Class 10 History 2nd Unit Test Question Paper Set-1 wbbse | দশম শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্নপত্র দ্বিতীয় ইউনিট টেস্ট সেট-১

SECOND SUMMATIVE EVALUATION
CLASS 10 (X) WBBSE
HISTORY QUESTION PAPER

Class 10 History 2nd Unit Test Question Paper Set-1 wbbse | দশম শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্নপত্র দ্বিতীয় ইউনিট টেস্ট সেট-১

📌দশম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র সমস্ত বিষয় | Class 10 All Subject Unit Test Question Paper Click Here

Set-1

দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন
দশম শ্রেণি     বিষয় : ইতিহাস
সময় : ১.২০ মিনিট                    পূর্ণমান : ৪০

ক-বিভাগ

১। সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো : 1×10=10

(i) রণজিৎ গুহ হলেন—
(ক) সাম্রাজ্যবাদী ঐতিহাসিক
(খ) জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিক
(গ) নিম্নবর্গীয় ঐতিহাসিক
(ঘ) মার্কসবাদী ঐতিহাসিক।

উত্তরঃ (গ) নিম্নবর্গীয় ঐতিহাসিক।

(ii) আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হল—
(ক) মুদ্রা (খ) স্থাপত্য (গ) ভাস্কর্য (ঘ) চিঠিপত্র।

উত্তরঃ (ঘ) চিঠিপত্র।

(iii) “বামাবোধিনী পত্রিকা’ ছিল—
(ক) দৈনিক পত্রিকা (খ) মাসিক পত্রিকা
(গ) সাপ্তাহিক পত্রিকা (ঘ) ত্রৈমাসিক পত্রিক

উত্তরঃ (খ) মাসিক পত্রিকা

(iv) ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’র প্রতিপাদ্য বিষয় হল—
(ক) কলকাতার নাগরিক জীবন
(খ) ইংরেজদের দুর্নীতি
(গ) নারীর সমস্যা
(ঘ) কলকাতার জমিদার পরিবার।

উত্তরঃ (ক) কলকাতার নাগরিক জীবন

(v) হিন্দু কলেজ বর্তমানে যে নামে পরিচিত—
(ক) সেন্ট জেভিয়াস
(খ) প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়
(গ) স্কটিশচার্চ কলেজ
(ঘ) প্রেসিডেন্সি কলেজ।

উত্তরঃ (খ) প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়

(vi) সর্বধর্মসমন্বয়ের আদর্শ প্রচার করেন—
(ক) বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী (খ) স্বামী বিবেকানন্দ
(গ) শ্রীরামকৃষ্ণ (ঘ) কেশবচন্দ্র সেন।

উত্তরঃ (গ) শ্রীরামকৃষ্ণ

(vii) ভারতে প্রথম ‘অরণ্য আইন’ পাশ হয়—
(ক) ১৮৫৯ খ্রিঃ (খ) ১৮৬০ খ্রিঃ
(গ) ১৮৬৫ খ্রিঃ (ঘ) ১৮৭৮ খ্রিঃ।

উত্তরঃ (গ) ১৮৬৫ খ্রিঃ

(viii) ‘খুঁৎকাঠি প্রথা’র অর্থ—
(ক) ব্যক্তিগত মালিকানা (খ) যৌথ মালিকানা
(গ) ভাগচাষি মালিকানা (ঘ) জমির মালিকানা।

উত্তরঃ (খ) যৌথ মালিকানা।

(ix) তিতুমিরের প্রকৃত নাম কী ?
(ক) মোহম্মদ মুসিন (খ) মীর নিসার আলি (গ) সৈয়দ আহমেদ (ঘ) শরিয়ত উল্লাহ।

উত্তরঃ (খ) মীর নিসার আলি।

(x) জঙ্গলমহল গঠিত হয়—
(ক) বাঁকুড়া ও মেদনীপুর জেলার বনাঞ্চল নিয়ে।
(খ) বীরভূম জেলার বনাঞ্চল নিয়ে।
(গ) পুরুলিয়া জেলার বনাঞ্চল নিয়ে।
(ঘ) মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলার বনাঞ্চল নিয়ে।

উত্তরঃ (ক) বাঁকুড়া ও মেদনীপুর জেলার বনাঞ্চল নিয়ে।

খ-বিভাগ

২। নিচের প্রশ্নগুলির নির্দেশ অনুসারে উত্তর দাও : ১x৬=৬

২.১ একটি সম্পূর্ণ বাক্যে উত্তর দাও :

(i) সরকারী নথিপত্র কোথায় সংরক্ষণ করা হয় ?

উত্তরঃ সরকারি দপ্তরে, জাতীয় রাষ্ট্রীয় সংরক্ষণাগারে, ঐতিহাসিক সংগ্রহশালায়, অনলাইন সংগ্রহশালায়স রকারী নথিপত্র সংরক্ষণ করা হয়।

(ii) কলকাতা মেডিকেল কলেজে প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ কে করেন ?

২.২ সত্য না মিথ্যা লেখ।

(iii) ‘জীবনের ঝরাপাতা’র লেখক বিপিন চন্দ্র পাল।

উত্তরঃ মিথ্যা। (সরলা দেবী চৌধুরানী)

(iv) সুই মুণ্ডা ছিলেন মুণ্ডা বিদ্রোহের নেতা।

উত্তরঃ মিথ্যা। (কোল বিদ্রোহের নেতা)

২.৩ নিচের বিবৃতির মধ্যে থেকে মানানসই ব্যাখ্যাটি খুঁজে নাও :

(v) বিবৃতি : রাজা রামমোহন রায় লর্ড আমহার্স্টকে চিঠি লিখেছিলেন—

ব্যাখ্যা-১ : সতীদাহ প্রথা বন্ধ করার জন্য আবেদন হিসাবে।

ব্যাখ্যা-২ : ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে উদ্যোগী হওয়ার আবেদন হিসাবে।

ব্যাখ্যা-৩ : ভারতে সংস্কৃত শিক্ষা বিস্তারে উদ্যোগী হওয়ার আবেদন হিসাবে।

উত্তরঃ ব্যাখ্যা-২ : ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে উদ্যোগী হওয়ার আবেদন হিসাবে।

(vi) বিবৃতি : অষ্টাদশ শতকের শেষার্ধে চূয়াড়রা বিদ্রোহ ঘোষণা করে—

ব্যাখ্যা-১ : চুয়াড়দের ওপর ইজারাদারদের অত্যাচার মাত্রা ছাড়িয়েছিল।

ব্যাখ্যা-২ : বহিরাগত মহাজন ও বনিকদের আর্থিক শোষণ বৃদ্ধি পেরেছিল।

ব্যাখ্যা-৩ : চুয়াড়দের ওপর কোম্পানি উচ্চহারে ভূমি রাজস্ব আরোপ করেছিল।

উত্তরঃ ব্যাখ্যা-৩ : চুয়াড়দের ওপর কোম্পানি উচ্চহারে ভূমি রাজস্ব আরোপ করেছিল।

গ-বিভাগ

৩। নীচের প্রশ্নগুলির দু-তিনটি বাক্যে উত্তর দাও (যে কোন চারটি) ২x৪=৮

৩.১ আধুনিক ইতিহাস চর্চা বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ অষ্টাদশ শতক থেকে শুরু করে বিংশ শতকের শেষ পর্যন্ত সময়কালের ইতিহাসচর্চা আধুনিক ইতিহাসচর্চা নামে পরিচিত।

প্রথমত, যুক্তিবাদ, প্রগতিবাদ, রােমান্টিক ভাবধারা ও বৈজ্ঞানিক ভাবধারা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে এই ইতিহাসচর্চা।

দ্বিতীয়ত, বিজ্ঞানসম্মত, প্রাতিষ্ঠানিক ও পেশাজীবী ইতিহাসচর্চা হল আধুনিক ইতিহাসচর্চার মূল বৈশিষ্ট্য।

৩.২ ভারতে শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী বিতর্ক বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ বেন্টিঙ্কের শাসনকালে ভারতে প্রাচ্য না পাশ্চাত্য পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করা উচিত এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে জনশিক্ষা কমিটির সদস্যরা কার্যত প্রাচ্যবাদী বা ওরিয়েন্টালিস্ট এবং পাশ্চাত্যবাদী বা অ্যাংলিসিস্ট নামে দুটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এভাবে সরকারি শিক্ষানীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।

৩.৩ ব্রাহ্ম সমাজের যে কোন দুটি সমাজ সংস্কার মূলক কাজের উল্লেখ করো।

উত্তরঃ কুসংস্কারের বিরোধিতাঃ বাংলার রক্ষণশীল ও কুসংস্কারচ্ছন্ন সমাজে প্রচলিত বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, অস্পৃশ্যতা প্রভৃতির বিরুদ্ধে ব্রাহ্ম সমাজের সদস্যরা প্রতিবাদ জানিয়েছিল। তারা প্রচলিত এই প্রথাগুলির অসারতা জনসমক্ষে তুলে ধরেছিলেন এবং জনগণকে সচেতন করেছিলেন।

নারী কল্যাণঃ ভারতীয় নারীদের মধ্যে পর্দা প্রথার বিলুপ্তি, বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ নিষিদ্ধকরণ, নারী স্বাধীনতা, শিক্ষার প্রসার প্রভৃতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে ব্রাহ্মসমাজ নারী কল্যাণে সচেষ্ট হয়েছিল।

৩.৪ বিপ্লব ও বিদ্রোহের মধ্যে পার্থক্য কী ?

প্রথমতঃ বিপ্লব এমন এক দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া যা পুরােনাে অর্থনৈতিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর আঘাত হেনে তার আমূল পরিবর্তন ঘটায়।
অন্যদিকে, কোনাে নির্দিষ্ট অঞ্চলে প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের ঘটনা অথবা নির্দিষ্ট কিছু মানুষের স্বার্থে নির্দিষ্ট সহিংস প্রতিবাদের মাধ্যমে দাবি আদায়ের চেষ্টাই হল বিদ্রোহ।

দ্বিতীয়তঃ বিপ্লব একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই পরিবর্তন সংঘটিত হয়।
অন্যদিকে, বিদ্রোহের উদ্দেশ্য সীমিত থাকার কারণে তা ক্ষণস্থায়ী হয় এবং আমূল পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়।

৩.৫ বারাসাত বিদ্রোহ কী ?

ঘ-বিভাগ

৪। নিচের প্রশ্নগুলির সাত-আটটি বাক্যে উত্তর দাও (যে কোন দুটি) ৪x২=৮

৪.১ বিপিনচন্দ্র পালের ‘সত্তর বৎসর’ কীভাবে আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হয়ে উঠেছে তা বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ ভূমিকা : ভারতের জাতীয়তাবাদী ও চরমপন্থী নেতা বিপিনচন্দ্র পালের আত্মজীবনী ‘সত্তর বৎসর’-এ ১৮৫৮-১৮৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালের পরিস্থিতি বর্ণিত হয়েছে। ফলে এটি আধুনিক ভারতের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ গৌণ উপাদান।

উপাদানের বিভিন্ন দিক : ‘সত্তর বৎসর’ থেকে ইতিহাসের যে দিকগুলাে জানা যায় তা হল—

(১) গ্রাম ও শহরের কথা : এই গ্রন্থ থেকে বিপিনচন্দ্র পালের বংশ ও পারিবারিক ইতিহাস, বাখরগঞ্জ, ফেঁচুগঞ্জ, শ্রীহট্ট, হবিগঞ্জ -এর মতাে গ্রামের পাশাপাশি তৎকালীন কলকাতা শহরের ইতিহাসও জানা যায়।

(২) সংস্কৃতি : ‘সত্তর বৎসর’ থেকে গ্রামীণ সংস্কৃতি অর্থাৎ দোল-দুর্গোৎসব, যাত্রাগান ও পুরাণপাঠ, বিবাহ প্রথার পাশাপাশি কলকাতার তৎকালীন সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস ও বিধিনিষেধ, মদ্যপান ও মদ্যপান নিবারণী সমিতির কথাও জানা যায়।

(৩) ব্ৰত্মসমাজের রাজনৈতিক আদর্শ : তিনি দেখিয়েছেন ইংরেজি শিক্ষিত বাঙালিরা নতুন সামাজিক আদর্শের সন্ধান পেয়েছিল। তৎকালীন ব্রাম্মসমাজও এই শিক্ষিত বাঙালিদের মধ্যে স্বাধীনতার আদর্শের সার করেছিল।

(৪) ভারতসভা ও হিন্দুমেলা : ‘সত্তর বৎসর’ থেকে আনন্দমােহন বসু ও সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর নেতৃত্বে ছাত্রসভা বা স্টুডেন্টস অ্যাসােসিয়েশন’ ও ‘ভারতসভা’ গঠনের কথা এবং নবগােপাল। মিত্র ও তার প্রতিষ্ঠিত ‘হিন্দুমেলা’ নামক জাতীয়তাবাদী প্রতিষ্ঠানের কথাও জানা যায়।।

উপসংহার : বিপিনচন্দ্র পালই প্রথম ব্যক্তিত্ব যিনি তার আত্মজীবনীতে ‘দেশকথা’কে তুলে ধরেছেন। তবে তার এই দেশকথাতে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে।

৪.২ নারী শিক্ষা বিস্তারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তরঃ নারীশিক্ষা প্রসারে বিদ্যাসাগরের অবদান—

(1) নারীশিক্ষা প্রসারে বেথুনকে সহযোগিতা : জন এলিয়ট ড্রিংকওয়াটার বেথুন বাংলায় নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে একটি স্মরণীয় নাম। তিনি 1849 সালে কলকাতায় একটি বালিকা বিদ্যালয় (পরবর্তীকালে বেথুন স্কুল) প্রতিষ্ঠা করেন। এই কাজে বিদ্যাসাগর মহাশয় তাঁকে সহযোগিতা করেন। 1850 সালে বিদ্যাসাগর এই স্কুলের সম্পাদক হন।

(2) নারীশিক্ষার জন্য প্রচার : অভিভাবকেরা বেথুন সাহেবের স্কুলে যাতে মেয়েদের পড়তে পাঠায় তার জন্য ঈশ্বরচন্দ্র প্রচারকার্য চালান। তাঁর প্রচারের ফলে অনেক অভিজাত বাড়ির মেয়েরা বেথুন স্কুলে পড়তে আসে। তিনি নারীশিক্ষার প্রচারের জন্য স্কুলের গাড়িতে লিখেছিলেন, কন্যা পেবং পালনীয়া। শিক্ষানিয়তি যত্নতঃ। অর্থাৎ কন্যাকে পুত্রের মতো পালন করে শিক্ষাদান করতে হবে।

(3) বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা : বিদ্যাসাগরের উদ্যোগে বাংলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে 35টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এই বিদ্যালয়গুলিতে তখন এক হাজার তিনশো ছাত্রী লেখাপড়া করত। গ্রামাঞ্চলে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে তিনি কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন। এ ছাড়া তিনি মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন (বিদ্যাসাগর কলেজ) প্রতিষ্ঠা করেন।

(4) গ্রামাঞ্চলে নারীশিক্ষা বিস্তার : নারীশিক্ষার প্রসারে বিদ্যাসাগর শুধুমাত্র বেথুন স্কুলের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি, গ্রামাঞ্চলে তিনি নারীশিক্ষার বিস্তারে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। 1857 সালে তিনি প্রথম বর্ধমানের জৌগ্রামে মেয়েদের শিক্ষার জন্য একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

৪.৩ নীল বিদ্রোহে বাংলার মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভূমিকা কী ছিল ?

ঙ-বিভাগ

৫। নিচের যে-কোনো একটি প্রশ্নের পনেরো-ষোলোটি বাক্যে উত্তর দাও : ৮×১=৮

৫.১ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থটির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। ৮

৫.২ নব্যবঙ্গ আন্দোলনে হেনরী লুই ভিভিয়ান ডিরোজির অবদান কী ছিল ? এই আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা আলোচনা করো। ৫+৩

৫.৩ ১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দে সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ, ফলাফল ও গুরুত্ব আলোচনা করো। ৮

উত্তরঃ উনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে যে সমস্ত উপজাতি বিদ্রোহ হয়েছিল, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সাঁওতাল বিদ্রোহ। ব্রিটিশ সরকারের উপনিবেশিক শাসন বজায় রাখার জন্য, ব্রিটিশ সরকার যে সমস্ত ভূমি সংস্করণ আইন পাশ করেছিল, তা ভারতীয় উপজাতিদের ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। তাই শেষ পর্যন্ত ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সাঁওতালরা বিদ্রোহ করতে বাধ্য হয়, যা সাঁওতাল বিদ্রোহ নামে পরিচিত।

সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ—

বিহারের রাজমহল থেকে পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের শান্তিপ্রিয় সাঁওতালরা বিভিন্ন কারণে ব্রিটিশদের উপর ক্ষুব্ধ হয়েছিল-

(ক) জমির উপর ব্রিটিশদের অধিকার : সাঁওতালরা জঙ্গল পরিষ্কার করে জমি তৈরি করে চাষবাস শুরু করলে ব্রিটিশ সরকার সাঁওতালদের কাছে বিপুল হারে রাজস্বের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে সাঁওতালরা জমি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

(খ) সাঁওতালদের সর্বস্বান্ত : ব্রিটিশ সরকার ভূমিরাজস্ব ছাড়াও অন্যান্য কর ও ঋণের দায়ভার সাঁওতালদের উপর চাপিয়ে দেয়। ফলে সাঁওতালরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে।

(গ) সাঁওতালদের ঋণগ্রস্ত : ৫০ থেকে ৫০০ হারে ঋণ দিয়ে বহিরাগত ব্যবসায়ীরা ও মহাজনরা সাঁওতালদের কাছে চড়া হারে সুদ আদায় করত। তাই তাদের সমস্ত কিছু বিক্রি করে দিলেও তাদের ঋণ শোধ হত না।

(ঘ) সাঁওতালদের অত্যাচার : রেলপথ নির্মাণের কাজে ডালহৌসির কর্মচারীরা সাঁওতালদের জোর করে বেগার খাটাত। কেউ সম্মত না হলে তাকে শারীরিকভাবে অত্যাচার, ও বাড়ির জিনিসপত্র লুটপাট, এমনকি ঘরের রমণীদের পর্যন্ত সম্মানহানী করত।

(ঙ) ব্রিটিশ সরকারের আইন প্রণয়ন : প্রথাগত আইন ও বিচার ব্যবস্থা বন্ধ করে সাঁওতালদের উপর জটিল ব্রিটিশ আইন প্রায়োগ করত।

(চ) সাঁওতালদের খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহন : ইউরোপীয় মিশনারীরা বহু সাঁওতালকে জোর করে খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করত।

বিদ্রোহের বিস্তার—

সিধু, কানু, চাঁদ, ভৈরব, কালু, প্রমানিক, প্রমুখের নেতৃত্বে প্রায় ১০,০০০ সাঁওতাল ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ৩০ শে জুন ভগ্না ডিহির মাঠে একসঙ্গে জড়ো হয়ে স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করেন। স্থানীয় কামার, কুমোর, তাঁতী, পেশারত মানুষ ও এই বিদ্রোহে যোগদান করেন। তারা দিঘিখানার অত্যাচারী দারোগা মহেশ লাল দত্ত এবং মহাজন কেনারাম ভগৎকে হত্যা করেন।

সাঁওতাল বিদ্রোহের ফলাফল / গুরুত্ব / তাৎপর্য—

১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দের সংগঠিত সাঁওতাল বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত ব্যার্থ হলেও এর গুরুত্ব ও ফলাফল ছিল সুদুরপ্রসারী।

প্রথমত, সাঁওতালদের দাবি মেনে নিয়ে ইংরেজরা সাঁওতাল পরগনা গঠন করে দিতে বাধ্য হন।

দ্বিতীয়ত, সাঁওতালদের ক্ষোভের আগুন প্রতিটি খেটে খাওয়া মানুষদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

তৃতীয়ত, ব্রিটিশ সরকার শেষ পর্যন্ত ঘোষণা করতে বাধ্য হয় যে, এই এলাকায় ব্রিটিশদের আইন কার্যকার হবে না।

চতুর্থত, সাঁওতাল এলাকায় কোনো বাঙালি ও বহিরাগত জমিদার ও মহাজনদের প্রবেশ নিষেধ করা হয়।

পঞ্চমত, এই বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার সাঁওতালদের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদের হার ধার্য করে দিতে বাধ্য হয়।

উপসংহারঃ পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, অন্যান্য উপজাতি বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও সাঁওতাল বিদ্রোহের আগুন ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বেশ সফল হয়েছিল। তাই অধ্যাপক সুপ্রকাশ রায় এই বিদ্রোহকে ‘ভারতের যুগান্তকারী মহাবিদ্রোহের অগ্রদূত স্বরূপ’ বলে অভিহিত করেছেন।

Leave a Reply

  • Post comments:0 Comments
  • Reading time:9 mins read