সাহিত্য সঞ্চয়ন
নবম শ্রেণি বাংলা (প্রথম ভাষা)
আবহমান কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নবম শ্রেণি বাংলা | Abohoman Kobitar Essay Type Question Answer Class 9 Bengali wbbse
📌নবম শ্রেণি ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র Click Here
📌 নবম শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর Click Here
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর আবহমান কবিতা নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী নবম শ্রেণি বাংলা | Class 9 Bengali Abohoman Kobitar Question and Answer wbbse
∆ কমবেশি ১৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও : প্রতিটি প্রশ্নের মান-৫
১. আবহমান’ কবিতাটির নামকরণ কতদূর সার্থক সে বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তরঃ যে-কোনো সাহিত্যকর্মের ক্ষেত্রেই নামকরণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামের মধ্য দিয়েই পাঠকের মনে লেখাটি সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি করে দেবার চেষ্টা করেন সাহিত্যস্রষ্টা। পাঠককে আকর্ষণ করার তাগিদ থেকেই স্রষ্টা সাহিত্যকর্মের নামকরণের দিকটিতে লক্ষ রাখেন। কবিতার ক্ষেত্রে সাধারণত বিষয়বস্তু, ভাব বা ব্যঞ্জনা অনুসারে নামকরণ করা হয়ে থাকে।
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী রচিত আলোচ্য কবিতাটির নাম ‘আবহমান’। ‘আবহমান’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল ক্রমাগত বা চিরপ্রচলিত। সহজ কথায় যুগ যুগ ধরে একইভাবে চলে আসা যে-কোনো কিছুকেই আবহমান বলা হয়। ‘আবহমান’ কবিতায় কবি গ্রামবাংলার মানুষের দুঃখকষ্টে ভরা অথচ অনাবিল এবং প্রকৃতিলালিত জীবনের চিরন্তন ছবিকে নিপুণ তুলিতে এঁকেছেন। অনাদি অতীতে মানুষ সুজলা-সুফলা-শস্যশ্যামলা বাংলাকে ভালোবেসে এখানেই বসতি বানিয়েছিল। ‘আবহমান’ কবিতায় লাউমাচার পাশে সেই সহজ-সুন্দর গ্রামজীবনকেই পাওয়া যায়। করি এই লাউমাচার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন কারণ সেখান থেকেই নাগরিক জীবনে ক্লান্ত মানুষ খুঁজে পেতে পারে শান্তির নিশ্বাস। মাটি আর হাওয়াকে ভালোবেসে মানুষ তাই গিয়ে দাঁড়ায় সেই প্রকৃতির কাছে। ঘাসের গন্ধ মেখে আর সারা রাত তারায় তারায় স্বপ্ন এঁকে রেখে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়। যুগ যুগ ধরে বয়ে চলা বাংলার গ্রামজীবন, তার প্রকৃতি আর তার কাছে মানুষের দুর্নিবার আকর্ষণের কাহিনি এই কবিতায় তুলে ধরা হয়েছে। তাই বলা যায় কবিতাটির ‘আবহমান’ নামটি অসাধারণ ব্যঞ্জনাধর্মী এবং যথাযথ।
২. ফুরয় না সেই একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা’– এখানে ‘একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? পিপাসা ফুরোয় না বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ?
উত্তরঃ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘আবহমান’ কবিতায় সৌন্দর্যের জন্য যে মানুষের মধ্যে আকুলতা দেখা যায়, তাকেই ‘একগুঁয়ে’ বলা হয়েছে। ‘একগুঁয়ে’ মানুষটির মধ্যে রয়েছে প্রকৃতি এবং গ্রামজীবনের কাছে ফিরে আসার আকর্ষণ। এই ফিরে আসার ইচ্ছাকেই কবি ‘দুরন্ত পিপাসা’ বলেছেন।
একদা গ্রামজীবনকে নিবিড়ভাবে ভালোবেসে মানুষ তার বসতি তৈরি করেছিল। নিজের মতো করে গড়ে তুলেছিল জীবনের ছন্দ। বাংলার মাটিকে, হাওয়াকে ভালোবেসে তারা ঘর বেঁধেছিল। উঠোনের লাউমাচার সেই সযত্নে লালিত ছোট্ট ফুল ছিল জীবনের প্রতীক। পরবর্তীকালে নগরসভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্য এবং সুখের সন্ধানে মানুষ শহরমুখী হয়। কিন্তু শহরজীবন তাকে বিত্ত-বৈভবের অধিকারী করলেও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সন্ধান দিতে পারে না। ক্লান্তি আর অবসন্নতা ঘিরে ধরে তাকে। যন্ত্রসভ্যতার দমবন্ধ করা চাপে হাঁপিয়ে ওঠে মানুষ। এখান থেকে তার মধ্যে তীব্র হয় ফিরে আসার আর্তি। গ্রামজীবনের সারল্য আর প্রকৃতির সহজতা তার মধ্যে এই ফিরে আসার আকর্ষণ তৈরি করে। মাটিকে, হাওয়াকে ভালোবেসে ফিরে আসা তাই চলতেই থাকে। সারাদিন আপন মনে ঘাসের গন্ধ মেখে আর সারারাত তারায় তারায় স্বপ্ন এঁকে প্রকৃতির কাছে ফিরে আসার যে আকাঙ্ক্ষা, তা মানুষের মনে চিরকালীন, তা কখনো ফুরোয় না।
৩. ফুরয় না তার কিছুই ফুরয় না”— এখানে কী না ফুরোনোর কথা বলা হয়েছে ? কেন কিছুই ফুরোয় না ?
উত্তরঃ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর আবহমান কবিতায় প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য মানুষের যে চিরকালীন আকাঙ্ক্ষা, তা না ফুরোনোর কথা এখানে বলা হয়েছে।
অনেক বছর আগে মানুষ যখন গ্রামবাংলায় এসেছিল এবং ঘর বেঁধেছিল, তখন তার সেই চেষ্টার সঙ্গে যুক্ত ছিল গভীর ভালোবাসা। এ দেশের মাটি, বাতাসের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করেছিল সে। কিন্তু পরবর্তীকালে মানুষ ক্রমশ শহরমুখী হয়েছে। নগরসভ্যতার সুযোগসুবিধা, স্বাচ্ছন্দ্য তাকে আকৃষ্ট করেছে। শহরজীবনে মানুষ সমৃদ্ধি পেলেও শান্তি পায়নি, বরং যন্ত্রসভ্যতার ক্রমাগত চাপে সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
তার আশ্রয় হয়ে ওঠে বাংলার প্রকৃতি আর সেই প্রকৃতির ছন্দে গাঁথা জীবন। সে যেন যখনই সুযোগ পায় আবার ফিরে আসে এই প্রকৃতিলালিত জীবনে। তার আসার পটভূমি তৈরি করে রাখে উঠোনের লাউমাচা, সন্ধ্যার বাতাসে দুলতে থাকা ছোট্ট ফুল। প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়া – পুরোনো জীবনের চেনা ছন্দে ফিরে আসার পরিপ্রেক্ষিতেই কবির মনে হয়েছে, কোনো কিছুই শেষ হয়ে যায় না। বাগানের কুন্দফুলের হাসি থেকে শুরু করে সূর্য ওঠা, ধীরে ধীরে ছায়া নামা, সন্ধ্যাবেলা নদীর বাতাসের বয়ে চলা— কিছুই শেষ হয় না, যেমন শেষ হয় না সেই প্রকৃতির কাছে ফিরে আসার জন্য মানুষের আকুলতা।
৪. তেমনই করেই সূর্য ওঠে, তেমনি করেই ছায়া/ নামলে আবার ছুটে সান্ধ্য নদীর হাওয়া।’ – বক্তব্যটির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আলোচ্য অংশে একাধিকবার ‘তেমনি’ ব্যবহারের প্রাসঙ্গিকতা বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ বহু বছর আগে মানুষ তার জীবন শুরু করেছিল প্রকৃতির মাঝে। ভালোবাসা দিয়ে সে গড়ে তুলেছিল তার বসতি। সময়ের সাথে বাসস্থান বদলালেও জন্মভিটের প্রতি আকর্ষণ আজও অমলিন। তাই বারবার সে জন্মভূমিতে ফিরে আসে। মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার ইচ্ছে, জন্মভিটের প্রতি টান- এগুলো বদলায় না। এগুলো অপরিবর্তনীয়। কারণ এই টান চিরন্তন। একই ভাবে যুগ যুগ ধরে প্রকৃতিও কোনো পরিবর্তন ঘটায়নি। এই প্রসঙ্গে কবি এই কথা বলেছেন।
‘তেমনি’ ব্যবহারের প্রাসঙ্গিকতা—
উদ্ধৃত অংশের প্রথম শব্দগুচ্ছ ‘তেমনই করেই সূর্য ওঠে’ অর্থাৎ যখন পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছিল, প্রাণ সৃষ্টি হয়েছিল তখন যেমন ভাবে পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠত ঠিক তেমন ভাবে আজও সূর্য ওঠে। এই ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। যতদিন পৃথিবীর অস্তিত্ব থাকবে ততদিন এই ঘটনা একইরকম ভাবে ঘটে চলবে। এই ঘটনা চিরন্তন। দ্বিতীয় শব্দগুচ্ছ “তেমনি করেই ছায়া/ নামলে আবার ছুটে সান্ধ্য নদীর হাওয়া।” অর্থাৎ একই ভাবে পশ্চিম দিগন্তে সূর্যের অস্ত যাওয়া অথবা সন্ধ্যাবেলা নদীর ওপার থেকে ঠাণ্ডা হাওয়া বয়ে আসার মতো ঘটনা গুলি বারংবার ঘটতে থাকবে। সেই কথা বোঝানোর জন্য কবি ‘তেমনি’ কথাটি ব্যবহার করেছেন।
৫. ‘নটেগাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না।’– উদ্ধৃতাংশে নটেগাছের প্রসঙ্গ উত্থাপনে ‘আবহমান’ কবিতায় ‘রূপকথা’র আবেশ কীভাবে রচিত হয়েছে, বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ রূপকথার গল্পে আমরা কোনো সুয়োরাণী ও দুয়োরাণী বা কোনো দৈত্যের দানবের কথা শুনি। সেই গল্পে দুষ্টু রাণী তার সৎ মেয়েকে কষ্ট দিত, দানব বা দৈত্য রাজ্যের প্রজাদের কষ্ট দিত। গল্পের শেষে দুষ্টু বুদ্ধির পরাজয় ঘটত, শুভ বুদ্ধির জয়লাভ ঘটত। যা কিছু ভালো তা চিরস্থায়ী হয়। যা কিছু অন্যায় তার বিনাশ ঘটে এবং গল্পের শেষে লেখা থাকত নটে গাছটি মুড়ালো আমার কথাটি ফুরালো। গল্পের শেষে এর দ্বারা একটা সুখী পরিসমাপ্তি বোঝানো হত। নটে একবর্ষজীবি গাছ, এক বছর পরে নটে গাছটি শুকিয়ে যায়। কিন্তু এখানে কবিতায় কবি নটে গাছটিকে সময়ের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। মানুষের ঘর গড়ে তোলার ইচ্ছা,এই ভিটের প্রতি অমোঘ আকর্ষণ, এর কোনো পরিবর্তন ঘটে না। এই যে জন্মভূমির প্রতি অদম্য আকর্ষণ তা মানুষের মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে। আবার অন্যদিকে বহুবছর বহুযুগ অতিক্রান্ত হলেও প্রকৃতির রূপ থাকে অমলিন। পূর্ব দিগন্তে সূর্যের উদয়, আবার পশ্চিম দিগন্তে সূর্যের অস্ত যাওয়া, নদীর উপর থেকে শীতল হাওয়া বয়ে আসা, গ্রাম বাংলার বুকে কুটিরে অনতিদূরে লাউমাচা– সবই যেন অপরিবর্তনীয় থাকে। গ্রাম বাংলার এই শান্ত সমাহিত চিত্র বহু বছর পার করেও একই থেকে যায়।
৬. “এই মাটিকে এই হাওয়াকে আবার ভালােবাসে।” — এই মাটি হাওয়াকে আবার ভালােবাসার কারণ কী ?
উত্তরঃ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘আবহমান’ কবিতাটি নিজের শিকড়ের খোঁজে মানুষের অনিঃশেষ পথ চলার কাহিনি। সভ্যতার শুরুতে অরণ্যবাসী মানুষ বন কেটে বসতি গড়েছিল, তৈরি করেছিল তার গ্রামসভ্যতা! ঘর বেঁধেছিল নিবিড় অনুরাগে। সেই মানুষই ধীরে ধীরে নাগরিক হয়েছে। প্রকৃতি এবং গ্রামজীবনের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ ঘটেছে। কিন্তু শহরজীবনের ব্যস্ততা এবং কৃত্রিমতায় ক্লান্ত মানুষ নিজের মনের মধ্যে ধরে রাখতে চেয়েছে ঘাসের গন্ধ, তারায় ভরা আকাশে সে নিজের স্বপ্ন এঁকে রেখেছে। বাগান থেকে কুন্দফুলের হাসিকে মানুষ কখনও হারিয়ে যেতে দেয়নি। প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়েছে সেই দুরন্ত জীবনপিপাসা। চাকচিক্য, আড়ম্বরের কৃত্রিমতায় নয়, মানুষ সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য জীবনকে তার
সহজভাবে রূপরস-গন্ধ-স্পর্শ-সহ উপলব্ধি করতে চেয়েছে। তাই প্রকৃতির কাছে, তার ফেলে আসা গ্রামজীবনের কাছে ফিরে যাওয়ার তাগিদ উপলব্ধি করেছে সে। সেখানে লাউমাচায় সন্ধ্যার বাতাসে ছােট্ট একটা ফুল আজও দোল খায়৷ সেই মাটিকে আর হাওয়াকে ভালােবেসে ফিরে যাওয়াটা যেন জীবনকে সুন্দরভাবে উপলব্ধি করার ও বেঁচে থাকার জন্য অবশ্য প্রয়ােজনীয় হয়ে ওঠে।
৭. ‘আবহমান’ শব্দের অর্থ কী ? কবিতায় ব্যক্ত ভাবের সঙ্গে এই নামকরণ কতদূর সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে তুমি মনে করো ?
উত্তরঃ আবহমান কথাটার আক্ষরিক অর্থ হল যা অনন্ত কাল ধরে বহমান।এখানে চিরকালীন বা চিরন্তন অর্থ বোঝাতে আবহমান শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।
বহু বছর আগে মানুষের ঘর বাঁধা শুরু হয়েছে। মানুষ তাঁর কুটির নির্মিত করছে সযত্নে। বেঁচে থাকার জন্য সবজি ফলিয়েছে। বহমান সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুরই পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু ‘নিবিড় অনুরাগে’ এই ঘর বাঁধার ইচ্ছা, জন্মভূমির মাটিকে, হাওয়াকে ভালোবাসার অদম্য ইচ্ছার কোনো পরিবর্তন হয়নি। প্রিয় ভিটে, ভিটের সংলগ্ন ছোটো একটি লাউমাচা, যা কবি এখানে প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন, তাঁর টান সার্বজনীন। যদি কখনো কাউকে কোনো প্রয়োজনে নিজের জায়গা ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যেতে হয়, তবুও চেনা ভিটের জন্য সবসময় তার মন অস্থির হয়ে থাকে। পরিচিত ‘ঘাসের গন্ধ’ মাখার জন্য মন ভরে থাকে ‘দূরন্ত পিপাসায়’। সময় এগিয়ে চলে প্রতিদিন সূর্য উঠে, প্রতিদিন অস্ত যায়, সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যার বাতাস নদীর উপর থেকে গ্রামের বুকে ছুটে আসে। অফুরন এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তা চিরকালীন। বারবার, প্রতিদিন, অবিরাম একই ঘটনা ঘটে চলেছে। তবু এর কোনো শেষ নেই। ঠিক তেমনি মানুষের মনে ঘর বাঁধার আখাঙ্খাও চিরকালীন। এই ঘটনাগুলি আবহমান কাল ধরে লক্ষ্য করা যায়। তাই কবিতায় ব্যক্ত ভাবের সঙ্গে এই নামকরণ সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করি।
৮. ‘আবহমান’ কবিতার মধ্য দিয়ে গ্রামীণ প্রকৃতির যে প্রতিচ্ছবি প্রকাশিত হয়েছে তার পরিচয় দাও।
উত্তরঃ কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁর ‘আবহমান’ কবিতায় গ্রামীণ প্রকৃতির চিরকালীন, স্নিগ্ধ এবং পরিচিত প্রতিচ্ছবি প্রকাশ করেছেন। কবিতায় গ্রামীণ জীবনের সরলতা ও সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে, যেখানে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের এক অঙ্গীকারিত সম্পর্ক প্রাধান্য পেয়েছে।
কবিতায় গ্রামীণ প্রকৃতির প্রতিচ্ছবির মধ্যে যেমন লাউ গাছ এবং তার সাথে সম্পর্কিত লাউ মাচা, তেমনি ছোট্ট ফুল, সন্ধ্যার বাতাস এবং ঘাসের গন্ধ উল্লেখযোগ্য স্থান পেয়েছে। কবি এই সকল প্রাকৃতিক উপাদানকে এমনভাবে চিত্রিত করেছেন, যা আমাদের গ্রামের প্রতি আকর্ষণ ও ভালোবাসার অনুভূতি জাগ্রত করে। কবি পল্লিগ্রামের সাধারণ দৃশ্যগুলিকে সুনিপুণভাবে চিত্রিত করেছেন, যেখানে লাউ গাছের পাশে দুলতে থাকা ফুলের মৃদু চিত্র আমাদের মনে সেই গ্রামীণ পরিবেশের প্রশান্তি এবং স্নিগ্ধতার অনুভূতি সৃষ্টি করে।
কবিতায় “সারাটা দিন আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখে”-এই উক্তির মাধ্যমে কবি জানিয়ে দিয়েছেন যে, যে কেউ জন্মভূমি থেকে দূরে চলে গেলে, তার মন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মাটির প্রতি গভীর আবেগে নিবদ্ধ থাকে। এমনই এক চিত্র কবি ফুটিয়ে তুলেছেন, যেখানে মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ক এক অদৃশ্য বন্ধনে বাঁধা থাকে।
এই কবিতার মাধ্যমে গ্রামীণ প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি-যে প্রকৃতি সময়ের সাথে বদলায় না, বরং চিরকালীন থাকে-প্রকাশ পেয়েছে। কবি এই প্রকৃতির অপরিবর্তনীয়তা, শান্তি, এবং সেই সঙ্গে মানুষের আবেগের অন্তর্গত সম্পর্কের কথা তুলে ধরেছেন।
৯. কে এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে অসে / এই মাটিকে এই হাওয়াকে আবার ভালােবাসে।’- কার লেখা কোন কবিতা থেকে গৃহীত ? উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ খ্যাতিমান কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা ‘আবহমান কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি গৃহীত।
প্রসঙ্গ : জন্মস্থান মায়ের মতাে। মা ও সন্তানের মধ্যে যেমন নাড়ির বাঁধন, তেমনি জন্মভূমির সঙ্গে প্রতিটি মানুষের শিকড়ের বাঁধন অটুট। গ্রাম জীবনের সূচনা হয়েছিল গ্রামীণ সভ্যতা বিকাশের আদিকাল থেকে। মায়ের কোলে সন্তান যেমন লালিত পালিত হয়, তেমনি করে প্রতিটি গ্রাম্য মানুষও শিশু অবস্থা থেকে বড়াে হয়ে ওঠে। জন্মের পর থেকে গ্রামের মাটি, গ্রাম্য প্রকৃতির সঙ্গে তার সম্পর্কের বাঁধন দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়।
জন্মস্থান গ্রামকে গভীর ভালােবেসে ফেলে। গ্রাম সৃষ্টির সেই আদি যুগ থেকে মানুষ এইভাবে ভালােবেসে ঘর বেঁধেছে। সংসার-সমাজ গড়েছে। গ্রামীণ সভ্যতার বিকাশ হয়েছে।
তাৎপর্য : দিন যত এগিয়েছে নগরায়ণের প্রভাব গ্রামকে গ্রাস করেছে। শহর-নগরের সমৃদ্ধ জীবনাচরণের বিলাসবৈভব, কিংবা জীবন-জীবিকার স্বার্থ গ্রামের মানুষকে শহরমুখী করেছে। কিছু মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরবাসী হয়েছে। কিন্তু শহরের সুখ-সমৃদ্ধির মােহে হারিয়ে গিয়েও গ্রামের জীবনের শিকড়ের টানে আবার ফিরে এসেছে ছুটিছাটার অবকাশে। গ্রামের মাটি ও সে ভুলতে পারেনি। ফের ভালােবাসার বাঁধনে বাঁধা প্রকৃতিকে পড়েছে। এই বাঁধন অবহমান কালের, চিরকালের ও চিরন্তন।
📌 আরো দেখুনঃ
📌নবম শ্রেণি ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র Click Here
📌 নবম শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর Click Here