharani Class 9 Bengali wbbse
• কমবেশি ১৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও : প্রতিটি প্রশ্নের মান-৫
১. সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘রাধারাণী’ কাহিনি অবলম্বনে রাধারাণী চরিত্র আলোচনা করো।
উত্তরঃ
সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘রাধারাণী’ কাহিনির প্রধান চরিত্র রাধারাণী। রাধারাণী এগারো বছর বয়সের বালিকা। তার বিধবা মায়ের একমাত্র কন্যাসন্তান। সে অত্যন্ত বাস্তববাদী। সে নিজমুখে রুক্মিণীকুমারকে পরিচয় দিয়েছে ‘আমি দুঃখীলোকের মেয়ে’ বলে। প্রকৃতপক্ষে সে ধনী ও সুখী পরিবারের মেয়ে ছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে তারা সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব কুটিরবাসী হয়েছে। তাই বুদ্ধিমতী বালিকা রাধারাণী বনফুল তুলে মালা গেঁথে একা রথের মেলায় গেছে মালা বিক্রি করে সেই পয়সায় মায়ের পথ্যের ব্যবস্থা করতে। বালিকার এই উপস্থিত বুদ্ধি, সাহস ও মায়ের প্রতি মমত্বের তুলনা হয় না।
রাধারাণী অপরিচিত মানুষটির কাছে কোনো কথা গোপন করেনি। তার সত্যবাদিতা ও সারল্য প্রশংসনীয়। সে সৎ মনোভাবের বালিকা। ফুলের মালার ন্যায্য মূল্যই সে চায়। সেজন্য পয়সা না টাকা তা নিয়ে তার সংশয় মেটানোর জন্য লোকটিকে নানাভাবে প্রশ্ন করেছে। এমনকি আলো জ্বেলে টাকা দেখার পরে টাকা ফেরত দিতে গিয়ে সে যখন দেখে লোকটি চলে গেছে তখন টাকা ফেরত দিতে না পারায় সে সংশয় অনুভব করে। মালা বিক্রি করে সেই মূল্য বাবদ দানের টাকা খরচ করেছে, কিন্তু ঘরে পড়ে থাকা নোটে মালিকের নাম লেখা থাকা স্বত্তেও তা সে খরচ করতে চায়নি। আসলে সে লোভী নয়। তার মায়ের এসব শিক্ষা ও পরামর্শ রাধারাণীর জীবনে পরম সম্পদ।
(নীচে রাধারাণী চরিত্রের অন্য একটি উত্তর)
২. রাধারাণী’ গল্প অনুসারে রাধারাণী চরিত্রের পরিচয় দাও।
উত্তরঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘রাধারাণী’ গল্পের মূল চরিত্র হল রাধারাণী। এই চরিত্রের মাধ্যমে এক সহজ-সরল, দায়িত্ববান ও সৎ বালিকার সুন্দর প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে।
কর্তব্যপরায়ণ কন্যাঃ রাধারাণীর একমাত্র আপনজন তার অসুস্থ মা। মায়ের পথ্যের জন্য সে বনফুলের মালা গেঁথে রথের মেলায় বিক্রি করতে যায়। এখান থেকেই তার কর্তব্যপরায়ণতা প্রকাশ পায়।
মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাঃ বৃষ্টির কারণে মেলা ভেঙে যায়, মালা বিক্রি হয় না। কীভাবে মায়ের জন্য পথ্য জোগাড় করবে, এই চিন্তায় কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফেরে রাধারাণী। এতে তার মায়ের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার গভীরতা বোঝা যায়।
বিচক্ষণতা ও সংবেদনশীলতাঃ অন্ধকার পথে এক অচেনা পুরুষ হঠাৎ তার ঘাড়ে এসে পড়ে। প্রথমে ভয় পেলেও পরে তার কণ্ঠস্বর শুনে রাধারাণী বুঝে যায় তিনি সদয় ও নিরীহ। এটি তার বিচক্ষণ মনোভাবের প্রমাণ।
সরল ও অকপট স্বভাবঃ অপরিচিত ব্যক্তি দয়ালু মনে হওয়ায় রাধারাণী অকপটে জানায়, সে মেলায় মায়ের পথ্যের জন্য মালা বিক্রি করতে গিয়েছিল। তার সরলতা ও অকপটতা এখানেই স্পষ্ট।
সততা ও নির্লোভতাঃ রাধারাণী মনে করে, মালার মূল্যের তুলনায় তাকে বেশি অর্থ দেওয়া হয়েছে। তাই সে বলে, যদি সত্যিই বেশি টাকা দেওয়া হয়ে থাকে, তবে সে তা ফেরত দেবে। এ থেকে তার সততা ও নির্লোভতা প্রকাশ পায়।
সব মিলিয়ে রাধারাণী চরিত্রে আমরা যে গুণাবলির পরিচয় পায় তা হলো- কর্তব্যপরায়ণতা, মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, বিচক্ষণতা, সরলতা, সততা ও নির্লোভতা। এই গুণগুলোই তাকে একটি আদর্শ ও অনুকরণীয় চরিত্রে উন্নীত করে তোলে।
৩. “মোকদ্দমাটি বিধবা হাইকোর্টে হারিল”– কোন্ মোকদ্দমার কথা বলা হয়েছে ? মোকদ্দমাটি হেরে বিধবার কী পরিণতি হয়েছিল ? ১+৪ = ৫
উত্তরঃ ‘রাধারাণী’ গল্পে রাধারাণীর বাবা মারা যাওয়ার পর তার মা’র সঙ্গে এক জ্ঞাতি সম্পর্কের আত্মীয়ের যে হাইকোর্টে মামলা হয়, উদ্ধৃত প্রশ্নে সেই মোকদ্দমার কথাই বলা হয়েছে।
বিষয় সম্পত্তিকে কেন্দ্র করে রাধারাণীর মায়ের সঙ্গে জ্ঞাতি-সম্পর্কের আত্মীয়ের যে মামলাটি হয়েছিল, তাতে সে হেরে যায়। সঙ্গে সঙ্গে ডিক্রিদার জ্ঞাতি ডিক্রি জারি করে সমস্ত সম্পত্তি নিজের অধিকারে নেয়, এমনকি পূর্বপুরুষের ভিটে-মাটি থেকেও রাধারাণী ও তার মাকে বের করে দেয়। সব মিলিয়ে প্রায় দশ লক্ষ টাকার সম্পত্তি রাধারাণীদের হাতছাড়া হয়। মামলার খরচ ও ক্ষতিপূরণ মেটাতে রাধারাণীর মায়ের অর্জিত সমস্ত নগদ অর্থ ব্যয় হয়ে যায়। তবু শেষ পর্যন্ত রাধারাণীর মা অলংকার বিক্রি করে উচ্চতর আদালতে অর্থাৎ প্রিভি কাউন্সিলে আপিল করে। কিন্তু এ সব কিছুর পরে তারা সম্পূর্ণ নিঃস্ব ও অসহায় হয়ে পড়ে। একটি কুটিরে আশ্রয় নিয়ে কোনোরকমে প্রচণ্ড শারীরিক পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে, অর্ধাহারে-অনাহারে তাদের দিন কাটতে থাকে।
৪. ‘তাহারা দরিদ্র, কিন্তু লোভী নহে’ – কাদের কথা বলা হয়েছে ? পাঠ্যাংশ অনুসরণে তাদের দারিদ্র্য এবং তারা যে লোভী নয় তা আলোচনা করো।
উত্তরঃ আলোচ্য অংশটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত রাধারাণী পাঠ্যাংশের অন্তর্গত, লেখক এখানে ‘তাদের’ বলতে পাঠ্যাংশের দুটি প্রধান চরিত্র রাধারাণী এবং তার মায়ের কথা বুঝিয়েছেন।
একসময় আর্থিক অবস্থা ভালো হওয়া সত্বেও, বর্তমানে রাধারাণী ও তার মা প্রবল অর্থকষ্টে জর্জরিত। এমনকি তাদের দৈনিক আহারটুকু জোটে না। অসুস্থ মায়ের জন্য ঔষধ কেনার অর্থ সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে বনফুলের মালা নিয়ে বালিকা রাধারানী মাহেশের রথের মেলায় যায়, কিন্তু তার মালা বিক্রি হয়নি। দুঃখী রাধারাণী বাড়ি ফেরার পথে একজন পুরুষ আগন্তুকের সাথে দেখা হয়, আগন্তুক তাকে বাড়ি পৌঁছে দেন এবং তার সব মালা কিনে নেয়। আগন্তুক পুরুষ মালার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি মূল্য দিলে রাধারাণীর সে টাকা ফেরত দিতে বাইরে আসে। এই ঘটনা থেকে রাধারানীর চরিত্রের সততার দিকটি প্রকাশিত হয়।
তাঁর মাও এই ঘটনা শুনে যখন বলেন, ‘…সে দাতা, আমাদের দুঃখ শুনিয়া দান করিয়াছে আমরাও ভিখারী হইয়াছি, দান গ্রহণ করিয়া খরচ করি।’
তখন স্পষ্টই বোঝা যায় যে প্রাচুর্য একসময় থাকলেও তাঁদের কখনোই অসৎ কিংবা মূল্যবোধহীন হতে শেখায়নি। ভাগ্যের ফেরে আজ এমন দুঃসহ দারিদ্র্য গ্রাস করলেও মাথা নীচু করে দান গ্রহণ করতে তাঁদের বিবেকে বাধে। তাই যখন ঘর ঝাঁট দিতে গিয়ে একটি নোট খুঁজে পায় রাধারাণী যাতে সেই আগন্তুকের নাম লেখা আছে, সেই নোট কিন্তু তাঁরা সযত্নে রেখে দেয়।
লেখক তাই লিখেছেন, ‘…তাহারা দরিদ্র, কিন্তু লোভী নহে।’
৫. ‘রাধারাণী’ রচনাংশ অবলম্বনে সেকালের সমাজজীবনের পরিচয় দাও।
উত্তরঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘রাধারাণী’ রচনাংশটি কোনো সামাজিক সমস্যা ও সংকটকে অবলম্বন করে রচিত না হলেও কাহিনির প্রেক্ষাপটে সমাজ উঁকি দিয়েছে বারেবারেই রাধারাণীর মার নিঃস্ব হওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ কিংবা মামলা-মোকদ্দমা তখন যথেষ্টই ছিল। রথের মেলা উপলক্ষ্যে লোকের ভিড় গ্রামবাংলারই জীবন্ত ছবি। দারিদ্র্য কত কষ্টকর হতে পারে তার পরিচয় পাওয়া যায় যখন রাধারাণীদের খাবার জোটে না, কিংবা রাধারাণী জানায় তার দুটি ভিন্ন কাপড় নেই— ভিজে কাপড়ে থাকতেই সে অভ্যস্ত। কাপড়ের ব্যবসায়ী পদ্মলোচন সাহা অসৎ ব্যাবসাবৃত্তির প্রতীক হয়ে থাকে, যে চার টাকার কাপড় আট টাকা সাড়ে চোদ্দো আনায় বিক্রি করে। মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার যে চল ছিল তা বোঝা যায় যখন রাধারাণী সম্পর্কে লেখক বলেন— “রাধারাণী বড়ো ঘরের মেয়ে, একটু অক্ষরপরিচয় ছিল।” রাধারাণী এবং তার মায়ের রুক্মিণীকুমার রায়ের রেখে যাওয়া নোট তুলে রাখার মধ্য দিয়ে বোঝা যায় পদ্মলোচনের মতো অসৎ চরিত্রের বিপরীতে সৎ এবং আদর্শবাদী মানুষও তখন সমাজে যথেষ্ট ছিল।
৬. “রাধারাণী নামে এক বালিকা মাহেশে রথ দেখিতে গিয়াছিল।”— রাধারাণী’র মাহেশে রথ দেখতে যাওয়ার কারণ কী ছিল ? সেখানে তার কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল?
উত্তরঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘রাধারাণী’ গল্পাংশের প্রধান চরিত্র রাধারাণী ছিল এগারো বছরেরও কমবয়সি একটি মেয়ে। জ্ঞাতির সঙ্গে মোকদ্দমায় বিপুল সম্পত্তি বেহাত হওয়ার পরে রাধারাণীর বিধবা মা একটা কুটিরে আশ্রয় নিয়ে শারীরিক পরিশ্রম করে পেটের ভাত জোগাড় করতেন। কিন্তু হঠাৎ তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় রাধারাণীদের দিন চলা ভীষণ কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। রাধারাণীকে উপোস করতে হয়। কিন্তু রথের দিন তার মায়ের অসুখ বেড়ে গেলে পথ্যের প্রয়োজন হয়। এই পথ্য জোগাড়ের জন্য রাধারাণী বন থেকে ফুল তুলে এনে একটি মালা গাঁথে। মালাটি বিক্রি করে মায়ের পথ্য জোগাড় করার জন্যই রাধারাণী মাহেশে রথের মেলায় যায়। প্রবল বৃষ্টির কারণে মেলা অসময়ে ভেঙে যাওয়ায় রাধারাণীর মালা বিক্রি হয় না। রাধারাণী যখন কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরছে তখনই অন্ধকার পথে তার ঘাড়ের উপরে একটি লোক এসে পড়ে। সে রাধারাণীর কান্নার কারণ জানতে চায়। লোকটির গলার আওয়াজেই তার দয়ালু স্বভাব উপলদ্ধি করে রাধারাণী। এরপরে রাধারাণীর হাত ধরে সেই অন্ধকার পিছল পথে লোকটি তাকে বাড়ি পৌঁছোতে সাহায্য করে এবং রথের মেলায় মালা বিক্রি না হওয়ায় কিনে নেয়।
৭. “আমরাও ভিখারি হইয়াছি, দান গ্রহণ করিয়া খরচ করি।”— বক্তার এই মন্তব্যের প্রেক্ষাপট গল্পাংশ অবলম্বনে আলোচনা করো।
উত্তরঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘রাধারাণী’ গল্পাংশে রাধারাণীর মা এই উক্তিটি করেছেন। রাধারাণীদের অবস্থা একসময় খুব ভালো ছিল। কিন্তু রাধারাণীর বাবার মৃত্যুর পরে এক জ্ঞাতির সঙ্গে সম্পত্তি সম্পর্কিত বিবাদে জড়িয়ে গিয়ে, হাইকোর্টে হেরে মামলার খরচ ও ওয়াশিলাত অর্থাৎ ক্ষতিপূরণ দিতে, প্রিভি কাউন্সিলে আবেদন করতে রাধারাণীর মা নিঃস্ব হয়ে যান। রাধারাণীর মা একটা কুটিরে আশ্রয় নিয়ে শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে দিন কাটাতে থাকেন। মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদের অবস্থা আরও খারাপ হয়। উপোস করে দিন কাটানো শুরু হয়। অসুস্থ মায়ের পথ্য সংগ্রহের উদ্দেশে রাধারাণী বনফুলের মালা গেঁথে রথের মেলায় বিক্রি করতে গেলেও বৃষ্টিতে মেলা ভেঙে যাওয়ায় তার মালা বিক্রি হয় না। ফেরার পথে এক পথিক সব শুনে চার পয়সায় মালাটি কিনে নেয়। কিন্তু বাড়ি ফিরে পথিককে বাইরে দাড়াতে বলে সে আগুন জ্বালিয়ে যখন দেখে তাকে পয়সার বদলে টাকা দেওয়া হয়েছে, তখন বাইরে বেরিয়ে সে পথিককে খুঁজে পায় না। বিভ্রান্ত হয়ে রাধারাণী তার মায়ের কাছে পরামর্শ চাইলে মা বলেন যে, দাতা অর্থ দিয়েছেন এবং দরিদ্র বলেই তাদের তা গ্রহণ করে খরচ করা ছাড়া অন্য উপায় নেই।
৮. “নোটখানি তাহারা ভাঙাইল না— তুলিয়া রাখিল—তাহারা দরিদ্র, কিন্তু লোভী নহে।”– মন্তব্যটির তাৎপর্য গল্পাংশ অবলম্বনে আলোচনা করো।
উত্তরঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘রাধারাণী’ গল্পাংশে রাধারাণীর মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় এগারো বছরেরও কমবয়সি পিতৃহীন রাধারাণীকে মায়ের পথ্য সংগ্রহের জন্য ফুলের মালা গেঁথে তা রথের হাটে বিক্রির জন্য যেতে হয়। কিন্তু প্রবল বৃষ্টির কারণে মালা বিক্রি না হলে এক পথিক তার সাহায্যকারীর ভূমিকায় উপস্থিত হন। তিনি যে শুধু মালাটি কিনে নেন তাই নয়, চার পয়সা দাম ঠিক হলেও তার বদলে দুটি টাকা দেন। এই ঘটনাটি রাধারাণী মেনে নিতে না পারলেও মায়ের কথায় তা গ্রহণ করে। এরপরে কাপড় ব্যবসায়ী পদ্মলোচনের মাধ্যমে ওই ব্যক্তির পাঠানো দুটি কাপড়ও রাধারাণী বিস্ময়ের সঙ্গে গ্রহণ করে। কিন্তু ঘর ঝাঁট দিতে গিয়ে পাওয়া নোটটি সে বা তার মা গ্রহণ করতে পারেনি। কারণ তা ছিল তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত। তাই নোটটি পাওয়ার পরদিন সেটি ফেরত দেওয়ার জন্য তারা সেই পথিক রুক্মিণীকুমার রায়ের অনেক খোঁজ করেছিল। তাকে খুঁজে না পেয়ে নোটটি না ভাঙিয়ে তারা তুলে রাখে। এই ঘটনা প্রমাণ করে দারিদ্র্য রাধারাণীর পরিবারের সততা ও নির্লোভ মানসিকতা কেড়ে নিতে পারেনি, বরং লোভকে জয় করার মধ্য দিয়ে তারা মহান হয়ে উঠেছে।
৯. রাধারাণী’ গল্প অবলম্বনে রাধারাণীর মায়ের যে পরিচয় পাও তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তরঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘রাধারাণী’ গল্পের মূল চরিত্র রাধারাণী হলেও, তার মায়ের চরিত্রটিও ব্যক্তিত্ব ও স্বকীয়তায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। জীবনের প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি হেরে যেতে চাননি, লড়াইয়ের মানসিকতা তাঁর চরিত্রকে মহত্তম করেছে।
আলোচ্য গল্পে তাঁর চরিত্রের যে দিকগুলি পরিস্ফুট হয়েছে তা হল—
দৃঢ়চেতাঃ জ্ঞাতির সঙ্গে মোকদ্দমায় হেরে পূর্বপুরুষের সম্পত্তি থেকে চ্যুত হয়েছেন রাধারাণীর মা। মামলার খরচ ও ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন, তবু লড়াই থেকে সরে আসেননি। অলংকারাদি বিক্রয় করে ‘প্রিবি কৌন্সিলে’ আবেদন করেছেন ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য। এ থেকে তাঁর চরিত্রের সংগ্রামী ও দৃঢ়চেতা মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে।
পরিশ্রমীঃ সর্বস্ব হারিয়েও রাধারাণীর মা জীবনপথ থেকে সরে আসেননি। তাই বালিকা রাধারাণীকে নিয়ে একটি কুটিরে আশ্রয় নিয়েছেন এবং কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে উপার্জন করে কষ্টে-ক্লিষ্টে জীবন অতিবাহিত করছিলেন তিনি।
বাস্তববাদীঃ রাধারাণীর মায়ের চরিত্রের উল্লেখযোগ্য গুণ হল তাঁর বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি অপরিচিত ব্যক্তি কর্তৃক ‘নোট’ ফেলে যাওয়া সম্পর্কে মেয়েকে বলেছেন— ‘তোমাকে দিয়া গিয়াছেন।’ অর্থাৎ তাদের সাংসারিক দারিদ্র্য সম্পর্কে জেনেই যে উক্ত ব্যক্তি নোটটি দিয়ে গেছেন তাদেরকে সেই বাস্তবতা তিনি অনুভব করেছিলেন।
নির্লোভীঃ নোটটি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই পরের দিন মা-মেয়ে শ্রীরামপুর ও নিকটবর্তী অঞ্চলে রুক্মিণীকুমার রায়কে অনেক খুঁজেছে। উক্ত ব্যক্তিকে না-পেলেও নোটটি তারা তুলে রাখে। এ থেকে বোঝা যায় যে রাধারাণীর মা নির্লোভী ছিলেন। রাধারাণীর মায়ের অক্ষরজ্ঞানও ছিল আলোচ্য গল্পে রাধারাণীর মায়ের পূর্বোক্ত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলিই প্রকাশিত হয়েছে।
১০. ‘যে ঘাড়ের উপর আসিয়া পড়িয়াছিল, সে বলিল,’– ‘সে’ কে ? তাঁর সঙ্গে রাধারাণীর কী কথাবার্তা হয়েছিল তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তরঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘রাধারাণী’ গল্পে দেখা যায় বৃষ্টিতে রথের মেলা ভেঙে গেলে রাধারাণী অন্ধকার পিচ্ছিল পথে কুটিরের দিকে আসছিল। সেই সময় অপরিচিত এক পুরুষ অসাবধানতায় রাধারাণীর গায়ে এসে পড়েছিলেন – ‘সে’ বলতে এখানে সেই অজ্ঞাত পরিচয় পুরুষের কথা বলা হয়েছে।
গল্পের শেষাংশে জানা যায় তাঁর নাম রুক্মিণীকুমার রায়। অন্ধকার পথে কাঁদতে কাঁদতে রাধারাণী যখন বাড়ির দিকে ফিরছে জনৈক ব্যক্তি তার ঘাড়ে এসে পড়লে, ভীত রাধারাণী উচ্চৈঃস্বরে কেঁদে ওঠে। তখন ব্যক্তিটি তাকে জিজ্ঞাসা করেন— ‘কে গা তুমি কাঁদ।’ পুরুষের কন্ঠস্বরে রাধারাণী বুঝতে পারে তিনি দয়ালু। তাই সে কান্না বন্ধ করে নিজের মনের কথা উক্ত পুরুষকে জানিয়ে বলে যে— সে দুঃখীলোকের মেয়ে। মা ছাড়া তার কেউই আর আপনজন নেই। সেই ব্যক্তি রাধারাণীর কাছে জানতে চান যে, সে কোথায় গিয়েছিল।
উত্তরে রাধারাণী বলে– সে রথ দেখতে গিয়েছিল, এখন বাড়ি যাবে কিন্তু অন্ধকারে বৃষ্টিতে পথ দেখতে পাচ্ছে না। পুরুষ বলেন যে, তিনি শ্রীরামপুরেই যাবেন তাই রাধারাণীকে তার বাড়িতে পৌঁছে দেবেন। তিনি রাধারাণীকে তাঁর হাত ধরতে বলেন, না-হলে পিছল পথে পড়ে যেতে পারে।
পথে যেতে যেতেই পুরুষটি বালিকার নাম, রথের মেলায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে জেনে রাধারাণীর মালাগুলি কিনে নিতে চান। মালার বিনিময়ে তিনি মুদ্রা দিলে রাধারাণী বলে- পয়সা বড়ো বড়ো ঠেকছে, অন্ধকারেও চকচক করছে, ভুল করে টাকা দেননি তো ? পুরুষ জানান নতুন কলের পয়সা বলে চকচক করছে। তখন রাধারাণী তাকে বলে যে তাদের কুটিরের সামনে একটু দাঁড়াতে হবে, প্রদীপের আলোতে যদি দেখা যায় পয়সা নয় টাকা, তবে সে তা ফিরিয়ে দেবে। রাধারাণী ঘরের ভেতর প্রদীপ জ্বালিয়ে বাইরে এসে দেখেন ব্যক্তিটি নেই।
এইভাবে অচেনা ব্যক্তি ও রাধারাণীর মধ্যে এক মানবিক ও সংবেদনশীল কথোপকথন হয়েছিল।
১১. ‘রুক্মিণীকুমার রায়ের দ্বারা রাধারাণীরা কীভাবে উপকৃত হয়েছিল, তা ‘রাধারাণী’ গল্পানুসারে লেখো।
অথবা, ‘তাঁহার নাম রুক্মিণীকুমার রায়।’–
রুক্মিণীকুমার রায়ের যে পরিচয় পাওয়া যায়, তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তরঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘রাধারাণী’ গল্পে রুক্মিণীকুমার রায় একজন দয়ালু, পরোপকারী এবং মানবতাবাদী চরিত্র হিসেবে চিহ্নিত হন। তিনি নিঃস্বার্থভাবে এক দরিদ্র মা-মেয়েকে সাহায্য করে একটি বড় মানবিক উদাহরণ স্থাপন করেন।
গল্পে দেখা যায়, রাধারাণী অসুস্থ মায়ের পথ্য কেনার জন্য রথের মেলায় মালা বিক্রি করতে গিয়েছিল। কিন্তু প্রবল বৃষ্টির জন্য মেলা ভেঙে যায় এবং মালা বিক্রির সুযোগও নষ্ট হয়। তখন দুশ্চিন্তায় কাঁদতে কাঁদতে রাধারাণী বাড়ি ফিরছিল। ঠিক সেই সময় রুক্মিণীকুমার রায় নামক এক অচেনা ভদ্রলোক রাধারাণীর সঙ্গে দেখা করেন এবং তাকে সান্ত্বনা দেন। তিনি রাধারাণীর গাঁথা সমস্ত মালা কিনে নেন এবং তার বিনিময়ে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি অর্থ প্রদান করেন।
তিনি শুধু অর্থই দেননি, দোকান থেকে একটি শাড়িও কিনে পাঠান রাধারাণীর মায়ের জন্য। কুটিরে একটি ‘নোট’ রেখে নিজের নামও লিখে যান, যাতে কেউ ভুল করে রাধারাণীকে চোর ভেবে না বসে। তিনি সমস্ত কাজ নিঃশব্দে, প্রচারবিমুখভাবে করেছেন। এতে তাঁর দয়াশীলতা, বিচক্ষণতা এবং সহানুভূতিশীল মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।
এইভাবে রুক্মিণীকুমার রায়ের সাহায্যে রাধারাণীরা যেমন আর্থিকভাবে উপকৃত হয়েছে, তেমনি তাঁরা পেয়েছেন এক মানবিক হৃদয়ের স্পর্শ, যা তাঁদের দুর্দিনে আশার আলো জুগিয়েছে।
📌 আরো দেখুনঃ
📌নবম শ্রেণি ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র Click Here
📌 নবম শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর Click Here