সাহিত্য সঞ্চয়ন
নবম শ্রেণি বাংলা (প্রথম ভাষা)
আবহমান কবিতার বিষয়বস্তু, সারাংশ, সারমর্ম, সারসংক্ষেপ নবম শ্রেণি বাংলা | Radharani Golper Bishoibostu Class 9 Bengali wbbse
রাধারাণী পাঠ্য গল্পের লেখক পরিচিতি, উৎস, বিষয় সংক্ষেপ, নামকরণ নবম শ্রেণি বাংলা।
📌নবম শ্রেণি ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র Click Here
📌 নবম শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর Click Here
রাধারাণী পাঠ্য গল্পের লেখক পরিচিতি, উৎস, বিষয় সংক্ষেপ, নামকরণ নবম শ্রেণি বাংলা।
লেখক পরিচিতিঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮ – ১৮৯৪) : জন্ম চব্বিশ পরগনার কাঁঠালপাড়ায়। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপ্যন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গ্র্যাজুয়েট, ভারতীয় জাতীয়তাবাদের অন্যতম পুরোধা, ‘বন্দেমাতরম্’ মন্ত্রের স্রষ্টা। প্রথম জীবনে সংবাদ প্রভাকরের পাতায় তাঁর কবিতা প্রকাশিত হলেও তাঁর প্রথম উল্লেখযোগ্য রচনা ইংরাজিতে (Rajmohan’s wife)। ১৮৬৫ খ্রি: তাঁর রচিত দুর্গেশনন্দিনী বাংলা উপন্যাস ভাষা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় কপালকুণ্ডলা, মৃণালিনী ইত্যাদি উপন্যাস। সমকালীন বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখক বঙ্কিম ১৮৭২ খ্রি: বঙ্গদর্শন নামে একটি মাসিকপত্র প্রকাশ করেন যা বাংলা পত্রপত্রিকার সংস্কৃতিকে চমৎকৃত করে। বঙ্গদর্শনের নানা সংখ্যায় ছড়িয়ে আছে বঙ্কিমের বহু প্রবন্ধ এবং যুগান্তকারী সব উপন্যাস- বিষবৃক্ষ, চন্দ্রশেখর, রজনী, কৃষ্ণকান্তের উইল ইত্যাদি। ১৮৮২ খ্রি: প্রকাশিত তাঁর আনন্দমঠ উপন্যাসটি ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে শুধু উপন্যাস রচনাতেই নয় বহু বিষয়ক প্রবন্ধ রচনাতেও তাঁর অবদান অসামান্য। লোকরহস্য, মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত, কমলাকান্তের দপ্তর ইত্যাদি প্রবন্ধ গ্রন্থের মধ্যে লুকিয়ে আছে বঙ্কিমের মননের দীপ্তি, তীব্র ব্যঙ্গবোধ, ইতিহাস ও সমাজচেতনা আর আবেগ ও কৌতুক প্রবণতা। বাংলা সাহিত্যে আধুনিক সমালোচনার ধারাতেও তিনি পথদ্রষ্টাদের মধ্যে অন্যতম।
উৎসঃ পাঠ্য রাধারাণী রচনাংশটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত রাধারাণী উপন্যাসের প্রথম পরিচ্ছেদ।
বিষয়সংক্ষেপঃ রাধারাণী এক গরিব বিধবা মায়ের মেয়ে। এক সময় অবস্থাপন্ন হলেও জ্ঞাতির সঙ্গে মামলা-মোকদ্দমায় হেরে যাওয়ায় তার মা নিঃস্ব হয়ে যান। কুটিরবাসী হয়ে দৈহিক পরিশ্রম করে কোনোরকমে তাঁর দিন চলত। কিন্তু তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তা-ও সম্ভব হত না। মা-মেয়ের উপবাস চলতে লাগল। এই সময়ে মায়ের পথ্যের চিন্তায় অস্থির হয়ে রাধারাণী বন থেকে ফুল তুলে মালা গাঁথল। উদ্দেশ্য, রথের হাটে তা বিক্রি করে মায়ের পথ্যের জন্য অর্থসংগ্রহ। কিন্তু বৃষ্টিতে মেলা ভেঙে গেল। রাধারাণী অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরও বৃষ্টি থামল না, মেলাও জমল না। অন্ধকার পথে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে রাধারাণী যখন বাড়ি ফিরছিল তখন তার চোখ থেকেও বৃষ্টির মতোই জল গড়িয়ে পড়ছিল। এই সময়ে হঠাৎই এক পথিক তার ঘাড়ের উপরে এসে পড়ে এবং তার কান্নার কারণ জানতে চায়। প্রশ্নের মধ্য দিয়ে রাধারাণীর অবস্থা, বাসস্থান ইত্যাদি জেনে নিয়ে সেই পথিক পিছল পথে হাত ধরে তাকে নিয়ে চলে। রাধারাণীর গাঁথা মালাটিও সে বাড়ির ঠাকুরকে পরানোর জন্য কিনে নেয়। কিন্তু দাম হিসেবে পয়সা নিয়েই রাধারাণীর সন্দেহ হয় যে তাকে পয়সার বদলে টাকা দেওয়া হয়েছে কি না। সে বাড়িতে ফিরে তা প্রদীপ জ্বালিয়ে যাচাই না করা পর্যন্ত পথিককে দাঁড়াতে বলে। আগুন জ্বালিয়ে সে দেখে যে তার অনুমান ঠিক। তাকে টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাইরে এসে রাধারাণী দেখে পথিক চলে গিয়েছে। এরই মধ্যে কাপড়ের দোকানের মালিক পদ্মলোচন সাহা একজোড়া শান্তিপুরি শাড়ি রাধারাণীর জন্য এনে বলে যে এক বাবু দাম মিটিয়ে দিয়ে তাকে এই শাড়ি দিয়ে যাওয়ার কথা বলে গেছেন। সকলেই অবাক হল তার পরিচয় নিয়ে। রাধারাণী সেই টাকা ভাঙিয়ে বাজার করে আনল, মা-র জন্য সামান্য কিছু রান্না করল। এরপর মাকে ভাত বেড়ে দেওয়ার জন্য যখন ঘর ঝাঁট দিচ্ছে তখন সে একটি নোট কুড়িয়ে পেল। তাতে রাধারাণীর নাম লেখা আছে। দাতার নামও লেখা আছে রুক্মিণীকুমার রায়। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও তার খোঁজ তারা পেল না। রাধারাণীরা নোটটি না ভাঙিয়ে তুলে
রাখল, কারণ তারা গরিব হলেও লোভী নয়।
নামকরণঃ রাধারাণী নামের এক পিতৃহীনা বালিকা মায়ের পথ্যের অর্থ সংগ্রহের জন্য বন থেকে ফুল তুলে একটি মালা গাঁথে এবং রথের মেলায় যায় সেটি বিক্রির জন্য। কিন্তু প্রবল বৃষ্টিতে তার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়। কাঁদতে কাঁদতে সে যখন বাড়ির পথ ধরেছে রাত্রির অন্ধকারে তার সঙ্গে পরিচয় ঘটে এক পথিকের। পথিকটি সব শুনে রাধারাণীর মালাটি কিনে নেয়। শুধু তাই নয়, মালার দাম চার পয়সা হলেও তার বদলে সে রাধারাণীকে টাকা দেয়। যাওয়ার সময়ে কাপড় ব্যবসায়ী পদ্মলোচনের দোকানে রাধারাণীর বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাপড়ের দামও দিয়ে যায় সেই পথিক এবং সকলের আড়ালে রাধারাণীর বাড়িতে একটা নোট রেখে যায়। এই যাবতীয় ঘটনা ও কাজকর্মের মাঝখানে ছিল রাধারাণী। তার নির্লোভ, সৎ, নীতিপরায়ণ চরিত্রকে তুলে ধরাই ছিল গল্পকারের লক্ষ্য। গল্পে যাবতীয় ঘটনা তাকে কেন্দ্র করেই ঘটেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে চরিত্রকেন্দ্রিক নামকরণের রীতি অনুসরণ করে গল্পাংশের নাম রাধারাণী রাখা অত্যন্ত সংগত হয়েছে।
শব্দার্থঃ
• বড়-মানুষ— বিত্তবান বা ধনী মানুষ,
• জ্ঞাতি— একই আদিপুরুষের বংশধর,
• মোকদ্দমা— মামলা, • হাইকোর্ট— উচ্চতর আদালত,
• ডিক্লিদার— যার পক্ষে আদালত ডিক্রি দিয়েছে,
• ভদ্রাসন— ভিটেমাটি, বসতবাড়ি
• ওয়াশিলাত— পাওনা আদায় • নগদ— তাৎক্ষণিক মূল্য
• আপিল— পুনর্বিচারের জন্য আবেদন
• সংস্থান— উপায়, জোগাড় • ঘোরতর— ভীষণ, প্রচন্ড
• পীড়িতা— অসুস্থ • কায়িক— শারীরিক
• দিনপাত— দিন কাটত • রুগ্ণা— রোগের জন্য কাহিল
• পথ্য— রোগীর খাবার • কর্দমময়— কাদায় ভরতি
• পিচ্ছিল— পিছল, • তথাপি— তা সত্ত্বেও
• অন্নাভাব— খাবারের অভাব • চক্ষু-বারি-বর্ষণ— কান্না
• গন্ডবিলম্বী— গলা পর্যন্ত বিস্তৃত বা লম্বা
• ঘন কৃষ্ণ— গাঢ় কালো • কবরী— খোঁপা বা বেণি
• অকস্মাৎ— সহসা বা হঠাৎ • উচ্চৈঃস্বরে— জোরে
• রোদন— কান্না • আইস— এসো
• হৃদয়মধ্যে— মনে, অন্তরে
• লুক্কায়িত— লুকানো • শীঘ্র— তাড়াতাড়ি
• সমভিব্যাহারী— সঙ্গ বা একত্রে গমন
• ব্যামো— অসুখ, ব্যাধি, পীড়া
• আঁচল— শাড়ির প্রান্তভাগ
• নিংড়ে— দু-হাত মুচড়ে জল বের করা
• চকমকি— যে পাথর ঘষলে আগুন জ্বলে
• বিলম্ব— দেরি • বদন— মুখ
• তল্লাশ— খোঁজ, অনুসন্ধান
• বিষণ্ণ— বিষাদপূর্ণ, দুঃখিত
• মুখপানে— মুখের দিকে • দাতা— দান করেন যিনি
• আগড়— খিল • শোরগোল— কলরব
• পোড়াকপাল— হতভাগ্য
• পোড়ারমুখো— কলঙ্কিত ব্যক্তি
• কাপুড়ে— কাপড়ের কারবারি
• মিনসে— পুরুষের প্রতি তাচ্ছিল্য মিশ্রিত সম্বোধন
• অনতিদূরে— একটু দূরে
• কুঞ্জদার— কলকা বা নকশার কাজ
• বাস্তবিক— যথার্থ • সবিশেষ— ব্যাখ্যা
• সুপরিচিত— খুব চেনা • শপথ— প্রতিজ্ঞা
• সুদিন— সুসময় বা ভালো সময়
• বিস্মিত— অবাক • বিবেচনা— বিচারবোধ
• প্রাপ্ত— পেয়েছে এমন মুনাফা লাভ
• কুটুম্ব— আত্মীয় • যৎকিঞ্চিত— খুই সামান্য
• রন্ধন— রান্না • অভিপ্রায়— ইচ্ছা
• অক্ষর পরিচয়— পড়তে পারে যে
• মাহেশ— হুগলি জেলার রিষড়া ও শ্রীরামপুরের মধ্যবর্তী অংশে অবস্থিত স্থান। এখানকার জগন্নাথ মন্দির এবং রথযাত্রা অত্যন্ত প্রসিদ্ধ। বহুকাল ধরে এখানে রথযাত্রা উপলক্ষে বিরাট মেলা বসে।
• রথ— একাধিক চাকাযুক্ত অশ্বচালিত প্রাচীন গতিশীল যান। এখানে জগন্নাথদেবের যানবিশেষ।
• অলংকারাদি— সোনা ইত্যাদির মূল্যবান গয়না ও রত্নসজ্জিত দ্রব্যবিশেষ।
• বনফুল— বনের তুচ্ছ অচেনা অর্থাৎ জাত-গোত্রহীন সুলভফুল।
• অলকাবলি— কানের দু-দিকের বা মাথার সামনের দিকের কোঁকড়ানো চুলের রাশি।
• শ্রীরামপুর— হুগলি জেলার সেই সময়কার একটি গ্রাম
• শান্তিপুরে— নদিয়া জেলায় অবস্থিত একটি জায়গা।
• ডিক্রি— আদালতের হুকুম বা বাদী-প্রতিবাদীর দেনা-পাওনা সম্বন্ধে নির্দেশ।
• প্রিবি কৌন্সিলে (প্রিভি কাউন্সিল)— গ্রেট ব্রিটেনের উচ্চতম আদালত। সেই সময় ভারত পরাধীন থাকায় দেশীয় আদালতে পরাস্ত ব্যক্তি খুশি না হলে ইংল্যান্ডে প্রিভি কাউন্সিলে পুনর্বিচারের আবেদন করতে পারত।
📌 আরো দেখুনঃ
📌নবম শ্রেণি ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র Click Here
📌 নবম শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর Click Here