মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্নপত্র ২০২৫ পশ্চিমবঙ্গ বোর্ড | Madhyamik Geography Question Paper 2025 with Answers wbbse

মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্নপত্র ২০২৫ পশ্চিমবঙ্গ বোর্ড | Madhyamik Geography Question Paper 2025 with Answers wbbse

2025 Geography Question Paper with answers for Madhyamik students of West Bengal Board of Secondary Education.
পশ্চিমবঙ্গ বোর্ডের অধীন মাধ্যমিক ছাত্র ছাত্রীদের জন্য ২০২৫ সালের উত্তরসহ ভূগোল বিষয়ের প্রশ্নপত্র।

📌 বিগত বছরের মাধ্যমিক প্রশ্নপত্র সমস্ত বিষয় | Madhyamik Previous Years Question Paper All Subject CLICK HERE

2025
GEOGRAPHY
Time-Three Hours Fifteen Minutes

(First FIFTEEN minutes for reading the question paper only)
Full Marks-90
(For Regular and Sightless Regular Candidates)
Full Marks-100
(For External and Sightless External Candidates)

Special credit will be given for answers which are brief and to the point.
Marks will be deducted for spelling mistakes, untidiness and bad handwriting.

[‘ক’ বিভাগ থেকে ‘চ’ বিভাগ পর্যন্ত প্রদত্ত প্রশ্ন নিয়মিত ও বহিরাগত সব পরীক্ষার্থীদের জন্য এবং ‘ছ’ বিভাগে প্রদত্ত প্রশ্ন শুধুমাত্র বহিরাগত পরীক্ষার্থীদের জন্য।]

[‘ক’ বিভাগে সকল প্রশ্ন আবশ্যিক, অন্য বিভাগে বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়। ‘চ’ বিভাগে কেবলমাত্র দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীদের বিকল্প প্রশ্নের নির্দেশ অনুযায়ী উত্তর লিখবে। অন্য সকলে মানচিত্র চিহ্নিত করবে।]

বিভাগ ‘ক’

১। বিকল্পগুলির থেকে সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করে লেখো : ১×১৪=১৪

১.১ হিমালয়ের একটি সরলবর্গীয় উদ্ভিদের উদাহরণ হ’ল—
(ক) মেহগিনি (খ) অর্জুন (গ) শাল (ঘ) পাইন

উত্তরঃ (ঘ) পাইন

১.২ নিম্নলিখিত গুলির মধ্যে মিলেট শস্য চিহ্নিত করো—
(ক) রাগি (খ) ভুট্টা (গ) যব (ঘ) গম

উত্তরঃ (ক) রাগি

১.৩ ভারতের প্রথম কাপড়ের কল স্থাপিত হয়—
(ক) আহমেদাবাদ (খ) কোয়েম্বাটোর (গ) ঘুষুড়ি (ঘ) কানপুর।

উত্তরঃ (গ) ঘুষুড়ি

১.৪ কোলকাতা ও দিল্লিকে সংযোগকারী জাতীয় সড়ক পথটি হলো
(ক) NH-2 (খ) NH-6 (গ) NH-44 (ঘ) NH-1

উত্তরঃ (ক) NH-2

১.৫ ভারতের উপগ্রহ চিত্র প্রকাশ করে-
(ক) Survey of India (খ) ISRO (গ) NATMO
(ঘ) ISI

উত্তরঃ (খ) ISRO

১.৬ যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় মাটি ও শিলাস্তর অভিকর্ষের টানে উচ্চভূমির ঢাল বরাবর নীচে নেমে আসে তাকে বলে—
(ক) আবহবিকার (খ) আরোহণ (গ) পুঞ্জিত ক্ষয় (ঘ) সঞ্চয়

উত্তরঃ (গ) পুঞ্জিত ক্ষয়

১.৭ পাখীর পায়ের মতো বদ্বীপ দেখা যায় যে নদীর মোহানায়—
(ক) মিসিসিপি-মিসৌরি (খ) হোয়াংহো (গ) ইরাবতী
(ঘ) তাইবার

উত্তরঃ (ক) মিসিসিপি-মিসৌরি

১.৮ ক্যারিবিয়ান সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণাবর্তকে বলা হয়—
(ক) টাইফুন (খ) টর্নেডো (গ) উইলি-উইলি (ঘ) হ্যারিকেন

উত্তরঃ (ঘ) হ্যারিকেন

১.৯ অধ্যক্ষেপণের একটি উদাহরণ হ’ল—
(ক) শিশির (খ) শ্লিট (গ) কুয়াশা (ঘ) ধোঁয়াশা

উত্তরঃ (খ) শ্লিট

১.১০ দক্ষিণ গোলার্ধে সমুদ্র স্রোত বামদিকে বিক্ষিপ্ত হয়, কারণ—
(ক) পৃথিবীর আবর্তন (খ) সমুদ্র জলের লবণতা
(গ) সমুদ্র জলের উন্নতা (ঘ) অভিকর্ষজ বল।

উত্তরঃ (ক) পৃথিবীর আবর্তন

১.১১ বর্ষাকালে ভরা কোটালের সময় সমুদ্রের জল প্রবলবেগে নদীর মোহনা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে, তাকে বলে—
(ক) সমুদ্র স্রোত (খ) সমুদ্র তরঙ্গ (গ) সুনামি (ঘ) বান ডাকা

উত্তরঃ (ঘ) বান ডাকা

১.১২ নিম্নলিখিতগুলির মধ্যে পরিবেশে সর্বাধিক ক্ষতিকারক দূষক হলো—
(ক) পলিথিন (খ) খবরের কাগজ
(গ) ফেলে দেওয়া খাবার (ঘ) প্রাণীজ বর্জ্য

উত্তরঃ (ক) পলিথিন

১.১৩ আয়াতন অনুসারে ভারতের ক্ষুদ্রতম কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হলো—
(ক) লাদাখ (খ) দিল্লি (গ) লাক্ষাদ্বীপ (ঘ) পুদুচেরী

উত্তরঃ (গ) লাক্ষাদ্বীপ

১.১৪ দিহং, দিবং ও লোহিত নদীর মিলিত প্রবাহের নাম—
(ক) গোদাবরী (খ) ব্রহ্মপুত্র (ঘ) তিস্তা (ঘ) সিন্ধু

উত্তরঃ (খ) ব্রহ্মপুত্র

বিভাগ ‘খ’

২। ২.১ নিম্নলিখিত বাক্যগুলি শুদ্ধ হলে পাশে ‘শু’ এবং অশুদ্ধ হলে পাশে ‘অ’ লেখো: ১×৬=৬

২.১.১ সিমেন্ট কারখানা থেকে উৎপাদিত বর্জ্য পদার্থ বায়ু দূষণ ঘটায়।

উত্তরঃ শু

২.১.২ হিমালয়ের পাদদেশ অঞ্চলে মুড়ি, বালি ও পলি ঘটিত সমভূমি অঞ্চল বেট নামে পরিচিত।

উত্তরঃ শু

২.১.৩ ভূবৈচিত্র্য সূচক মানচিত্রে ভূমিভাগের দূরত্ব ও মানচিত্রের দূরত্বের অনুপাত স্কেলের দ্বারা নির্দেশিত হয়।

উত্তরঃ শু

২.১.৫ উল্কাপিন্ড স্ট্রাটোস্ফিয়ার স্তরে পুড়ে ছাই হয়।

উত্তরঃ অ

২.১.৬ ভূপৃষ্ট সংলগ্ন বায়ুজর প্রধানতঃ উত্তপ্ত হয় বিকিরণ পদ্ধতির সাহায্যে।

উত্তরঃ শু

২.১.৭ শুক্ল ও কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথিতে সমুদ্রে ভরা কোটাল দেখা যায়।

উত্তরঃ অ

২.২ উপযুক্ত শব্দ বসিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করো (যে কোনো ছয়টি প্রশ্নেই উত্তর দাও) : ১×৬=৬

২.২.১ পারমানবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র থেকে নির্গত বর্জ্যকে ___________ বর্জ্য বলে।

উত্তরঃ তেজষ্ক্রিয়।

২.২.২ গ্রীষ্মকালে উত্তর পশ্চিম ভারতের ধূলিঝড় ____________ নামে পরিচিত।

উত্তরঃ আধিঁ

২.২.৩ উপগ্রহ চিত্রের ক্ষুদ্রতম এককের নাম ________________।

উত্তরঃ পিক্সেল।

২.২.৪ বায়ুর চাপ পরিমাপ করা হয় _______________ যন্ত্রের সাহায্যে।

উত্তরঃ ব্যারোমিটার

২.২.৫ চন্দ্র থেকে পৃথিবীর দূরত্ব যখন ৩৫৬ লক্ষ কিমি হয় তখন তাকে ______________ অবস্থান বলে।

উত্তরঃ অনুসূর / পেরিজি।

২.২.৬ যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে ভূমিরূপের বিবর্তন ও পরিবর্তন ঘটে, তাকে ________________ বলে।

উত্তরঃ ভূমিরূপ প্রক্রিয়া

২.২.৭ নদী দ্বারা _______________ পদ্ধতির সাহায্যে অদ্রবীভূত সুক্ষ বালু পলি ও কাদা পরিবাহিত হয়।

উত্তরঃ পরিবহন

২.৩ একটি বা দুটি শব্দে উত্তর দাও (যে কোনো ছয়টি প্রশ্নের উত্তর দাও) : ১x৬=৬

২.৩.১ ওড়িশার কটক শহরে কোন ফসলের কেন্দ্রীয় গবেষণাগার অবস্থিত।

উত্তরঃ ধান।

২.৩.২ ২০১১ খ্রিস্টাব্দের আদমসুমারি অনুসারে ভারতের মহানগরের ন্যূনতম জনসংখ্যা কতো ?

উত্তরঃ ১০ লক্ষ।

২.৩.৩ ভুবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রে প্রদত্ত R.F. যখন ১ঃ ৫০০০০ তখন এর মেট্রিক স্কেল কতো ?

উত্তরঃ ১ সেমি = ৫০০০০ সেমি।

২.৩.৪ পর্বতের পাদদেশে নদীর কার্যের ফলে যে শঙ্কু আকৃতির ভূমিরূপ সৃষ্টি হয় তাকে কী বলে ?

উত্তরঃ পলল শঙ্কু

২.৩.৫ যে কাল্পনিক রেখা দ্বারা সমান বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলগুলিকে যুক্ত করা হয় তার নাম কী ?

উত্তরঃ সমবর্ষণ রেখা।

২.৩.৬ শীতকালে উত্তর পশ্চিম ইউরোপের বন্দরগুলি কোন উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে বরফমুক্ত থাকে ?

উত্তরঃ উপসাগরীয় উষ্ণ স্রোত।

২.৩.৭ কাশ্মীরে প্রবাহিত বিতস্তা (বিলম) নদী, কোন নদীর উপনদী ?

উত্তরঃ চেনাবে নদীর।

২.৩.৮ ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে কোন ধরণের চাষের জন্য অধিক মৃত্তিকা ক্ষয় দেখা যায় ?

উত্তরঃ ঝুম / জুম চাষ।

২.৪ বামদিকের সঙ্গে ডানদিকের গুলি মিলিয়ে লেখো : ১×৪=৪

বামদিক ডানদিক
২৪.১ কান্ডালা (১) খারদুংলা
২.৪.২ রাজখান (২) লৌহ ইস্পাত শিল্প
২.৪.৩ লাডাক (৩) করমুক্ত বন্দর
২.৪.৪ ভিলাই (৪) লুনি

উত্তরঃ

বামদিক ডানদিক
২৪.১ কান্ডালা (৩) করমুক্ত বন্দর
২.৪.২ রাজখান (৪) লুনি
২.৪.৩ লাডাক (১) খারদুংলা
২.৪.৪ ভিলাই (২) লৌহ ইস্পাত শিল্প

বিভাগ ‘গ’

৩। নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়) : ২×৬=১২

৩.১ অনুসারী শিল্প বলতে কী বোঝো ?

উত্তরঃ অনু কথাটির অর্থ হলো ক্ষুদ্র। একটি বৃহদায়তন শিল্পকে কেন্দ্র করে তার চারপাশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প কারখানা গড়ে ওঠে। এই বৃহদায়তন শিল্পকে কেন্দ্রীয় শিল্প এবং এই কেন্দ্রীয় শিল্পকে ঘিরে গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্পগুলিকে অনুসারী শিল্প বা সহযোগী শিল্প বলা হয়।

অথবা, সোনালি চতুর্ভুজের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত দুটি মহানগরের নাম লেখো।

উত্তরঃ সোনালি চতুর্ভুজের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত একটি মহানগর হলো কলকাতা ও পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত একটি মহানগর হলো মুম্বাই।

৩.২ ‘ফলস্ কালার’ (ছদ্ম রঙ) বলতে কী বোঝো ?

উত্তরঃ “ফলস কালার” বা ছদ্ম রং হল এমন একটি কৌশল যেখানে কোনো ছবির রংগুলি তাদের প্রকৃত রঙের পরিবর্তে অন্য রঙে উপস্থাপন করা হয়। উপগ্রহ থেকে প্রেরিত ছবিকে নিখুঁত করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়

অথবা, উপগ্রহের সেন্সর কী ?

উত্তরঃ উপগ্রহের সেন্সর হল এমন একটি ডিভাইস যা মহাকাশ থেকে ছবি এবং ডেটা ক্যাপচার করতে ব্যবহৃত হয়, যা পৃথিবীর পৃষ্ঠ এবং বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে।

৩.৩ নদীর অবঘর্ষ বলতে কি বোঝো ?

উত্তরঃ নদীর অবঘর্ষ বলতে বোঝায় নদীর পানির স্রোতের কারণে নদীর তলদেশ ও দুই তীরের মাটি বা শিলার ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়া। এটি নদীর ক্ষয়কার্যের প্রধান প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে একটি। নদীর প্রবাহিত জল তার সাথে পাথর, বালুকণা ও কাঁকর নিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে নদীর তলদেশ এবং তীর ক্রমাগত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।

অথবা, অ্যালবেডোর সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ সূর্য থেকে পৃথিবীতে আগত তাপশক্তির শতকরা ৬৬ ভাগ তাপশক্তি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে তোলে। বাকি ৩৪ ভাগ সূর্যশক্তি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করতে পারে না। পৃথিবী থেকে সূর্যরশ্মির প্রত্যাবর্তনের এই প্রাকৃতিক ঘটনাকে অ্যালবেডো বলে।

৩.৪ ‘শিশিরাঙ্ক’ বলতে কি বোঝা যায় ?

উত্তরঃ শিশিরাঙ্ক হলো নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, যেখানে বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্প সম্পূর্ণ সম্পৃক্ত হয়ে তরল জলে পরিণত হয়, অর্থাৎ শিশির গঠিত হয়।

অথবা, সি জি গি কী ?

উত্তরঃ জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুসারে সূর্য, চাঁদ ও পৃথিবী নিজেদের কক্ষপথে পরিক্রমণ করতে করতে যখন চাঁদের কেন্দ্র, পৃথিবীর কেন্দ্র এবং সূর্যের কেন্দ্র একই সরলরেখায় অবস্থান করে, তখন সেই অবস্থানকে সিজিগি বলা হয় ।

৩.৫ বিষাক্ত বর্জ্যের সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ কোনও অবাঞ্ছিত পদার্থ যা মানুষ বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, তাকে বিষাক্ত বর্জ্য বলে।

অথবা, বর্জ্যের পৃথকীকরণ বলতে কি বোঝো ?

উত্তরঃ বর্জ্যের পৃথকীকরণ বলতে বর্জ্য পদার্থকে তার ধরন অনুযায়ী আলাদা করা বোঝায়। এটি সাধারণত জৈব ও অজৈব বর্জ্যে ভাগ করা হয়।

৩.৬ ‘কচ্ছের রণ’ কী ?

উত্তরঃ কচ্ছের রণ হল একটি লবণাক্ত জলাভূমি যার বেশিরভাগ অংশই ভারতের গুজরাত রাজ্যে অবস্থিত ও কিছু অংশ পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে অবস্থিত। এটি দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত; কচ্ছের বড় রণ এবং কচ্ছের ছোট রণ।

অথবা, কৃষি বনসৃজনের সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ কৃষি বনসৃজন বলতে বোঝায়, কৃষি কার্যক্রমের মাধ্যমে বন এবং গাছপালা সৃষ্টি করা। এটি বনায়নকে কৃষির সাথে একত্রিত করে। কৃষি বনসৃজনের মাধ্যমে একই জমিতে ফসল, পশুসম্পদ, এবং গাছকে একত্রে চাষ করা হয়।

বিভাগ ‘ঘ’

৪। সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়) : ৩×৪ = ১২

৪.১ উপগ্রহ চিত্রের প্রধান তিনটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ উপগ্রহ চিত্রের তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—

(১) দূর সংবেদন ব্যবস্থা : কৃত্রিম উপগ্রহে সংস্থাপিত সংবেদকের সাহায্যে দূর থেকে বস্তুর সংস্পর্শে না এসেও সংগৃহীত তথ্য থেকে উপগ্রহ চিত্র পাওয়া যায়।

(২) উন্নত প্রযুক্তি : এটি একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর চিত্র।

(৩) স্কেল : এই চিত্র সুনির্দিষ্ট স্কেলে তৈরি করা হয়।

(৪) অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা : উপগ্রহ চিত্রে অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমার বিস্তৃতি উল্লেখ থাকে।

অথবা,

ভূ-বৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের তিনটি প্রধান সুবিধা আলোচনা করো।

উত্তরঃ

(i) ভূপ্রকৃতির বিশদ উপস্থাপনা : এই মানচিত্রে পাহাড়, মালভূমি, সমভূমি, উপত্যকা, নদী ইত্যাদি বিভিন্ন ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা হয়। এটি ভূগোলবিদ, পরিবেশবিদ এবং ভূ-অভিযান গবেষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে।

(ii) পরিবেশ ও ভূমি ব্যবস্থাপনায় সহায়ক : কৃষি, বন ব্যবস্থাপনা, নগর পরিকল্পনা এবং প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহারের জন্য এই মানচিত্র গুরুত্বপূর্ণ। বন্যা, ভূমিধস ও মরুকরণ প্রতিরোধের পরিকল্পনায় সহায়তা করে।

(iii) প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা :
ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা, বন্যাপ্রবণ অঞ্চল বা ভূমিধসপ্রবণ স্থান চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। দুর্যোগ-পরবর্তী পুনরুদ্ধার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখে।

৪.২ ভারতের জলবায়ুর উপর ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত ও পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাব উল্লেখ করে।

উত্তরঃ ভারতের জলবায়ুর উপর ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় ও পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাব উল্লেখ করা হলো—

(ক) ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব—

(i) উপকূলীয় অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত করে– বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে উৎপন্ন ঘূর্ণিঝড় সাধারণত ভারতের পূর্ব ও পূর্ব-দক্ষিণ উপকূলে আঘাত হানে, যেমন পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু।

(ii) প্রবল বৃষ্টিপাত ও বন্যা সৃষ্টি করে– এই ঘূর্ণিঝড় প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে, যা কৃষি ও জীবনযাত্রার ক্ষতি করে।

(iii) হাওয়ার গতিবেগ বেশি থাকে– ঘূর্ণিঝড়ের সময় ঝোড়ো হাওয়া বইতে থাকে, যা ঘরবাড়ি, গাছপালা ও বিদ্যুৎ সংযোগ ধ্বংস করে।

(iv) খরার হাত থেকে রক্ষা করে– কিছু ক্ষেত্রে এই ঝড় আর্দ্রতা বয়ে এনে খরাপ্রবণ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ঘটায়।

(খ) পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাব—

(i) উত্তর-পশ্চিম ভারতের জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায়– শীতকালে কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ ও পাঞ্জাবে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা প্রবেশ করে বৃষ্টিপাত ও তুষারপাত ঘটায়।

(ii) রবি ফসলের জন্য উপকারী– বিশেষত গম ও সর্ষে চাষের জন্য এই বৃষ্টিপাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

(iii) শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি করে– এই ঝঞ্ঝা ঠান্ডা বাতাস বয়ে আনে, ফলে উত্তরের রাজ্যগুলিতে শীতের প্রকোপ বাড়ে।

(iv) ঝড়ো হাওয়া সৃষ্টি করতে পারে– কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি প্রবল হাওয়া ও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে ক্ষতি করতে পারে।

অথবা,

পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষি উন্নতির কারণগুলি আলোচনা করো।

উত্তরঃ

(i) নিবিড় কৃষি পদ্ধতি : কৃষিজমির তুলনায় মােট জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় এখানে নিবিড় পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করা হয়। ফলে হেক্টর প্রতি কৃষি উৎপাদন এখানে অন্যান্য রাজ্য অপেক্ষা বেশি।

(ii) বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ : রাজ্য দুটির মােট আয়তনের প্রায় 85% কৃষিকার্যে নিযুক্ত জমিতে, রাজ্য দুটির প্রায় 70% মানুষ সারা বছর ধরে বিভিন্ন ফসলের চাষে নিযুক্ত থাকে।পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার যে সমস্ত জমি রয়েছে শুধুমাত্র চাষ করা হয় না বছরের বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করা হয়। যার ফলে এখানকার ফসল উৎপাদনের পরিমাণ অনেক বেশি।

(iii) সবুজ বিপ্লব : পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা রাজ্যের কৃষি উন্নতির সবচাইতে বড় কারণ হল সবুজ বিপ্লব। ১৯৬৬ সাল থেকে পাঞ্জাব-হরিয়ানায় উচ্চফলনশীল গমের বীজ ব্যবহার করে এবং কৃষিতে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা গ্রহণ করে গম ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়। যার ধারাবাহিকতা এখনও চলছে।

৪.৩ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি বর্ণনা করো।

উত্তরঃ পরিবেশকে সুস্থিত রাখতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা : বর্জ্য পদার্থগুলিকে শুধু অপসারণ বা স্থানান্তরণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ না করে প্রয়ােজনমতাে ওগুলির পরিমাণ হ্রাস, পুনর্ব্যবহার এবং পুনর্নবীকরণের মাধ্যমে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বর্জ্য পদার্থ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তােলা যায়। আর এটাই হল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মূল ভিত্তি হল তিনটি R (3R) যথা Reduce বা পরিমাণ হ্রাস, Reuse বা পুনর্ব্যবহার এবং Recycle বা পুনর্নবীকরণ।

(i) পরিমাণ হ্রাস (Reduce) : বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মূল লক্ষ্যই হল কম আবর্জনা উৎপাদন করা। এই লক্ষ্যে জিনিসপত্রের অপচয় বন্ধ করে, জীবনযাত্রার পদ্ধতিগত পরিবর্তন ঘটিয়ে কম বর্জ্য সৃষ্টি করতে হবে।

(ii) পুনর্ব্যবহার (Reuse) : নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করে পরিত্যক্ত দ্রব্য পুনরায় ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন—বাতিল জলের বােতল থেকে ঘর সাজানাের নানা দ্রব্য প্রস্তুত করা যায় বা পুরােনো জলের বােতলের সাহায্যে বাগানে জল দেওয়া প্রভৃতি কাজ করা যায়।

(iii) পুনর্নবীকরণ (Recycle) : এই পদ্ধতিতে বর্জ্য পদার্থ পরিশােধন ও প্রক্রিয়াকরণ করে পুনরায় ব্যবহারের উপযােগী বস্তুতে পরিণত করা হয়। যেমন—জৈব আবর্জনাকে জৈব সারে পরিণত করে বাড়ির বাগানে ব্যবহার করা যায় বা পুরােনাে খবরের কাগজ থেকে কাগজের মণ্ড তৈরি হয় বা ঠোঙা তৈরি করা যায়। এ ছাড়া উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হতে পারে।

অথবা,

ভাগীরথী / হুগলী নদীর উপর বর্জ্যের প্রভাব আলোচনা করো।

উত্তরঃ ভাগীরথী-হুগলি নদীর ওপর বর্জ্যের প্রভাব: গঙ্গার একটি শাখা ভাগীরথী-হুগলি। গঙ্গাসহ ভাগীরথী-হুগলি নদীর দুই তীরের অসংখ্য কলকারখানা এবং বসতি ও পৌর এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণে ময়লা জল, রাসায়নিক পদার্থ প্রভৃতি প্রতিদিন নদীতে এসে মিশছে। এ ছাড়াও নদীতে মানুষ ও জীবজন্তুর মৃতদেহ নিক্ষেপ, প্রতিমা নিরঞ্জন, পশুস্নান সহ নানা ধরনের আবর্জনা নিক্ষেপ, কৃষিজমি থেকে সার ও কীটনাশক ধােয়া জল ভাগীরথী-হুগলি নদীতে মিশছে। এর ফলে এই নদীতে অনেক ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। যেমন—

(i) নদীর জলের দূষণ : নানা প্রকার বর্জ্য পদার্থ মেশার ফলে নদীর জলের ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক ধর্মের পরিবর্তন ঘটে জল সাংঘাতিকভাবে দূষিত হচ্ছে।

(ii) নদীর নাব্যতা হ্রাস : নদীগর্ভে বর্জ্য পদার্থগুলি জমা হওয়ার ফলে নদীর গভীরতা হ্রাস পেয়ে জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।

(iii) জলবাহিত রােগের সংক্রমণ : ভাগীরথী-হুগলির জল পানীয় জল হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলে তার মাধ্যমে নানা প্রকার জলবাহিত রােগের সংক্রমণ ঘটছে।

(iv) জলজ বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি : বর্জ্যের মাধ্যমে নানা প্রকার বিষাক্ত পদার্থ নদীর জলে মিশে যাওয়ার ফলে জলজ বাস্তুতন্ত্র ও জীবজগৎ সমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

(v) কৃষিকাজে ক্ষতি : নদীর দূষিত জল সেচের কাজে ব্যবহার করার ফলে উৎপাদিত ফসলের গুণগত মানের অবনতি ঘটছে।

(vi) নদী ভাঙন এবং বন্যার সম্ভাবনা বৃদ্ধি : বর্জ্য পদার্থের মাধ্যমে নদীর গভীরতা হ্রাস পাওয়ায় দুই তীরে ভাঙন এবং বিভিন্ন স্থানে বন্যার আশঙ্কা অনেক বেড়েছে।

৪.৪ অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদের সৃষ্টি চিত্রসহ সংক্ষেপে ব্যাখ্য করো।

উত্তরঃ অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ তৈরির পর্যায়সমূহ : মধ্যগতির শেষের দিকে এবং নিম্নগতিতে নদীর প্রবাহপথে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদের (ox-bow lake) সৃষ্টি হয়। এই হ্রদ সৃষ্টির বিভিন্ন পর্যায়গুলি হল—

(i) এই সময় নদীর গতিবেগ খুব কম থাকে বলে সামান্য কোনাে বাধা পেলেই নদী এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়। নদীর আঁকাবাঁকা গতিপথকে বলা হয় মিয়েন্ডার।

(ii) নদী যখন এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয় তখন প্রবাহপথের অন্তঃবাঁকের (উত্তল পাড়) তুলনায় বহিঃবাঁকে (অবতল পাড়) গতিবেগ বেশি থাকে। তাই বহিঃবাঁকে ক্ষয়কার্য চলে, কিন্তু অন্তঃবাঁকে পলি, কাদা ইত্যাদি সঞ্জিত হয়।

(iii) নদী যখন খুব বেশি এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়, দুই বাঁক বা জলধারার মধ্যবর্তী ভূমি কালক্রমে সম্পূর্ণ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় (বহিঃবাঁকে ক্ষয় প্রক্রিয়ার জন্য)।

(iv) ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার ফলে তখন নদীর ওই দুটি বাঁক বা জলধারার সংযুক্তি ঘটে, অর্থাৎ বাঁকা পথ ছেড়ে নদী তখন সােজা পথে প্রবাহিত হয়। আর পরিত্যক্ত বাঁকটি হ্রদে পরিণত হয়। এই হ্রদ দেখতে ঘােড়ার খুরের মতাে হয় বলে এর নাম অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ।

অথবা,

আয়ন বায়ু ও পশ্চিমা বায়ুর মধ্যে তিনটি প্রধান পার্থক্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ

আয়ন বায়ু পশ্চিমা বায়ু
(১) এটি উষ্ণ মণ্ডলের নিয়ত বায়ুপ্রবাহ। (১) এটি নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলের নিয়ত বায়ুপ্রবাহ।
(২) আয়নবায়ুর প্রভাবে খুব কম বৃষ্টিপাত হয়। (২) পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে অপেক্ষাকৃত বেশি বৃষ্টিপাত হয়।
(৩) আয়নবায়ুর প্রভাবে যতটুকু বৃষ্টিপাত হয় তা মহাদেশের পূর্বভাগে সীমাবদ্ধ থাকায় এই বায়ুর গতিপথে মহাদেশের পশ্চিমভাগে বড় বড় ক্রান্তীয় মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছে। (৩) পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে মহাদেশের পশ্চিমভাগে প্রবল বৃষ্টিপাত হয় এবং পূর্বভাগে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশ কমে যায়। তাই পশ্চিমাবায়ুর গতিপথে মহাদেশের পূর্বভাগে নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমির সৃষ্টি হয়েছে।
(৪) আয়নবায়ু কিছুটা পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়। (৪) পশ্চিমাবায়ু কিছুটা পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়।

বিভাগ ‘ঙ’

(দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে চিত্রাঙ্কন আবশ্যিক নয়)

৫। ৫.১ যে কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৫×২=১০

৫.১.১ চিত্রসহ জোয়ারভাটা সৃষ্টির কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ জোয়ারভাটা সৃষ্টির কারণ—

সাগর-মহাসাগরের জলরাশি নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট সময় অন্তর এক জায়গায় স্ফীত বা ফুলে ওঠে এবং অন্য জায়গায় অবনমিত হয় বা নেমে যায়। জলরাশির এই ফুলে ওঠা বা স্ফীতিকে জোয়ার এবং অবনমন বা নেমে যাওয়াকে ভাটা বলা হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রধানত দুটি কারণে জোয়ারভাটার সৃষ্টি হয়, যথা—

(i) পৃথিবীর ওপর চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ বল : নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র অনুসারে, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি বস্তুই একে অপরকে আকর্ষণ করে। সুতরাং গ্রহ, উপগ্রহ, সূর্য প্রভৃতি প্রতিটি জ্যোতিষ্কই পরস্পরকে আকর্ষণ করে। এই হিসেবে চাদ, সূর্য ও পৃথিবী একে অপরকে আকর্ষণ করে। তবে সূর্যের তুলনায় পৃথিবীর ওপর চাদের আকর্ষণ বল বেশি হয়। যদিও চাদের তুলনায় সূর্যের ভর প্রায় 260 লক্ষ গুণ বেশি কিন্তু পৃথিবী থেকে চাঁদ যত দূরে আছে, সূর্য রয়েছে তার থেকে প্রায় 389 গুণ বেশি দূরে (চাঁদ ও পৃথিবীর দূরত্ব প্রায় 3 লক্ষ 84 হাজার কিমি কিন্তু সূর্য ও পৃথিবীর দূরত্ব প্রায় 15 কোটি কিমি)। এজন্য জোয়ারভাটা সৃষ্টির ক্ষেত্রে চাদের আকর্ষণ সূর্যের আকর্ষণের প্রায় 2.2গুণ বেশি। তাই প্রধানত চাদের আকর্ষণে পথিবীর জলরাশি ফুলে ওঠে অর্থাৎ জোয়ার হয়। সূর্যের আকর্ষণে পৃথিবীতে জোয়ার হলেও তা অতটা বেশি বা প্রবল আকার ধারণ করে না। তবে পৃথিবী, চন্দ্র ও সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করলে জোয়ারের তীব্রতা বেশি হয়।

(ii) পৃথিবীর আবর্তন গতিজনিত কেন্দ্রাতিগ বল : পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে ভূপৃষ্ঠে একটি বিকর্ষণ শক্তি বা কেন্দ্রাতিগ বলের সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের জলরাশি বাইরের দিকে বিক্ষিপ্ত হওয়ার প্রবণতা লাভ করে। এই বল পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীতে কাজ করে। এজন্য চাদের আকর্ষণে যেখানে জোয়ার হয় তার ঠিক বিপরীত দিকে বা প্রতিপাদ স্থানে চাদের মহাকর্ষ শক্তির তুলনায় পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাব বেশি কার্যকরী হওয়ায় জোয়ারের সৃষ্টি হয়।

উপযুক্ত দুটি কারণে পৃথিবীর যে দুটি স্থানে জলস্ফীতি ঘটে বা জোয়ারের সৃষ্টি হয় ঠিক তার সমকোণে অবস্থিত দুটি স্থান থেকে জল জোয়ারের দিকে সরে যায়। ফলে ওই স্থান দুটির জলতল নেমে গিয়ে ভাটার সৃষ্টি হয়।

৫.১.২ পৃথিবীর নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় এবং মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় সৃষ্টির কারণগুলি চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয়—

পথিবীতে মােট সাতটি বায়ুচাপ বলয় আছে। এদের মধ্যে 3টি নিম্নচাপ বলয় ও 4টি উচ্চচাপ বলয়। এই বায়ুচাপ বলয়গুলি হল—
(a) নিম্নচাপ বলয়–
(1) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়
(2) কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়
(3) সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়

(b) উচ্চচাপ বলয়–
(4) কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয়
(5) মকরীয় উচ্চচাপ বলয়
(6) সুমেরু উচ্চচাপ বলয়
(7) কুমেরু উচ্চচাপ বলয়

এই সাতটি বায়ুচাপ বলয়ের সংক্ষিপ্ত আলােচনা করা হল—

(1) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়—

অবস্থান : নিরক্ষরেখার উভয়দিকে 5° অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত।

অপর নাম : নিরক্ষীয় শান্তবলয়।

সৃষ্টির কারণ—

• সূর্যরশ্মির লম্বকিরণ : এই অঞ্চলে সারাবছর সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে বলে বায়ু সারাবছরই উষ্ণ ও হালকা হয়।

• বায়ুতে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি : এখানে জলভাগের পরিমাণ। বেশি বলে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে, ফলে বায়ু। হালকা হয়।

• পৃথিবীর আবর্তনের গতিবেগ : পৃথিবীর আবর্তন গতিবেগ নিরক্ষীয় অঞ্চলে সর্বাধিক হয় বলে বায়ু উত্তর ও দক্ষিণে বিক্ষিপ্ত হয়, অর্থাৎ বায়ুর ঘনত্ব কমে যায়। এর ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে।

(2-3) সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় এবং কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়—

অবস্থান : দুই মেরুপ্রদেশের নিকটবর্তী অঞ্চলে অর্থাৎ 60° থেকে 90° অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত।

সৃষ্টির কারণ—

• পৃথিবীর আবর্তনের গতিবেগ : পৃথিবীর আবর্তন বেগ দুই মেরুর তুলনায় মেরুবৃত্ত প্রদেশে অপেক্ষাকৃত বেশি। এজন্য এই অঞ্চলের বায়ু বেশি পরিমাণে বিক্ষিপ্ত হয়। ফলে বায়ুর ঘনত্ব হ্রাস পায়।

• বায়ুর উষ্ণতা বৃদ্ধি : দুই মেরু অঞ্চল থেকে আগত শীতল। ও ভারী বায়ু মেরুবৃত্ত অঞ্চলে পৌঁছালে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে আয়তনে বেড়ে যায়। এজন্য দুই মেরুবৃত্ত প্রদেশে বায়ুর ঘনত্ব ও চাপ কম হয়।

(4-5) কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয় এবং মকরীয় উচ্চচাপ বলয়—

অবস্থান : নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের উভয়দিকে প্রায় 25° থেকে 35° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত।

অপর নাম : উপক্ৰান্তীয় শান্তবলয়।

সৃষ্টির কারণ—

• নিরক্ষীয় অঞ্চলের বায়ু : নিরক্ষীয় অঞলের উয় ও আর্দ্র বায়ু ওপরে উঠে মেরু অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হওয়ার সময় উচ্চতার প্রভাবে ধীরে ধীরে শীতল ও সংকুচিত হয়ে 25° থেকে 35° অক্ষরেখা বরাবর নীচের দিকে নেমে আসে বলে এই অংশে বায়ুর ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়।

• মেরু অঞ্চলের বায়ু : পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য দুই মেরু অঞ্চল থেকে যে ঠান্ডা ও ভারী বায়ু নিরক্ষীয় অঞলের দিকে প্রবাহিত হয়, তারও কিছু অংশ এই অঞ্চলে নেমে এসে বায়ুর ঘনত্ব বৃদ্ধি করে।

(6-7) সুমেরু উচ্চচাপ বলয় এবং কুমেরু উচ্চচাপ বলয়—

অবস্থান : উত্তরমেরু ও দক্ষিণমেরু সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত।

সৃষ্টির কারণ—

• প্রবল ঠান্ডা : প্রচণ্ড ঠান্ডার জন্য এই অঞলের বায়ু শীতল ও ভারী হয়।

• বায়ুতে জলীয় বাষ্পের অভাব : বাষ্পীভবন খুব কম হয় বলে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকে।

• বায়ুর ঘনত্ব ও চাপের বৃদ্ধি : পার্শ্ববর্তী মেরুবৃত্ত অঙ্কুলের নিম্নচাপ বলয় থেকে ঊধ্বগামী বায়ুর কিছু অংশ শীতল হয়ে এই অংশে নেমে আসে বলে বায়ুর ঘনত্ব ও চাপ বৃদ্ধি পায়।

৫.১.৩. ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্রাটোস্ফিয়ার স্তরের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।

৫.১.৪ হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট তিনটি প্রধান ভূমিরূপ চিত্র ও উদাহরণ সহযোগে আলোচনা করো।

৫.২ যে কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৫×২=১০

৫.২.১ ভারতের নগরায়ণের প্রধান পাঁচটি সমস্যা আলোচনা করো।

উত্তরঃ ভারতে দ্রুত বেড়ে চলা নগরায়ণের জন্য নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে, যা সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অন্তরায়। এর মধ্যে উল্লেখযােগ্য সমস্যাগুলি হল—

(1) অপরিকল্পিত নগরায়ণ : চণ্ডীগড়ের মতাে হাতেগােনা দু-একটি শহর বাদ দিয়ে ভারতের অধিকাংশ শহরই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। তাই শহরগুলির যত্রতত্র বাসস্থান, সড়কপথ, অফিস, আদালত, শিক্ষাকেন্দ্র, ধর্মস্থান প্রভৃতি লক্ষ করা যায়। এর ফলে বেশিরভাগ শহরেরই পরিবেশ ঘিঞ্জি প্রকৃতির, যা শহরগুলির সামগ্রিক অবস্থার অবনতি ঘটিয়েছে।

(2) মানুষের শহরমুখী প্রবণতা : শহর এবং গ্রামের উন্নয়নের পার্থক্যের জন্য ভারতে গ্রাম থেকে শহরে আসার প্রবণতা খুব বেশি। গ্রামের তুলনায় শহর-নগরে উন্নত জীবনযাত্রার সুবিধা, কর্মসংস্থান ও উন্নত পরিসেবার সুযােগ থাকার কারণে গ্রামের বহু মানুষই এখন শহরমুখী। কিন্তু এইসব মানুষদের বেশিরভাগই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এবং অদক্ষ বলে শহরগুলিতে বেকারত্ব, বাসস্থানের সমস্যা, বস্তির উদ্ভব, নানাবিধ রােগের প্রকোপ প্রভৃতি সমস্যা খুবই বেশি।

(3) পরিকাঠামাের অভাব : উন্নতমানের বাসস্থান, প্রশস্ত রাস্তা, উন্নতমানের শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযােগ, নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ, জলনিকাশি ব্যবস্থা প্রভৃতি নিয়ে গড়ে ওঠে শহর-নগরের পরিকাঠামাে। কিন্তু ভারতের অধিকাংশ শহরেরই দুর্বল পরিকাঠামাের ওপর ক্রমাগত জনসংখ্যার চাপ বেড়ে যাওয়ার ফলে বাসস্থান, পরিবহণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও জলনিকাশির অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। যেমন—

(i) বাসস্থানের সমস্যা : ভারতের অধিকাংশ শহরে বাসস্থানের সমস্যা প্রকট। বাসস্থানের অভাবে বহু মানুষ রেললাইনের পাশে, রাস্তার ধারে, খালপাড়ে, অত্যন্ত দূষিত বিপদসংকুল পরিবেশে বসবাস করে। প্রায় প্রতিটি শহরেই অগণিত মানুষ বস্তিতে, ঝুপড়িতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকে। মুম্বাই, কলকাতা প্রভৃতি শহরে বাসস্থানের সমস্যা খুবই বেশি।

(ii) পরিবহণের সমস্যা : শহর-নগরে রাস্তায় যানবাহন বেশি। অথচ অপরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য রাস্তাগুলি সংকীর্ণ। এর সাথে রাস্তা ও ফুটপাথ বেদখল হওয়ার কারণে যানবাহনের গতি অত্যন্ত মন্থর বা যানজট একটি মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

(iii) স্বাস্থ্যের সমস্যা : শহর ও নগরে শিল্পকারখানা, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও যানবাহনের ধোঁয়া বায়ুদূষণ ঘটায়। আবর্জনা, জলাভূমি, নর্দমা থেকে নানা পতঙ্গবাহিত রােগ, বস্তিতে জলবাহিত রােগ, পুষ্টি সমস্যা শহরের মানুষকে ভােগায়। সেকারণে ভারতের নগরগুলি পৃথিবীর অন্যতম দূষিত নগরে পরিণত হয়েছে।

(iv) শিক্ষার সমস্যা : শহরে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেশি থাকায় শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত। কিন্তু দরিদ্র বস্তিবাসীর পক্ষে শিক্ষার সব সুযােগসুবিধা নেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে অসাম্যতা লক্ষ করা যায়।

(v) বিদ্যুৎ সমস্যা : অপরিকল্পিত নগরায়ণে বিদ্যুতের অতিরিক্ত চাহিদা বিদ্যুতের ঘাটতি সৃষ্টি করে। এতে শিক্ষা, বাণিজ্য এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়।

(vi) জলনিকাশির সমস্যা : বেশিরভাগ শহরে জলনিকাশি ব্যবস্থা অনুন্নত। এ ছাড়া, জলনিকাশি ড্রেনগুলিতে প্লাস্টিক এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ নিক্ষেপ করার জন্য ওই দুর্বল নিকাশি ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ার মুখে। একটু বেশি বৃষ্টি হলে শহর জলপ্লাবিত হয়। ড্রেনে জমে থাকা নােংরা জল থেকে নানা ধরনের রােগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে।

৫.২.২ ভারতের তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের উন্নয়নের কারণগুটি আলোচনা করো।

উত্তরঃ ভারতের তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) শিল্পের উন্নয়নের কারণগুলি–

ভারত বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) শিল্পের কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে। এই শিল্পের দ্রুত উন্নতির পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে—

(i) দক্ষ জনশক্তি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার উন্নতি—

• ভারতে প্রচুর প্রশিক্ষিত প্রকৌশলী ও আইটি বিশেষজ্ঞ রয়েছে।

• IIT, NIT, IIIT, BITS Pilani-এর মতো প্রযুক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উচ্চমানের দক্ষ পেশাদার তৈরি করছে।

• ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকায় ভারতীয়রা আন্তর্জাতিক বাজারে সহজেই প্রতিযোগিতা করতে পারছে।

(ii) তুলনামূলক কম উৎপাদন ব্যয়—

• উন্নত দেশগুলোর তুলনায় ভারতে আইটি সেবা ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের খরচ কম।

• বিদেশি কোম্পানিগুলো আউটসোর্সিং এর জন্য ভারতকে বেছে নেয়।

(iii) সরকারি নীতি ও সহযোগিতা—

• “ডিজিটাল ইন্ডিয়া”, “মেক ইন ইন্ডিয়া”-এর মতো সরকারি উদ্যোগ আইটি খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

• বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ) গঠন করে কর ছাড় ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

• STPI (Software Technology Parks of India) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।

(iv) আইটি হাব ও প্রযুক্তি পার্কের বিস্তার—

• ব্যাঙ্গালোর, হায়দরাবাদ, পুনে, চেন্নাই, গুরগাঁও, নইডা-র মতো শহরগুলো আইটি হাব হিসেবে গড়ে উঠেছে।

• এসব অঞ্চলে বিশ্বমানের আইটি কোম্পানি, গবেষণা কেন্দ্র ও স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে উঠেছে।

(v) বহুজাতিক কোম্পানির বিনিয়োগ—

• বহুজাতিক ও দেশীয় কোম্পানির বিনিয়োগ এই খাতকে শক্তিশালী করেছে।

• বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতীয় সফটওয়্যার, BPO (Business Process Outsourcing), ক্লাউড কম্পিউটিং প্রযুক্তির ওপর আস্থা রাখছে।

উপসংহারঃ ভারতের তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের দ্রুত বৃদ্ধি উন্নত শিক্ষা, দক্ষ জনশক্তি, সরকারি নীতি, প্রযুক্তি হাব ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের কারণে সম্ভব হয়েছে। ভবিষ্যতে এই শিল্প প্রযুক্তিতে আরও প্রসার লাভ করবে।

৫.২.৩ ভারতের গম চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ ভারতে গম চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ—

ভারতে গম প্রধানত রবি ফসল হিসেবে চাষ করা হয়। এটি শীতপ্রধান ফসল এবং নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক পরিবেশে ভালো ফলন দেয়।

প্রাকৃতিক পরিবেশ :

(১) জলবায়ু—

(ক) আদ্রর্তা :

(i) পরিমাণ মতাে আর্দ্রতার ওপর গম বীজের অঙ্কুরােদ্গমের সংখ্যা নির্ভর করে এই জন্য গম চাষের প্রথম অবস্থায় অবস্থায় আর্দ্র জলবায়ুর প্রয়ােজন হয়। কারণ যত বেশিসংখ্যক বীজ থেকে অঙ্কুর বের হবে, হেক্টরপ্রতি গম উৎপাদনও ততই বেশি হবে।

(ii) গম চাষের দ্বিতীয় অবস্থায় (যখন গাছ থেকে শিষ বের হয়) উয় ও শুকনাে জলবায়ুর প্রয়ােজন, কারণ এই সময় বৃষ্টি হলে গমের শীর্ষ পচে যেতে পারে বা শিষে পােকা লাগতে পারে।

(iii) গম কেটে নেওয়ার কিছু দিন আগে অর্থাৎ গম চাষের তৃতীয় অবস্থায় হালকা বৃষ্টিপাত হলে ভালাে হয়, কারণ এই বৃষ্টিপাতের ফলে গমে শিষ পুষ্টিলাভ করে।

(iv) গম উৎপাদনের চতুর্থ পর্যায়ে গম পাকার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে সূর্য তাপের প্রয়ােজন হয়।

(খ) উত্তাপ : গম চাষের প্রথম অবস্থায় (গম বীজের অঙ্কুরােদ্গম এবং গম চারার বৃদ্ধির সময়) ১৫°-১৬° সেলসিয়াস উত্তাপ এবং গম চাষের দ্বিতীয়াবস্থায় (গম পাকার সময়) ১৮°-২০° সেলসিয়াস উত্তাপ প্রয়ােজন। অধিক উয়তায় গমচাষের ক্ষতি হয়।

(গ) বৃষ্টিপাত : গম চাষের জন্য মাঝারি বৃষ্টিপাত (৫০-১০০ সেন্টিমিটার) প্রয়ােজন হয়, এর বেশি বৃষ্টিপাতে গম চারার ক্ষতি হয়। ৫০ সেমির কম বৃষ্টি হলে জলসেচের মাধ্যমে চাষ করা হয়।

(ঘ) তুষারপাত : তুষারপাত গমচাষের ক্ষতি করে ফলে তুহিনমুক্ত প্রায় ১১০ দিন প্রয়ােজন হয়।

(২) ভূপ্রকৃতি—

• গাছের গােড়ায় জল জমে থাকলে তা গমচাষের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর হয় বলে অতিরিক্ত জল জমি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য ভালাে জলনিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত প্রায় সমতল বা অল্প ঢালু জমি গমচাষের পক্ষে আদর্শ।

• উর্বর ভূমি গম চাষের জন্য আদর্শ।

• উঁচু ও অসমতল অঞ্চলে গম চাষ কম হয়।

(৩) মৃত্তিকা—

• নাইট্রোজেন, ফসফেট ও পটাশযুক্ত উর্বর ভারী দোআঁশ মাটি বা হালকা কাদা মাটি গম চাষের পক্ষে আদর্শ। পলিমাটি ও কৃষ্ণ মৃত্তিকাতেও গম চাষ ভালাে হয়।

• জলধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন মাটি গম চাষের জন্য উপযুক্ত।

• গঙ্গা-যমুনা উপত্যকার অ্যালুভিয়াল মাটি গম চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো।

• মাটির pH ৬.০-৭.৫ হলে গমের ভালো উৎপাদন হয়।

উপসংহারঃ ভারতে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ গম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত, কারণ এই রাজ্যগুলির প্রাকৃতিক পরিবেশ গম চাষের জন্য উপযোগী।

৫.২.৪ ভারতের কৃষ্ণমৃত্তিকার প্রধান আঞ্চলিক বন্টন, সৃষ্টি এবং বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।

উত্তরঃ ভারতের কৃষ্ণ মৃত্তিকার আঞ্চলিক বণ্টন, সৃষ্টি ও বৈশিষ্ট্য—

(i) কৃষ্ণ মৃত্তিকার আঞ্চলিক বণ্টন—

• কৃষ্ণ মৃত্তিকা, যা রেগুর মাটি বা কালো মাটি নামেও পরিচিত, ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমি অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। এটি মূলত মহারাষ্ট্র, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, এবং কর্ণাটকের কিছু অংশে দেখা যায়। এছাড়াও এটি ছত্তিশগড় এবং তামিলনাড়ুর কিছু অংশেও পাওয়া যায়।

(ii) কৃষ্ণ মৃত্তিকা সৃষ্টির প্রক্রিয়া—

• আগ্নেয় শিলা : কৃষ্ণ মৃত্তিকা মূলত ব্যাসল্ট শিলা (আগ্নেয় শিলা) থেকে তৈরি হয়। এই শিলাগুলি লাভা নিঃসরণের মাধ্যমে গঠিত হয়।

• আবহাওয়ার প্রভাব : সময়ের সাথে সাথে, আবহাওয়ার কারণে এই ব্যাসল্ট শিলাগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত ও বিয়োজিত হতে শুরু করে। সূর্যের তাপ, বৃষ্টি, বাতাস এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান এই প্রক্রিয়াতে সাহায্য করে।

• মাটি গঠন : আবহাওয়ার প্রভাবে শিলাগুলি ভেঙে ছোট ছোট কণায় পরিণত হয় এবং অবশেষে কৃষ্ণ মৃত্তিকা গঠিত হয়।

• উপাদান : কৃষ্ণ মৃত্তিকাতে পটাশ, ফসফরিক অ্যাসিড, এবং চুনের পরিমাণ বেশি থাকে, যা এটিকে কৃষিকাজের জন্য উপযুক্ত করে তোলে।

এইভাবে, কৃষ্ণ মৃত্তিকা গঠিত হয় যা ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ মৃত্তিকা এবং বিভিন্ন ফসলের জন্য উপযোগী।

(iii) কৃষ্ণ মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য—

• কালাে রঙের ব্যাসল্ট শিলা বা লাভা পাথর ক্ষয় পেয়ে কৃষ্ণমৃত্তিকার সৃষ্টি হয়েছে বলে এই মাটির রং কালাে।

• কৃষ্ণমৃত্তিকায় পলি ও কাদার ভাগ বেশি হওয়ায় (৫০%-৮০%) এই মাটির জলধারণ ক্ষমতা খুব বেশি।

• কৃষ্ণমৃত্তিকায় নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থ কম থাকলেও ক্যালশিয়াম, চুন, অ্যালুমিনিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম কার্বনেট প্রভৃতি খনিজপদার্থ থাকায় এই মাটি অত্যন্ত উর্বর।

• এই মৃত্তিকায় কাদার ভাগ বেশি বলে গ্রথন সুষম নয়।

• এই মৃত্তিকা বর্ষাকালে চটচটে বা আঠালাে প্রকৃতির হলেও শুষ্ক ঋতুতে বেশ শক্ত।

উপসংহারঃ ভারতে কৃষ্ণ মৃত্তিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি তুলা চাষের জন্য আদর্শ। তাই একে “রেগুর মাটি” বা “তুলা মাটি” বলা হয়। এছাড়া, এটি ডাল, তেলবীজ ও গম চাষের জন্যও উপযোগী।

বিভাগ ‘চ’

৬। প্রশ্নপত্রের সাথে প্রদত্ত ভারতের রেখা-মানচিত্রে নিম্নলিখিতগুলি উপযুক্ত প্রতীক ও নামসহ চিহ্নিত করে মানচিত্রটি উত্তরপত্রের সঙ্গে জুড়ে দাও : ১×১০=১০

৬.১ উত্তর ভারতের একটি ইক্ষু উৎপাদক অঞ্চল

৬.২ পূর্ব ভারতের একটি ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পকেন্দ্র

৬.৩ নভসেবা বন্দর

৬.৪ চন্ডীগড়

७.৫ সর্বাধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত স্থান

৬.৬ দক্ষিণ ভারতের একটি ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা অঞ্চল

৬.৭ পূর্ব ভারতের একটি ম্যানগ্রোভ অরণ্য অঞ্চল

৬.৮ সাতপুরা পর্বত

৬.৯ মহানদী

৬.১০ কোল্লেরু-হ্রদ

অথবা,

(শুধুমাত্র দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীদের জন্য)

৬. যে কোনো দশটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ১×১০=১০

৬.১ ভারতের দীর্ঘতম জাতীয় সড়ক কোনটি ?

৬.২ ২০১১ খ্রিস্টাব্দের আদমসুমারি অনুসারে ভারতের সবথেকে জনবহুল রাজ্যের নাম লেখো।

বিভাগ ‘ছ’

(শুধুমাত্র বহিরাগত পরীক্ষার্থীদের জন্য)

৭.১ যে কোনো তিনটি প্রশ্নের উত্তর দাও।

M.P Geography Question Papers
2017 2018 2019 2020 2021
2022 2023 2024 2025 2026

Leave a Reply

  • Post comments:0 Comments
  • Reading time:24 mins read